সৌদি আরব ভিসা আবেদন করার নিয়ম

সৌদি আরব ভিসা আবেদন করার নিয়ম, আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য অনুযায়ী সঠিক ভিসার ধরন নির্বাচন করুন যেমন: ট্যুরিস্ট ভিসা, কাজের ভিসা, ব্যবসায়িক ভিসা, হজ/উমরা ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসা ইত্যাদি। বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ২০ লক্ষেরও বেশি বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে। প্রতিবছরই হাজার হাজার বাংলাদেশি কাজের জন্য সৌদি আরব যায়।
সৌদি-আরব-ভিসা-আবেদন-করার-নিয়ম
এছাড়াও হজ্জ, চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ ইত্যাদি নানা কাজে সৌদি আরব যাওয়া হয়। তবে সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম সম্পর্কে অবগত না থাকার কারণে নানারকম প্রতারণার শিকার হচ্ছে অনেকেই।পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র স্থান মক্কা ও মদিনা অবস্থিত সৌদি আরবে। এছাড়াও স্বল্প খরচে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়ে কর্মক্ষেত্র উন্নতি করা যায়।

ইসলামী শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্যও সৌদি আরব বিখ্যাত। এক দেশে নাগরিক অন্য দেশে প্রবেশের অনুমতি পত্র হচ্ছে ভিসা। সৌদি আরব যেতে সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম, ভিসার প্রকারভেদ, কি কি ডকুমেন্টস লাগে, কত টাকা খরচ হয়, ভিসার মেয়াদ কতদিন, সৌদি আরব কাজের ভিসা, সৌদি ভিসা কোথায় করবো ইত্যাদি সকল তথ্য থাকছে এই পোস্টে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ সৌদি আরব ভিসা আবেদন করার নিয়ম

সৌদি আরব ভিসার প্রকারভেদ

সৌদি আরব বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা প্রদান করে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ সৌদি আরবে বিভিন্ন প্রয়োজনে যায়। সৌদি আরব বিশ্বের অন্যতম প্রধান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ। এখানকার ভিসা পলিসি ভ্রমণকারীদের উদ্দেশ্য ও সময়কাল অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকারে বিভক্ত। ভিসার ধরন বুঝে সঠিক আবেদন করা ভিসা পাওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে সৌদি আরবে পাওয়া ভিসাগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো।
  • সৌদি আরব টুরিস্ট ই-ভিসা
  • হজ্জ ভিসা
  • স্টুডেন্ট ভিসা
  • ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা
  • বিজনেস কমার্শিয়াল ভিসা
এছাড়াও সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী কাজের ভিসায় যেতে চাইলে বিভিন্ন প্রকার ভিসা রয়েছে। যেমন-

  • আমেল মঞ্জিল ভিসা
  • আমেল আইদি ভিসা
  • কোম্পানি ভিসা
  • চাওয়াক খাছ ভিসা
মাজরার ভিসাবর্তমানে সবগুলো ভিসাই বাংলাদেশীদের জন্য খোলা রয়েছে। প্রতিটি ভিসারই আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এসকল ভিসার ধরন, কাজ, প্রসেসিং, খরচ ও মেয়াদ ভিন্ন ভিন্ন হয়।

সৌদি আরব ভিসা আবেদন করার নিয়ম

সৌদি আরব ভিসা আবেদন করার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা পাওয়া যায়, যেমন- ওমরাহ ভিসা, পর্যটন (ট্যুরিস্ট) ভিসা, কাজের (ওয়ার্ক) ভিসা, শিক্ষার্থী ভিসা, পারিবারিক ভিসা ইত্যাদি। এসকল ভিসার জন্য আবেদন করতে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন এজেন্সি কিংবা সৌদি এম্বাসির শরণাপন্ন হতে হয়। সৌদি আরব ভিসা আবেদন করার নিয়ম অনুসরণ করে ভিসা হাতে পেতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন-
ধাপ ১ঃ ভিসার ধরন নির্বাচনঃ সৌদি আরবের ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপ হলো ভিসার ধরন নির্বাচন করা। আপনি কোন কারণে সৌদি আরব যেতে চান তার উপর ভিত্তি করে ভিসার ধরন নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি https://visa.mofa.gov.sa বা https://visa.vfstasheer.com ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে “Apply for Visa” অপশন নির্বাচন করুন, এরপর“Visa Type” বা “Purpose of Visit” অপশনে ক্লিক করুন। উপযুক্ত ভিসা ধরন সিলেক্ট করুন (উদাহরণ: "Work Visa", "Visit Visa", "Tourism", "Umrah", ইত্যাদি)

