সিদরাতুল মুনতাহা কী-সিদরাতুল মুনতাহা কোথায় অবস্থিত
সিদরাতুল মুনতাহা কী এবং সিদরাতুল মুনতাহা কোথায় অবস্থিত তা জানতে হলে
আর্টিকেলটি পড়তে হবে। ইসলামে সিদরাতুল মুনতাহা হলো সপ্তম আসমানের শেষ প্রান্তে
অবস্থিত এক বিশাল কুলগাছ (লোটগাছ)। নামটি আরবি ‘সিদরাতুল’ (কুল/সিদর গাছ) ও
‘মুনতাহা’ (শেষ সীমা) শব্দের সমন্বয়, অর্থাৎ সীমান্তস্থ কুলগাছ।
কোরআনে এর বর্ণনা অনুযায়ী এটি দামিযাহ্ নামে পরিচিত সপ্তম আসমানের চূড়ান্ত সীমা
পর্যন্ত বিস্তৃত, সেই সীমার পরে কোনো সৃষ্টিজগত বা ফেরেশতা যেতে পারে না। প্রচলিত
অর্থে সিদরাতুল মুনতাহা মহাবিশ্বের শেষ সীমা নির্দেশ করে, সৃষ্টির অবিনশ্বর
দুনিয়ায় প্রবেশের ঠিক পূর্বের স্থান হিসেবে বিবেচিত।
পোস্ট সূচিপত্রঃ সিদরাতুল মুনতাহা কী-সিদরাতুল মুনতাহা কোথায় অবস্থিত
- সিদরাতুল মুনতাহা কী এবং কেন বলা হয়
- সিদরাতুল মুনতাহার অর্থ ও তাৎপর্য
- সিদরাতুল মুনতাহা কোথায় অবস্থিত-বিস্তারিত ব্যাখ্যা
- কোরআন ও হাদিসে সিদরাতুল মুনতাহা সম্পর্কে আলোচনা
- মিরাজের রাতে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নবী (সা.)-এর সফর
- সিদরাতুল মুনতাহা ইসলামে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
- সিদরাতুল মুনতাহা সম্পর্কে কোরআনের আয়াতসমূহ
- জিবরাইল (আঃ) সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত কেন থেমে গিয়েছিলেন
- সিদরাতুল মুনতাহা গাছের বর্ণনা ও বৈশিষ্ট্য
- সিদরাতুল মুনতাহা কাহিনী সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা
- শেষ কথাঃ সিদরাতুল মুনতাহা কী
সিদরাতুল মুনতাহা কী এবং কেন বলা হয়
সিদরাতুল মুনতাহা কী, সিদরাতুল মুনতাহা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা
আল্লাহর নিকটবর্তী একটি বিশেষ স্থানকে নির্দেশ করে। সিদরাহ অর্থ কুল বা বরই গাছ
এবং মুনতাহা অর্থ শেষ সীমা। একসাথে এর অর্থ দাঁড়ায় শেষ সীমার কুল গাছ। কোরআন ও
হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মিরাজের রাতে আকাশ ভ্রমণ করে
সপ্তম আসমানে পৌঁছে সিদরাতুল মুনতাহার কাছে পৌঁছেছিলেন। এটিই ছিল সেই স্থান,
যেখানে ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) থেমে গিয়েছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) একাই
আল্লাহর সান্নিধ্যে অগ্রসর হন।
আরও পড়ুনঃ সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত
সিদরাতুল মুনতাহা বলা হয় কারণ এটি আসমান ও ফেরেশতাদের জন্য শেষ সীমা। এখানে
পৌঁছানোর পর আর কেউ অতিক্রম করতে পারে না। ফেরেশতারা এখানে এসে তাদের দায়িত্ব
পালন করে এবং এখান থেকে আদেশ গ্রহণ করে থাকে। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, আল্লাহ
তায়ালার বিশেষ রহমত ও গোপনীয় নির্দেশ এখানেই নবী (সা.)-কে প্রদান করা হয়েছিল,
যার মধ্যে মুসলমানদের জন্য নামাজ ফরজ হওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত।
এই স্থানটির মাহাত্ম্য এতটাই যে, এটি মানুষের কল্পনার বাইরে এক অনন্য সৃষ্টি।
কোরআনে সূরা নাজমে সিদরাতুল মুনতাহার উল্লেখ রয়েছে, যেখানে নবী (সা.)-এর মহান
সফরের বর্ণনা এসেছে। তাই সিদরাতুল মুনতাহা শুধু একটি গাছ নয়, বরং এটি ইসলামের
আধ্যাত্মিকতার গভীর প্রতীক। সিদরাতুল মুনতাহা সম্পর্কে জানলে মুসলমানদের ঈমান
আরও দৃঢ় হয় এবং তারা আল্লাহর মহিমা সম্পর্কে সচেতন হয়। এজন্য সিদরাতুল
মুনতাহাকে বলা হয় আসমানের শেষ সীমা, যা নবী করিম (সা.)-এর মহান মিরাজ সফরের এক
অলৌকিক নিদর্শন।
সিদরাতুল মুনতাহার অর্থ ও তাৎপর্য
সিদরাতুল মুনতাহা ইসলামের এক গভীর ও তাৎপর্যময় শব্দ। আরবি সিদরাহ শব্দের অর্থ
লোট গাছ বা কুল গাছ এবং মুনতাহা অর্থ শেষ সীমা। সুতরাং, সিদরাতুল মুনতাহা অর্থ
দাঁড়ায় – শেষ সীমার লোট গাছ। এটি এমন এক স্থান যা ফেরেশতা ও নবীদের জন্য
সীমারেখা। এর পর আর কোনো সৃষ্টি অগ্রসর হতে পারে না। ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী,
মিরাজের রাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সপ্তম আসমানে এই সিদরাতুল মুনতাহায়
পৌঁছান।
আরও পড়ুনঃ
সিদরাতুল মুনতাহার তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটিই সেই স্থান যেখানে
ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) থেমে গিয়েছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর সঙ্গে
সরাসরি সাক্ষাৎ করার জন্য অগ্রসর হন। কোরআনের সূরা নাজমে সিদরাতুল মুনতাহার
উল্লেখ রয়েছে, যা প্রমাণ করে এর মর্যাদা কত উচ্চে। এখানেই নবী করিম (সা.)
