প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই বিস্তারিত জানতে গুগলে সার্চ করে থাকেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এমন একটি বিশেষায়িত ব্যাংক, যা মূলত বাংলাদেশের প্রবাসীদের আর্থিক চাহিদা পূরণে কাজ করে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেবা হলো প্রবাসীদের জন্য ঋণ প্রদান।
প্রবাসী-কল্যাণ-ব্যাংক-লোন-নেওয়ার-নিয়ম
এই ঋণ বিভিন্ন প্রয়োজনে দেওয়া হয় যেমন বিদেশ যাত্রার খরচ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা সম্প্রসারণ, গৃহনির্মাণ, এবং অন্যান্য জরুরি আর্থিক চাহিদা পূরণে। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা সহজ শর্তে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে পারেন। নিচে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

পেইজ সুচিপত্রঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন কি?

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন হলো বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন একটি বিশেষ ঋণসেবা, যা মূলত বিদেশগামী কর্মীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য চালু করা হয়েছে। এই ঋণ কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের প্রদান করা হয়, যাতে তারা বৈধভাবে বিদেশে যেতে পারেন এবং ভিসা, ট্রাভেল, মেডিকেল ও অন্যান্য প্রক্রিয়ার খরচ বহন করতে পারেন। এই ব্যাংক যে শুধু প্রবাসীদের ঋণ দিয়ে থাকে তা নয় এটি বাংলাদেশের নাগরিকদের কিছু ক্ষেত্রে ঋণ প্রদান করে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ২০১০ সালে কার্যক্রম শুরু করে, এবং এর মূল লক্ষ্য হলো প্রবাসীদের জন্য সহজ শর্তে স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা। এছাড়াও, প্রবাস ফেরত কর্মীদের পুনর্বাসন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতেও এই ব্যাংক ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকে। এই ঋণ সাধারণত কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের তুলনায় এর সুদের হার কম। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সহজ শর্তে প্রবাসীদের জন্য ঋণ প্রদান করা।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম অনেকেই জানেন না। তাই যারা বিদেশে যাওয়ার জন্য লোন নিতে চান তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশে যেতে সাধারণত ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়। অনেকেই এই বিশাল অর্থের ব্যবস্থা করতে পারেন না। তাই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে লোন পাওয়া একটি বড় সুযোগ। কিভাবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে হয় নিচে তা ধাপে ধাপে দেখানো হলো।
ধাপ ১ঃ শাখায় সরাসরি যোগাযোগঃ প্রথমেই আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের যেকোনো শাখায় সরাসরি যোগাযোগ করুন। শাখায় উপস্থিত হয়ে আপনি লোন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য, যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্ভরযোগ্যভাবে জানতে পারবেন। এছাড়া, শাখা কর্মকর্তারা আপনাকে আবেদন ফর্ম সংগ্রহ ও পূরণের নিয়ম সম্পর্কেও সহযোগিতা করবেন।

ধাপ ২ঃ আবেদন ফরম পূরণঃ শাখা থেকে নির্ধারিত আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে এবং সকল তথ্য সঠিকভাবে ও স্পষ্টভাবে পূরণ করতে হবে। ফরম পূরণের সময় ভুল বা মিথ্যা তথ্য এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবেদন ফরমের সঙ্গে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখায় জমা দিতে হবে। সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ব্যাংক আপনার আবেদন বিবেচনা করবে।

ধাপ ৩ঃ ডকুমেন্ট যাচাই ও অনুমোদনঃ আপনার জমা দেওয়া আবেদন ফরম এবং সংযুক্ত কাগজপত্রসমূহ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করবে। যদি তারা মনে করে আপনি নির্ধারিত শর্ত পূরণ করেছেন এবং লোন পাওয়ার জন্য উপযুক্ত, তাহলে আপনার লোন আবেদন অনুমোদিত হবে। তথ্য যাচাইয়ের অংশ হিসেবে কখনও কখনও আপনাকে সাক্ষাৎকার বা অতিরিক্ত কাগজপত্রও দিতে হতে পারে।

