সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে জানতে হলে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।সালাতুল হাজাত একটি বিশেষ নফল ইবাদত। মানুষের বিশেষ কিছুর প্রয়োজন হলে কিংবা শারীরিক-মানসিকভাবে কোনো দুশ্চিন্তা দেখা দিলে এ নামাজ পড়ে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত। সালাতুল হাজত একটি সাধারণ নফল নামাজ।
সালাতুল-হাজত-নামাজের-নিয়ম
এই নামাজ পড়ার নির্দিষ্ট কোনো দিন বাধা নেই, যে এতো দিন পড়তেই হবে। নিজের যেকোনো প্রয়োজনে ধারাবাহিকভাবে সারাজীবন সালাতুল হাজত পড়া যায়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, সঙ্গত কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য বান্দা নিজ প্রভুর কাছে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করবে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

সালাতুল হাজত কী?

সালাতুল হাজত বলতে প্রয়োজন পূরণের নামাজ পড়া বুঝায়। তাই বৈধ বা হালাল যে কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করাকে সালাতুল হাজত বলে। যখন কেউ সাহায্য করতে পারে না, তখন মানুষের একমাত্র সাহায্যকারী হলেন মহান আল্লাহ। তিনিই পারেন মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে। মানুষের বিপদ যত সহজ আর কঠিনই হোক না কেন, তিনি পারে মানুষকে তা থেকে রক্ষা করতে।
এক্ষেত্রে অন্যতম মাধ্যম হলো বিপদ থেকে মুক্তি পেতে নামাজ পড়া। এ নামাজ ‘সালাতুল হাজত’ হিসেবে পরিচিত। এ নামাজের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআল ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সুরা বাকারা: আয়াত ১৫৩)। এ আয়াতে বিপদে ধৈর্যধারণ করে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার কথা বলেছেন আল্লাহ তাআলা।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম অন্যান্য নফল নামাজের মতো করেই আদায় করতে হয়। নামাজ আদায়ের আগে অবশ্যই অজু করতে হবে, কারণ অজু ছাড়া নামাজ আদায় বৈধ নয়। নিয়ত করার পর সাধারণ নামাজের মতোই কিয়াম, কিরাত, রুকু, সেজদা ও তাশাহহুদ আদায় করতে হয়। এটি দুই রাকাত বা চার রাকাত নফল নামাজ হিসেবে পড়া যায়। মূলত সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ফরজ বা নফল নামাজের মতোই, তবে এর উদ্দেশ্য আল্লাহর কাছে বিশেষ প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা।
সালাতুল হাজত নামাজ ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নফল ইবাদত, যা বিশেষ কোনো প্রয়োজন বা সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে আদায় করা হয়। এ নামাজের মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর দরবারে সাহায্য ও করুণা প্রার্থনা করে। জীবনের দুঃখ-কষ্ট, দুশ্চিন্তা কিংবা বৈধ কোনো চাহিদা পূরণের জন্য এ নামাজ আদায় করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। সাধারণত সালাতুল হাজত দুই রাকাত পড়া হয়, তবে ইচ্ছা করলে চার বা তারও বেশি রাকাত পড়া যায়। এটি ফরজ নয়, বরং নফল আমল, যা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম।

প্রথম রাকাতঃ সালাতুল হাজত নামাজের প্রথম রাকাতের নিয়ম অন্যান্য নফল নামাজের মতোই সহজ ও সুস্পষ্ট। প্রথম রাকাতে দাঁড়িয়ে জায়নামাজের দোয়া পড়ে সালাতুল হাজতের নিয়ত করতে হবে। নিয়ত শেষে তাকবিরে তাহরিমা বলে (আল্লাহু আকবার) নামাজ শুরু করতে হবে। এরপর সানা বা সাবহানাকাল্লাহুম্মা পড়া উত্তম। তারপর সুরা ফাতিহা পাঠ করে এর সাথে যেকোনো সুরা পড়তে হবে, যেমন সূরা কুরাইশ। এরপর নিয়মমতো রুকু, সিজদা ও কিয়াম আদায় করতে হবে। এভাবেই প্রথম রাকাত সম্পূর্ণ হয়।