আল্লাহর কাছ থেকে মুসলমানদের জন্য নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ লাভ করেছিলেন।
সিদরাতুল মুনতাহা ইসলামে আধ্যাত্মিকতার প্রতীক, যেখানে সব জ্ঞান, আমল ও
ফেরেশতাদের দায়িত্বের সীমারেখা শেষ হয়। এটি শুধু একটি গাছ নয়, বরং আল্লাহর
মহিমা, রহস্য এবং নবুয়তের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। মিরাজের রাতে মহানবী (সা.) এই
স্থান পর্যন্ত পৌঁছে আল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়েছিলেন। তাই সিদরাতুল মুনতাহা
মুসলমানদের জন্য ঈমান দৃঢ় করার অনন্য নিদর্শন এবং ইসলামের গভীর তাৎপর্যের
প্রতিফলন।
মুসলমানদের জন্য সিদরাতুল মুনতাহার অর্থ ও তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। এটি ঈমানকে
দৃঢ় করে, আল্লাহর অসীম শক্তি ও মহিমা সম্পর্কে সচেতন করে এবং মিরাজের মহান
শিক্ষাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এই ঘটনা প্রমাণ করে, আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছানো শুধু
তাঁর প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্যই নির্দিষ্ট এক বিশেষ মর্যাদা।
তাই সিদরাতুল মুনতাহা ইসলামে আধ্যাত্মিক মহত্ত্ব, নবুয়তের শ্রেষ্ঠত্ব এবং
আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রতীক।
সিদরাতুল মুনতাহা কোথায় অবস্থিত-বিস্তারিত ব্যাখ্যা
সিদরাতুল মুনতাহা ইসলামের এক মহিমান্বিত ও আধ্যাত্মিক স্থান, যার উল্লেখ কোরআন
ও হাদিসে পাওয়া যায়। এটি এমন এক সীমারেখা যা সপ্তম আসমানে অবস্থিত এবং যেখানে
পৌঁছে ফেরেশতা, নবী কিংবা অন্য কোনো সৃষ্টি আর অগ্রসর হতে পারে না। এই স্থানকে
বলা হয় আসমানের শেষ সীমা, যা মিরাজের ঘটনার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। সিদরাতুল
মুনতাহা সপ্তম আসমানে অবস্থিত এক বিশেষ স্থান, যা মুসলমানদের জন্য ঈমান,
আধ্যাত্মিকতা ও ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।
মিরাজের রাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর হুকুমে মক্কার মসজিদুল হারাম
থেকে যাত্রা শুরু করে প্রথমে মসজিদুল আকসা, এরপর একে একে সাত আসমান অতিক্রম
করেন। সপ্তম আসমানে পৌঁছে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় অবস্থান করেন। এখানে পৌঁছে
ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) থেমে যান এবং বলেন যে, এর পর তিনি আর এগোতে পারবেন না।
এরপর নবী করিম (সা.) আল্লাহর বিশেষ অনুমতিতে একাই অগ্রসর হন এবং তাঁর প্রভুর
সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাতের সময়েই মুসলমানদের জন্য দৈনিক পাঁচ
ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়, যা ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের মধ্যে
অন্যতম।
সিদরাতুল মুনতাহা শুধু একটি গাছ নয়, বরং এটি আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। কোরআনের
সূরা নাজমে এই স্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, নবী করিম (সা.)
সিদরাতুল মুনতাহার নিকটে পৌঁছান, যেখানে আল্লাহর বিশেষ নিদর্শনসমূহ তিনি
প্রত্যক্ষ করেন। ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, এই গাছের সৌন্দর্য, জ্যোতি এবং মহিমা
মানুষের বোধগম্যতার বাইরে। এটি এমন এক সৃষ্টি, যা আল্লাহর কুদরতের মহৎ নিদর্শন
এবং নবুয়তের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক হিসেবে মুসলমানদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।
সিদরাতুল মুনতাহার তাৎপর্য হলো, এটি সেই স্থান যেখানে সমস্ত জ্ঞান, আমল এবং
ফেরেশতাদের দায়িত্ব শেষ হয়। এখান থেকে ফেরেশতারা আল্লাহর আদেশ গ্রহণ করে এবং
দায়িত্ব সম্পন্ন করার জন্য পৃথিবীতে আসে। তাই সিদরাতুল মুনতাহা ইসলামে গভীর
রহস্য ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। এটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহর
নৈকট্যে পৌঁছানো কেবলমাত্র আল্লাহর প্রিয় রাসূলের জন্য নির্দিষ্ট এক বিশেষ
মর্যাদা।
মুসলমানদের জন্য সিদরাতুল মুনতাহার অবস্থান জানা মানে শুধু একটি ভৌগোলিক
প্রশ্নের উত্তর নয়, বরং এটি ঈমানকে দৃঢ় করার মাধ্যম। এই স্থানটি স্মরণ করিয়ে
দেয় যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান, তাঁর সৃষ্টির সীমা অসীম এবং নবী করিম (সা.)-এর
মর্যাদা সর্বোচ্চ। মিরাজের এই ঘটনা মুসলমানদের ইবাদতে মনোযোগী হতে, আল্লাহর
কাছে আত্মসমর্পণ করতে এবং আখিরাতের জীবনের কথা চিন্তা করতে উৎসাহিত করে।
কোরআন ও হাদিসে সিদরাতুল মুনতাহা সম্পর্কে আলোচনা