ধাপ ৪ঃ লোন বিতরণ ও পরিশোধ পদ্ধতিঃ লোন আবেদন অনুমোদিত হওয়ার পর, নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী লোনের টাকা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদান করা হবে। আপনি এই অর্থ নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে যেমন ভিসা, ট্রাভেল, মেডিকেল ও অন্যান্য বিদেশযাত্রা সংক্রান্ত খরচে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন সাধারণত কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। কিস্তি ও সুদের হার নির্ভর করে ঋণের পরিমাণ ও মেয়াদের ওপর। সময়মতো কিস্তি পরিশোধ না করলে জরিমানা বা অতিরিক্ত চার্জ আরোপ হতে পারে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ঋণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ঋণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি প্রয়োজন সে সম্পর্কে আমরা অনেকে জানিনা। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ঋণ পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া আবশ্যক। এই কাগজপত্রগুলোর মাধ্যমে ব্যাংক আবেদনকারীর পরিচয়, আর্থিক সামর্থ্য, ঋণের উদ্দেশ্য এবং জামিনদারের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করে। নিচে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ঋণের জন্য যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন, তা তালিকাবদ্ধভাবে তুলে ধরা হলোঃ

  • আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবিঃ সাম্প্রতিক তোলা স্পষ্ট ছবি।
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিঃ পরিচয় ও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য।
  • স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্রঃ যেমন বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল বা হোল্ডিং সনদ।
  • আবেদনকারীর আয়ের প্রমাণঃ যেমন স্যালারি স্লিপ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, প্রবাসী আয় রেমিট্যান্স স্লিপ ইত্যাদি।
  • ঋণের উদ্দেশ্য সংক্রান্ত ব্যাখ্যাঃ যেমন ব্যবসা শুরু, শিক্ষা, চিকিৎসা বা প্রবাসে যাওয়ার খরচ ইত্যাদি।
  • জামিনদারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিঃ পরিচয় যাচাইয়ের জন্য।
  • জামিনদারের আয়ের প্রমাণঃ আয়কর রিটার্ন, চাকরির সনদ বা ব্যবসার কাগজপত্র।
  • জামিনদারের সম্পত্তির দলিল বা মালিকানার প্রমাণপত্রঃ জামিনদারের আর্থিক অবস্থার ভিত্তি যাচাইয়ের জন্য। এইসব কাগজপত্র প্রস্তুত করে সঠিকভাবে জমা দিলে ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ও চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ঋণ প্রদান করে থাকে। এই ঋণগুলো মূলত অভিবাসন, কর্মসংস্থান, পুনর্বাসন, শিক্ষা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যারা বিদেশে যেতে ইচ্ছুক, প্রবাস ফেরত বা দেশে থেকে স্বনির্ভর হতে চান সবার জন্যই আলাদা আলাদা লোনের সুযোগ রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোনের ধরনসমূহঃ

১. অভিবাসন ঋণঃ অভিবাসন ঋণ হলো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কর্তৃক বিদেশে চাকরির উদ্দেশ্যে যাওয়া প্রার্থীদের জন্য প্রদত্ত একটি বিশেষ ধরনের ঋণ। এই ঋণের মাধ্যমে বিদেশে যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খরচ যেমন বিমান ভাড়া, ভিসা ফি, মেডিকেল পরীক্ষা খরচ, অন্যান্য প্রক্রিয়াগত ফি (প্রসেসিং ফি) এসব খরচের জন্য অর্থ প্রদান করা হয়। অভিবাসন ঋণের মূল লক্ষ্য হলো বিদেশে বৈধ ও নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা এবং যাত্রার সময় আর্থিক সমস্যায় পড়া থেকে আবেদনকারীদের রক্ষা করা।