ধাপ ২ঃ ভিসার আবেদন পত্র পূরণঃ সৌদি আরবের জন্য ভিসার আবেদনপত্র পূরণ করার পদ্ধতি নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করছেন (যেমন: ট্যুরিস্ট, ওমরাহ, ওয়ার্ক, ফ্যামিলি)। যেকোন ভিসায় সৌদি আরব যেতে চাইলে অনলাইন কিংবা সৌদির ভিসা প্রসেসিং এজেন্সী (Saudi Arabia Visa Processing Agency) বা এম্বাসি (Embassy) থেকে ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে তা সঠিকভাবে পূরণ করুন। অনলাইন থেকে আবেদন পত্র ডাউনলোড করে থাকলে খেয়াল রাখবেন অবশ্যই তার জন্য স্পষ্ট রেজুলেশনে হয়ে থাকে।

ধাপ ৩ঃ প্রয়োজনে কাগজপত্র জমাদানঃ সৌদি আরব ভিসার জন্য আবেদন করতে গেলে, ভিসার ধরন অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (Documents) জমা দিতে হয়। সৌদি আরবের ভিসা প্রসেসিং করার জন্য এজেন্সি বা এম্বাসিতে ভিসার ধরন অনুযায়ী যেসকল কাগজপত্র প্রয়োজন হয় তা আবেদনপত্রের সাথে জমা দিন।

ধাপ ৪ঃ ভিসা প্রসেসিং ফি প্রদানঃ সৌদি আরবের ভিসা আবেদন করার সময় ভিসা প্রসেসিং ফি প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ফি-এর পরিমাণ এবং প্রদানের পদ্ধতি নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের ভিসা নিচ্ছেন তার উপর। এম্বাসিতে আবেদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভিসার প্রসেসিং ফি ভিন্ন হয়। সে অনুযায়ী ব্যাংক চালান এর মাধ্যমে ফি পরিশোধ করুন।

ধাপ ৫ঃ এম্বাসিতে সাক্ষাৎকারঃ সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুসারে ভিসা প্রদানের পূর্বে সৌদি আরবের এম্বাসি/ কনস্যুলেটে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সৌদি আরবের ভিসার জন্য এম্বাসিতে সাক্ষাৎকার (Interview) সাধারণত সব ভিসার জন্য প্রয়োজন হয় না, তবে কিছু নির্দিষ্ট ভিসার ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলক হতে পারে। বিশেষ করে কাজের ভিসার ক্ষেত্রে দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য এই প্রক্রিয়াটিতে সঠিকভাবে অংশগ্রহণ করুন।

ধাপ ৬ঃ ভিসা আবেদন ট্র্যাকঃ সৌদি আরবের ভিসা আবেদন করার পর আপনার আবেদনটি কোন অবস্থায় আছে তা অনলাইনে ট্র্যাক করা সম্ভব। সাধারণভাবে টুরিস্ট ভিসা ছাড়া অন্যান্য ভিসা হতে কিছুটা সময় লাগে। এম্বাসিতে বা এজেন্সিতেও যোগাযোগ করে আপনার ভিসার বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন।

ধাপ ৭ঃ সৌদি আরবের ভিসা সম্বলিত পাসপোর্ট সংগ্রহঃ সৌদি আরবের ভিসা সম্বলিত পাসপোর্ট সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করেছেন, এবং আবেদন কোথায় করেছেন (যেমন: তাশহীর সেন্টার বা অনলাইন) তার উপর। ট্র্যাকিং স্ট্যাটাসে যদি দেখায় "Passport Ready for Collection", তাহলে আপনার পাসপোর্ট প্রস্তুত। আপনার আবেদন জমা দেওয়ার সময় যেই পাসপোর্ট এজেন্সি বা এম্বাসিতে জমা দিয়েছিলেন, সেখান থেকেই আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে।

সৌদি আরব ই-ভিসা করার নিয়ম

সৌদি আরবের ই-ভিসা হলো একটি ডিজিটাল ভ্রমণ অনুমতি, যা অনলাইনে আবেদন করে সহজেই পাওয়া যায়। এই ভিসা সৌদি আরবে পর্যটন, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা বা অন্যান্য সংক্ষিপ্ত মেয়াদী ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়।বর্তমানে টুরিস্ট ভিসার জন্য সৌদি আরবের ই ভিসা আবেদন করা যায়। সৌদি ই-ভিসা সম্পর্কিত ওয়েবসাইট, https://visa.visitsaudi.com/ – এ ভিজিট করে এপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ ও ভিসা ফ্রি প্রদান করে অনলাইনে সৌদি ই-ভিসা করতে পারবেন।

বাংলাদেশের নাগরিকরা সৌদি আরবের ই-ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন, তবে আবেদন করার আগে আপনার দেশের জন্য ই-ভিসা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। যদি আপনার দেশের নাগরিকদের জন্য ই-ভিসা প্রাপ্য না হয়, তাহলে সৌদি আরবের নিকটস্থ দূতাবাস বা কনস্যুলেটে গিয়ে সাধারণ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। নিচে সৌদি আরবের ই-ভিসা আবেদন করার পুরা প্রক্রিয়াটি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ

প্রথমে সৌদি আরবের অফিসিয়াল ই-ভিসা পোর্টালে গিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করুন। এতে আপনার পূর্ণ নাম, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, জাতীয়তা, যোগাযোগের ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে। আবেদন ফর্ম পূরণের পর, নিচের ডকুমেন্টগুলো আপলোড করতে হবেঃ

  • পাসপোর্টের স্ক্যান কপি (যার মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে)
  • সম্প্রতি তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে, ২x২ ইঞ্চি)
  • ভ্রমণ বীমার প্রমাণপত্র (COVID-১৯ সহ)
  • অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ডকুমেন্ট (যদি প্রযোজ্য হয়)
আবেদন ফি হিসেবে SAR 535 (প্রায় ১৪,০০০ টাকা) পরিশোধ করতে হবে। এই ফি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে পরিশোধ করা যায়। আবেদন সফল হলে, ই-ভিসা আপনার ইমেইলে পাঠানো হবে। এই ভিসা পোর্ট অব এন্ট্রিতে স্ক্যান করে পাসপোর্টে স্ট্যাম্প করা হবে। আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো পেশা বা কাজের জন্য সৌদি আরবে যেতে চান, তাহলে সেই অনুযায়ী ভিসা প্রক্রিয়া আলাদা হতে পারে। যেমন, কর্মসংস্থান ভিসা বা ব্যবসায়িক ভিসার জন্য আলাদা নিয়মাবলী রয়েছে। এই ধরনের ভিসার জন্য সাধারণত সৌদি আরবের স্থানীয় কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের স্পন্সরশিপ প্রয়োজন হয়।

সৌদি আরব ভিসা করতে যে সকল কাগজপত্র লাগে

সৌদি আরব ভিসা করতে বেশ কিছু কাগজপত্র (ডকুমেন্টস) প্রয়োজন হয়। সৌদি আরবে যেকোনো ধরনের ভ্রমণের জন্য ভিসা আবশ্যক। ভিসার ধরণ যেমন ভিন্ন, তেমনি তার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও আলাদা হয়। সৌদি আরবের প্রধান ভিসার ধরনগুলো হল: কাজের ভিসা, ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা, ট্যুরিস্ট ভিসা, হজ্জ/ওমরাহ ভিসা এবং স্টুডেন্ট ভিসা। প্রতিটি ভিসার জন্য প্রক্রিয়া ও কাগজপত্রের তালিকা বিস্তারিত এখানে দেওয়া হলোঃ

১. ট্যুরিস্ট ভিসাঃ আপনি যদি সৌদি আরবের ট্যুরিস্ট ভিসা করতে চান, তবে এটি সবচেয়ে সহজ ও দ্রুত প্রক্রিয়ার একটি। সৌদি সরকার বর্তমানে অনেক দেশের নাগরিকদের জন্য ইলেকট্রনিক ট্যুরিস্ট ভিসা (eVisa) দিচ্ছে, যা বাংলাদেশি নাগরিকরাও এখন এর আওতায় আসছেন। ট্যুরিস্ট ভিসা করতে যেসকল কাগজপত্র প্রয়োজন-

  • সর্বনিম্ন ৬ মাস মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট
  • জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন
  • ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট
  • ব্যাংক সলভেন্সি স্টেটমেন্ট
  • অনলাইনে আবেদন ও সৌদি এম্বাসিতে সাক্ষাৎকার
  • ছবি
২.কাজের ভিসাঃ সৌদি আরবে কাজের ভিসা (Work Visa) হল এমন একটি ভিসা, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সৌদি আরবের কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বৈধভাবে প্রবেশ ও অবস্থান করতে পারেন। এটি সাধারণত একজন নিয়োগদাতা (Sponsor) বা কফিলের মাধ্যমে প্রসেস করা হয়। সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী কাজের ভিসা পেতে প্রয়োজন হয়-

  • পাসপোর্ট
  • এনআইডি কার্ড (ওয়ার্ক পারমিট পেতে ২১ বছর বয়স লাগে)
  • বিএমইটির ডাটাবেজে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন
  • বিএমইটির দক্ষতা যাচাই কর্মসূচি থেকে সার্টিফিকেট
  • ৪ কপি ছবি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ল্যাব প্রিন্ট ছবি
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • করোনা ভ্যাকসন সার্টিফিকেট
  • মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট
  • সৌদি এম্বাসিতে সাক্ষাৎকার
৩. ব্যবসায়/বিজনেস ভিসাঃ আপনি যদি সৌদি আরবের ব্যবসায়িক (বিজনেস) ভিসা নিতে চান, তাহলে এটি মূলত ব্যবসায়িক মিটিং, কনফারেন্স, সেমিনার, সম্ভাব্য বাণিজ্যিক অংশীদারদের সাথে সাক্ষাৎ, অথবা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের জন্য হয়ে থাকে। এটি চাকরি বা বাণিজ্যিক কাজ শুরু করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং স্বল্পমেয়াদি অফিসিয়াল সফরের জন্য। সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসায়িক (বিজনেস) ভিসা পেতে প্রয়োজন হয়-

