তওবার নামাজ পড়ার নিয়ম

আজকের পোস্টে তওবার নামাজ পড়ার নিয়ম আলোচনা করা হয়েছে। তওবা করার অন্যতম উপায় হলো নামাজ, পবিত্র হয়ে ওযু করার পর নামাজ পড়ে আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আমরা প্রতিদিন নানা গুনাহ করি, তাই যত দ্রুত সম্ভব তওবা করা জরুরি, কারণ তওবা মানুষকে পাপমুক্ত জীবনের দিকে পরিচালিত করে।
তওবার-নামাজ-পড়ার-নিয়ম
তওবা হলো নিজের ভুল স্বীকার করে সঠিক পথে ফিরে আসা। এটি এমন এক পবিত্র অঙ্গীকার, যার মাধ্যমে মানুষ পাপের পথ ছেড়ে আল্লাহর দিকে মুখ ফেরায়, তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং ভবিষ্যতে সেই পাপে না ফেরার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে। একজন মুমিনের জীবনে তওবা একটি অপরিহার্য অধ্যায়।

পোস্ট সূচিপত্রঃ তওবার নামাজ পড়ার নিয়ম

তওবার নামাজ কি

তওবা শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক অর্থ হলো অনুশোচনা বা পুনরায় পাপ না করার সংকল্প। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় নিজের কৃত অপরাধের প্রতি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং ভবিষ্যতে অপরাধ বা গুনাহ না করার দৃঢ়সংকল্প করাকে তওবা বলে। আর গুনাহের কাজ সংঘটিত হওয়ার পরপরই মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়াকে সালাতুত তওবা বা তওবার নামাজ বলে।
তওবা একটি আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ হলো অনুশোচনা করা, মহান আল্লাহর কাছে ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে, তওবা বলতে বোঝায় বান্দার পাপ ও ভুলের জন্য আন্তরিক অনুশোচনা প্রকাশ করা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে সঠিক পথে ফিরে আসা। কোরআন ও হাদিসে তওবার অর্থ হলো আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত কাজ ত্যাগ করা এবং আদেশকৃত নেক কাজের দিকে ফিরে আসা।

এটি শুধু অপরাধ স্বীকার নয়, বরং অন্তরে লজ্জা, অনুশোচনা ও ভবিষ্যতে পাপ থেকে বিরত থাকার দৃঢ় সংকল্পসহ কার্যকর হওয়া প্রয়োজন। তওবা মানব জীবনে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শুদ্ধি আনে এবং আল্লাহর রহমত ও করুণার অধিকারী করে। আমরা যে গুনাহগুলো করে থাকি সেগুলো পরিত্যাগ করে আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করাকে তওবা বলা হয়। যেহেতু আমরা যে গুনাহগুলো করে ফেলি বা কৃতকর্মের ক্ষমাপ্রার্থনার বিষয়ে কোরআন হাদিসে অনেক বার উল্লেখ হয়েছে।

তওবার নামাজ পড়ার নিয়মঃ বিস্তারিত নির্দেশিকা

তওবা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা বান্দাকে পাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ করে। তওবার নামাজ হলো বিশেষ নফল নামাজ, যা সঠিক নিয়ম ও আন্তরিকতা নিয়ে পড়া আবশ্যক। এই নামাজ পড়ার সময় কিছু বিশেষ নিয়ম, তৎপরতা এবং শর্ত পূরণ করা প্রয়োজন। এছাড়া অতীতের গুনাহ স্মরণ ও ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি রোধের প্রতিজ্ঞাও পালন করতে হবে। নিচে তওবার নামাজ পড়ার নিয়ম বিস্তারিত নির্দেশিকা দেওয়া হলোঃ
১. গোসল ও ওযু করাঃ তওবার নামাজের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব, অর্থাৎ এটি সুপারিশকৃত, তবে আবশ্যক নয়। গোসল করলে নামাজের পবিত্রতা এবং মানসিক প্রস্তুতি বৃদ্ধি পায়। এরপর উত্তমভাবে ওযু করা আবশ্যক, যা অন্তর ও মনকে শুদ্ধ করে এবং নামাজে পরিপূর্ণ মনোযোগ রাখার সুযোগ দেয়। সঠিকভাবে ওযু করে নামাজের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া এবং তওবা ইবাদতের আন্তরিকতা বৃদ্ধি করে।

