ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলে সন্তান লাভের দোয়া ও আমল

ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলে সন্তান লাভের দোয়া ও আমল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কুরআন ও হাদিসে সন্তান লাভের জন্য দোয়ার বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। বিশেষ করে, পুত্র সন্তান লাভের জন্য বহু বাবা-মায়ের একটি গভীর আকাঙ্ক্ষা থাকে। তবে সবকিছুর ফলাফল আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
ইসলামের-দৃষ্টিতে-ছেলে-সন্তান-লাভের-দোয়া
তাই ধৈর্য, তাওয়াক্কুল ও নিয়মিত ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই হলো প্রকৃত উপায়।ছেলে সন্তান লাভের জন্য খাঁটি নিয়ত, নিয়মিত নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, সূরা মারিয়াম, সূরা ইনশিরাহ ও সূরা আল-আম্বিয়া’র আয়াত ৮৯ পড়া এবং দোয়া করা গুরুত্বপূর্ণ আমল।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলে সন্তান লাভের উপায়

ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলে সন্তান লাভের উপায়

ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলে সন্তান লাভের উপায় বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনা করা যায়। ইসলাম শুধুমাত্র সন্তান কামনার ওপর জোর দেয় না, বরং নেক ও সৎ সন্তান কামনাকে উৎসাহিত করে। ছেলে হোক বা মেয়ে, উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নিয়ামত। তবে যারা বিশেষভাবে পুত্র সন্তান কামনা করেন, তাদের জন্য কিছু উপকারী ইসলামিক দিকনির্দেশনা রয়েছে। নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ
১. সন্তান লাভের জন্য শারীরিক দিকনির্দেশনাঃ একজন বাবা-মায়ের জন্য সন্তান লাভের প্রথমে শারীরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। সুস্থ দেহ এবং সঠিক স্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সন্তান লাভের জন্য। সঠিক পুষ্টি গ্রহণ, পরিমিত ব্যায়াম এবং মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করতে হবে। আপনি যদি সুস্থ থাকেন এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে আপনার শরীরও পুত্র সন্তান লাভের জন্য প্রস্তুত হবে। ইসলামে বলা হয়েছে, শরীর এবং মন পরিষ্কার ও শক্তিশালী হলে সন্তানের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আদর্শ জীবন গঠন করা সহজ হয়। সন্তান লাভের জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ করে পুষ্টিকর খাবার, যেমন ফলমূল, শাকসবজি এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে, পদ্ধতিগত ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে।

২. আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল রাখাঃ সন্তান লাভ, বিশেষ করে ছেলে সন্তান পাওয়া সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। ইসলাম ধর্মে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তার পথ অনুসরণ করে, সে কখনো বিপদে পড়বে না। এটি সন্তান লাভের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনার দোয়া এবং চেষ্টা আল্লাহর ইচ্ছার সাথে মিলিত হলে, তিনি আপনাকে নিশ্চয়ই সন্তানের বরকত প্রদান করবেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হচ্ছে, “আল্লাহুম্মা আত্তিনা মিন লাদুনকা রাহমাতা ওয়াহাইয়ি লানা মিন আমরিনা রশাদা যার অর্থ, “হে আল্লাহ, আমাদের কাছে থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের সকল কাজ সঠিকভাবে পরিচালিত করুন।” এই দোয়া যদি আপনি নিয়মিত পাঠ করেন, তবে আপনি অনেক উপকার পেতে পারেন।

৩. আল্লাহর ওপর বিশ্বাস এবং তার ইচ্ছার প্রতি সম্মানঃ যদি আপনি মনে করেন যে আপনার প্রার্থনা আল্লাহ গ্রহণ করেননি, তবে এটা ভুল ধারণা হতে পারে। তিনি আমাদের জন্য যেটা শ্রেষ্ঠ মনে করবেন, সেটাই তিনি আমাদের প্রদান করবেন, এবং আমরা যদি সন্তুষ্ট থাকি এবং আল্লাহর প্রতি আমাদের বিশ্বাস বজায় রাখি, তবে সেই সন্তানের জন্য আল্লাহ আমাদের জীবনে আরও সুখ এবং শান্তি আনবেন। এছাড়া, ইসলামে পুত্র সন্তান লাভের জন্য কিছু দোয়া রয়েছে যা পাঠ করলে আল্লাহ আপনাকে উপকারী বরকত দান করবেন। এর মধ্যে কিছু বিশেষ দোয়া এবং আধ্যাত্মিক উপায় রয়েছে যেগুলি আপনি নিয়মিত পাঠ করতে পারেন, যেমন সুরা ফাতিহা, সুরা বাকারাহ, এবং সুরা ত্বাহা।এগুলি পুত্র সন্তান লাভের জন্য বিশেষ দোয়া হিসেবে প্রমাণিত। তবে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোনো কিছুই ঘটতে পারে না, এবং তাই আমাদের দোয়া ও বিশ্বাসের মধ্যে পূর্ণ নিষ্ঠা থাকা উচিত।

৪. সঠিক সময়ে সহবাস ও সুন্নাহ অনুযায়ী আমলঃ ইসলামিক শিক্ষা অনুযায়ী, সহবাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র বিষয়, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সম্পাদিত হওয়া উচিত। সহবাসের পূর্বে নির্দিষ্ট দোয়া পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসের সময় এই দোয়া পড়ে—بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহ, আল্লাহুম্মা জন্নিবনাশ শাইতান ওয়া জন্নিবিশ শাইতান মা রজাকতানা। তাহলে যদি তাদের থেকে কোনো সন্তান জন্মায়, সে সন্তানকে শয়তান ক্ষতি করতে পারবে না (সহীহ বুখারি, মুসলিম)। এছাড়া, ইসলামি আদর্শ অনুযায়ী সহবাসের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, গোপনীয়তা রক্ষা করা এবং একে অপরের প্রতি সম্মান বজায় রাখা জরুরি। রাতের নিরিবিলি সময়ে, বিশেষত জুমার রাত বা ইসলামে ফজিলতপূর্ণ রাতগুলোতে সহবাসকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এসব আমল শুধু দাম্পত্য সম্পর্ককে মজবুত করে না, বরং তা আল্লাহর পক্ষ থেকেও পুরস্কৃত হয়। সঠিক নিয়ত ও সুন্নাহ অনুযায়ী সহবাস দাম্পত্য জীবনে শান্তি ও বরকত নিয়ে আসে।

ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলে সন্তান লাভের দোয়া

ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলে সন্তান লাভের দোয়া করা বৈধ, তবে অবশ্যই আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি সম্পূর্ণ তাওয়াক্কুল ও সন্তুষ্টি থাকা চাই। আল্লাহ যাকে চান, যেভাবে চান, সেভাবেই নেয়ামত দান করেন। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, নেক ও দ্বীনদার সন্তান লাভ করা, সে ছেলে হোক বা মেয়ে। কারণ একজন আল্লাহভীরু সন্তানই প্রকৃত নেয়ামত এবং দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণের কারণ। নিচে তিনটি বিশেষ কুরআনি দোয়া এবং তা কবুলের উপযোগী কিছু আমল তুলে ধরা হলোঃ

১. নবী যাকারিয়া (আঃ)-এর দোয়াঃ رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً ۖ إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ

উচ্চারণঃ রব্বি হাব্ লি মিল্ লাদুন্‌কা জরিয়্যাতা তইয়্যিবাহ। ইন্নাকা সামিয়উদ্ দুআ।

অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনি নিজ করুণায় আমাকে একটি পবিত্র (নেক) সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শুনে থাকেন। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩৮) নবী যাকারিয়া (আঃ) বৃদ্ধ বয়সেও আল্লাহর কাছে সন্তানের জন্য দোয়া করেছিলেন এবং আল্লাহ তাঁকে হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) এর মতো নেক পুত্র সন্তান দান করেন। এটি প্রমাণ করে, আন্তরিক দোয়া কখনো বৃথা যায় না।

২. নবী ইব্রাহিম (আঃ)-এর দোয়াঃ رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ

উচ্চারণঃ রব্বি হাব্ লি মিনাস্ সালিহীন

অর্থঃ হে আমার প্রভু! আমাকে নেক (সৎ) সন্তান দান করুন। (সূরা আস-সাফফাত, আয়াত ১০০)। এই ছোট অথচ গভীর দোয়াটিতে সন্তান কামনার সঙ্গে সৎ ও নেক হওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। শুধু সন্তান নয়, বরং দ্বীনদার সন্তান চাওয়ার শিক্ষা এ দোয়ায় নিহিত।

৩. জেনারেল দোয়া, সূরা ফুরকান থেকেঃ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

উচ্চারণঃ রব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আয়ুন, ওয়াজআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।

অর্থঃ হে আমাদের প্রভু! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে আমাদের চোখের শীতলতা বানাও এবং আমাদের পরহেজগারদের নেতা বানাও। (সূরা আল-ফুরকান, আয়াত ৭৪)। 
এটি একটি পূর্ণাঙ্গ দোয়া শুধু সন্তান নয়, বরং পরহেজগার পরিবার এবং নেতৃত্বের মানসিকতা গঠনের আকাঙ্ক্ষা এতে রয়েছে।

দোয়া কবুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আমলঃ দোয়া একটি শক্তিশালী ইবাদত, যা আল্লাহর রহমত পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। তবে দোয়া কবুলের জন্য কিছু বিশেষ আমল পালন করা উত্তম। নিচে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আমল তুলে ধরা হলো।

১. তাহাজ্জুদ নামাজঃ রাতের শেষ প্রহরে পড়া এই নামাজ আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এই সময়ে আল্লাহ নিজেই দুনিয়ার আসমানে এসে বলেন, “কে আমার কাছে চায়, আমি তাকে দেব?” তাই, দুই বা চার রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়ে আন্তরিকভাবে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। সন্তান কামনায় কুরআনি দোয়াগুলো এই সময় পড়া খুবই উপকারী।

২. ইসতেগফার ও তাওবা করাঃ পাপের কারণে অনেক সময় দোয়া কবুল হয় না। তাই নিয়মিত “আস্তাগফিরুল্লাহ” বলা এবং আন্তরিকভাবে গুনাহ থেকে ফিরে আসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুরআনে (সূরা নূহ, আয়াত ১০-১২) বলা হয়েছে, যারা ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান দান করেন।

৩. ধৈর্য ও ঈমান রাখাঃ দোয়া করার পর ধৈর্য ধরে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হয়। নবী যাকারিয়া (আঃ) ও ইব্রাহিম (আঃ) বহু বছর পর আল্লাহর পক্ষ থেকে পুত্র সন্তান লাভ করেছেন। তাই, ঈমান ও দৃঢ়তার সঙ্গে নিয়মিত দোয়া চালিয়ে যাওয়া উচিত। এই আমলগুলো মেনে চললে দোয়া কবুলের আশায় থাকা যায় ইনশাআল্লাহ। আশা করছি, ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলে সন্তান লাভের দোয়া গুলো পড়ে উপকৃত হবেন।

পুত্র সন্তান লাভের জন্য ইবাদত (ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি)

পুত্র সন্তান লাভের জন্য ইবাদত করা ইসলামসম্মত, তবে সেটা যেন আল্লাহর ওপর নির্ভরতা ও তাওয়াক্কুলের ভিত্তিতে হয়। যদিও ইসলাম ছেলে-মেয়ে কোনো সন্তানের মধ্যেই বৈষম্য করে না, তবুও যদি কেউ আল্লাহর কাছে নেক ও পরহেজগার পুত্র সন্তানের জন্য দোয়া করতে চান, তা সম্পূর্ণ বৈধ এবং ইসলাম সম্মত। তবে এই চাওয়ার পেছনে উচিত নেক নিয়ত ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখা। ইসলামে এমন কিছু ইবাদত ও আমল রয়েছে, যেগুলো পুত্র সন্তান লাভের জন্য বরকতময় বলে বিবেচিত।

১. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়াঃ তাহাজ্জুদ নামাজ হচ্ছে রাতের গভীরে আদায় করা নফল নামাজ, যা দোয়া কবুলের এক বিশেষ মুহূর্ত। হাদীসে এসেছে, আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতের শেষ তৃতীয় ভাগে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন, ‘কে আছে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব, কে আছে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দিব (সহীহ বুখারি ও মুসলিম), তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহর কাছে একাগ্রচিত্তে প্রার্থনা করা বিশেষত পুত্র সন্তান লাভের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই সময় আপনি এই দোয়াগুলো পাঠ করতে পারেন, رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ অর্থঃ হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে নেক সন্তান দান করুন। رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা! আমাকে একা রেখো না, আর আপনি হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকারী।(সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৯)

২. নফল নামাজ ও ইসতেগফার পড়াঃ পুত্র সন্তান কামনায় দুই রাকাআত নফল নামাজ পড়ে, দোয়া করা উত্তম। নামাজের পর আল্লাহর প্রশংসা, দরুদ শরীফ এবং নিচের দোয়া পড়া যেতে পারে: اللهم ارزقني ذرية طيبة، واجعل لي من لدنك وليا صالحا অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে পবিত্র সন্তান দান করুন এবং আপনার পক্ষ থেকে একজন নেক সন্তান আমার জন্য নির্ধারণ করুন। সঙ্গে ইসতেগফার (استغفر الله) বেশি করে পড়লে আল্লাহর রহমত ত্বরান্বিত হয়। কুরআনে এসেছে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বৃদ্ধি করবেন। (সূরা নূহ, আয়াত ১০-১২)

৩. সুরা বাকারাহ ও সুরা ত্বাহা পাঠঃ সুরা বাকারাহ কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা এবং এতে রয়েছে ইসলামের মৌলিক নির্দেশনা, বিধান ও হিকমতের বিশাল ভাণ্ডার। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন: তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না। সুরা বাকারাহ পাঠ করো, কারণ এতে শয়তান পালায়।(সহীহ মুসলিম) সন্তান কামনায় বিশেষভাবে এটি পড়া অত্যন্ত ফলদায়ক। সুরা ত্বাহা মূলত নবী মূসা (আঃ)-এর জীবনী ও তাঁর দোয়ার শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের তাওয়াক্কুল ও ভরসার অনুশীলন শেখায়। সন্তান কামনায় এটি বিশেষভাবে উপকারী বলে ইসলামিক পণ্ডিতদের অভিমত রয়েছে। সুরা ত্বাহা-তে আছে নবী মূসা (আঃ)-এর এই বিখ্যাত দোয়া—رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي. وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও এবং আমার কাজ সহজ করে দাও। (সুরা ত্বাহা, আয়াত ২৫-২৬)