সিদরাতুল মুনতাহা ইসলামের এক আধ্যাত্মিক ও রহস্যময় স্থান, যা কোরআন ও হাদিসে
বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আরবি শব্দ “সিদরাহ” অর্থ লোট গাছ বা কুল গাছ এবং
“মুনতাহা” অর্থ শেষ সীমা। সুতরাং, সিদরাতুল মুনতাহা অর্থ দাঁড়ায় – শেষ সীমার লোট
গাছ। এটি সপ্তম আসমানে অবস্থিত, যা নবী করিম ﷺ-এর মিরাজ সফরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে
সম্পর্কিত। নিচে কোরআন ও হাদিসে সিদরাতুল মুনতাহা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
কোরআনে সিদরাতুল মুনতাহার উল্লেখঃ কোরআনে সূরা নাজম (৫৩:১৪-১৬) এ সরাসরি
সিদরাতুল মুনতাহার বর্ণনা পাওয়া যায়। এখানে বলা হয়েছে, “আর তিনি (মুহাম্মাদ ﷺ)
তাকে (জিবরাইল) আরেকবার দেখেছিলেন, সিদরাতুল মুনতাহার নিকটে। এর নিকটে আছে
জান্নাতুল মাওয়া (চিরস্থায়ী বাগান)। যখন সিদরাহকে আচ্ছাদিত করেছিল যা আচ্ছাদিত
করেছিল। এখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সিদরাতুল মুনতাহা সপ্তম আসমানের
শেষ সীমার গাছ, যেখানে নবী ﷺ আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছেছিলেন। অন্য আয়াতে যেমন
সূরা শা’বা (৩৪:১৫-১৬) ও সূরা ওয়াকিয়া (৫৬:২৭-২৮)-এ সিদর গাছ উল্লেখ আছে, কিন্তু
তা মূলত জান্নাতের সাধারণ গাছের বর্ণনা। কেবল সূরা নাজমেই সিদরাতুল মুনতাহা নামটি
পাওয়া যায়।
হাদীস শরীফের বর্ণনাঃ এখানে ‘সিদরাতুল মুন্তাহা’র সেই দৃশ্য ও অবস্থার
বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যা নবী করীম মি’রাজের রাতে দর্শন করেছিলেন। সোনার প্রজাপতি
তার চতুস্পার্শ্বে উড়ে বেড়াচ্ছিল। ফেরেশতামন্ডলীও সে বৃক্ষকে ঘিরে রেখেছিলেন
এবং মহান প্রভুর জ্যোতির দৃশ্যও ছিল সেখানে। এই স্থানেই নবী করীম (স.) কে তিনটি
জিনিস প্রদান করা হয়। আর তা হলো, পাঁচ ওয়াক্ত নামায, সূরা আল-বাকারা শেষের
আয়াতগুলো এবং সেই মুসলিমের ক্ষমার প্রতিশ্রুতি, যে শিরক এর মলিনতা থেকে পবিত্র
থাকবে। মহানবী (স.) মিরাজে গিয়ে জান্নাতের চারটি নদী দর্শন করেছিলেন। দু’টি
বাহ্যিক ও দু’টি আভ্যন্তরিক। বাহ্যিক নদী দু’টি দুনিয়ায় প্রবহমান, নীল ও ফুরাত।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসুলল্লাহ বলেছেন, (শামের) সাইহান ও জাইহান, (ইরাকের)
ফুরাত এবং (মিসরের) নীল প্রত্যেক নদীই জান্নাতের নদ-নদীসমূহের অন্যতম। জান্নাতের
নদীমালার মধ্যে একটির নাম কাওসার, যা শেষ নবী কে হওযরূপে দান করা হয়েছে। (সুরা
কাওসার) এ নদীর মাটি-কাদাও কস্তুরী। যেখান হতে মহানবী তাঁর উম্মতকে কিয়ামতে পানি
পান করাবেন। সুর্ববৃহৎ হাউজে আল কাওসার নহর (অমৃত নদী) থাকবে জান্নাতী শারাবে
পরিপূর্ণ। যে পবিত্র শারাব বা পানীয় দুগ্ধ হতেও সাদা, বরফ হতেও শীতল, মধু হতেও
মিষ্ট এবং মিসক চেয়েও সুগন্ধময়। যে একবার সে পানি পান করবে তাকে আর কোনদিন
পিপাসা স্পর্শ করবে না। (বুখারী ৬৫৭৯নং) জান্নাতের নিম্নদেশে চারটি নহর প্রবাহিত।
নির্মল পানির নহর, দুগ্ধের নহর যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, সুস্বাদু সুধার নহর এবং
পরিশোধিত মধুর নহর।
মিরাজের রাতে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নবী (সা.)-এর সফর
মিরাজের রাতে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নবী (সা. )-এর সফর ছিল আল্লাহর বিশেষ
সম্মান, মানবজাতির জন্য শিক্ষার দৃষ্টান্ত, এবং নামাজ ফরজ হওয়ার পটভূমি। মিরাজের
এই সফর নবী ﷺ-র মর্যাদা প্রমাণ করে। সিদরাতুল মুনতাহা মানুষের জ্ঞানের সীমার
বাইরে এক বিশেষ স্থান, যেখানে ফেরেশতাদের জ্ঞানও থেমে যায়। মুসলিমদের জন্য এই রাত
শিক্ষা দেয়: নামাজ আল্লাহর সরাসরি দানকৃত সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটঃ ৭ম শতকের প্রথমার্ধে মক্কার অবস্থা ছিল অত্যন্ত
প্রতিকূল। নবী করিম (সা.) তখন নবুয়তের নবম-দশম বছরে এসে গিয়েছিলেন, এবং কাফির
কুরাইশ যারা তাকে নিষ্ঠুরভাবে অবজ্ঞা করছিল, তারা তাঁর বিরুদ্ধেই প্রকৃষ্ট
ষড়যন্ত্র করছিল। ৬১৯ খ্রিস্টাব্দে (হিজরী ১০০) তার প্রিয় স্ত্রী খদীজাহ (রা.) ও
কর্ণধার চাচা আবু তালিবের মৃত্যু ঘটেছিল। তত্ত্বাবধানে আল্লাহর রুমান্বিত সাহায্য
ও আশীর্বাদ নিযুক্ত করার জন্য তখন আল্লাহ তায়ালা নবী (সা.)-এর সমর্থনে একটি
অলৌকিক ঘটনা অঞ্জলি দেন।
ইসলামী ইতিহাসে মিরাজের ঘটনা হিসেবে পরিচিত এই চমকপ্রদ যাত্রা ঘটেছিল নবী
(সা.)-এর হিজরত পূর্ববর্তী এক বছরগুণ সময় (প্রায় ৬২১ খ্রিস্টাব্দে)। সেই সময়
মক্কায় অনমনীয় অবিশ্বাসীরা নবী (সা.)-কে দৃঢ় আস্থাশীল হওয়াতে বাধা দিতে নানামুখী