২. নামাজের নিয়তঃ ওযু করার পর দুই রাকাত তওবার নামাজের নিয়ত বাঁধা আবশ্যক। নিয়ত হলো অন্তরের অভিপ্রায়, যা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য নামাজ শুরু করার মূল ভিত্তি। নিয়ত করা হলে আত্মা প্রস্তুত হয়, এবং বান্দা আল্লাহর প্রতি আন্তরিকভাবে দায়িত্ব ও অনুশোচনা প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। সঠিক নিয়ত পাঠের মাধ্যমে নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং তওবার ইবাদতের কার্যকারিতা নিশ্চিত হয়। এটি তওবার নামাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৩. সূরা পাঠের নিয়মঃ তওবার নামাজের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পরে সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পরে সূরা ইখলাস পড়া উত্তম। এটি বিশেষভাবে সুপারিশ করা হয়েছে, কারণ সূরা কাফিরুন ও সূরা ইখলাস মানুষের অন্তরে ঈমানের দৃঢ়তা এবং পাপ থেকে ত্যাগের সংকল্প গড়ে তোলে। এই সূরা পাঠ তওবার নামাজকে আরও প্রভাবশালী করে এবং বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য প্রস্তুত করে।

৪. নামাজের সময় মনোযোগ ও অনুশোচনাঃ তওবার নামাজ পড়ার সময় পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। নামাজের প্রতিটি অংশ সঠিকভাবে ও আন্তরিকভাবে সম্পন্ন করা আবশ্যক। দুই রাকাত নামাজ শেষ করার পর আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে ক্ষমাপ্রার্থনা করা উচিত। এই সময় অতীতের সমস্ত গুনাহ স্মরণ করে অন্তরে লজ্জা ও অনুশোচনা অনুভব করতে হবে। এতে বান্দা সত্যিকারের অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য প্রস্তুত হয়।

৫. অতীত গুনাহ এবং ভবিষ্যতের সংকল্পঃ নামাজের সময় বা পরে যখন আল্লাহর কাছে তওবার দোয়া করবেন, তখন অতীতের সমস্ত পাপ ও ভুল স্মরণ করে অন্তরে শরম, লজ্জা ও দোষারোপ অনুভব করতে হবে। এটি অন্তরের সত্যিকারের অনুশোচনার প্রকাশ। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে সেই সমস্ত পাপ আর না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিতে হবে। এই ধাপ হলো তওবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বান্দাকে পাপমুক্ত জীবনের পথে পরিচালিত করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য প্রস্তুত করে।

৭. তওবার শর্তঃ আল্লাহর নিকট তওবা কবুল করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত রয়েছে। প্রথমত, পাপ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা আবশ্যক; শুধুমাত্র ক্ষমা চাওয়া যথেষ্ট নয়। দ্বিতীয়ত, পাপ করার কারণে অন্তরে লজ্জা ও আন্তরিক অনুশোচনা থাকা জরুরি। তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে সেই পাপ পুনরায় না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিতে হবে। এই শর্তগুলো পূরণ করলে তওবা সত্যিকারের হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য কার্যকর হয়। আশা করি তওবার নামাজ পড়ার নিয়ম জানতে পেরেছেন।