  • পাসপোর্ট
  • এনআইডি কার্ড বা জন্ম নিবন্ধন
  • সৌদি আরবের কোন কোম্পানির ইনভিটেশন বা আমন্ত্রণপত্র
  • পূর্বে কোন দেশে ভ্রমণের প্রমাণ হিসেবে পাসপোর্টে স্টিকার স্ট্যাম্প
  • ট্রেড লাইসেন্স
  • এক বছরের ব্যাংক সলভেন্সি ও স্টেটমেন্ট
  • ৪-৬ কপি ছবি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ল্যাব প্রিন্ট ছবি
  • ভিজিটিং কার্ড
৪. হজ্জ ভিসাঃ আপনি যদি সৌদি আরবের হজ্জ ভিসা করতে চান, তাহলে এটি একটি বিশেষায়িত ভিসা যা প্রতি বছর নির্ধারিত হজ মৌসুমে শুধু সরকার অনুমোদিত হজ এজেন্সির মাধ্যমে ইস্যু করা হয়। এটি ব্যক্তিগতভাবে বা সরাসরি কনস্যুলেটে আবেদনযোগ্য নয়। সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী হজ্জ ভিসা করতে প্রয়োজন হয়-

  • মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট
  • জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • যাদের বয়স ১৮ এর কম তাদের অভিভাবকদের জাতীয় পরিচয়পত্র
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
  • ভ্যাকসিনেশন সনদ (বিশেষত মেনিনজাইটিস এবং কোভিড-১৯)
  • ছবি
  • মাহরাম ডকুমেন্ট
৫.স্টুডেন্ট ভিসাঃ আপনি যদি সৌদি আরবে স্টুডেন্ট ভিসা (Student Visa) করতে চান, তাহলে এটি মূলত উচ্চশিক্ষা বা ধর্মীয় শিক্ষা (মাদরাসা বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়) গ্রহণের জন্য ইস্যু করা হয়। এই ভিসা শুধুমাত্র সৌদি আরবের সরকারি বা স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অফার লেটার (Admission Letter) পেলে করা যায়। সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী স্টুডেন্ট ভিসা পেতে প্রয়োজন হয়-

  • মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট
  • জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • যে কোন একজন অভিভাবকের বৈধ ইকামার কপি
  • শিক্ষার দিকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। জন্মসূত্রে মুসলিম না হলে ইসলাম গ্রহণের প্রমাণপত্র।
  • ৪-৬ কপি ছবি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ল্যাব প্রিন্ট ছবি
  • মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট
  • ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
৬. ফ্যামিলি ভিজিট ভিসাঃ সৌদি আরব ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা হল এমন একটি ভিসা যার মাধ্যমে সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রবাসীরা (যাদের ইকামা আছে) তাদের পরিবারের সদস্যদের সৌদি আরবে স্বল্পমেয়াদে (মোট ৩–৬ মাস পর্যন্ত) ভ্রমণের সুযোগ করে দিতে পারেন। সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা করতে প্রয়োজন হয়-

  • পাসপোর্ট
  • এনআইডি কার্ড বা জন্ম নিবন্ধন
  • সৌদি আরবে অবস্থানকারী ব্যক্তির পারিবারিক সদস্য হওয়ার প্রমাণপত্র
  • স্ত্রী ফ্যামিলি ভিজিট ভিসায় যেতে স্বামীর বৈধ ইকামার কপি
  • বিয়ের বৈধ কাবিননামা
  • মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট
  • ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট

সৌদি আরবের বিভিন্ন ভিসার ধরন, মেয়াদ ও খরচ

সৌদি আরব যেকোনো বিদেশীর প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরণের ভিসা প্রদান করে থাকে। এই ভিসাগুলো ভ্রমণ উদ্দেশ্য, সময়কাল ও আবেদন প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে আলাদা হয়। এছাড়াও প্রত্যেক ভিসার জন্য নির্দিষ্ট ফি ও শর্ত থাকে। সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন ভিসার কার্যক্রম, মেয়াদ ও খরচ ভিন্ন হয়। নিচে সৌদি আরবের প্রধান প্রধান ভিসার ধরন, মেয়াদ ও আনুমানিক খরচ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১. কাজের ভিসাঃ কাজের ভিসা (Work Visa) হলো সেই ভিসা যা সৌদি আরবে চাকরি করার জন্য বিদেশী কর্মীদের দেয়া হয়। এই ভিসা ছাড়া কেউ বৈধভাবে সৌদি আরবে কাজ করতে পারেন না। এটি মূলত স্পন্সর কোম্পানি বা নিয়োগকর্তার মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়। সৌদি আরবে মূলত বৈদেশিক কর্মী ভিসা ওট্রানজিট বা শর্ট টার্ম কাজের ভিসা পাওয়া যায়। সাধারণত কাজের ভিসার মেয়াদ থাকে ১ বছর থেকে ২ বছর পর্যন্ত, যা শেষে পুনর্নবীকরণ করা যায়। কাজের মেয়াদ ও অবস্থান অনুযায়ী আইকামা (রেসিডেন্ট পারমিট) ইস্যু করা হয়, যা বছরে নবায়ন করতে হয়। সর্বমোট কাজের ভিসার খরচ ১৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতি ও ভিসার মেয়াদ অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।