পরীক্ষা-নিরীক্ষার দাবি করেছিল। সেসবেরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতাআলা নবী (সা.)-এর
স্বপ্নের মাধ্যমে ইসরা-মিরাজের যাত্রা দেখান।
সময়ানুক্রমিক বিবরণঃ নবী (সা.) পবিত্র হারাম মসজিদ থেকে শুরু করে এক
মুহূর্তে বুরাক নামক আসমানী সত্তার সঙ্গে মসজিদুল আকসায় পৌঁছন। এরপর মিরাজের
মাধ্যমে সাত আসমান পেরিয়ে যাত্রা অব্যাহত থাকে। নবী (সা.) প্রথম স্বর্গে পৌঁছে
আদম (আঃ)–এর সাক্ষাৎ লাভ করেন, দ্বিতীয় আসমানে খ্রিস্ট ও ইউনুস (আঃ), তৃতীয়
আসমানে ইউসুফ (আঃ), চতুর্থে ইদ্রিস (আঃ), পঞ্চমে হারুন (আঃ), ষষ্ঠে মুসা (আঃ) এবং
সপ্তম স্বর্গে ইব্রাহীম (আঃ) এর সম্মুখীন হন। সপ্তম আসমান শেষে নবী (সা.) পৌঁছান
সিদরাতুল মুন্তাহায়, যা আল্লাহর সরাসরি সম্মুখীন হওয়ার সীমার এক সীমান্ত।
সেখানে নামাজের ৫০ বারের ফরজ হুকুম নেমে আসে। সিদরাতুল মুন্তাহা তলব পর্যায়ে
নানান বিস্ময়কর দৃশ্য প্রদর্শিত হয়। গাছের ফলবিহীন গাছের মতো ফল–হাজারের গামলার
সমান, পাতা হাতির কানের মতো বিশাল, চারটি নদী প্রবাহিত (দুটি দৃশ্যমান – নীল ও
ইউফ্রেটিস, দুইটি লুকানো)। বায়তুল-মামুর (জন্মজাত প্রতিযোগিতাসম্পন্ন অন্য এক
মসজিদ) প্রদর্শিত হয় এবং নবী (সা.) পান করেন দুধ। এরপর ওই মুহূর্তে নবী (সা.)-এর
ওপর নামাজ ফরজ করা হয়।
প্রাথমিকভাবে ৫০ বার নির্ধারিত ছিল, কিন্তু মোসার (আঃ) পরামর্শে বারবার হ্রাস করে
চূড়ান্তভাবে পাঁচবারে আনা হয়। দোহাই দিয়ে যখন নবী (সা.) পাঁচ ওয়াক্তে সিদ্ধান্ত
নেন, আল্লাহতায়ালা ঘোষণা দেন যে “আমি আমার আদেশ শেষ করে দিয়েছি; আমি আমার
উপাসীদের বোঝা লাঘব করে দিয়েছি। এই ঘটনার পর নবী (সা.) পূর্ববর্তী অবস্থানে জেগে
ওঠেন, এবং আল্লাহর বিশেষ দান–ইশ্বরীর স্বরূপ রাতের এই যাত্রা সম্পন্ন হয়।
ধর্মীয় গুরুত্বঃ মিরাজের ঘটনা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক গভীর ঈমানীয়
শিক্ষাস্বরূপ। এই অলৌকিক যাত্রা নবী (সা.)-এর প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত ও
সমর্থনের নিদর্শন। কঠিন বিপদের মধ্যে আল্লাহ তাঁকে নিজের অত্যন্ত নিকটস্থ করেছেন।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ শিক্ষা হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজ প্রয়োগ। এ থেকে বোঝা যায়
নামাজ কেবল একটি নিয়তিবদ্ধ ইবাদত নয়, বরং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে আল্লাহর
স্থাপিত সেতুবন্ধন।
মিরাজ মানবজাতিকে ধর্মের মৌলিক দায়িত্বের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয় এবং নবী (সা.)-এর
মর্যাদা ও رسالت শক্তিশালী করে। মিরাজ বর্ণনায় ভবিষ্যতের মৃত্যু ও পরকালের
বাস্তবতার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ঈমানের দৃষ্টিকোণ থেকে, স্বপ্নকল্পিত হলেও এই
যাত্রা মুসলিমদের জন্য স্বৈরপরীক্ষা এবং ফেরেস্তা-মহিম্মতার সাক্ষাৎ, যা আল্লাহর
এক অদৃশ্য আযিম প্রতি বিশ্বাসকে দৃঢ় করে।
কোরআন ও হাদিস থেকে উদ্ধৃতিঃ এই ঘটনার সূচনা সূরা আল-ইসরায় (বনী ইসরাইল)
আয়াত ১৭:১–এ বর্ণিত হয়েছেঃ سُبْحَانَ الَّذِيْ أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ
الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى (সূরা বনী ইসরাইল ১৭:১)
অর্থাৎ, মহিমান্বিত তিনি, যিনি তাঁর সেবককে রাতের বেলায় মসজিদুল হারাম থেকে
মসজিদুল আকসা পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। তদুপরি, সূরা নাজম (৫৩:১৮) আয়াতে এসে বলা
হয়েছেঃ لَقَدْ رَآىٰ مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَىٰ (সূরা নাজম ৫৩:১৮)
অর্থাৎ, তিনি নিশ্চয়ই তাঁর প্রভুর সর্ববৃহৎ নিদর্শনসমূহের কিছু দেখেছেন। এই দু’টি
আয়াতই মিরাজের ঘটনা ও নবী (সা.)-এর আল্লাহর নৈকট্যের আলামত হিসেবে গণ্য।
বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে এসময় নামাজ ফরজ সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়।
উদাহরণস্বরূপ, সহীহ বুখারি শরীফে আছে যে নবী (সা.) বলেন: এরপর আমার ওপর নামাজ ৫০
বার ফরজ করা হলো এবং তা কমিয়ে পাঁচবারে নিয়ে আসার পর পরই ঘোষণা এলো, ‘আমি আমার
আদেশ সম্পন্ন করেছি, তোমাদের উপরে জবাবদিহির বোঝা কমিয়ে দিয়েছি। এই হাদিসে নবী
(সা.)-র সম্মুখীন প্রক্রিয়া ও মোসা (আঃ)র মাধ্যমে নামাজ কমানোর বর্ণনা
সংক্ষিপ্তভাবে পাওয়া যায়। এসব আয়াত ও হাদিস মিরাজের মূল ঘটনাপ্রবাহ এবং ধর্মীয়
তাৎপর্যকে স্পষ্ট করে তোলে।
সিদরাতুল মুনতাহা ইসলামে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