দ্বিতীয় রাকাতঃ দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে প্রথমে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। এরপর যেকোনো একটি সুরা পড়তে হবে, যেমন সুরা ইখলাস। তারপর নিয়মমতো রুকু ও সিজদা সম্পন্ন করে বসে তাশাহহুদ, এরপর দরুদ শরীফ এবং শেষে দোয়া মসূরা পড়তে হবে। সবশেষে ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে। এভাবে দুই রাকাত সালাতুল হাজত নামাজ সম্পন্ন হয়। নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা, হামদ, নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ শরীফ এবং আন্তরিক দোয়ার মাধ্যমে বৈধ ও হালাল প্রয়োজনে আল্লাহর নিকট দোয়া করবে।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোনো নামাজ সঠিকভাবে আদায়ের মূল শর্তই হলো সঠিক নিয়ত। অন্যান্য নামাজের মতো সালাতুল হাজত নামাজেও নিয়ত করতে হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও বৈধ প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে। নিয়ত করার সময় মনে দৃঢ় সংকল্প রাখতে হবে যে, এই নামাজ কেবল আল্লাহর ইবাদতের জন্য আদায় করা হচ্ছে। নিম্নে সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত আরবি / বাংলা উভয়টিই প্রদান করা হল।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত আরবিতেঃ نَوَيُتْ اَنْ اصَّلي لِلهِ تَعَالَى رَكْعَتيْ صَلّاه الحاجَه سَنُّهُ رَسول اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا الى جهَه اَلْكَعْبه الشَّريفُه اللَّهُ اكَّبِرْ

বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াতুআন উসল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রকাতাই সলাতিল হাজাতি নাফলি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা"বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত বাংলায়ঃ আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দুরাকাত সালাতুল হাজত নামাজ আদায় করার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।

নিয়ত আরবি ভাষায় করা উত্তম হলেও, যারা আরবি জানেন না তারা বাংলায়ও নিয়ত করতে পারেন। শুধু মুখে নিয়ত করলেই হবে না, হৃদয়ে দৃঢ় সংকল্প রাখতে হবে। কারণ আল্লাহ বান্দার অন্তরের অবস্থা ভালোভাবেই জানেন। এই নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বান্দা তার দুঃখ-কষ্ট, প্রয়োজন ও সমস্যাগুলো আল্লাহর দরবারে পেশ করে। সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত সঠিকভাবে করা মানেই ইবাদতের প্রতি পূর্ণ মনোযোগী হওয়া এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।

সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত পড়ে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোনো প্রয়োজন পূরণে নিজেই এ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এ নামাজ পড়ার গুরুত্ব ওঠে এসেছে।
হজরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিষয় (বিপদ-আপদ) চলে আসতো, তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। সালাতুল হাজত নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। হাদিসে এসেছে যে, এই নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার প্রয়োজন পূর্ণ করেন। এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানসিক শান্তি ও ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়।

সালাতুল হাজত নামাজের সময়

সালাতুল হাজত নামাজের সময় নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী, কোনো বৈধ হালাল প্রয়োজনে বা মানসিক-শারীরিক দুশ্চিন্তায় পড়লে সালাতুল হাজত আদায় করা অত্যন্ত উত্তম আমল। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, বান্দা যেন ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে প্রভুর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)। তাই এ নামাজ বান্দার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তির একটি অনন্য মাধ্যম।
সালাতুল-হাজত-নামাজের-সময়
সালাতুল হাজত নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নির্ধারিত নেই। তবে মাকরুহ সময়ে এ নামাজ পড়া যাবে না, যেমন সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মধ্যাহ্নের সময়। উত্তম সময় হলো রাতের শেষ প্রহর, যা তাহাজ্জুদের সময় হিসেবে পরিচিত। এই সময় দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া ফজর নামাজের পর, মাগরিবের পর কিংবা জুমার দিনে বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের মাঝে সালাতুল হাজত আদায় করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