২. পুনর্বাসন ঋণঃ পুনর্বাসন ঋণ হলো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের একটি বিশেষ ঋণ সুবিধা, যা প্রবাস ফেরত কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য। বিদেশ থেকে ফিরে অনেক কর্মীই দেশে এসে আর্থিক সংকটে পড়েন বা কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নতুনভাবে স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভর করে তুলতেই এই ঋণ প্রদান করা হয়। এই ঋণের মাধ্যমে একজন প্রবাস ফেরত কর্মী ছোটখাটো ব্যবসা, কৃষিকাজ, হস্তশিল্প বা অন্যান্য উদ্যোগ শুরু করতে পারেন। এতে তাদের সংসার চালানো এবং আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

৩. কর্মসংস্থান ঋণঃ কর্মসংস্থান ঋণ হলো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের একটি উদ্যোগ, যার মাধ্যমে দেশে ফিরে আসা প্রবাসী বা নতুন উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিজস্ব কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে সহায়তা করা হয়। এই ঋণটি মূলত যারা ছোটখাটো ব্যবসা, হস্তশিল্প, সেবা খাত, কৃষিভিত্তিক উদ্যোগ বা অন্যান্য উৎপাদনমুখী কাজে নিজেকে যুক্ত করতে চান, তাদের জন্য উপযোগী। এ ধরনের ঋণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের উদ্যোগে কাজ শুরু করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার সুযোগ পান।

৪. শিক্ষা ঋণঃ শিক্ষা ঋণ হলো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের একটি বিশেষ ঋণ সুবিধা, যা মূলত অভিবাসন প্রস্তুতি বা দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য প্রদান করা হয়। বিদেশে চাকরি পেতে হলে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ট্রেনিং বা কোর্স সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক। এই ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণে যাদের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন, তাদের জন্যই এই ঋণটি চালু করা হয়েছে। এই ঋণের আওতায় প্রার্থীরা কারিগরি প্রশিক্ষণ,ভাষা শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক প্রশিক্ষইত্যাদি কোর্সে অংশগ্রহণের ব্যয়ভার বহন করতে পারেন।

৫. গৃহ ঋণঃ গৃহ ঋণ হলো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের একটি বিশেষ ঋণ সুবিধা, যা বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বা প্রবাস ফেরত বাংলাদেশিদের জন্য প্রযোজ্য। এই ঋণের মাধ্যমে প্রার্থীরা নিজ এলাকায় আবাসন নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ বা সংস্কারের জন্য আর্থিক সহায়তা পেতে পারেন। যারা বিদেশে কর্মরত থেকে দেশে একটি স্থায়ী ঠিকানা গড়ে তুলতে চান, কিংবা প্রবাস ফেরত হয়ে নিজেদের বসতবাড়ি সংস্কার করতে চান তাদের জন্য এই ঋণ অত্যন্ত সহায়ক। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক সম্পত্তির কাগজপত্র, অনুমোদিত নকশা ও নির্মাণ খরচের বিবরণপত্র চাইতে পারে।

৬. কৃষি ঋণঃ কৃষি ঋণ হলো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের একটি আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি, যা মূলত কৃষিকাজে আগ্রহী প্রবাসী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রদান করা হয়। বিদেশফেরত কর্মী বা প্রবাসীদের পরিবার যদি দেশে কৃষিকাজের মাধ্যমে আত্মনির্ভর হতে চায়, তাহলে তারা এই ঋণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুঁজি সংগ্রহ করতে পারেন। এই ঋণের আওতায় ফসল চাষ, গবাদিপশু পালন, হাঁস-মুরগির খামার, বাগান বা নার্সারি, মৎস্যচাষ ইত্যাদি করা যায়। এই ঋণ পাওয়ার জন্য প্রায়শই জমির মালিকানা দলিল, কৃষিকাজের পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণের সনদ (যদি থাকে) জমা দিতে হয়।