পুত্র সন্তান লাভে সহবাসে করণীয়

ইসলামে সহবাস একটি পবিত্র সম্পর্ক যা শুধু পারস্পরিক আনন্দের জন্য নয়, বরং নেক সন্তান লাভের মাধ্যম হিসেবেও বিবেচিত হয়। একজন মুমিন যদি সহবাসের সময় নির্দিষ্ট কিছু সুন্নাত ও আদব মেনে চলে, তবে আল্লাহ তাআলা তাঁর এই সম্পর্ককে বরকতময় ও ফলপ্রসূ করে তুলতে পারেন। নিচে পুত্র সন্তান লাভের নিয়তে সহবাসে করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো:

১. নিয়ত করাঃ সহবাসের পূর্বে মনের গভীরে এই নিয়ত স্থির করা উচিত যে, আমি আল্লাহর হালাল বিধান মেনে চলছি এবং তাঁর কাছ থেকে নেক ও পুত্র সন্তান প্রার্থনা করছি। এই নিয়ত শুধু একটি মানসিক ইচ্ছা নয়, বরং তা একজন মুমিনের খাঁটি উদ্দেশ্য ও ঈমানদীপ্ত প্রত্যাশার প্রকাশ। আল্লাহর প্রতি আস্থা ও তাওয়াক্কুল রেখে যদি এভাবে সহবাস করা হয়, তবে তা ইবাদতের রূপ লাভ করে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। নিয়ত হলো আমলের ভিত্তি সঠিক নিয়ত সফলতার প্রথম ধাপ।

২. পাকপবিত্র হওয়াঃ সহবাসের আগে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত শরীর ও মন পবিত্র রাখা। এ ক্ষেত্রে গোসল বা অন্তত ওযু করে নেওয়া শ্রেয়। ইসলাম পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। পবিত্রতা কেবল বাহ্যিক নয়, বরং অন্তরের খালিস নিয়ত ও শুদ্ধতাও এর অন্তর্ভুক্ত। সহবাস একটি ইবাদতস্বরূপ কাজ, তাই এ আমলে শরীরিক পবিত্রতা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপায় হয়ে দাঁড়ায়। পবিত্রতা শুধু শারীরিক নয়, বরং তা রূহানিয়াত ও দোয়া কবুলের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে।

৩. পশুর মতো সংগম না করাঃ সহবাসে শালীনতা ও আন্তরিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হঠাৎ জোর করে, রুক্ষ বা হিংস্রভাবে সহবাস করা পশুসুলভ আচরণ, যা ইসলামে নিরুৎসাহিত। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভালোবাসা, মমতা ও সম্মানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। তাই এই সম্পর্কের প্রতিটি মুহূর্তে আদব ও সংযম থাকা উচিত। ইসলাম শিক্ষা দেয়, সহবাস যেন আনন্দময় ও পারস্পরিক সম্মতিতে হয়। অতিরিক্ত রুক্ষতা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক আঘাতও ডেকে আনতে পারে। তাই সহবাসে কোমলতা, যত্ন ও পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখা আবশ্যক।

৪. বিসমিল্লাহ বলে শুরু করাঃ সসহবাস শুরুর পূর্বে “بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا” — এই দোয়াটি পাঠ করা সুন্নত। এর বাংলা অর্থ আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! আমাদের শয়তান থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদের যে সন্তান আপনি দান করবেন, তাকেও শয়তান থেকে রক্ষা করুন। এই দোয়ার মাধ্যমে একজন মুসলিম দাম্পত্য সম্পর্কের শুরুতেই আল্লাহর শরণাপন্ন হন। এতে সহবাস যেমন ইবাদতের রূপ নেয়, তেমনি সম্ভাব্য সন্তানকেও শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য দোয়া করা হয়। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থার প্রকাশ।

৫. সুগন্ধি ব্যবহার করাঃ সহবাসের আগে স্বামী-স্ত্রীর উচিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, ভালো পোশাক পরা এবং হালকা ও আকর্ষণীয় সুগন্ধি ব্যবহার করা। এটি শরিয়তের আদবসমূহের অন্তর্ভুক্ত এবং পারস্পরিক ভালোবাসা ও মমতা বাড়াতে সহায়ক। সুগন্ধির ব্যবহারে উভয়ের মধ্যে মানসিক স্বস্তি তৈরি হয় এবং পরিবেশ হয় আরও রোমান্টিক ও সম্মানজনক। এতে শরীরিক সম্পর্ক শুধু দৈহিক চাহিদা নয়, বরং পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমেও গড়ে ওঠে, যা একটি সন্তানের সুন্দর আগমনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

৬. পর্দা রক্ষাঃ সহবাসের সময় পর্দা রক্ষা করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ আদবগুলোর একটি। এটি শুধু বাইরের লোকদের দৃষ্টির আড়াল নয়, বরং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার গোপনীয় সম্পর্কের মর্যাদা রক্ষাও। সহবাস এমন ঘরে হওয়া উচিত যেখানে কেউ প্রবেশ করতে না পারে এবং পর্দা টানা থাকে। হাদিসে এসেছে, “তোমাদের কেউ যেন পশুর মতো উলঙ্গ হয়ে স্ত্রী সহবাস না করে; বরং একটি কাপড় দিয়ে নিজেদের ঢেকে রাখে।” (ইবনে মাজাহ) অতএব, সহবাসের সময় গোপনীয়তা ও পর্দা বজায় রাখা আল্লাহর নির্দেশ পালনের একটি মাধ্যম এবং পুত্র সন্তানের আগমনের পূর্বে আত্মিক ও নৈতিক শুদ্ধতার প্রতিফলন।

৭. শৃঙ্গার করাঃ সহবাসের পূর্বে স্ত্রীর প্রতি মমতা ও ভালোবাসা প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরি। ভালোবাসার কথা বলা, কোমল স্পর্শ, স্নেহপূর্ণ চুমু খাওয়া—এসব শৃঙ্গারমূলক আচরণ সম্পর্ককে আরো মজবুত করে। এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাস, বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়, যা মানসিক প্রশান্তি ও সুখের অনুভূতি এনে দেয়। ইসলাম সহবাসকে শুধুমাত্র দেহিক নয়, বরং হৃদয়ের মিলন হিসেবে দেখে, তাই শৃঙ্গার করাকে উৎসাহিত করেছে। এতে সম্পর্ক গভীর ও স্থায়ী হয়, যা পুত্র সন্তানের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ গঠনে সাহায্য করে।

৮. কিবলামুখী না হওয়াঃ সহবাসের সময় কিবলা (যা ইসলামে পবিত্র ও দিকনির্দেশক) মুখ করে থাকা অনুচিত। কারণ কিবলা হলো আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের দিক, যেখানে মনোযোগ ও ইবাদত নিবেদিত হওয়া উচিত। সহবাসের মতো ব্যক্তিগত ও দুনিয়াত্মক কাজের সময় কিবলা মুখ করা ঠিক নয়, কারণ এটি কিবলার পবিত্রতাকে সম্মান না করা হিসেবে গণ্য হতে পারে। তাই সহবাসের সময় শরীরের অন্য দিক থাকা শ্রেয়, যাতে কিবলার প্রতি সম্মান বজায় থাকে এবং আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণ হয়।