তওবার নামাজের আরবি নিয়ত

তওবার নামাজ একটি বিশেষ নফল নামাজ, যা মানুষের গুনাহ থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য আদায় করা হয়। নামাজ আদায়ের সময় সঠিক নিয়ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নিয়ত হলো অন্তরের আন্তরিক অভিপ্রায়। দুই রাকাত এই নামাজ পবিত্র অবস্থায় ও ওযু করে পড়া উচিত। নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ও পূর্বের গুনাহ থেকে অনুতপ্ত হওয়া আবশ্যক।
তওবার নামাজের আরবি নিয়তঃ نويت ان اصلي لله تعالى ركعتي صلاة التوبه سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাক আতাই ছলা-তিত তাওবাতি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তাআলা- মুতাওয়া জ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

সঠিক নিয়ত ও ওযু করে পবিত্র অবস্থায় দুই রাকাত তওবার নামাজ পড়া উচিত। নামাজের সময় পূর্ণ মনোযোগ, আন্তরিকতা ও আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা থাকা আবশ্যক। নামাজ শেষে পূর্বের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া ও অন্তরে অনুতপ্ত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত ও আন্তরিকভাবে তওবার নামাজ আদায় করলে বান্দা আল্লাহর রহমত, করুণা এবং পাপমুক্ত জীবনের জন্য প্রস্তুত হয়। তাই তওবার নামাজের সঠিক আরবি নিয়ত জানা ও তা মেনে নামাজ পড়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তওবার নামাজের বাংলা নিয়ত

তওবার নামাজ হলো একটি বিশেষ নফল নামাজ, যা মানুষের গুনাহ থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য আদায় করা হয়। নামাজ আদায়ের সময় সঠিক নিয়ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নিয়ত হলো অন্তরের অভিপ্রায় ও ইচ্ছার প্রকাশ। দুই রাকাত এই নামাজ পবিত্র অবস্থায় ও ওযু করে পড়া উচিত। নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পূর্বের গুনাহ থেকে অনুতপ্ত হওয়া আবশ্যক।
বাংলায় নিয়তঃ আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে দুই রাকাত তওবার নামাজ আদায় করার নিয়ত করেছি, আল্লাহ আকবার।

নিয়ত হলো অন্তরের অভিপ্রায় এবং ইচ্ছা প্রকাশ, যা নামাজের মূল ভিত্তি। নিয়মমাফিক ওযু করে পবিত্র অবস্থায় নামাজে দাঁড়িয়ে এই নিয়ত পাঠ করা উচিত। নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং গুনাহের প্রতি অনুতপ্ত হওয়া আবশ্যক। নিয়মিত ও আন্তরিকভাবে তওবার নামাজ আদায় করলে বান্দা আল্লাহর রহমত ও করুণার অধিকারী হয় এবং পাপমুক্ত জীবনের দিকে এগিয়ে যায়। তাই প্রতিটি মুসলিমের জন্য সঠিক নিয়ত সহ তওবার নামাজ পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

তওবার শর্ত

মাঝে মাঝে আমাদের যে পাপগুলো হয়ে যায় সেগুলো থেকে তওবা করা আমাদের কর্তব্য, ওয়াজিব বা জরুরী। তো এখন তওবা করতে কিছু নিয়মকানুন এবং শর্ত রয়েছে। সাধারণত আমরা দুই ধরনের হক নষ্ট করে থাকি ১. আল্লাহর হক ২. বান্দার হক, এই উভয় হক থেকে যদি আমরা নিজেকে নিষ্পাপ করতে চাই তাহলে অবশ্যই কিছু শর্ত রয়েছে। যদি আমরা আল্লাহর হক লঙ্ঘন করে থাকি এবং তওবা করতে চাই, তাহলে তিনটি শর্ত মেনে চলতে হবে যেমনঃ
১. পাপ পুরোপুরি ত্যাগ করাঃ তওবার প্রথম শর্ত হলো যে পাপ থেকে মুক্তি চাওয়া হচ্ছে, সেটি সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা। শুধু মুখে স্বীকার করা যথেষ্ট নয়; অন্তর ও কার্যদক্ষতা মিলিয়ে সেই পাপটি পুনরায় করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। পাপের প্রতি আসক্তি বা অনিচ্ছাকৃত অভ্যাস থাকলেও সত্যিকারের তওবা করতে হলে মানুষকে সেটি ছেড়ে দিতে হবে। এভাবে পাপ ত্যাগ করা হলো তওবার মূল ভিত্তি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য অপরিহার্য শর্ত।