২. সৌদি আরব টুরিস্ট ই-ভিসাঃ বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে টুরিস্ট ভিসায় (Tourist Visa) যেতে চাইলে বর্তমানে অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। টুরিস্ট ভিসা ৩ মাস সিঙ্গেল এন্ট্রি ও ৬ মাস মাল্টিপল এন্ট্রি হয়ে থাকে। এই ভিসার জন্য আনুমানিক ৪০০ থেকে ৫৫০ সৌদি রিয়াল (SAR) খরচ হয়, যা প্রায় ৩,৫০০ থেকে ৪,৫০০ বাংলাদেশি টাকা সমান। ই-ভিসা সিস্টেমের মাধ্যমে সহজে আবেদন করা যায়। তবে সব খরচ মিলিয়ে ৫০-৭০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।

৩.সৌদি আরব হজ্জ ভিসাঃ বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় লক্ষাধিক মানুষ হজ্জ করতে যায়। এছাড়াও অসংখ্য মানুষ ওমরাহ হজ্জ পালন করতে যায়। একজন ব্যক্তি এজেন্সির মাধ্যমে হজ্জ ভিসা করতে চাইলে ভিসার মূল্যসহ সম্পন্ন হজ প্যাকেজে প্রায় ৬ লক্ষ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুসারে বর্তমানে ওমরাহ হজ ভিসার মূল্য ৩০০ রিয়াল এবং আনুষঙ্গিক খরচ ২০০ রিয়াল সহ মোট ৫০০ রিয়াল নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যা ১৪-১৫ হাজার। তবে সম্পূর্ণ ওমরা প্যাকেজে একজন ব্যক্তির ৭৫ হাজার থেকে ২ লক্ষ খরচ হয়।

৪. সৌদি আরব স্টুডেন্ট ভিসাঃ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইসলামিক উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী সৌদি আরবে স্টুডেন্ট ভিসায় যায়। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন করার পর সেখান থেকে কনফার্মেশন লেটার প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও স্কলারশিপ পেয়ে সৌদি আরবে স্টুডেন্ট ভিসায় যাওয়া যায়। স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী বা কোর্সের মেয়াদকাল পর্যন্ত হয়। স্টুডেন্ট ভিসার মূল্য সাধারণত ২,০০০-৩,০০০ রিয়াল হয়ে থাকে।

৫. সৌদি আরব ফ্যামিলি ভিজিট ভিসাঃ সৌদি আরবে পরিবারের কোনো সদস্য প্রবাসী অবস্থায় থাকলে পরিবারের লোকদের জন্য ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা আবেদন করতে পারে। সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী শুধুমাত্র নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী ও সন্তানদের ভিসা সংগ্রহ করা যায়। বহিঃস্থ কোন আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা করলে পরবর্তীতে সমস্যা হয়। পূর্বে ফ্যামিলি ভিজিট ভিসার জন্য জনপ্রতি ২০০০ রিয়াল খরচ হতো। ২০২৩ সালে সেই ভিসার মূল্য ৩০০ রিয়াল করা হয়েছে। তবে ভিসার মূল্য সহ আনুষঙ্গিক সকল খরচ মিলিয়ে ৩ মাসের ফ্যামিলি ভিজিট ভিসায় জনপ্রতি প্রায় ৪ হাজার বিয়াল খরচ হতে পারে। ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা ৩ মাস সিঙ্গেল এন্ট্রি ও ৬ মাস মাল্টিপল এন্ট্রিতে অবস্থান করা যায়।

৬. সৌদি আরব বিজনেস কমার্শিয়াল ভিসাঃ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সৌদি সরকার বিজনেস ভিসার ব্যবস্থা রেখেছে। এ ভিসায় সৌদি আরবের কোন কোম্পানির ইনভিটেশন (Invitation) বা আমন্ত্রণপত্র পেয়ে সেই কোম্পানি ভিজিট করে তাদের সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি করতে পারবেন। তবে সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী বিজনেস কমার্শিয়াল ভিসায় কাজ করার সুযোগ নেই। ভিজিট ভিসা ৩ ধরনের মেয়াদী হয়ে থাকে। যথা- ৩ মাসের সিঙ্গেল এন্ট্রি, ৬ মাসের মাল্টিপল এন্ট্রি, ১ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি। একবারে সর্বোচ্চ ৯০ দিন অবস্থান করে দেশে ফিরে এসে পুনরায় মাল্টিপল এন্ট্রিতে যেতে হবে। বিজনেস ভিসার মূল্য সিঙ্গেল এন্ট্রি প্রায় ২,০০০ রিয়াল এবং মাল্টিপল এন্ট্রি প্রায় ৩,০০০ রিয়াল।