৯. সম্পূর্ণ উলঙ্গ না হওয়াঃ সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত সম্পূর্ণ নগ্ন না থেকে একটি পাতলা কাপড় বা চাদর ব্যবহার করে শরীর আংশিকভাবে ঢেকে রাখা। এটি ইসলামে শালীনতা ও হিজাবের অংশ হিসেবে গণ্য এবং সম্পর্কের মর্যাদা রক্ষায় সাহায্য করে। শরীর আংশিকভাবে ঢাকা থাকলে পারস্পরিক সম্মান বৃদ্ধি পায় এবং সহবাসের সময় শালীনতা বজায় থাকে। এতে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত হলেও সৌন্দর্য ও আচার-আচরণে ভদ্রতা থাকে, যা ইসলামের শিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

১০. বীর্যপাতের পরপরই আলাদা না হওয়াঃ সহবাসের পর বীর্যপাতের সঙ্গে সঙ্গে তাড়াহুড়া করে আলাদা হওয়া উচিত নয়। শেষ মুহূর্তেও ভালোবাসা, সৌহার্দ্য এবং শ্রদ্ধা বজায় রাখা জরুরি। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি মমতা ও ভালোবাসা প্রকাশ করলে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয় এবং মানসিক শান্তি আসে। এভাবে ধৈর্য ও কোমলতা প্রদর্শন করা পারস্পরিক বন্ধন মজবুত করে এবং পরিবারে সুখ-শান্তির ভিত্তি গড়ে তোলে, যা ইসলামি আদর্শের প্রতিফলন।

১১. বীর্যপাতের দোয়াঃ সহবাসের পর যখন বীর্যপাত হয়, তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত। এটি একটি দোয়া ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ, যাতে সম্পর্ক বরকতময় হয় এবং আল্লাহ থেকে নেক পুত্র সন্তান লাভের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা হয়। এ ধরনের দোয়া আল্লাহর কাছে মুমিনের নিবেদন এবং তাঁর রহমত লাভের পথ সুগম করে। সহবাসের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর রহমত ও বরকতের জন্য হওয়া উচিত, যাতে পরিবারের জন্য সুস্থ ও নেক সন্তান লাভ সম্ভব হয়।

সবশেষে, সহবাস শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদা পূরণের মাধ্যম নয়; এটি সঠিক নিয়ত, ইসলামের সুন্নত অনুসরণ এবং অন্তরে দোয়া নিয়ে করা একটি পবিত্র আমল। এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয় এবং নেক পুত্র সন্তান লাভের পথ সুগম হয়। সুতরাং, প্রত্যেক মুসলিম দম্পতির উচিত এই মহান নিয়ামতকে আল্লাহর হুকুমমতো সম্মান ও মায়ায় পালন করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হালাল, বরকতময় ও কল্যাণময় পুত্র সন্তান দান করুন। আমিন।

নেককার ছেলে সন্তান লাভের দোয়া

নেককার ছেলে সন্তান লাভের দোয়া ইসলামে একটি অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সন্তানের প্রতি একজন মুমিন বাবা-মায়ের স্বাভাবিক চাওয়া থাকে, তার সন্তান হোক নেক, সৎ, আল্লাহভীরু এবং দ্বীনদার। এই আকাঙ্ক্ষা শুধুমাত্র দাম্পত্য সুখ-শান্তির জন্য নয়, বরং এটি একটি পরকালমুখী চিন্তা, কারণ নেক সন্তান শুধু দুনিয়ার আলো নয়, মৃত্যুর পরও সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কাজ করে।
নেককার-ছেলে-সন্তান-লাভের-দোয়া
ইসলামে সন্তান লাভের আগ্রহকে বৈধভাবে চর্চা করতে বলা হয়েছে এবং এজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এমন বহু দোয়ার কথা বলা হয়েছে, যা আল্লাহর কাছে পেশ করলে তিনি তাঁর বান্দাকে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী উত্তম উত্তর দিয়ে থাকেন। সবচেয়ে প্রচলিত ও অর্থবহ একটি দোয়া হলো—رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

উচ্চারণঃ রব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা কুররাতা আয়ুন, ওয়াজআলনা লিল মুত্তাকীনা ইমামা।

অর্থঃ হে আমাদের প্রভু! আমাদের স্ত্রীদের ও সন্তানদেরকে আমাদের চোখের শীতলতা বানাও এবং আমাদের মুত্তাকীদের নেতা বানাও। (সূরা ফুরকান, আয়াত ৭৪)

এছাড়াও, সন্তান লাভের জন্য হযরত যাকারিয়া (আঃ)-এর এই দোয়াটি অনেক গুরুত্ব বহন করে—رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً ۖ إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ

অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনি নিজ করুণায় আমাকে একটি পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শোনেন। (সূরা আলি ইমরান, আয়াত ৩৮)

এই দোয়াগুলো কেবল মুখস্থ বা পাঠের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, বরং সেগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ ও গুরুত্ব হৃদয়ে ধারণ করে আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে দোয়া করা উচিত। দোয়াগুলো পড়ার সময় অন্তরে খাঁটি নিয়ত, ঈমান ও ধৈর্য থাকা আবশ্যক। নিয়মিত সালাত আদায়, কোরআন তিলাওয়াত, সৎ জীবনযাপন এবং হারাম থেকে দূরে থাকা এসবই সন্তান প্রাপ্তিতে বরকত আনে। মনে রাখতে হবে, আল্লাহ সব দোয়ার উত্তর দেন, কখনো সাথে সাথে, কখনো দেরিতে।

পুত্র সন্তান লাভের আমল

পুত্র সন্তান লাভের জন্য পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন আমল ও দোয়ার গুরুত্ব পুনর্বার উল্লেখ আছে। এসব আমল ও দোয়া ধৈর্য্য, বিশ্বাস ও খাঁটি নিয়তের সঙ্গে পালন করলে আল্লাহর রহমত লাভের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। সূরা আল-আম্বিয়ার ৮৯ নম্বর আয়াতের একটি অংশ বিশেষভাবে পুত্র সন্তান লাভের জন্য দোয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মুসলিমদের জন্য এটি একটি প্রমাণিত দোয়া, যা নিয়মিত পাঠ করলে ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ পুত্র সন্তানের নিয়ামত দান করতে পারেন।

আয়াতটির অংশ হলোঃ رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ

উচ্চারণঃ রব্বি লা তাজারনী ফারদান ওয়া আংতা খাইরুল ওয়ারিছীন।

অর্থঃ হে আমার রব! আমাকে একা (সিঙ্গল) অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখো না, এবং তুমি সেরা উত্তরাধিকারী।

এই আয়াতটি প্রতি নামাজের পর তিনবার পাঠ করলে আল্লাহর ইচ্ছায় পুত্র সন্তান লাভের আশা করা যায়। কারণ এই দোয়া নবী যাকারিয়ার (আঃ) বিশেষ প্রার্থনা ছিল, যিনি বারবার এই আয়াত পড়তেন এবং আল্লাহ তাকে এক পুত্র সন্তান দান করেন। তাই এটি একটি প্রমাণিত দোয়া হিসেবে বিবেচিত। তবে শুধু দোয়া করলেই যথেষ্ট নয়; আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সৎ জীবন যাপন, হারাম থেকে দূরে থাকা, নিয়মিত ইবাদত ও ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করাও জরুরি। পুত্র সন্তান লাভের আমল হিসেবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারেঃ

১. প্রতিনিয়ত এই আয়াতটি পাঠ করাঃ নামাজের পর অন্তত তিনবার ‘রব্বি লা তাজারনী ফারদান ওয়া আংতা খাইরুল ওয়ারিসীন’ আয়াত পাঠ করলে আল্লাহর কাছে খাঁটি বিশ্বাস ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রকাশ পায়। এতে অন্তর থেকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয় এবং পুত্র সন্তান লাভের জন্য বিশেষ বরকত হয়। এই আয়াতটি নবী যাকারিয়া (আঃ)-এর দোয়ার অংশ ছিল, যিনি দীর্ঘ সময় ধৈর্য ধরে পড়তেন এবং আল্লাহ তাকে পুত্র সন্তান দান করেছিলেন। তাই, এই আয়াত নিয়মিত ও বিশ্বাসের সাথে পাঠ করাটা পুত্র সন্তান লাভের জন্য একটি শক্তিশালী আমল।

২. তাহাজ্জুদ নামাজে দোয়াঃ রাতের শেষ প্রহরে, যখন সারা সৃষ্টি শান্ত ও নিস্তব্ধ থাকে, আল্লাহর নিকট আন্তরিক ও একাগ্রচিত্তে প্রার্থনা করা উচিত। এই সময় আল্লাহ বিশেষভাবে বান্দাদের দোয়া কবুল করেন। হাদিসে এসেছে, “রাতে আল্লাহ আসমানে নামেন এবং বলেন, ‘তোমাদের কেউ কি আমাকে কিছু চাইবে? আমি তার দোয়া কবুল করব।’” তাই পুত্র সন্তান লাভের জন্য তাহাজ্জুদে দোয়া করলে আল্লাহর রহমত ও বরকত প্রাপ্তির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ঈমান ও ধৈর্যের সঙ্গে এই আমল পালন করা জরুরি।

৩. ইস্তিগফার ও তাওবাঃ ইস্তিগফার ও তাওবা হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সর্বোত্তম মাধ্যম। অতীতের সকল পাপ ও ভুল থেকে সাফাই নিয়ে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া মানে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা। কোরআনে আল্লাহ বলেন, যারা বেশিবার “আস্তাগফিরুল্লাহ” বলেন, তাদের জন্য রিজিক এবং সন্তান প্রাপ্তির দরজা খুলে দেয়। ইস্তিগফার করলে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং পাপ মোচন হয়, যা জীবনে বরকত ও সন্তুষ্টি এনে দেয়। তাই পুত্র সন্তান লাভের জন্য নিয়মিত ইস্তিগফার ও তাওবা করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত প্রাপ্তির অন্যতম পথ।

৪. সদকা ও নফল ইবাদতঃ সদকা ও নফল ইবাদত আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ উপায়। নিয়মিত সদকা প্রদান করলে আল্লাহ পাপ মাফ করেন এবং রিজিক বাড়ান। সদকা হৃদয়কে পবিত্র করে, দুনিয়ায় ও আখিরাতে বরকত এনে দেয়। পাশাপাশি, নফল নামাজ আদায় করলে ইবাদতের মর্যাদা বাড়ে, গুনাহ কমে এবং আল্লাহর করুণা অর্জিত হয়। পুত্র সন্তান লাভের জন্য সদকা ও নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও বরকত প্রার্থনা করা উচিত, কারণ এটি আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর কাছে বিশেষ গ্রহণযোগ্য হয়।

৫. আল-কুরআন তেলাওয়াতঃ আল-কুরআন তেলাওয়াত পবিত্র ও বরকতময় আমল। নিয়মিত কোরআন শরীফ পাঠ করলে হৃদয় পরিষ্কার হয় এবং আল্লাহর কাছ থেকে বরকত লাভ হয়। বিশেষভাবে সূরা ইউসুফ ও সূরা কাহফের তেলাওয়াত পুত্র সন্তান লাভ ও জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত। সূরা ইউসুফের মাধ্যমে ধৈর্য, বিশ্বাস ও সৌন্দর্যের শিক্ষা পাওয়া যায়, আর সূরা কাহফ মুমিনকে বিপদ থেকে রক্ষা করে। তাই পুত্র সন্তান কামনায় নিয়মিত এই সূরাগুলো পড়া একটি শুভ আমল।

৬. ইমান ও ধৈর্যঃ ইমান ও ধৈর্য পুত্র সন্তান লাভের আমলে অপরিহার্য গুণ। দোয়া করার পর আল্লাহর পরিকল্পনায় ভরসা রেখে দ্রুত ফলাফলের আশা না করা উচিত। অনেক নবী বহু বছর ধরে ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করেছেন এবং আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেছেন। তাই ইমানকে শক্তিশালী রাখা এবং ধৈর্য ধরে আল্লাহর রহমত কামনা করাই সফলতার চাবিকাঠি। আল্লাহই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী, তাই তাঁর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস ও ধৈর্য রাখা মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য।

সবশেষে, আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার বাইরে কিছুই ঘটে না। তিনি সেরা পরিকল্পনাকারী এবং সময়মতো সর্বোচ্চ মর্জা বাস্তবায়ন করেন। তাই পুত্র সন্তান লাভের জন্য আমল ও দোয়া অবিরত চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখা জরুরি। আমাদের চেষ্টা ও ধৈর্যের সঙ্গে তাঁর পরিকল্পনায় বিশ্বাস রাখা মুমিনের পথপ্রদর্শক। আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন, কখন ও কীভাবে আমাদের জন্য সবকিছু সবচেয়ে উত্তম হবে। তাই তাঁর নৈকট্য কামনা করে ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করাই সঠিক পথ।

পুত্র সন্তান লাভের জন্য সুরা ও দোয়ার গুরুত্ব

পুত্র সন্তান লাভের জন্য সুরা ও দোয়ার গুরুত্ব ইসলামে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ইসলামে প্রত্যেক চাওয়াই আল্লাহর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে চাওয়া উচিত। বিশেষ করে পুত্র সন্তান লাভের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কুরআন ও হাদীস আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছে। কুরআন ও হাদীসে দেখা যায়, অনেক নবী-রাসূল আল্লাহর দরবারে সন্তান লাভের জন্য বিশেষ দোয়া করেছেন। এসব দোয়া ও সূরাগুলো শুধু সন্তান লাভের উপায় নয়, বরং আল্লাহর রহমত পাওয়ার মাধ্যমও।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি আয়াত হলো সূরা আল-আম্বিয়া, رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ আয়াত ৮৯—অর্থ: হে আমার পালনকর্তা! আমাকে একা রেখো না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকারী।) এই আয়াতটি নবী যাকারিয়া (আঃ)-এর দোয়া। তিনি বয়সের ভারে নত হলেও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে পুত্র সন্তানের জন্য দোয়া করেছিলেন। তাঁর দোয়া কবুল হয়েছিল এবং তিনি ইয়াহইয়া (আঃ) নামক পুত্র সন্তান লাভ করেন। এটি প্রমাণ করে, দোয়া ও আস্থার মাধ্যমে আল্লাহ যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করে দিতে পারেন।

পুত্র সন্তান লাভের জন্য এই আয়াতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হিসেবে পরিগণিত হয়। অনেক আলেম ও ইসলামি স্কলারগণ বলেন, কেউ যদি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর এই আয়াতটি তিনবার করে পড়ে এবং আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তাআলা চাইলে তাকে পুত্র সন্তানের নিয়ামত দান করেন।এছাড়া, কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, তাহাজ্জুদের সময় দোয়া, ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) ও তাওবা (পশ্চাতাপ) সন্তানের রিজিক বৃদ্ধি এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের বড় মাধ্যম।

হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ তার সকল সমস্যার সমাধান করে দেবেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।সন্তান লাভে দোয়ার পাশাপাশি ধৈর্য ও বিশ্বাস অপরিহার্য। অনেক সময় দ্রুত ফল না মিললে মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে, কিন্তু একজন মুসলমানের উচিত হলো আল্লাহর পরিকল্পনার উপর আস্থা রাখা এবং ধৈর্য সহকারে আমল ও ইবাদত চালিয়ে যাওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি যখন চাই, তখনই কোনো কিছুকে ‘হও’ বলি, আর তা হয়ে যায়।

সুতরাং, পুত্র সন্তান লাভের জন্য কুরআনের সূরা ও দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। এগুলো শুধু দোয়া নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার পথ। একজন মুমিন বান্দার উচিত নিয়মিত এই আয়াত পাঠ, দোয়া, ইবাদত, সদকা ও খাঁটি ইচ্ছার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং তাঁর উপর পূর্ণ ভরসা রাখা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল নেক চাওয়া কবুল করুন, আমিন।

সন্তান লাভের জন্য কোন সূরা পড়তে হবে?

সন্তান লাভের জন্য কোন সূরা পড়তে হবে এই প্রশ্নটি অনেকেই করে থাকেন। বিশেষ কিছু সূরা রয়েছে যেগুলোতে দোয়ায় অনুগ্রহ ও বাচ্চার জন্য সুখবর পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সন্তান লাভের জন্য যে সূরাগুলো পাঠ করার মাধ্যমে বিশেষ দোয়া ও বরকত পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি হলো সূরা আল-আম্বিয়া (আয়াত ৮৯) সূরা ফুরকান (আয়াত ৭৪) এই সূরাগুলো নিয়মিত পাঠ এবং অন্তরে খাঁটি বিশ্বাস রেখে দোয়া করলে আল্লাহর রহমত অর্জনের আশা বাড়ে।

১. সূরা আল-ফাতিহাঃ সূরা আল-ফাতিহা কুরআনের প্রথম সূরা এবং এটি ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনেক ইসলামিক পণ্ডিতের মতে, সন্তানের জন্য এই সূরা পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইচ্ছা পূরণ করেন। এটি ‘উপকারের রাস্তা খোলার’ একটি শক্তিশালী দোয়া হিসেবে বিবেচিত, যা মঙ্গল ও শান্তির বার্তা নিয়ে আসে। দৈনিক নিয়মিত সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করা আল্লাহর রহমত লাভে সহায়তা করে এবং সন্তানের জন্য বিশেষ বরকত ও কল্যাণের আশ্বাস দেয়। তাই মুসলিমরা এই সূরাটি নিয়মিত পড়া প্রাধান্য দেয়।

২. সূরা আল-ইনশিরাহঃ সূরা আল-ইনশিরাহ একটি ছোট কিন্তু শক্তিশালী সূরা, যা জীবনের কষ্ট ও দুঃখ কাটিয়ে ওঠার আশ্বাস দেয়। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, যারা পুত্র সন্তান লাভের জন্য এই সূরা পাঠ করেন, আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি বিশেষ দয়া ও রহমত বর্ষণ করবেন। এই সূরাটি পাঠের মাধ্যমে মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং আল্লাহর সাহায্যের আশা জাগে। তাই সন্তান প্রার্থনায় নিয়মিত সূরা আল-ইনশিরাহ পাঠ করা উত্তম ও বরকতময় হিসেবে বিবেচিত। এটি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে ও সন্তানের জন্য দোয়া গ্রহণে সহায়তা করে।

৩. সূরা ইয়াসিনঃ সূরা ইয়াসিন ইসলামের অন্যতম প্রধান ও মহত্ত্বপূর্ণ সূরা, যা মুসলমানদের মধ্যে বিশেষভাবে প্রিয় ও সম্মানিত। নিয়মিত এই সূরা পড়া জীবনের নানা সমস্যা, দুঃখ-কষ্ট এবং সংকট দূর করে এবং আল্লাহর করুণা লাভে সহায়ক হয়। সন্তান লাভের জন্য সূরা ইয়াসিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে; অনেক বিশ্বাসী মনে করেন যে, এটি পড়লে আল্লাহ্ তায়ালা সন্তানপ্রাপ্তির দোয়া কবুল করেন ও সন্তান লাভের পথে সাহায্য করেন। তাই সন্তান কামনায় নিয়মিত সূরা ইয়াসিন পাঠ করা বরকতময় ও ফলপ্রসূ।

সন্তান পালন এবং ইসলামী মূল্যবোধ

সন্তান লাভের পর বাবা-মায়ের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো সন্তানকে সঠিক শিক্ষা, চরিত্র গঠন এবং ইসলামী মূল্যবোধে বড় করা। ইসলাম সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং আদর্শ বাবা-মা হওয়া এক মহান ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করে। বিশেষ করে পুত্র সন্তানের জন্মের পর তার নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা এবং সামাজিক জীবনযাপনের শিক্ষায় অভিভাবকদের সচেতন হওয়া আবশ্যক।

সন্তানকে সৎ, দয়ালু ও আল্লাহভীরু মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বাবা-মায়ের সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। পুত্র সন্তানও ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী বড় হতে পারবে যদি তার পরিবার তাকে ঈমান, ভালোবাসা এবং ইসলামি নৈতিকতা শিক্ষা দিতে পারে। এছাড়া, সন্তানের মনের মধ্যে আল্লাহর ভয় ও ভালবাসার সঞ্চার ঘটানো প্রয়োজন, যা তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠবে। সন্তান পালন এবং ইসলামী মূল্যবোধ থেকে একজন বাবা-মা এর দায়িত্ব হলোঃ

১. সন্তানের জন্য ধর্মীয় শিক্ষাঃ সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই ইসলামী মূল্যবোধ ও ধর্মীয় দীক্ষায় শিক্ষিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শৈশবে শেখা শিক্ষাই তার চরিত্র ও ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি গড়ে তোলে। এ সময়ের শিক্ষা তার মন-মানসিকতায় গভীরভাবে প্রভাব ফেলে এবং স্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি করে। নিয়মিত নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝানো এবং আল্লাহর ভয় ও প্রেম তার অন্তরে প্রোথিত করা জরুরি।

বাবা-মায়ের দায়িত্ব হলো নিজেরা ইসলামী আদর্শে চলা এবং সন্তানদের সামনে সেই আদর্শের বাস্তব উদাহরণ হওয়া। পবিত্র কুরআন, রাসূল (সা.)-এর জীবনকথা এবং সহিহ হাদীসের আলোকে সন্তানের মধ্যে ধর্মীয় সচেতনতা ও নৈতিকতা গড়ে তোলা উচিত। এতে সন্তান প্রকৃত ইসলামী জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে উঠবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথেই জীবন গড়বে, ইনশাআল্লাহ।

২. সন্তানের প্রতি ভালোবাসা এবং দয়াঃ সন্তানের প্রতি ভালোবাসা ও দয়া প্রদর্শন করা শুধুমাত্র পারিবারিক বন্ধন মজবুত করে না, বরং এর মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করাও সম্ভব। ইসলাম সন্তানের সঙ্গে কোমলতা, মমতা ও সহানুভূতির আচরণকে উৎসাহিত করেছে। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজেও সন্তানদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ছিলেন এবং সাহাবিদেরকে সন্তানদের ভালোবাসার বিষয়ে উৎসাহ দিতেন।