সিদরাতুল মুনতাহা ইসলামে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি এমন এক সীমান্ত, যা
সৃষ্টিজগতের জ্ঞানের শেষ সীমা হিসেবে বিবেচিত হয়। ফেরেশতাদেরও জ্ঞান ও ভ্রমণ
এখানে এসে থেমে যায়, এর পর আর কেউ অগ্রসর হতে পারে না, কেবল আল্লাহ যাকে অনুমতি
দেন। মিরাজের রাতে নবী করিম ﷺ সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছান এবং সেখানে আল্লাহর
মহিমান্বিত নিদর্শনসমূহ প্রত্যক্ষ করেন। এখানেই মুসলিম উম্মাহর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ
ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়।
ফলে নামাজ কেবল একটি ইবাদত নয়, বরং এটি আল্লাহর সাথে সরাসরি যোগাযোগের বিশেষ
মাধ্যম। এতে বান্দা আল্লাহর মহিমা স্মরণ করে, আর নিজের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা
উপলব্ধি করে। সিদরাতুল মুনতাহা আমাদের শেখায় যে মানুষের জ্ঞান ও শক্তি সীমিত, অথচ
আল্লাহ সর্বজ্ঞানী ও সর্বশক্তিমান। তাই নামাজ শুধু কর্তব্য নয়, বরং এটি আত্মিক
শক্তি অর্জনের পথ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ উপায়। এর গুরুত্ব কয়েকটি দিক
থেকে বোঝা যায়ঃ
১. সর্বোচ্চ সীমাঃ সিদরাতুল মুনতাহা অর্থ সীমান্তের লতাগাছ, যা
ফেরেশতা ও নবীদের জ্ঞান ও সফরের সর্বোচ্চ সীমা। এর ওপরে আর কারও যাওয়ার সুযোগ
নেই, কেবল আল্লাহ যাকে অনুমতি দেন তিনিই যেতে পারেন। এটি সৃষ্টি জগত ও আল্লাহর
বিশেষ নৈকট্যের মাঝে এক মহিমান্বিত সীমারেখা, যা মানুষের সীমাবদ্ধতা ও আল্লাহর
মহিমা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। সুতরাং, সিদরাতুল মুনতাহা হলো সৃষ্টির সর্বোচ্চ
সীমা ও নৈকট্যের প্রতীক।
২. কোরআনের উল্লেখঃ সূরা নাজমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, নবী মুহাম্মদ ﷺ
সিদরাতুল মুনতাহার কাছে পৌঁছেছিলেন। তখন সেটিকে আচ্ছন্ন করেছিল এক বিশেষ দৃশ্য,
যা মানুষের কল্পনার বাইরে। নবী ﷺ-এর দৃষ্টি সঠিক ছিল, কোনোভাবেই বিচ্যুত বা
সীমালঙ্ঘন করেনি। এখানে তিনি তাঁর প্রতিপালকের মহান নিদর্শনসমূহ প্রত্যক্ষ
করেছিলেন। এ আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে সিদরাতুল মুনতাহা আল্লাহর মহিমা ও রহস্যময়
নিদর্শনের এক অনন্য স্থান।
৩. মিরাজের চূড়ান্ত গন্তব্যঃ মিরাজের চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল সিদরাতুল
মুনতাহা, যেখানে নবী ﷺ আসমান ভ্রমণ শেষে পৌঁছান। এখানে তিনি আল্লাহর বিশেষ
নৈকট্যে ধন্য হন এবং মানবজাতির জন্য নামাজের ফরজ হুকুম লাভ করেন। এই মুহূর্তটি
ইসলামী ইতিহাসে মিরাজের সর্বোচ্চ ও শীর্ষ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। সিদরাতুল মুনতাহা
নবী ﷺ-এর নৈকট্য, আল্লাহর মহিমা এবং বান্দার সীমাবদ্ধতার প্রকাশ, যা বিশ্বাসী
মনকে ঈমান ও ভক্তিতে শক্তিশালী করে।
৪. নামাজের ফরজ হওয়াঃ নামাজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা
সরাসরি আসমান থেকে, সিদরাতুল মুনতাহা হতে আল্লাহর নিকট থেকে ফরজ করা হয়েছে। এটি
শুধু রীতিনীতি পালন নয়, বরং মুসলিমদের আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পর্ক ও গভীর
সংযোগের প্রতীক। নামাজের মাধ্যমে বান্দারা আল্লাহর মহিমা স্মরণ করে, নিজেদের
সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করে এবং আত্মিক শক্তি ও ধার্মিকতা বৃদ্ধি করে। তাই নামাজ মানব
জীবনের এক অপরিহার্য ভিত্তি ও ঈমানের প্রতিফলন।
৫. আধ্যাত্মিক প্রতীকঃ সিদরাতুল মুনতাহা আধ্যাত্মিকভাবে মানুষের জ্ঞানের
সীমা ও আল্লাহর অসীম ক্ষমতার প্রতীক। এটি আমাদের স্মরণ করায় যে, মানুষ ও
ফেরেশতাদের জ্ঞান সীমিত, আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী ও সর্বশক্তিমান। সিদরাতুল মুনতাহা
বান্দাদের বিনয়, ভক্তি ও আত্মসমর্পণের শিক্ষা দেয় এবং আল্লাহর নৈকট্য ও মহিমার
প্রতি গভীর সচেতনতা বৃদ্ধি করে। এটি মানব আত্মার জন্য আধ্যাত্মিক প্রেরণা ও
ঈমানের দৃঢ় প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
সিদরাতুল মুনতাহা সম্পর্কে কোরআনের আয়াতসমূহ
সিদরাতুল মুনতাহা সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতসূহ মুসলমানদের জন্য গভীর তাৎপর্য বহন
করে।সিদরাতুল মুনতাহা ইসলামে এক অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ স্থান, যার উল্লেখ কোরআনের
সূরা আন-নাজমে পাওয়া যায়। এটি এমন এক সীমান্ত যেখানে ফেরেশতাদের জ্ঞান ও
ক্ষমতা শেষ হয়ে যায়। সূরা আন-নাজম (সূরা ৫৩) এর তলবাগুলিতে সিদরাতুল মুন্তাহা
উল্লেখ রয়েছে। প্রতিটি আয়াতের আরবি পাঠ, বাংলা অনুবাদ এবং প্রয়োজনমত সংক্ষিপ্ত
ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো।
১. সূরা ৫৩, আয়াত ১৩ঃ وَلَقَدْ رَءَاهُ نَزْلَةً أُخْرَىٰ –
বাংলা অনুবাদঃ নিশ্চয় [নবী (সা.)] তাকে আরেকবার দেখেছিল।
ব্যাখ্যাঃ এই আয়াতে নির্দেশিত হচ্ছে যে মহানবী (সা.) দ্বিতীয়বার জিব্রাঈল
(আ.)-কে দেখেছেন। মাফাসরদের মতে, এটি মিরাজের সময়ের ঘটনা, যখন নবী (সা.) সপ্তম
স্বর্গে পৌঁছে সিদরাতুল মুন্তাহার নিকটে দ্বিতীয়বারের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন।
২. সূরা ৫৩, আয়াত ১৪ঃ عِندَ سِدْرَةِ الْمُنتَهَىٰ –
বাংলা অনুবাদঃ সিদরাতুল মুন্তাহার নিকটে।
ব্যাখ্যাঃ এখানে ‘সিদরাতুল মুন্তাহা’ উল্লেখ হয়েছে। মাফাসরদের মতে,
সিদরাতুল মুন্তাহা হলো সপ্তম আকাশের একটি মহান বরইগাছ, যা আল্লাহর সিংহাসনের নিচে
অবস্থিত। এটি হলো সর্বশেষ সীমার গাছ, যার শেকড় ষষ্ঠ স্বর্গে বিস্তৃত এবং ডালপালা
সপ্তমে ছড়িয়ে আছে।
৩. সূরা ৫৩, আয়াত ১৫ঃ عِندَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَىٰ –
বাংলা অনুবাদঃ যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত।
ব্যাখ্যাঃ আয়াতে ‘জান্নাতুল-মাওয়া’ উল্লেখ আছে, যা বিশ্বস্তদের চিরস্থায়ী
আশ্রয়স্থল ‘আশ্রয়ের বাগান’ নির্দেশ করে।
৪. সূরা ৫৩, আয়াত ১৬ঃ إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَىٰ –
বাংলা অনুবাদঃ যখন বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছন্ন হয়, তদ্বারা আচ্ছন্ন ছিল।
ব্যাখ্যাঃ এই আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে সিদরতুল মুন্তাহা গাছটি রহস্যময় আলোক
বা কোন অলৌকিক ছায়ায় ঢাকা পড়ে ছিল।
৫. সূরা ৫৩, আয়াত ১৭ঃ مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَىٰ –
বাংলা অনুবাদঃ তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি এবং সীমালংঘনও করেনি।
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ নবীর দৃষ্টি সেই মুহূর্তে স্থির ছিল, তিনি যা দেখলেন,
তাতে কণ্ঠিকা হয়নি বা অতিরিক্ত কিছুও করেননি।
৬. সূরা ৫৩, আয়াত ১৮ঃ
لَقَدْ رَأَىٰ مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَىٰ –
বাংলা অনুবাদঃ নিশ্চয়ই তিনি তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন
করেছে।
ব্যাখ্যাঃ এতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে নবী (সা.) এই আকাশী দৃশ্যের মাধ্যমে
তাঁর পালনকর্তার সবচেয়ে বড় নিদর্শনগুলো প্রত্যক্ষ করেছেন, যা তাঁর সত্যনিষ্ঠার
স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত।
জিবরাইল (আঃ) সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত কেন থেমে গিয়েছিলেন
জিবরাইল (আঃ) সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত থেমে গিয়েছিলেন কারণ এটি সৃষ্টিজগতের
সীমারেখা। তাঁর থেমে যাওয়া প্রমাণ করে আল্লাহর অসীম মহিমা ও বান্দার সীমিত
ক্ষমতা। রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে এ সীমা অতিক্রমের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা তাঁর মর্যাদা
ও আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের নিদর্শন। এই ঘটনা মুসলিমদের শেখায় আল্লাহর কাছে
পৌঁছানোর জন্য ইবাদত, বিশেষত নামাজই হলো প্রধান মাধ্যম। নিচে বিস্তারিত আলোচনা
করা হলো
সিদরাতুল মুনতাহার সীমানা ও আল্লাহর নৈকট্যঃ সিদরাতুল মুনতাহা হলো পরম
সীমান্তের লতাগাছ, যা সপ্তম আসমানের পরিপ্রেক্ষিতে অবস্থিত। আল্লাহ তায়ালা
কোরআনে উল্লেখ করেছেন, এটি বরুণ সীমার লতাগাছ (স্তব ১৪) – যার ওপরে আর কেউ যেতে
পারে না। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে ওপরের দিকে ওঠা আর আসমানের উপর থেকে নেমে আসার সকল
কিছু এখানে শেষ হয়। তাই বিভিন্ন তাফসীরে বলা হয়েছে যে সিদরাতুল মুনতাহা অর্থাৎ
উচ্চতম সীমা; এর বাহিরে সৃষ্টির কোনো কাজ যোগাযোগ পায় না।
এক হাদিসে ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, যে উপরে যায় সবকিছু এখানে বন্ধ হয়ে
যায়, আর নিচ থেকে যাওয়া সবকিছু এখানেই এসে শেষ হয়। অন–নাওয়াবী বলেন, এ কারণে এর
নাম ‘মুনতাহা’, অর্থাৎ যেখানেই সকল বিজ্ঞানের শেষ। ইমাম সা’দী ব্যাখ্যা করেন,
যেহেতু সৃষ্টির সমস্ত বিজ্ঞান এখানেই শেষ হয়, তাই এই গাছকে সিদরাতুল-মুনতাহা
বলা হয়েছে। আল্লাহর নৈকট্য বোঝাতে বলা হয়, এই বৃক্ষের ওপরে আরবীর স্থিতি যেখানে
ঘন অজানা আচ্ছাদিত; তাই অসাম্প্রদায়িক শাস্ত্রকাররা এ স্থানে পরিপূর্ণ করুণার
চিহ্ন হিসেবে দেখেছেন।
জিবরাঈল (আঃ) এর থেমে যাওয়ার কারণঃ সহীহ হাদীস ও তাফসির অনুযায়ী কয়েকটি