অতএব, সালাতুল হাজত নামাজ একজন মুসলিমের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার বিশেষ মাধ্যম। জীবনে যখনই কোনো বৈধ প্রয়োজন দেখা দেয় বা দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়, তখন এ নামাজ আদায় করা যেতে পারে। তবে উত্তম সময় হলো রাতের শেষ প্রহর, অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সময়। এ সময় বান্দার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাই সালাতুল হাজত নামাজ আন্তরিক মনোযোগ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আদায় করলে বান্দা আল্লাহর রহমত ও সাহায্য লাভে ধন্য হয়।

সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া 

সালাতুল হাজত নামাজে দোয়া আল্লাহর রহমত লাভের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি মুমিনের হৃদয়ে আশা, ধৈর্য এবং আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস জাগ্রত করে।  এই নামাজ সাধারণত দুই রাকাত নফল হিসেবে আদায় করা হয় এবং এর পর আল্লাহর দরবারে আন্তরিকভাবে দোয়া করা হয়।  নামাজ শেষে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করতে হয়, তারপর হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উপর দরুদ পাঠ করতে হয়। এরপর ব্যক্তিগত প্রয়োজন, সমস্যা সমাধান বা কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়।

একটি প্রচলিত দোয়া হলোঃ لا إله إلا الله الحليم الكريم سبحان الله رب العرش العظيم الحمد لله رب العالمين

বাংলা উচ্চারণঃ লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল হালীমুল কারীম, সুব-হানাল্লা-হি রব্বিল আরশিল আযীম, আলহামদু লিল্লা-হি রব্বিল আলামীন।

অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সহনশীল ও মহান দাতা। পবিত্র মহান আল্লাহ, যিনি মহান আরশের মালিক। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমগ্র বিশ্বের রব।

এই দোয়া বান্দাকে আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠ করে তোলে, কারণ এতে আল্লাহর তাওহীদ, তাঁর সহনশীলতা, মহানুভবতা ও মহিমার ঘোষণা রয়েছে। বান্দা যখন বিনয় ও আন্তরিকতার সাথে দোয়া করে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর দোয়া কবুল করেন। সালাতুল হাজত নামাজে এই দোয়া পড়ে বান্দা নিজের দুনিয়াবি প্রয়োজন যেমন রিজিক, সমস্যা সমাধান, রোগমুক্তি ইত্যাদি চাইতে পারে, আবার আখিরাতের মুক্তি, জান্নাত লাভ ও গুনাহ মাফের দোয়াও করতে পারে।

সালাতুল হাজত নামাজের শেষে দোয়া

সালাতুল হাজত নামাজের শেষে দোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নামাজ শেষ করার পর সর্বপ্রথম আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে এবং তাঁর মহিমা বর্ণনা করতে হবে। এরপর প্রিয় নবী মুহাম্মদ ﷺ-এর ওপর দরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে। তারপর নিজের বৈধ প্রয়োজন, সমস্যার সমাধান বা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী ﷺ বলেছেনঃ

যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন থাকে বা মানুষের কাছে কোনো দরকার থাকে, সে যেন সুন্দরভাবে অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে। এরপর আল্লাহর প্রশংসা করে এবং নবীর ওপর দরুদ পাঠ করে নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করে এবং এই দোয়া পড়েঃ

ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣُﻮﺟِﺒَﺎﺕِ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻢَ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺗِﻚَ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨِﻴﻤَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺑِﺮٍّ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻣَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﺛْﻢٍ ﻻَ ﺗَﺪَﻉْ ﻟِﻲ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﺇِﻻَّ ﻏَﻔَﺮْﺗَﻪُ ﻭَﻻَ ﻫَﻤًّﺎ ﺇِﻻَّ ﻓَﺮَّﺟْﺘَﻪُ ﻭَﻻَ ﺣَﺎﺟَﺔً ﻫِﻲَ ﻟَﻚَ ﺭِﺿًﺎ ﺇِﻻَّ ﻗَﻀَﻴْﺘَﻬَﺎ ﻳَﺎ ﺃَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ

উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজাইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিরর, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসম। লা তাদা লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু, ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু।

অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সহনশীল ও দয়ালু। পবিত্র মহান আরশের প্রভু আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য। আমি তোমার কাছে তোমার রহমতের কারণ, ক্ষমার দৃঢ়তা, প্রতিটি পুণ্যের লাভ এবং সব পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করি। আমার কোনো গুনাহ রেখো না, যা তুমি ক্ষমা করোনি এবং কোনো দুশ্চিন্তা রেখো না, যা তুমি দূর করোনি। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)

অতিরিক্ত দোয়াঃ ওপরের দোয়ার পর নিজের প্রয়োজন বা দরকারের জন্য নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। সালাতুল হাজত নামাজের অতিরিক্ত দোয়া হলো নামাজ শেষে নির্ধারিত দোয়া ও দরুদ শরীফ পাঠ করার পর নিজের বৈধ প্রয়োজনের জন্য আল্লাহর কাছে সরাসরি প্রার্থনা করা। এ সময় বান্দা চাইলে আরবি দোয়ার পাশাপাশি নিজের ভাষায়ও দোয়া করতে পারে। কারণ আল্লাহ সব ভাষাই বোঝেন এবং বান্দার অন্তরের অভিপ্রায় জানেন।

সালাতুল হাজত নামাজে মোনাজাতের আদব

সালাতুল হাজত নামাজে মোনাজাতের আদব ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই নামাজ বিশেষ প্রয়োজন বা সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে আদায় করা হয় এবং এর মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। সালাতুল হাজত নামাজ শেষ করার পর মোনাজাত করার সময় অবশ্যই বিনীত, আন্তরিক ও ভক্তিপূর্ণ মনোভাব রাখতে হবে। নামাজের পর প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করা, তারপর হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উপর দরুদ পাঠ করা দোয়ার আদবের অংশ।

এরপর নিজের চাহিদা বা প্রয়োজন আল্লাহর কাছে তুলে ধরা উত্তম আদব। মোনাজাতের সময় হাত তুলে আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে হয়। দোয়া করতে হবে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে যে, আল্লাহই সকল প্রয়োজন পূর্ণ করার একমাত্র ক্ষমতাবান। সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া শুধু দুনিয়াবি সমস্যার সমাধানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আখিরাতের কল্যাণের জন্যও প্রার্থনা করা উচিত। বিনয়ী কণ্ঠে, হৃদয় থেকে বের হওয়া দোয়াই আল্লাহ বেশি কবুল করেন।

তাই অহংকার, অবহেলা বা উদাসীন মনোভাব নিয়ে দোয়া করা উচিত নয়। সালাতুল হাজত নামাজে মোনাজাত ও দোয়ার সময় সর্বদা বিনয়, আন্তরিকতা ও দৃঢ় বিশ্বাস বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি বান্দার ঈমানকে শক্তিশালী করে এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনার স্বীকৃতি নিশ্চিত করে। তাই সালাতুল হাজত নামাজে দোয়া ও মোনাজাতের সময় সর্বদা বিনয়, আন্তরিকতা ও দৃঢ় বিশ্বাস বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

সালাতুল হাজত নামাজ আদায়ে সতর্কতা

সালাতুল হাজত নামাজ আদায়ে সতর্কতা অবলম্বন করা একজন মুসলমানের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নামাজ আল্লাহর কাছে বিশেষ প্রয়োজন পূরণের জন্য আদায় করা হয়। সাধারণত এটি দুই রাকাত নফল নামাজ, যার পর আল্লাহর প্রশংসা, দরুদ শরীফ এবং নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ করে নিজের বৈধ চাহিদা পেশ করা হয়। তবে নামাজ আদায়ের সময় কিছু বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখা অত্যান্ত জরুরি। নিচে সালাতুল হাজত নামাজ আদায়ে সতর্কতাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ
সালাতুল-হাজত-নামাজ-আদায়ে-সতর্কতা
১. নিষিদ্ধ সময় এড়িয়ে চলাঃ সালাতুল হাজত নামাজ আদায়ের সময় কিছু নিষিদ্ধ সময় এড়িয়ে চলা আবশ্যক।অর্থাৎ সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মধ্যাহ্নের সময়ে এ নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ সময়গুলোকে মাকরুহ সময় বলা হয়। তাই সালাতুল হাজত নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত অবশ্যই এ সময়গুলো বাদ দিয়ে আদায় করা উচিত। উত্তম সময় হলো রাতের শেষ প্রহর (তাহাজ্জুদের সময়)। কারণ এ সময়ে বান্দার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়া ফজরের পর, মাগরিবের পর, কিংবা জুমার দিনে আসর থেকে মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ও দোয়া কবুলের জন্য বিশেষ ফজিলতপূর্ণ বলে বর্ণিত হয়েছে।