বিশেষ করে, সন্তানের মা-বাবার মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থাকলে সন্তানও নিরাপদ, সুস্থ ও আত্মবিশ্বাসী পরিবেশে বেড়ে ওঠে। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, তার আদরের পরিবেশ এবং বাবার দয়া ও সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ সন্তানের ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।একটি শিশু যখন দেখে যে তার বাবা-মা তার প্রতি ভালোবাসা, সময় ও মনোযোগ দিচ্ছেন, তখন সে নিজেও মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল, দায়িত্ববান এবং সদাচারী হয়ে ওঠে।

৩. সন্তানের চরিত্র গঠনঃ সন্তানের চরিত্র গঠন তার সমগ্র জীবনের ভিত্তি রচনা করে। ইসলাম শিশুদেরকে জীবনের শুরু থেকেই শুদ্ধ, সৎ ও আল্লাহভীরু হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেয়। একজন সন্তান যেন বড় হয়ে একজন ভালো মানুষ হয়, এজন্য তাকে ছোটবেলা থেকেই সৎকর্ম, শিষ্টাচার, এবং আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস শেখানো অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে পুত্র সন্তানকে নম্রতা, ধৈর্য, ইমানদারি ও সহানুভূতির মতো গুণাবলী শেখাতে হবে।

একজন শিশুর প্রথম ও প্রধান শিক্ষাগুরু তার মা-বাবা। সন্তান যদি বাবার কাছ থেকে সাহস ও দিকনির্দেশনা এবং মায়ের কাছ থেকে ভালোবাসা ও স্নেহ পায়, তবে তার ব্যক্তিত্ব উন্নতভাবে বিকশিত হয়। তার মন-মানসিকতা হয় দৃঢ়, পরিপক্ব এবং সুস্থ। শিশুকে আত্মবিশ্বাসী, বিনয়ী ও সৎভাবে বড় করতে চাইলে তার সামনে জীবন্ত ইসলামী আদর্শ তুলে ধরতে হবে। মা-বাবার কথাবার্তা, আচরণ ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমেই শিশু শিক্ষা পায়।

৪. সমাজে সঠিক আচরণ শেখানোঃ একজন পুত্র সন্তানের যথাযথ ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি সমাজে শালীন ও সদাচরণমূলক আচরণ শেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে শুধুমাত্র নামাজ-রোজা শেখালেই যথেষ্ট নয়, বরং তার ভেতরে মানবিকতা, সহানুভূতি ও সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলা দরকার। মুসলিম পিতা-মাতার কর্তব্য হলো সন্তানের মধ্যে সদ্ব্যবহার, অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং পরোপকারের মনোভাব সৃষ্টি করা।

প্রিয়নবি (সা.) বলেছেন, তোমরা মানুষের সাথে ভালো আচরণ করো (হাদিস)। এই নির্দেশনা পারিবারিক গণ্ডির বাইরেও সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রযোজ্য। সন্তান যেন আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের সাথে ভদ্রতা ও সহানুভূতির আচরণ করে, সেটি ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা দিতে হবে।একজন সন্তান যদি ছোটবেলা থেকেই পারস্পরিক সহানুভূতি, সত্যবাদিতা এবং ইবাদত-বন্দেগির গুরুত্ব বুঝে বড় হয়, তবে সে সমাজের একজন সচেতন, নৈতিক এবং উপকারী নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে সন্তান লালন-পালন

ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তান শুধু পার্থিব জীবনের শোভা নয়, বরং আখিরাতের জন্যও একটি অমূল্য নিয়ামত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা, তবে সৎকর্মগুলোই আখিরাতে উত্তম পুরস্কার ও আশা। (সুরা কাহফ, আয়াত ৪৬) এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, সন্তান যদি সঠিক পথে লালিত-পালিত হয়, সে হতে পারে পিতা-মাতার জন্য জান্নাতের উসিলা।

তাই একজন মুসলিম মা-বাবার দায়িত্ব সন্তান জন্ম দেওয়ার পরপরই শুরু হয়। শুধু দুনিয়াবি সফলতা নয়, বরং আধ্যাত্মিক উন্নতির লক্ষ্য নিয়েই সন্তানকে লালন-পালন করতে হয়। সন্তান যেন ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী গড়ে ওঠে, এজন্য ছোটবেলা থেকেই তাকে নামাজের শিক্ষা, কুরআন পাঠ, সত্যবাদিতা, দয়ালুতা ও আল্লাহভীরুতা শেখানো জরুরি। হাদিসে এসেছে, তোমরা প্রত্যেকে একজন অভিভাবক এবং তোমরা তোমাদের অধীনস্তদের ব্যাপারে জবাবদিহি করবে। (সহীহ বুখারী) এটি প্রমাণ করে, সন্তানের নৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক বিকাশের দায়িত্ব মা-বাবার উপরই অর্পিত।

অনেক সময় মা-বাবা বিশেষ করে পুত্র সন্তান লাভের জন্য দোয়া করে থাকেন। কুরআনে হযরত ইব্রাহিম (আ.) এবং হযরত জাকারিয়া (আ.)-এর দোয়াগুলো পুত্র সন্তান লাভের প্রত্যাশার সুন্দর দৃষ্টান্ত। তবে ইসলামে দোয়ার পাশাপাশি ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা) রাখার নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পছন্দ অনুযায়ী কাউকে কন্যা, কাউকে পুত্র সন্তান এবং কাউকে উভয়ই দেন, আবার কাউকে কিছুই দেন না এ সবই তার হিকমতের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা আশ-শুরা, আয়াত ৪৯-৫০)

পুত্র সন্তান লাভের জন্য দোয়া করাটা অস্বাভাবিক নয়, তবে সন্তানের প্রকৃত সফলতা নির্ভর করে তার আদর্শ চরিত্র ও দ্বীনদারিতার উপর। ইসলাম এটিই শিক্ষা দেয় যে, সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে, তাকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করাই আসল দায়িত্ব। আধুনিক সমাজে সন্তানদের মাঝে নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা অপরিহার্য। সন্তানের প্রতি মা-বাবার দয়া, স্নেহ, সহমর্মিতা ও ন্যায়নিষ্ঠা তাদের আত্মিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ইসলামে মা-বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব যেমন আছে, তেমনি সন্তানের প্রতিও মা-বাবার দায়িত্ব রয়েছে।
সন্তান যদি সৎ, নেককার এবং আল্লাহভীরু হয়, তবে সে হয়ে ওঠে সাদকায়ে জারিয়ার অন্যতম অংশ। হাদিসে আছে, “মানুষ মারা গেলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি জিনিস চলমান থাকে: সাদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যা মানুষ উপকারে লাগায়, এবং নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (সহীহ মুসলিম)