২. লজ্জা এবং অনুশোচনাঃ তওবার দ্বিতীয় শর্ত হলো পাপ করার কারণে অন্তরে লজ্জা এবং আন্তরিক অনুতপ্ত অনুভব করা। এটি শুধুমাত্র বাহ্যিক স্বীকারোক্তি নয়, বরং হৃদয় থেকে সত্যিকারের অনুশোচনা থাকা আবশ্যক। নিজের ভুল ও পাপ স্বীকার করে লজ্জিত হওয়া মানুষকে আল্লাহর নৈকট্যে নিয়ে আসে এবং তওবার কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। এই অনুশোচনার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার জন্য আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করতে সক্ষম হয়।

৩. ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি রোধঃ তওবার তৃতীয় শর্ত হলো যে পাপ করা হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আর কখনো করবেন না এই বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প নেওয়া। পাপের পুনরাবৃত্তি রোধ করা হলো তওবার পূর্ণতা নিশ্চিত করার অন্যতম শর্ত। শুধুমাত্র ক্ষমা চাওয়া যথেষ্ট নয়; পাপ থেকে স্থায়ীভাবে বিরত থাকার প্রতিজ্ঞা করতে হবে। এতে বান্দা সত্যিকারের অনুশোচনা প্রদর্শন করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের যোগ্যতা লাভ করে।

আর আপনি যে কাজটা করেছেন সেটা যদি মানুষের সাথে সম্পর্কিত হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রেও আপনাকে কিছু শর্ত মানতে হবে। আর সেক্ষেত্রে রয়েছে ৪ টি শর্ত, সেখান থেকে উপরের ৩টি এবং আরেকটি হচ্ছে হকদারের হক ফিরিয়ে দেওয়া তথা অবৈধ পথে কারো হক নিয়ে থাকলে সেটা ফিরিয়ে দেওয়া, কাহারো সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকলে তার কাছে তা পেশ করা এবং ক্ষমা চাওয়া বা শাস্তি গ্রহণ করা ইত্যাদি।

তওবা করার নিয়ম

তওবা করার নিয়ম হলো প্রথমে পবিত্র হয়ে সুন্দর করে অজু করা চাই। এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। গত জীবনের সব পাপ এবং আদেশ অমান্য করার অপরাধ থেকে মার্জনা চাইতে হবে। তবে এই নফল নামাজ তওবার জন্য আবশ্যক নয়। তওবা মৃত্যু বা আল্লাহর আজাব নেমে আসার আগে পর্যন্ত কবুল হয়, তাই তওবা যত দ্রুত সম্ভব করা উচিত। নিচে বিস্তারিতভাব আলোচনা করা হলোঃ 
তওবা-করার-নিয়ম
১. অতীতের সব পাপ ও ভুলত্রুটি স্বীকার করাঃ তওবার প্রথম নিয়ম হলো অতীতের সব পাপ, ভুলত্রুটি ও অপরাধ মহান আল্লাহর কাছে স্বীকার করা। এই স্বীকারোক্তি আন্তরিক অনুতপ্ত ও লজ্জিত মনে হওয়া উচিত। শুধুমাত্র মুখে বলা নয়, বরং হৃদয় থেকে গুনাহের প্রতি অনুশোচনা থাকা আবশ্যক। এভাবে স্বীকার করার মাধ্যমে মানুষ নিজের ভুল বুঝে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় এবং তওবার প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়।

২. লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়াঃ তওবার দ্বিতীয় নিয়ম হলো অতীতের সমস্ত পাপ ও ভুলত্রুটি নিয়ে লজ্জিত এবং আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। শুধু স্বীকার করলেই হয় না, হৃদয় থেকে সত্যিকারের অনুশোচনা থাকা আবশ্যক। এই অবস্থায় দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া মানে হলো নিজের ভুল স্বীকার করা এবং পুনরায় সেই পাপ থেকে দূরে থাকার দৃঢ় সংকল্প নেওয়া।