৭. ব্যবসায়িক ঋণঃ ব্যবসায়িক ঋণ হলো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋণ সুবিধা, যা মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (SME) জন্য প্রদান করা হয়। এই ঋণের মাধ্যমে নতুন ব্যবসা শুরু করা বা বিদ্যমান ব্যবসার সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন ও পরিচালন খরচ মেটানো যায়। এই ঋণ সুবিধা বিশেষভাবে উপকারে আসে প্রবাস ফেরত উদ্যোক্তা, প্রবাসীদের পরিবারভুক্ত উদ্যোক্তা, যেসব উদ্যোক্তা দেশে বসেই আত্মনির্ভর হতে চান। ঋণের আবেদন করতে হলে ব্যবসার একটি পরিকল্পনা (business plan), ট্রেড লাইসেন্স, প্রকল্পের খরচের বিবরণ ইত্যাদি জমা দিতে হতে পারে।

৮. স্বল্পমেয়াদী ঋণঃ স্বল্পমেয়াদী ঋণ হলো একটি কম মেয়াদি আর্থিক সহায়তা, যা জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য অল্প সময়ের জন্য প্রদান করা হয়। এই ঋণ সাধারণত কয়েক মাস থেকে এক বছরের মধ্যে পরিশোধযোগ্য হয়ে থাকে। এই ঋণের মাধ্যমে ভিসা বা ট্রাভেল প্রসেসিংয়ে হঠাৎ খরচ, ব্যবসায়িক ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট, চিকিৎসা বা পারিবারিক জরুরি খরচ, প্রবাসে যাওয়ার আগ মুহূর্তের আর্থিক সংকট মোকাবিলা খাতে সহায়তা পাওয়া যায়। স্বল্প সুদে দ্রুত বিতরণযোগ্য হওয়ায়, এই ঋণ অনেক সময় দ্রুত সহায়তা হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

৯. দীর্ঘমেয়াদী ঋণঃ দীর্ঘমেয়াদী ঋণ হলো এমন একটি ঋণ সুবিধা, যা বড় আকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন বা স্থায়ী বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রদান করা হয়। এই ধরনের ঋণের মেয়াদ সাধারণত ৩ বছর থেকে শুরু করে ১০ বছর বা তারও বেশি হতে পারে। এই ঋণ মূলত নিজস্ব বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট ক্রয়, বড় আকারের ব্যবসা বা কারখানা স্থাপন, আধুনিক কৃষি প্রকল্প, দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসা সম্প্রসারণ, উচ্চশিক্ষা বা বিদেশে পড়াশোনার খরচ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘমেয়াদে কিস্তি পরিশোধযোগ্য হওয়ায় এটি বড় পরিসরে আর্থিক চাহিদা মেটাতে সহায়ক।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয়

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয় সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই বিস্তারিত জানতে চাই। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে কত টাকা লোন পাওয়া যাবে তা নির্ভর করে আবেদনকারীর উদ্দেশ্য (অভিবাসন, পুনর্বাসন, ব্যবসা ইত্যাদি), পেশা ও গন্তব্য দেশ, আবেদনকারীর আর্থিক অবস্থা ও যোগ্যতার উপর।প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে সাধারণত তিনটি ক্যাটাগরির আওতায় লোন নিতে পারবেন। নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

১. অভিবাসন ঋণঃ অভিবাসন ঋণ হলো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের একটি বিশেষ ধরনের ঋণ, যা বিদেশে চাকরির জন্য যাত্রা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য প্রদান করা হয়। এই ঋণের মাধ্যমে ভিসা ফি, বিমান ভাড়া, মেডিকেল পরীক্ষা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খরচ মেটানো যায়। যারা আর্থিক সংকটে বিদেশ যাত্রার সুযোগ পাচ্ছেন না, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা। ঋণের পরিমাণ সাধারণত ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই ঋণ সুদসহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। অভিবাসন ঋণ প্রবাসী কর্মীদের স্বপ্নপূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২. বঙ্গবন্ধু অভিবাসী পরিবার ঋণঃ বঙ্গবন্ধু অভিবাসী পরিবার ঋণ হলো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের একটি বিশেষ ঋণ প্রোগ্রাম, যা প্রবাসী কর্মীদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এই ঋণের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম যেমন ব্যবসা শুরু, শিক্ষা, বা গৃহ নির্মাণে বিনিয়োগ করতে পারেন। ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা সুবিধাজনক শর্তে সুদসহ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য। এই ঋণ প্রোগ্রামটি প্রবাসীদের পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে।