মূল কারণ পাওয়া যায়ঃ
- সৃষ্টির সীমারেখাঃ জিবরাইল (আঃ) আল্লাহর সবচেয়ে সম্মানিত ফেরেশতা হলেও তিনি সৃষ্টিজগতের অন্তর্ভুক্ত। সিদরাতুল মুনতাহা হলো সেই সীমা, যেখানে এসে সৃষ্টিজগতের ক্ষমতা শেষ হয়ে যায়। এর পরবর্তী অংশ কেবল আল্লাহর অনুমতিপ্রাপ্তের জন্য উন্মুক্ত।
- আল্লাহর বিশেষ অনুমতিঃ রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর প্রিয় নবী ও শেষ রাসূল। তাঁকেই আল্লাহ বিশেষভাবে নিজের নৈকট্যে ডেকে নিয়েছিলেন। তাই জিবরাইল (আঃ) সেখানে আর অগ্রসর হতে পারেননি।
- হাদীসের বর্ণনাঃ বর্ণিত আছে, নবী ﷺ যখন জিবরাইলকে অগ্রসর হওয়ার জন্য বলেন, তখন তিনি জবাব দেন, হে মুহাম্মদ ﷺ! আমি যদি এক পা-ও অগ্রসর হই, তবে আমি জ্বলে ছাই হয়ে যাব। এ সীমা পর্যন্তই আমার অনুমতি রয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
- আল্লাহর মহিমার প্রতীকঃ জিবরাইলের থেমে যাওয়া আল্লাহর মহিমা ও বান্দার সীমাবদ্ধতার প্রতীক। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, আল্লাহর সান্নিধ্য শুধুমাত্র তাঁর নির্বাচিত বান্দাই পেতে পারেন।
প্রধান তাফসীরকারদের ব্যাখ্যাঃ
- ইবনে কাসিরঃ তাঁর তাফসীরে বর্ণিত আছে যে হযরত মুহাম্মদ (সা.) সিদরাতুল মুনতাহার কাছে দ্বিতীয়বার যা যাত্রায় জিবরাইলকে তাঁর প্রকৃত রূপে দেখেছেন। হাদিসরূপে বর্ণনায় তিনি বলেন, “অবশ্যই আমি সিদরাতুল মুনতাহায় জিবরাইলকে দেখেছি; তার ষাটটি ডানার কাঁধ ফাঁকা করে পূবাপশ্চিম অতিক্রম করেছে, এবং প্রতিটি ডানার থেকে মুক্তা ও মাণিক ঝরে পড়ছিল। অর্থাৎ ইবনে কাসির উল্লেখ করেন, (মুসলিম, আহমাদসহ বহু বর্ণনায়) তাঁর দৃষ্টিতে জিবরাইলের বিশালাঙ্গ রূপ এবং সেসেখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য প্রকাশ পেয়েছিল।
- আল-কুরতুবীঃ তিনি মুসলিম হাদিসের আলচনা করেন যা জানায়, যখন রাসূল (সা.) উদক্বে সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছলেন যা ষষ্ঠ আসমানের লোকেশনে তখন পৃথিবী থেকে উঠে আসা কোনকিছু আর এখানে ওঠার পরিসমাপ্তি ঘটল, আবার আসমানের উপরে থেকে নেমে আসার সব পথও এখানেই শেষ হলো। কুরতুবী এবং অন্যান্য মুফাসিরদের মতে, এ বৃক্ষের উপর দিয়ে কোনো ফেরেশতা বা সৃষ্টিকেই যেতে দেওয়া হয়নি।
- আল-তাবারী ও অন্যান্য মুফাসিরঃ অনেক মুফাসির (যেমন আল-তাবারী) ইঙ্গিত দিয়েছেন যে সিদরাতুল মুনতাহা হল শ্রেষ্ঠ সীমা ও সব জ্ঞানের অন্তঃস্থল। তফসীর-এ-ওসিত (ত্রিপাঠি) উল্লেখ করে, “এই স্থানকে سدرة المنتها বলা হয় কারণ এখানেই সৃষ্টি-জগতের বিজ্ঞান শেষ হয়, এর বাইরে কিছুই কোনও সৃষ্টি জানে না। ক’ব ইবন আব্বাস ও অন্যান্য সাহাবীদের বর্ণনায়ও বলা হয়েছে, সিদরাটি আরশের তলায় অবস্থিত এবং এ পর্যন্ত সমস্ত সৃষ্টির জ্ঞান এখানে এসে থেমে যায়।
সিদরাতুল মুনতাহা গাছের বর্ণনা ও বৈশিষ্ট্য
ইসলামী ইতিহাসে সিদরাতুল মুনতাহা গাছ একটি বিশেষ ও অলৌকিক নিদর্শন। এটি সপ্তম
আসমানের শেষ প্রান্তে অবস্থিত, যেখানে সৃষ্টিজগতের সীমা শেষ হয়ে যায়। মিরাজের
রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ জিবরাইল (আঃ)-এর সাথে এ গাছ পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। কোরআন, সহীহ
হাদীস এবং প্রখ্যাত তাফসিরে এ গাছের অবস্থান, আকার ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে
বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ
সিদরাতুল মুনতাহা গাছের বর্ণনাঃ ইসলামি ঐতিহ্যে সিদরাতুল মুনতাহা হলো
সপ্তম আসমানের শেষ প্রান্তে অবস্থিত এক বিশাল কুলগাছ (লোটগাছ)। নামটি আরবি
‘সিদরাতুল’ (কুল/সিদর গাছ) ও ‘মুনতাহা’ (শেষ সীমা) শব্দের সমন্বয়, অর্থাৎ
সীমান্তস্থ কুলগাছ। কোরআনে এর বর্ণনা অনুযায়ী এটি দামিযাহ্ নামে পরিচিত সপ্তম
আসমানের চূড়ান্ত সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত, সেই সীমার পরে কোনো সৃষ্টিজগত বা
ফেরেশতা যেতে পারে না। প্রচলিত অর্থে সিদরাতুল মুনতাহা মহাবিশ্বের শেষ সীমা
নির্দেশ করে, সৃষ্টির অবিনশ্বর দুনিয়ায় প্রবেশের ঠিক পূর্বের স্থান হিসেবে
বিবেচিত।
সহীহ হাদিসে অলৌকিক বৈশিষ্ট্যঃ সহীহ হাদিসে সিদরাতুল মুনতাহার কিছু অলৌকিক
বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছেঃ
- পাতা ও ফলঃ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত সহীহ হাদিসে বলা হয়েছে গাছটির পাতা হাতির কানের মতো এবং ফল মাটির বাসনের মতো। অর্থাৎ এগুলোর আকৃতি নবীজির ভাষায় তুলনা করে দেখানো হয়েছে, যা অপূর্ব সৌন্দর্যের নিদর্শন।