৩. অন্যের হক ফিরিয়ে দেওয়াঃ তওবার তৃতীয় নিয়ম হলো যদি কোনো ব্যক্তি কারও হক নষ্ট করে থাকে, তবে তা যথাযথভাবে ফেরত দিতে হবে। সামর্থ্য থাকলে সরাসরি ফেরত দিন, আর যদি সামর্থ্য না থাকে তবে অনুরোধ করে বা ক্ষমা চেয়ে সেই ব্যক্তির কাছ থেকে মাফ নিতে হবে। এটি আল্লাহর কাছে সত্যিকারের তওবার অংশ, কারণ অন্যের অধিকার ফেরত না দিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া তওবার পূর্ণতা দেয় না। সঠিকভাবে হক ফিরিয়ে দেওয়া আন্তরিক তওবার একটি অপরিহার্য শর্ত।

৪. পাপ থেকে দূরে থাকা এবং নেক আমল বৃদ্ধি করাঃ তওবার চতুর্থ নিয়ম হলো পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করা। অতীতের ভুল পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সতর্ক থাকা আবশ্যক। একই সঙ্গে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি বেশি নেক আমল করার চেষ্টা করতে হবে, যেমন সদকাহ, নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ও অন্য ইবাদত। এটি তওবার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সহজ করে এবং ব্যক্তির আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শুদ্ধি নিশ্চিত করে। নিয়মিত নেক আমল তওবার স্থায়িত্ব ধরে রাখে।

৫. পুনরাবৃত্তি ঘটলে দ্রুত তওবা করাঃ তওবার পঞ্চম নিয়ম হলো, যদি পাপ থেকে তওবার পর কোনো ভুল বা কুপ্রবৃত্তির কারণে আবার পাপ কাজ সংঘটিত হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে আবারও তওবা করতে হবে। কোনো গুনাহের পুনরাবৃত্তি ঘটলে তা দ্রুত স্বীকার করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে নিয়মিত তওবা করা মানুষকে পাপমুক্ত রাখে, হৃদয়কে শুদ্ধ করে এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সাহায্য করে। যে কোনো পাপের পরে দ্রুত তওবা করা হলো আসল তওবার চাবিকাঠি।

তওবার নামাজ কত রাকাত

তওবার নামাজ সাধারণত দুই রাকাত আদায় করা হয়। হাদীসে এসেছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার মত ওযু করবে, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং দুনিয়ার কোনো ব্যস্ততায় মন দেবে না, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, তওবার নামাজ দুই রাকাতই যথেষ্ট এবং এটি গুনাহ মাফ করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এই নামাজ আদায়ের সময় পূর্ণ মনোযোগ এবং আন্তরিকতা থাকা আবশ্যক।

ওযু করে পবিত্র অবস্থায় নামাজ পড়া আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা পাওয়ার জন্য বিশেষভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। গুনাহ করার পর বা প্রতিদিন দ্রুত এই দুই রাকাতের তওবার নামাজ আদায় করা উচিত। এটি মুসলমানের আত্মাকে পবিত্র করে, মন ও হৃদয়কে শুদ্ধ রাখে এবং আল্লাহর রহমত ও করুণার দ্বার খুলে দেয়। নিয়মিত তওবা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ও পাপমুক্ত জীবনের অন্যতম উপায়।

তওবার দোয়া

তওবার নামাজ শেষ করার পর বা আল্লাহর কাছে মোনাজাতের সময় সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়া যায়। এটি সবচেয়ে কার্যকর তওবার দোয়া হিসেবে বিবেচিত। সাইয়েদুল ইস্তেগফারের অনেক ফজিলত রয়েছে, যেমন গুনাহ মাফ হওয়া, হৃদয় শান্তি পাওয়া, আল্লাহর রহমত অর্জন এবং জীবনের কঠিন সময়ে সাহায্য পাওয়া। নিয়মিত ও আন্তরিকভাবে পড়লে এটি বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয়। সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার বা তওবার দোয়া নিচে দেওয়া হলোঃ

اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খলাকতানি, ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা, ওয়া ওয়াদিক মাসতাতাতু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু, আবু-উ লাকা বিনি মাতিকা আলাইয়া ওয়া আবু-উ বিজাম্বি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা। ’

অর্থঃ হে আল্লাহ, আপনি আমার রব, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আমাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনার বান্দা। আমি যথাসাধ্য আপনার সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকব। আমি আমার নিকৃষ্ট আমল থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই, আপনার যে অসংখ্য নিয়ামত ভোগ করছি এ জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। আমি আমার কৃত অপরাধ স্বীকার করছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি ছাড়া অপরাধ ক্ষমা করার কেউ নেই।

সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার সম্পর্কিত হাদিসের সারমর্মঃ কোন ব্যক্তি যদি উপরোক্ত ইস্তেগফারটি (সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার) বিষয়বস্তুর উপর পূর্ণ একীন রেখে সকালে পড়বে এবং সে যদি সন্ধ্যার পূর্বে মারা যায় তাহলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি বিষয়বস্তুর ওপর পূর্ণ একীন রেখে সন্ধ্যার সময় পড়বে আর সে যদি সকাল হওয়ার আগে মারা যায় তাহলে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

তওবার সময়সীমা

তওবা ইসলামের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মানুষের গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যম। মহান আল্লাহ তাআলা অসীম দয়ালু, তিনি বান্দার আন্তরিক তওবা কবুল করেন। তবে এর জন্য কিছু সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিন বিশেষ মুহূর্ত আসার আগ পর্যন্ত মহান আল্লাহ তার বান্দার তওবা কবুল করেন। কিন্তু এরপর আর তওবা কবুল করা হয় না। তওবা করার ওই বিশেষ তিনটি মুহূর্ত হলোঃ

১. মৃত্যুর সময়ঃ যখন কারও প্রাণ বের হতে শুরু করবে, তখন তার তওবা আর কবুল হয় না। কারণ সেই মুহূর্তে মানুষ পরকালের বাস্তবতা দেখে ফেলে, আর তখনকার তওবা আন্তরিক অনুশোচনা নয় বরং বাধ্যতামূলক স্বীকারোক্তি হিসেবে গণ্য হয়। তাই মৃত্যুর আগেই গুনাহ থেকে ফিরে আন্তরিকভাবে তওবা করা আবশ্যক।

২. আল্লাহর আজাব নেমে আসাঃ যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো জাতি বা ব্যক্তির ওপর আজাব নেমে আসে, তখন সেই সময় করা তওবা আর গ্রহণযোগ্য হয় না। কারণ আজাবের উপস্থিতি দেখে তওবা করা আন্তরিক অনুশোচনা নয়, বরং ভয়ের কারণে বাধ্যতামূলক স্বীকারোক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই আজাব আসার আগেই আন্তরিকভাবে তওবা করা জরুরি।

৩. পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ঃ কিয়ামতের অন্যতম বড় আলামত হলো সূর্যের পশ্চিম দিক থেকে উদয় হওয়া। যখন এ ঘটনা ঘটবে, তখন আর কোনো বান্দার তওবা কবুল হবে না এবং ঈমান গ্রহণ করাও গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ এটি হবে কিয়ামতের নিশ্চিত প্রমাণ। তাই সূর্য পশ্চিম থেকে ওঠার আগেই আন্তরিকভাবে তওবা করা আবশ্যক।