৩. পুনর্বাসন ঋণঃ পুনর্বাসন ঋণ হলো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের একটি বিশেষ ধরনের ঋণ, যা প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসা কর্মীদের জন্য প্রদান করা হয়। এই ঋণের মাধ্যমে তারা নিজস্ব ব্যবসা শুরু, কৃষিকাজ, হস্তশিল্প বা অন্যান্য স্বনির্ভরশীল কাজ করতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখে নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার সুযোগ পায়। এই ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে এবং সুবিধাজনক শর্তে সুদসহ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য। পুনর্বাসন ঋণ প্রবাস ফেরতদের জন্য নতুন সূচনা ও স্বাবলম্বিতার পথ খুলে দেয়।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের সুদের হার কত?

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের সুদের হার সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানতে আগ্রহী। এই ব্যাংক প্রবাসী জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিদেশে কর্মরত নাগরিকদের সহায়তার জন্য বিশেষ ধরনের ঋণ প্রদান করে থাকে। তবে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হয় বিভিন্ন ফ্যাক্টরের ওপর ভিত্তি করে, যার মধ্যে প্রধানত ঋণের ধরন, ঋণের মেয়াদ এবং ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য। নিচে বিস্তারিতভাবে বোঝানো হলোঃ

সাধারণত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের সুদের হার ৯% এর আশেপাশে হয়ে থাকে। তবে ঋণের ধরন অনুযায়ী এই হার কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন, স্বল্পমেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার একটু বেশি হতে পারে, আর দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে কিছুটা কম হয়। একইভাবে, ঋণের পরিমাণ ও মেয়াদও সুদের হারে প্রভাব ফেলে। বড় পরিমাণ ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংক কিছুটা সুবিধা দিতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী ঋণে।

এই সুদের হার বাজারের অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় সাধারণত কম এবং প্রবাসীদের জন্য সুবিধাজনক। ব্যাংক তাদের নীতিমালা অনুযায়ী মাঝে মাঝে সুদের হার পুনর্বিবেচনা ও হালনাগাদ করে থাকে। তাই ঋণ গ্রহণের আগে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করে সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করা উত্তম। সুতরাং, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের সুদের হার স্থিতিশীল ও স্বল্প, যা প্রবাসীদের বিদেশ যাত্রা এবং দেশে স্বাবলম্বী হতে সহায়ক।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের মেয়াদ কতদিন?

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের মেয়াদ কতদিন তা আমরা অনেকেই জানতে আগ্রহী। এই ব্যাংক থেকে প্রদত্ত ঋণের মেয়াদ মূলত নির্ভর করে ঋণের ধরন, পরিমাণ এবং ঋণের আবেদনকারীর প্রয়োজনের ওপর। ঋণের ধরন অনুযায়ী মেয়াদ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, যেমন স্বল্পমেয়াদী ঋণ সাধারণত কয়েক মাস থেকে এক বছরের মধ্যে শেষ করতে হয়, যেখানে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের মেয়াদ অনেক বেশি হতে পারে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সাধারণত সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত ঋণের মেয়াদ নির্ধারণ করে থাকে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প বা গৃহ নির্মাণের জন্য। দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতারা সুবিধাজনক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন, যা তাদের আর্থিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ব্যাংক ঋণের মেয়াদ নির্ধারণের সময় আবেদনকারীর আর্থিক সক্ষমতা ও প্রকল্পের প্রকৃতি বিবেচনা করে ঋণ প্রদান করে থাকে।

অন্যদিকে, অভিবাসন ঋণ বা স্বল্পমেয়াদী ব্যবসায়িক ঋণের মেয়াদ সাধারণত ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। সুতরাং, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের মেয়াদ স্থিতিশীল ও বিভিন্ন ধরনের ঋণের জন্য নমনীয়, যা ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক সুবিধা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। ঋণের শর্তাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা নিকটস্থ শাখার সাথে যোগাযোগ করা উত্তম।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ঋণের আবেদন প্রক্রিয়া