সৌদি আরবে কাজের ভিসা ধরন, মেয়াদ ও খরচ

সৌদি আরবে কাজের ভিসা কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। এসকল ভিসার ধরন, কাজ, মেয়াদ ও প্রসেসিং খরচ ভিন্ন। এখানে কর্মসংস্থান ও উন্নত জীবনের জন্য বিশ্বব্যাপী বহু লোক কাজের সুযোগ খোঁজে। সৌদি সরকার ভিসার ধরন ও প্রক্রিয়া নিয়মিত আপডেট করে থাকে, যা কাজের ধরন, মেয়াদ, এবং স্পন্সর সংস্থার ভিত্তিতে বিভিন্ন হয়। এখানে সৌদি আরবে কাজের ভিসার বিভিন্ন ধরন, মেয়াদ এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত খরচের বিস্তারিত আলোচনা দেয়া হলো।

১. সৌদি আরব আমেল মঞ্জিল ভিসাঃ আমেল মঞ্জিল ভিসা মূলত সৌদি আরবে আবাসন নির্মাণ ও সম্পর্কিত কাজের জন্য ইস্যু করা হয়। এটি সাধারণত নির্মাণ শ্রমিক, কারিগরি কর্মী বা সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের জন্য দেওয়া হয় যারা বাড়ি, অফিস, ফ্যাক্টরি ইত্যাদি নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত।একজন সৌদি নাগরিক তার ঘরোয়া কাজের জন্য ৮ জন পর্যন্ত কর্মচারী নিয়োগ দিতে পারে। যেমন- ঘরের দারোয়ান, ক্লিনার, মেইড ইত্যাদি। আমেল মঞ্জিল ভিসাতেই এই কাজ করা যায়। আমেল মঞ্জিল ভিসার মূল্য ১,৫০০-২,০০০ রিয়াল হয়, তবে সৌদি যেতে সব মিলিয়ে প্রায় ৩-৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়।

২. সৌদি আরব আমেল আইদি ভিসাঃ আমেল আইদি ভিসা মূলত সৌদি আরবের শ্রম, কর্মসংস্থান ও ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত পরিচয়পত্র বা আইডি সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি “Amal ID” বা “Amal Card” নামে পরিচিত যা সৌদি আরবে বৈধভাবে কাজ করার জন্য একটি বাধ্যতামূলক পরিচয়পত্র।কাজের ভিসা পাওয়ার পর সৌদি আরবে প্রবেশের পরে, কর্মীকে এই আমেল আইডি কার্ড পেতে হয় যা তার বৈধ কর্মসংস্থান ও আইকামার সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ভিসায় সৌদি আরবে কফিলের অনুমতি নিয়ে যেকোনো কাজ করতে পারবেন। সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী সৌদর নাগরিক বা কফিল নিয়োগকারী কোম্পানি থেকে ২,০০০-২,৫০০ রিয়ালে ভিসা ক্রয় করে। পরে ৬,০০০-১০,০০০ রিয়ালে সে ভিসা বিক্রি করে।

৩. সৌদি আরব কোম্পানি ভিসাঃ সৌদি আরবে কোম্পানি ভিসা হলো এমন একটি ভিসা যা কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্পন্সর করে কর্মীদের সৌদি আরবে কাজের জন্য ইস্যু করা হয়। এটি সাধারণত কাজের ভিসার একটি ধরন, যেখানে স্পন্সর কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান আবেদনকারীদের ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে। সৌদি আরবের চাহিদা সম্পন্ন কাজগুলোতে বিভিন্ন কোম্পানি কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। কাজের দক্ষতা দেখিয়ে কোম্পানিতে সরাসরি ভিসার আবেদন করা যায়। ভিসার মেয়াদ সাধারনত ১ থেকে ২ বছর এবং নবায়নযোগ্য। কোম্পানি ভিসা অ্যাপ করলে ভিসার মূল্য ২,০০০-২,৫০০ রিয়াল হয়ে থাকে। অন্যান্য সকল খরচ মিলিয়ে সৌদি যেতে ৩.৫-৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়।

৪. সৌদি আরব চাওয়াক খাছ ভিসাঃ সৌদি নাগরিকের ব্যক্তিগত (হোম) ড্রাইভার হিসেবে কাজের জন্য ভিসা, যা সাধারণত “ড্রাইভার ভিসা” বা “হোম সার্ভিস ভিসা” নামে পরিচিত। এটি এমন একটি কাজের ভিসা যা সৌদি নাগরিক বা পরিবারের জন্য ব্যক্তিগত ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগের জন্য ইস্যু করা হয়। ড্রাইভার সাধারণত স্পন্সর সৌদি নাগরিকের বাড়িতে গাড়ি চালানো, পরিবারের অন্যান্য কাজ করতে পারে। ভিসার মেয়াদ সাধারণত ১ থেকে ২ বছর মেয়াদী, নবায়নযোগ্য। এ ভিসার প্রকৃত মূল্য ১,৫০০-১,৭০০ রিয়াল তবে কফিলরা ভিসার মূল্য বাড়িয়ে বেশি দামে বিক্রয় করে। তাই সকল খরচ মিলিয়ে সৌদি যেতে ৩-৩.৫ লক্ষ টাকা লাগে।