তাই মুসলমানের জন্য সর্বোত্তম হলো গুনাহ করার পর দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে আন্তরিকভাবে তওবা করা। তওবা বিলম্ব করলে শয়তান মানুষকে আরও গুনাহের দিকে টেনে নেয়, কিন্তু দ্রুত তওবা করলে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করা সহজ হয়। প্রতিটি মুমিনের জীবনে তওবা অপরিহার্য একটি আমল, যা মানুষকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয় এবং গুনাহ থেকে মুক্তির পথ দেখায়। আল্লাহর দরবারে গুনাহ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়াই হলো পাপমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ জীবনের সর্বোত্তম উপায়।

তওবার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

মানুষ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় পাপকাজে জড়িয়ে পড়ে। আল্লাহর বিধানের সীমালঙ্ঘন করে বসে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বান্দার সেসব ভুল সংশোধন এবং স্বীয় অপরাধ থেকে মুক্তি লাভের জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন। আর সেই মুক্তির পথ হলো তওবা। এ তওবার মাধ্যমে বান্দা আবার নিষ্পাপ জীবনে ফিরে আসে। তওবাই একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও মাগফিরাত লাভের অনন্য উপায়। যদি মানুষ পৃথিবীতে কোনো পাপ কাজ না-ই করে তা হলে সে আল্লাহর সামনে অনুতপ্ত হবে কীভাবে? 
 
তওবার-নামাজের-গুরুত্ব-ও-ফজিলত
মানুষ যেন আল্লাহর সামনে অনুতপ্ত হয়, অবনত হয় এবং সেজদায় লুটিয়ে পড়ে সে জন্যই তওবার বিধান দিয়েছেন আল্লাহ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! যদি তোমরা পাপকাজে লিপ্ত না হতে, তা হলে আল্লাহ তোমাদের পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত করে তোমাদের পরিবর্তে এমন নতুন এক জাতিকে নিয়ে আসতেন, যারা গুনাহ করবে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আর আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন এবং গুনাহ মাফ করবেন।

তওবা শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক অর্থ হলো অনুশোচনা বা পুনরায় পাপ না করার সংকল্প। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় নিজের কৃত অপরাধের প্রতি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং ভবিষ্যতে অপরাধ বা গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করাকে তওবা বলে। আর পাপকাজ সংঘটিত হওয়ার পরপরই মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে ওজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়াকে সালাতুত তওবা বা তওবার নামাজ বলে। তবে এই নামাজের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব।

তওবার নামাজ অন্যান্য নফল নামাজের মতো করে আদায় করবে। এর জন্য পৃথক কোনো নিয়ম নেই। আর নিষিদ্ধ ও মাকরুহ ওয়াক্ত ব্যতীত যেকোনো সময় তওবার নামাজ পড়া যাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা করুণাময় ও দয়ালু। তিনি বান্দাকে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য তওবার বিধান রেখেছেন। যাতে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে পাপমুক্ত হতে পারে এবং দোজখের আজাব থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো, আন্তরিক তওবা। আশা করা যায় তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার তলদেশে ঝরনাগুলো প্রবাহিত হয়। সেদিন আল্লাহ তায়ালা নবী ও তাঁর মুমিন বান্দাদের অপদস্থ করবেন না। তাদের নুর তাদের সম্মুখে ও ডানপাশে ধাবিত হবে, তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের নুরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন।

নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর ওপর সর্বশক্তিমান’ (সুরা তাহরিম : ৮)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পারো।’ (সুরা নুর : ৩১) নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতের কেউ গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়লে তার পাপমুক্তির জন্য তওবার নামাজের নিয়ম দেখিয়ে গেছেন। এ তওবার নামাজ গুনাহ মার্জনার শ্রেষ্ঠ উপায়। কারণ উম্মতরা নিষ্পাপ নয়। তাদের মধ্যে অন্যায়, অবিচার, অপরাধ ইত্যাদি সংঘটিত হবে কিন্তু সেই অপরাধ থেকে তওবা বা তওবার নামাজের মাধ্যমে নিজের কৃত মন্দ কাজের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাইতে হবে।