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনাদের সাথে এখন বিস্তারিত আলোচনা করব। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। প্রথমে আপনাকে ব্যাংকের নির্ধারিত আবেদন ফরম সংগ্রহ করে সেটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। আবেদন ফরমের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ভিসা কপি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ব্যবসার কাগজপত্র ইত্যাদি) জমা দিতে হয়।

এরপর ব্যাংকের কর্তৃপক্ষ আপনার জমাকৃত আবেদনপত্র ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করবে। তারা আপনার আর্থিক যোগ্যতা, ব্যবসার ধরন এবং ঋণের উদ্দেশ্য মূল্যায়ন করবে। যদি আপনি ঋণ পাওয়ার জন্য উপযুক্ত হন, তাহলে ব্যাংক আপনাকে নির্দিষ্ট শর্তে ঋণ প্রদান করবে। আপনি অনলাইনে বা সরাসরি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে আবেদন করতে পারেন। অনলাইন আবেদন করতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে Loan Application Form ডাউনলোড করে পূরণ করার পর প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ জমা দিতে হবে।

সুতরাং, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণ পেতে হলে প্রথমে সঠিকভাবে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে, প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট সঙ্গে সংযুক্ত করে ব্যাংকে জমা দিতে হবে, তারপর ব্যাংকের পক্ষ থেকে আবেদন ও ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়া সফলভাবে শেষ হলে ব্যাংক আপনাকে ঋণ প্রদান করবে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের জামিন

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের জামিন সংক্রান্ত বিষয়টি অনেক প্রবাসী ও তাদের পরিবারের জানার আগ্রহ রয়েছে। এই ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে গেলে নির্ধারিত কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়, যার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো “জামিন”। বিশেষ করে যদি ঋণের পরিমাণ পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তাহলে আবেদনকারীর পক্ষে একজন যোগ্য জামিনদার থাকা আবশ্যক। জামিনদার হতে পারেন আবেদনকারীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কিংবা বিশ্বস্ত বন্ধু। 

তবে শুধু পরিচয়ই যথেষ্ট নয়, জামিনদার হিসেবে বিবেচনার জন্য তার আয় ও আর্থিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। জামিনদারের মাসিক আয়, সম্পত্তির পরিমাণ, ও তার ওপর কোনো পূর্বের ঋণ বা দায় রয়েছে কি না এসব কিছুই ব্যাংক কর্তৃক যাচাই-বাছাই করা হয়। জামিনদার নির্বাচন একটি দায়িত্বশীল কাজ। কারণ, যদি ঋণগ্রহীতা নির্ধারিত সময়মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন, তাহলে ব্যাংক জামিনদারের কাছ থেকে সেই ঋণ আদায় করতে পারে।

তাই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে জামিনদার নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। একজন উপযুক্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম জামিনদার থাকা জরুরি। সঠিকভাবে জামিনদার নির্ধারণ করলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ ও দ্রুত হয়। তাই জামিনদার নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করাই উত্তম যাতে ঋণ প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে না হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের নিয়ম

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের নিয়ম অত্যন্ত সহজ ও ব্যবহারবান্ধব। এই ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ সাধারণত মাসিক বা সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়, যা ঋণগ্রহীতার আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। ঋণ গ্রহণের সময়েই পরিশোধের সময়সীমা এবং কিস্তির পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, যাতে গ্রাহক তার আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিয়মিত কিস্তি দিতে পারেন। পরিশোধের নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে অতিরিক্ত জরিমানা বা সুদ আরোপ হতে পারে।

তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কিস্তি প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় ব্যাংক পূর্বনির্ধারিত তারিখে এসএমএস বা ফোন কলের মাধ্যমে কিস্তি পরিশোধের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়, যা গ্রাহকের জন্য সহায়ক। এছাড়া আপনি চাইলে অগ্রিম কিস্তি পরিশোধও করতে পারেন, যা আপনার ঋণ দ্রুত শেষ করতে সাহায্য করে এবং কখনো কখনো সুদের পরিমাণও কমে যেতে পারে। বিশেষ কিছু প্রোগ্রামের অধীনে সময়মতো পরিশোধ করলে ভবিষ্যতে নতুন ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা পাওয়া যায়।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের সুবিধা ও অসুবিধা