৫. সৌদি আরব মাজরার ভিসাঃ এটি সৌদি আরবের কৃষি বা বাগান সম্পর্কিত কাজের ভিসা, যা সাধারণত “মাজরার ভিসা” বা “Agricultural Work Visa” নামে পরিচিত। এটি বিশেষভাবে সৌদি আরবে কৃষিকাজ বা বাগান সংক্রান্ত কাজের জন্য ইস্যু করা কাজের ভিসা। মূলত কৃষক, বাগানিরা বা কৃষি শ্রমিকদের জন্য। ভিসার মেয়াদ সাধারণত ১ থেকে ২ বছর মেয়াদী, নবায়নযোগ্য কিছু ক্ষেত্রে মৌসুমি ভিত্তিতে হতে পারে। ভিসার প্রকৃত মূল্য ১,৫০০-২,০০০ রিয়াল হয়ে থাকে। তবে প্রসেসিং ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ৩-৪ লক্ষ টাকা লাগে। সৌদি আরব ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী বর্তমানে সৌদি আরবের সকল শ্রমিক ভিসার মেয়াদকাল ২ বছর করা হয়েছে। তারপর তার প্রসেসিং করে দীর্ঘদিন অবস্থান করা যাবে।

সৌদি আরবে কোন কাজের চাহিদা বেশি

সৌদি আরবে যেসব কাজের চাহিদা বেশি সেগুলো মূলত সেই খাতগুলো যেখানে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক উভয়ের প্রয়োজন হয়। সৌদি আরবে বর্তমানে বিভিন্ন খাতে কাজের চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে দেশটির আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ভিশন ২০৩০ এর আওতায় কিছু সেক্টর বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে ৫ টি খাতে প্রতিবছর ৫,০০০ হাজার পেশাদার ও দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেবে সৌদি আরব’ বলে জানান সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দোহাইলাম।

এগুলো হলো- প্লাম্বার, ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিশিয়ান, অটোমোবাইল ও এসি মেকানিক। সাধারণত অদক্ষ কর্মীদের বেতন ৮০০-১২০০ রিয়াল হয়ে থাকে। তবে উক্ত ৫ টি কাজে দক্ষ শ্রমিকদের বেতন হবে ১৫০০-১৮০০ রিয়াল। এই কাজগুলোতে ভিসা পেতে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো- বিএমইটি (BMET) থেকে পরীক্ষা ও দক্ষতা দেশের মাধ্যমে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়াও কনস্ট্রাকশন শ্রমিক, ফ্যাক্টরি শ্রমিক, ড্রাইভিং, ক্লিনার, সেলসম্যান, গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবের কাজের চাহিদা অনেক বেশি।

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসায় গেলে বেতন কেমন

সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা গেলে বেতন অনেকটাই নির্ভর করে আপনার কাজের ধরন, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং কোম্পানির ধরণ ও অবস্থানের ওপর। সৌদি আরবে কাজের জন্য যে ভিসা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, তা হলো “কোম্পানি ভিসা” বা ওয়ার্ক ভিসা। এই ভিসা সাধারণত সৌদি আরবে কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত চাকরি করার জন্য দেওয়া হয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিক ও পেশাজীবী এই ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে যান।

বেতন কত হবে, সেটা বিভিন্ন ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে যেমন পেশা, অভিজ্ঞতা, কোম্পানির ধরন, কাজের স্থান এবং ভাষার দক্ষতা। উচ্চ প্রযুক্তি বা বিশেষায়িত কাজ যেমন প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি, চিকিৎসা ক্ষেত্রে বেতন বেশি। অপরদিকে সাধারণ শ্রমিক, গৃহকর্মী বা নির্মাণ শ্রমিকদের বেতন তুলনামূলক কম হয়। অনুভূতিশীল ও দক্ষ কর্মীর বেতন বেশি হয়। অভিজ্ঞতা বেশি হলে বেতন বেড়ে যায়। নতুন বা অদক্ষ শ্রমিকদের বেতন অপেক্ষাকৃত কম।

বড় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো সাধারণত ভালো বেতন এবং অতিরিক্ত সুবিধা দিয়ে থাকে, যেখানে ছোট প্রতিষ্ঠানে কম বেতন থাকতে পারে। আরবি বা ইংরেজি দক্ষতা থাকলে বেতন ও পদোন্নতির সুযোগ বেশি থাকে। রিয়াদ, জেদ্দা বা দামাম অঞ্চলের মত বড় শহরে বেতন একটু বেশি হতে পারে, কারণ সেখানে জীবনযাত্রার খরচও বেশি। বর্তমানে প্লাম্বার, ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিশিয়ান, অটোমোবাইল ও এসি মেকানিক- এসকল কাজে দক্ষ শ্রমিকদের বেতন ১৫০০-১৮০০ রিয়াল হয়। তবে অন্যান্য কাজে অদক্ষ ব্যক্তিদের বেতন ১২০০-১৫০০ রিয়াল বা তার কম হয়।