- নদী প্রবাহঃ বর্ণনায় আছে গাছটির মূলে চারটি নদী প্রবাহমান। এর মধ্যে পৃথিবীতে প্রবাহিত দুটি নদী হলো নীলনদ ও ইউফ্রেটিস, এবং গোপন দুইটি আল্লাহর জান্নাতের নদী (হাউজে আল-কাওসার ও সালসাবিল) দিকে যায়।
- অলৌকিক দীপ্তিঃ সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যখন আল্লাহর আদেশে গাছটি আলোকিত হয়, তখন তার রূপ এমন অপরূপ হয়ে ওঠে যে সৃষ্টি জগতের কেউ তা বর্ণনা করতে পারে না। অন্যান্য বর্ণনায় এ গাছের চারপাশে সোনালী প্রজাপতি উড়ে বেড়ায় এবং ফেরেশতারা বৃক্ষটিকে আবৃত রাখে। এসব বিবরণে গাছের অলৌকিক সৌন্দর্য ও রহস্যময়তা ফুটে ওঠে।
সিদরাতুল মুনতাহা কাহিনী সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা
সিদরাতুল মুনতাহা আল্লাহর আরশের নিকটে, সপ্তম আকাশের এক প্রান্তে অবস্থিত। এই
গাছের নাম ও অবস্থান ইসলামী আক্বীদার গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বিশেষ করে মিরাজ
সম্পর্কিত বর্ণনায়। সিদরাতুল মুনতাহাতেই শেষ হয় যা কিছু পৃথিবী থেকে ঊর্ধ্বে উঠে,
আর সেখান থেকেই তা গ্রহণ করা হয়। সেখানেই শেষ হয় যা কিছু উপর থেকে অবতীর্ণ হয় এবং
সেখান থেকেই তা ধরা হয়। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, এটি একটি বিশাল
বৃক্ষ, যা সকল ফেরেশতা, নবী ও সৃষ্টি জগতের জন্য সর্বোচ্চ সীমান্ত।
এর ওপারে কেবল আল্লাহর আদেশে কেউ যেতে পারে। সেখানেই নবী করীম (সা.) মিরাজ শেষে
পৌঁছেন। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘সিদরাতুল মুনতাহাকে এই নামে ডাকা হয়, কারণ
ফেরেশতাগণের জ্ঞান সেখানে গিয়েই শেষ হয়ে যায়। আর কেউই তা অতিক্রম করেননি, শুধু
রাসূলুল্লাহ (সা.) ব্যতীত। আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে বলেন, নিশ্চয়ই সে তাকে
আরেকবার দেখেছিল। সিদরাতুল মুনতাহার নিকটে। তার নিকটে আছে জান্নাতুল মাওয়া। যখন
বৃক্ষটিকে আচ্ছাদিত করে রেখেছিল যা তাকে আচ্ছাদিত করে (নাজম ৫৩/১৩-১৬)।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) কে মিরাজে নিয়ে
যাওয়া হলো, তখন তাঁকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। এটি ষষ্ঠ/সপ্তম
আসমানে অবস্থিত। এটাই সেই স্থান, যেখানে পৃথিবী থেকে যা কিছু উপরে ওঠে, তা এসে
শেষ হয় ও সেখান থেকেই গ্রহণ করা হয় এবং যা কিছু ওপর থেকে নেমে আসে, তা এখানেই এসে
শেষ হয় এবং এখান থেকেই তা গ্রহণ করা হয়। তিনি আরও বলেন, আল্লাহ বলেন, সিদরাতুল
মুনতাহাকে যা আচ্ছন্ন করেছিল।
সেটা ছিল সোনার পোকা বা প্রজাপতি (মুসলিম হা/২৭৯; মিশকাত হা/৫৮৬৫)। তিনি আরো
বলেন, এরপর আমার সামনে উন্মুক্ত করা হলো সিদরাতুল মুনতাহা। তখন আমি দেখলাম, এর ফল
ছিল হাজার শহরের বড় বড় পানির পাত্রের মতো, আর এর পাতাগুলো ছিল হাতির কানের মত। এই
হচ্ছে সিদরাতুল মুনতাহার কাহিনী (বুখারী হা/৩৮৮৭)।
শেষ কথাঃ সিদরাতুল মুনতাহা কী
সিদরাতুল মুনতাহা কী, আমার মতে, সিদরাতুল মুনতাহা মানুষের সীমাবদ্ধতা ও আল্লাহর
অসীম ক্ষমতার প্রতীক। এখানে এসে জিবরাইল (আঃ) থেমে যান, অথচ নবী ﷺ অগ্রসর হন। এ
ঘটনা দেখায়, মানুষের জ্ঞান, বিজ্ঞান কিংবা সামর্থ্য যতই উন্নত হোক না কেন, তা
আল্লাহর সীমাহীন মহিমার সামনে অতি ক্ষুদ্র। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃত
সফলতা শুধু দুনিয়াবি অর্জনে নয়, বরং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাই মানুষের জীবনের
প্রকৃত লক্ষ্য।
নামাজ ফরজ হওয়ার ঘটনাও এখানেই সংঘটিত হয়েছিল, যা প্রমাণ করে নামাজ কেবল ইবাদত নয়,
বরং আল্লাহর সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম। আমি মনে সিদরাতুল মুনতাহা মুসলিমদের
জন্য ধৈর্য, ইবাদত, নামাজের প্রতি গুরুত্ব এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ নির্ভরতার
শিক্ষা বহন করে। এটি প্রমাণ করে, আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকেই বিশেষ সম্মান দেন।
তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের চেষ্টা
করা।
এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মানুষের জ্ঞান ও শক্তি যত বড়ই হোক না কেন, তা
সীমাবদ্ধ। আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ ছাড়া কেউই তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারে না। আমার
কাছে সিদরাতুল মুনতাহা এমন এক স্মরণীয় নিদর্শন যা আমাদের ইবাদতে মনোযোগী হতে,
নামাজকে গুরুত্ব দিতে এবং আল্লাহর মহিমা উপলব্ধি করতে শিক্ষা দেয়। আশা
করি, সিদরাতুল মুনতাহা কী-সিদরাতুল মুনতাহা কোথায় অবস্থিত এ সম্পর্কে জানতে
পেরেছেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url