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হলো একটি বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা মূলত প্রবাসীদের কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা ও তাদের পরিবার কম সুদে ঋণ নিয়ে নানা ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে যেকোনো ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে যেমন সুবিধা থাকে, তেমনি কিছু সীমাবদ্ধতাও বিদ্যমান। নিচে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।

১. প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের সুবিধাঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণ প্রক্রিয়া প্রবাসীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি আর্থিক সহায়তা ব্যবস্থা, যা তাদের বিদেশে কর্মসংস্থান কিংবা দেশে ফিরে নতুন উদ্যোগ গ্রহণে সাহায্য করে। এই ব্যাংকের ঋণের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে, যা প্রবাসীদের জন্য ঋণ গ্রহণকে সহজ ও সাশ্রয়ী করে তোলে। নিচে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের প্রধান কিছু সুবিধা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

  • আবেদন প্রক্রিয়া সহজঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ঋণ নেওয়ার আবেদন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ ও গ্রাহকবান্ধব। আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আবেদন ফরম পূরণ করতে পারেন, অথবা সরাসরি নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় গিয়ে সহজ ফরমটি সংগ্রহ করে পূরণ করে জমা দিতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় জটিল কোনো ধাপ নেই এবং ফরম পূরণ করা সহজ হওয়ায় নতুন আবেদনকারীরাও স্বাচ্ছন্দ্যে আবেদন করতে পারেন। ফলে সময় এবং শ্রমের অপচয় কম হয় এবং ঋণ পাওয়ার পথ সহজ হয়।
  • দ্রুত ঋণ অনুমোদনঃ যেসব প্রবাসী বা তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের নির্ধারিত শর্তাবলী পূরণ করেন, তারা খুব দ্রুত ঋণ অনুমোদনের সুবিধা পান। ব্যাংক আবেদনপত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফলে আবেদনকারীদের অনেক সময় ও কাঠখড় বাঁচে এবং তারা তাড়াতাড়ি অর্থায়নের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করতে পারেন। এই দ্রুত অনুমোদনের ব্যবস্থা প্রবাসীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক এবং সময়োপযোগী।
  • সুদের হার কমঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান সুবিধা হল এর কম সুদের হার। অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের তুলনায় এখানে সুদের হার অনেক কম নির্ধারিত থাকে, যা ঋণগ্রহীতাদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে অনেক সহজ করে তোলে। কম সুদের কারণে ঋণ নেওয়া ব্যক্তিরা তুলনামূলকভাবে কম অর্থ খরচ করে তাদের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হন। ফলে কম সুদে আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায় এবং ঋণ পরিশোধের বোঝা হালকা হয়। এটি প্রবাসীদের জন্য একটি বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করে, বিশেষ করে যারা বিদেশে যাওয়ার বা দেশে নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য অর্থের প্রয়োজন।
  • দীর্ঘ ঋণের মেয়াদঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো দীর্ঘ ঋণের মেয়াদ। ঋণ গ্রহণকারীরা সাধারণত ১ থেকে ৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে সহজ কিস্তিতে তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারেন। এই দীর্ঘ মেয়াদ অর্থনৈতিক চাপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে, কারণ বড় পরিমাণ ঋণ একসাথে ফেরত দেওয়ার পরিবর্তে ধীরে ধীরে ছোট ছোট কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়। ফলে ঋণগ্রহীতারা তাদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুবিধাজনকভাবে ঋণ পরিশোধ করতে পারে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়।
  • সহজ কিস্তি পরিশোধঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো সহজ কিস্তি পরিশোধের ব্যবস্থা। ঋণগ্রহীতারা মাসিক বা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে তাদের সুবিধা অনুযায়ী কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন। এই নমনীয়তা তাদের আয়ের ধরণ ও সময়সূচীর সাথে মানিয়ে নেওয়া সহজ করে তোলে। ফলে কেউ তাদের আর্থিক সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে চাপের মধ্যে পড়েন না এবং কিস্তি পরিশোধের সময় নিয়মিত থাকতে পারেন। এই সুবিধা প্রবাসীদের জন্য ঋণ পরিশোধের বাধাকে অনেকটাই কমিয়ে দেয় এবং তাদের আর্থিক জীবনের উপর চাপ কমায়।
২. প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের অসুবিধাঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যেগুলো ঋণ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত। এই অসুবিধাগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা ঋণগ্রহীতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা আর্থিক পরিকল্পনা সঠিকভাবে করতে পারেন এবং ভবিষ্যতে সমস্যায় না পড়েন। নিচে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণের প্রধান কিছু অসুবিধা তুলে ধরা হলো।