২. মনোযোগ বজায় রাখাঃ সালাতুল হাজত নামাজ আদায়ে মনোযোগ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। নামাজ শুধু শারীরিক দিক থেকে সম্পন্ন করা যথেষ্ট নয়, বরং হৃদয়ের উপস্থিতি ও মানসিক মনোযোগই নামাজকে আল্লাহর কাছে কবুলযোগ্য করে তোলে। তাই এ নামাজ পড়ার সময় দুনিয়াবি চিন্তা দূরে সরিয়ে পুরোপুরি আল্লাহর দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। শুধু দেহের ইবাদত যথেষ্ট নয়, বরং হৃদয়ের উপস্থিতিই আল্লাহর কাছে কবুলের মাধ্যম। অর্থাৎ দেহের ইবাদতের সঙ্গে হৃদয়ের বিনয় ও মনোযোগ থাকলেই প্রকৃত ইবাদত সম্পন্ন হয়। তাই বান্দার উচিত বিনয়ী মন, ধৈর্য ও দৃঢ় আস্থার সঙ্গে নামাজ ও দোয়া করা।

৩. বৈধ প্রয়োজনঃ সালাতুল হাজত নামাজ আল্লাহর কাছে বৈধ ও কল্যাণকর প্রয়োজন পূরণের জন্য আদায় করা হয়। তাই এ নামাজ কখনোই হারাম, গুনাহ বা নিষিদ্ধ প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে পড়া যাবে না। আল্লাহ এমন দোয়া কবুল করেন না, যা গুনাহর পথে পরিচালিত করে। সালাতুল হাজতের দোয়া অবশ্যই হালাল, বৈধ ও জায়েজ প্রয়োজনের জন্য হতে হবে। যেমন রিজিকের বরকত চাওয়া, দুশ্চিন্তা দূর করা, সুস্থতা লাভ করা, নেককার সন্তান প্রার্থনা করা, কোনো বৈধ কাজে সফলতা পাওয়া ইত্যাদি।

৪. ধৈর্য ধরাঃ দোয়া করার পরপরই ফলাফল না আসতে পারে, তবে একজন মুমিনের উচিত দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে আল্লাহ সর্বোত্তম সময়ে তার প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। তাই দোয়ার ক্ষেত্রে ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখা আবশ্যক। ধৈর্য ধরা মানে দোয়া করার পর আল্লাহর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। কারণ তিনি জানেন কোন সময়, কোন অবস্থায় দোয়া কবুল করা বান্দার জন্য সর্বোত্তম। একজন প্রকৃত মুমিন জানে যে আল্লাহ কখনো বান্দার দোয়া অগ্রাহ্য করেন না; বরং উত্তম সময় ও উত্তম উপায়ে কবুল করেন।

শেষকথাঃ সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজ ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত, যা বিশেষ প্রয়োজন বা বৈধ, হালাল সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে আদায় করা হয়। আমার মতে, এই নামাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মনোযোগ, বিনয় ও আন্তরিকতা বজায় রাখা। দোয়া করার সময় অহংকার বা উদাসীন মনোভাব গ্রহণযোগ্য নয়। সালাতুল হাজত নামাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে, হৃদয়ে আশা ও আত্মবিশ্বাস জন্মায়।

সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত হলো, যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত নামাজ পড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাহায্যের জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করে, আল্লাহ তাঁর প্রয়োজন সর্বোত্তম সময়ে পূর্ণ করেন। এটি শুধু দুনিয়াবি সমস্যা সমাধানেই সাহায্য করে না, বরং আখিরাতের কল্যাণও নিশ্চিত করে। সালাতুল হাজত নামাজ মুমিনদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক অনন্য মাধ্যম। আশা করি, সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url