পুত্র সন্তান নিয়ে বাবা-মায়ের বিশেষ দায়িত্ব

পুত্র সন্তান নিয়ে বাবা-মায়ের বিশেষ দায়িত্ব ও কিছু কর্তব্য রয়েছে। পুত্র সন্তান ইসলামের দৃষ্টিতে একটি বড় নিয়ামত এবং ভবিষ্যতের উম্মাহ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তিনি পরিবারের অভিভাবক ও দ্বীনের রক্ষক হয়ে উঠতে পারে, যদি সঠিকভাবে লালন-পালন করা হয়। তাই মুসলিম মা-বাবার দায়িত্ব তাকে শুধু দুনিয়াবি সাফল্য নয়, বরং নেককার, দায়িত্বশীল ও আল্লাহভীরু মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ
পুত্র-সন্তান-নিয়ে-বাবা-মায়ের-বিশেষ-দায়িত্ব
১. দ্বীনি শিক্ষা প্রদানঃ পুত্র সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, রোজা, ও অন্যান্য ফরজ ইবাদত সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া আবশ্যক। প্রতিদিনের ঘরোয়া আমল, গল্প ও উদাহরণে আল্লাহভীতি, রাসুলের ভালোবাসা ও সহমর্মিতা গেঁথে দিলে চরিত্র মজবুত হয়। এতে তার অন্তরে আল্লাহভীতি গড়ে ওঠে। ইসলামিক আদর্শে গড়ে না উঠলে সে ভবিষ্যতে পরিবার ও সমাজের জন্য হুমকি হতে পারে। আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবারকে আগুন থেকে রক্ষা কর। (সুরা তাহরিম, আয়াত ৬)

২. চরিত্র ও নৈতিকতা গঠনঃ চরিত্র ও নৈতিকতা গঠনে পুত্র সন্তানের জন্য সত্যবাদিতা, ধৈর্য, দয়া ও শিষ্টাচার শেখানো অত্যন্ত জরুরি। হাদিসে বলা হয়েছে, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে, যে নিজের পরিবারে উত্তম আচরণ করে (তিরমিজি)। এজন্য বাবা-মাকেই হতে হবে আদর্শ—তাদের নিজের আচরণ, কথা ও জীবনের মাধ্যমে সন্তান শিখবে কীভাবে একজন নেককার ও সম্মানিত মানুষ হওয়া যায়। তাই সন্তান শুধু কথায় নয়, কাজে-কর্মেও যেন নৈতিকতা অনুশীলন করতে শেখে, সে দায়িত্ব মা-বাবার।

৩. নেতৃত্ব ও দায়িত্বশীলতা শেখানোঃ নেতৃত্ব ও দায়িত্বশীলতা শেখানো পুত্র সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাকে ছোটবেলা থেকেই বোঝাতে হবে, সে একদিন পরিবার, সমাজ ও জাতির নেতৃত্ব দেবে। এজন্য তার মাঝে দায়িত্ববোধ, ন্যায়ের বিচারবুদ্ধি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের গুণাবলি গড়ে তুলতে হবে। ভবিষ্যতের একজন পিতা, স্বামী ও নাগরিক হিসেবে যেন সে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে এজন্য তাকে ধাপে ধাপে সেই প্রস্তুতি দিতে হবে। এই শিক্ষাই তাকে একজন আল্লাহভীরু, ন্যায়পরায়ণ ও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।

৪. হালাল-হারামের শিক্ষাঃ পুত্র সন্তানকে হালাল ও হারামের সঠিক জ্ঞান দেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ বর্তমান যুগে এ বিষয়টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মা-বাবার উচিত পুত্র সন্তানকে শেখানো, কোন কাজ ইসলামসম্মত, কোনটি নয়। তাকে হালাল পথে অর্থ উপার্জন, নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং আত্মসংযমের গুরুত্ব বোঝাতে হবে। এসব শিক্ষাই তার চরিত্র গঠনে এবং একটি সৎ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

৫. আল্লাহর উপর আস্থা ও ধৈর্য শেখানোঃ পুত্র সন্তানের মাঝে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা এবং ধৈর্য ধরার মানসিকতা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাকে শেখাতে হবে, জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহই তার ভাগ্য নির্ধারণকারী, তাই যেকোনো সমস্যা ও বিপদে ধৈর্য ধরে শোকর আদায় ও তাওয়াক্কুল করতে হবে। এই গুণাবলী তার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহস জোগাবে। আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে ধৈর্য ধারণ করাই মুমিনের সেরা বৈশিষ্ট্য, যা পুত্র সন্তানের চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া উচিত।

৬. আখিরাতমুখী চিন্তাধারা সৃষ্টিঃ পুত্র সন্তানের মাঝে দুনিয়া ও আখিরাতের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, দুনিয়ার সাময়িক সফলতার চেয়ে আখিরাতের চিরস্থায়ী সফলতা অনেক বড় ও মূল্যবান। এজন্য সে যেন নিজের জীবন আল্লাহর নিয়ম ও আদেশ অনুযায়ী পরিচালনা করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা নিজেদের এবং নিজেদের পরিবারকে আগুন থেকে রক্ষা করো। (সুরা তাহরিম: ৬)। এই আখিরাতমুখী দৃষ্টিভঙ্গি পুত্র সন্তানের চরিত্র ও জীবনমুখী সিদ্ধান্তকে আলোকিত করবে।

লেখকের মন্তব্যঃ ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলে সন্তান লাভের দোয়া

ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলে সন্তান লাভের দোয়া একটি গভীর আধ্যাত্মিক আবেদন, যা নবী-রাসূলদের জীবন থেকে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কুরআন ও হাদিসে আমরা দেখতে পাই, নবী যাকারিয়া (আঃ) থেকে শুরু করে অন্যান্য নবীরা সন্তান লাভের জন্য আল্লাহর কাছে আন্তরিক দোয়া করেছেন। এই দোয়াগুলো কেবলমাত্র সন্তান কামনার অনুরোধ নয়, বরং আল্লাহর প্রতি খাঁটি বিশ্বাস, ধৈর্য, তাওয়াক্কুল এবং আত্মসমর্পণের পরিচায়ক।

নবী যাকারিয়ার দোয়া بِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً আমাদের শেখায় যে, সন্তান লাভের জন্য শুধু দোয়া নয়, সেই সন্তানের পবিত্রতা ও নৈতিক গুণাবলীর জন্যও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত। সন্তানের জন্য দোয়া করার সময় খাঁটি মনোযোগ এবং সৎ নিয়ত থাকা খুবই জরুরি। দোয়ার সাথে সাথে নিয়মিত ইবাদত, নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত এবং সদকা দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করলে দোয়ার ফল অধিক সম্ভাবনাময় হয়।

তবে এটি ভুলভাবে ধারণা করা উচিত নয় যে, শুধুমাত্র দোয়া ও আমল করলেই সন্তান হবে। ছেলে সন্তান লাভ সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। তাই বিশ্বাসী মানুষকে ধৈর্য ধারণ করতে হয় এবং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল রাখতে হয়। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় যে, আল্লাহ যাকে ভালো মনে করেন, তাকে নেক সন্তান দান করেন। সুতরাং, আমাদের উচিত শুধু সন্তান কামনা না করে, নিজেদের ইমান ও আমলকে উন্নত করার চেষ্টা করা।

সর্বশেষে, ছেলে সন্তান লাভের জন্য দোয়া ও আমল করলে আল্লাহর রহমতের অপেক্ষা করতে হয়। এই ধৈর্য্য ও বিশ্বাস ইসলামের মূল ভিত্তি এবং এর মাধ্যমেই আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় থাকতে পারি। তাই ইসলামী জীবনে ছেলে সন্তান লাভের দোয়া শুধু চাওয়ার কাজ নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম। আশা করছি, ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলে সন্তান লাভের দোয়া ও আমল গুলো পড়ে উপকৃত হবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url