  • জামিনদার আবশ্যকঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত জামিনদার থাকা বাধ্যতামূলক। অনেক সময় এই জামিনদার খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যখন আবেদনকারী বা তাদের পরিচিতদের মধ্যে আর্থিক বা সামাজিক দিক থেকে যোগ্য জামিনদার না থাকে। এর ফলে ঋণ প্রক্রিয়া ধীরগতি হতে পারে এবং অনেক আবেদনকারী সময়মতো ঋণ গ্রহণে ব্যর্থ হন। তাই ঋণ নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য সঠিক ও যোগ্য জামিনদার নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • কিস্তি মিস করলে জরিমানাঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কিস্তি পরিশোধ না করলে ব্যাংক থেকে জরিমানা আরোপ করা হয়। এই জরিমানার পরিমাণ কিছু ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে বেশী হতে পারে, যা ঋণগ্রহীতার জন্য অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি করে। নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ না করতে পারলে এই জরিমানার কারণে ঋণের ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিকভাবে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ঋণগ্রহীতাদের অবশ্যই সময়মতো কিস্তি পরিশোধে সচেতন থাকা উচিত।
  • অতিরিক্ত ফিঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত ফি জড়িত থাকে, যেমন আবেদন ফি, প্রসেসিং ফি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ। এই ফিগুলো ঋণগ্রহীতাকে নিজস্ব খরচ হিসেবে বহন করতে হয়। অনেক সময় এই ফি সমূহ সম্পর্কে গ্রাহকরা আগেই সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণে পরে হতাশ হয়ে পড়েন। অতিরিক্ত এই ফি গুলো ঋণের মোট খরচ বাড়িয়ে তোলে, যা অনেকের জন্য আর্থিক বোঝা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ঋণ গ্রহণের আগে এসব ফি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।

শেষ মন্তব্যঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এবং প্রবাসীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সহজভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। আমার মতে, ব্যাংকের আবেদন প্রক্রিয়া যাতে সহজ ও গ্রাহকবান্ধব হয়, সেই চেষ্টা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। অনলাইনে এবং অফলাইনে দুই ধরনের আবেদন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রবাসীরা নিজের সুবিধা অনুযায়ী আবেদন করতে পারেন, যা সময় ও শ্রম বাঁচায়। তবে, জামিনদার প্রয়োজনীয়তা ও নির্ধারিত ডকুমেন্টস জমা দেওয়ার নিয়মকানুন ঠিকমতো মেনে চলা জরুরি।

কারণ এটাই মূলত ঋণ অনুমোদনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। লেখক মনে করেন, প্রবাসীদের উচিত আগেই প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে সঠিকভাবে আবেদন ফরম পূরণ করা এবং নির্ধারিত সময়ে কিস্তি পরিশোধ নিশ্চিত করা, যাতে ঋণ গ্রহণের পুরো প্রক্রিয়া সহজ ও ঝামেলামুক্ত হয়। সামগ্রিকভাবে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণ নীতিমালা প্রবাসীদের জন্য আর্থিক সহায়তা হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর এবং তাদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে। আশা করছি, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url