এ নামাজ হলো বান্দার পাপমুক্তির চাবিস্বরূপ। হজরত আবু বকর (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যখন কোনো বান্দা গুনাহ করার পর সুন্দরভাবে ওজু করে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যায় এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে তওবা ও ইস্তেগফার করে তখন অবশ্যই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন’ (আবু দাউদ : ১৫২১)। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন কোনো গুনাহ করে ফেলে, অতঃপর সে ওজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন আল্লাহ তায়ালা অবশ্য তাকে ক্ষমা করে দেন।
 
তারপর রাসুল (সা.) এই আয়াতটি পাঠ করলেন, ‘মুত্তাকি তারাই, যারা কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা কোনো মন্দ কাজে জড়িয়ে নিজের ওপর জুলুম করে বসলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।’ (তিরমিজি : ৪০৮) রাসুল (সা.) ও সাহাবারা নিষ্পাপ ছিলেন এবং পাপমুক্ত জীবনযাপন করতেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এরপরও নবীজি (সা.) আল্লাহর দরবারে কাকুতি-মিনতি সহকারে তওবা করতেন। তিনি এ জন্য তওবা করতেন যে, যাতে তাঁর পবিত্র অন্তর আল্লাহর দরবারে হাজির থাকে। আল্লাহর দরবার থেকে অন্যদিকে গাফেল না হয়।

একইভাবে সাহাবারাও আল্লাহর ভয়ে তওবা করতেন। এমনকি নবীজি (সা.) দৈনিক একশবার তওবা করতেন। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো। নিশ্চয় আমি দৈনিক একশবার তাঁর কাছে তওবা করি’ (মুসলিম : ৭০৩৪)। রাসুল আরও বলেন, ‘গুনাহ থেকে তওবাকারী ওই ব্যক্তির ন্যায়, যার কোনোই গুনাহ নেই’ (ইবনে মাজাহ : ৪৩৯১)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে পাপমুক্ত জীবনযাপনে তওফিক দান করুন, ভুলে কখনো পাপকাজ হয়ে গেলে যেন তওবার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হতে পারি সে তওফিক দান করেন।

শেষকথাঃ তওবার নামাজ পড়ার নিয়ম

তওবা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা বান্দাকে পাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ করে। এই নামাজটি বিশেষ নফল নামাজ এবং এটি সঠিক নিয়মে ও আন্তরিকতা নিয়ে পড়া আবশ্যক। আমার মতে, তওবার নামাজ শুধুমাত্র ইবাদত নয়, এটি একটি মানসিক ও আধ্যাত্মিক শুদ্ধির প্রক্রিয়া, যা বান্দাকে নিজের ভুল ও গুনাহ স্মরণ করতে, অনুশোচনা অনুভব করতে এবং ভবিষ্যতে পাপ থেকে বিরত থাকার সংকল্প নিতে সাহায্য করে।

তওবার নামাজের নিয়ম শুরু হয় পবিত্র অবস্থায় উত্তমভাবে ওযু করা দিয়ে। এরপর দুই রাকাত নামাজের জন্য নিয়ত করতে হয়। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে ফাতিহার পরে সূরা ইখলাস পড়া উত্তম। নামাজের সময় পূর্ণ মনোযোগ ও আন্তরিকতা অপরিহার্য। নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা, অতীতের গুনাহ স্মরণ করা এবং ভবিষ্যতে সেই পাপ আর না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা আবশ্যক।

আমি মনে করি, এই নিয়মগুলো মেনে তওবার নামাজ পড়লে বান্দা আল্লাহর রহমত ও করুণার অধিকারী হয়। এর মাধ্যমে আত্মা পবিত্র হয় এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি অর্জন সম্ভব হয়। নিয়মিত তওবার নামাজ মুসলিমের জীবনে পাপমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করে। আশা করি, এই লেখার মাধ্যমে আপনি তওবার নামাজ পড়ার নিয়ম ও গুরুত্ব সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url