সৌদি ভিসা এজেন্সি

সৌদি আরব ভিসা করতে অনেক এজেন্সি কাজ করে থাকে, যারা আবেদন থেকে শুরু করে কাগজপত্র প্রস্তুতি, ইন্টারভিউ, ফি পরিশোধ ও অন্যান্য প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। তবে, এজেন্সি নির্বাচন করার সময় সতর্ক হওয়া খুব জরুরি, কারণ অনেক নকল বা অনৈতিক এজেন্সিও আছে যারা ভুয়া আশ্বাস দেয়।বাংলাদেশ থেকে সৌদি ভিসা প্রসেসিং করার বহু এজেন্সি রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু বিশ্বস্ত ও সুপরিচিত এজেন্সি হলোঃ

  • বিএস সার্ভিসেস
  • আল খিদ মা কনসালটেন্সি সেন্টার
  • আল মাহমুদ কনসালটেন্সি
  • আল হুমাইরা কনসালটেন্সি সার্ভিস
  • এমসি ডিভিশনস বিডি ভিসা সার্ভিস
  • আল-মানার কনসালটেন্সি লিমিটেড
  • আল নূর কনসালটেন্সি সেন্টার
বর্তমানে সৌদি আরবের অনেক ধরনের ভিসার জন্য সরকারি ই-ভিসা পোর্টাল (যেমন visa.visitsaudi.com) থেকে সরাসরি আবেদন করা যায়, যা অনেক সময় তাড়াতাড়ি এবং কম খরচে হয়। তাই, যদি আপনার পক্ষে নিজেই আবেদন করা সম্ভব হয়, সেটাই উত্তম। সৌদি আরব ভিসার জন্য এজেন্সির সাহায্য নেওয়া সুবিধাজনক হতে পারে, বিশেষ করে যারা প্রথমবার ভিসার আবেদন করছেন তাদের জন্য। কিন্তু ভালো ও বিশ্বস্ত এজেন্সি নির্বাচন করতে সচেতন হওয়া উচিত এবং সবসময় অফিসিয়াল তথ্য যাচাই করে চলা উচিত।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর

১. প্রশ্নঃ সৌদি আরব কাজের ভিসার দাম কত?

উত্তরঃ সৌদি আরবে কাজের ভিসার প্রকৃত মূল্য ১,৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ২,৫০০ রিয়াল হয়, যা বাংলাদেশী টাকায় ৪৫,০০০-৭৫,০০০ টাকা। তবে সৌদির কফিলরা ও ভিসা প্রদানকারী এজেন্সি এর মূল্য ৬,০০০-১০,০০০ রিয়াল নিয়ে থাকে।

২. প্রশ্নঃ সৌদি আরবের ভিসা পেতে কত দিন সময় লাগে?

উত্তরঃ সৌদি আরবের কাজের ভিসা আবেদন করার পর তা ৩০ দিনের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে টুরিস্ট ভিসা, ফ্যামিলি ভিসিট ভিসা পেতে ৭-১৫ দিন সময় লাগে। স্টুডেন্ট ভিসা এবং হজ্জ ভিসা প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম অনুযায়ী হয়। কিছু ক্ষেত্রে বিজনেস কমার্শিয়াল ভিসা ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই প্রদান করা হয়।

৩. প্রশ্নঃ সৌদি আরব কাজের ভিসা পেতে কত বছর বয়স লাগে?

উত্তরঃ সৌদি আরব কাজের ভিসা পেতে ন্যূনতম ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ বছর বয়স লাগে।

৪. প্রশ্নঃ কফিল কি?

উত্তরঃ একটি দেশের স্থায়ী নাগরিক তার অধীনে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে পারে। একে কাফালা পদ্ধতি বলে। কাফালা পদ্ধতিতে যিনি বিদেশি কর্মীদের স্পন্সর করে সে দেশে যাওয়ার অনুমতি দেয় তাকে কফিল বলা হয়। একজন কফিলের অধীনে কোন কর্মী বিদেশে গেলে তার কর্মে নিয়োগ, কাজ পরিবর্তন, ইকামা ইত্যাদি কফিলের উপর নির্ভর করে।

৫. প্রশ্নঃ ইকামা বা আকামা কি?

উত্তরঃ ইকামা বা আকামা হলো বিদেশি বাসিন্দাদের সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশগুলোতে অবস্থান, বসবাস ও কাজ করার জন্য অনুমতি পত্র। অবস্থানরত দেশের শ্রম আইন ও অভিবাসন নীতি মেনে বৈধ পাসপোর্ট ব্যবহার করে ইকামা বা আকামা তৈরি করতে হয়। মেয়াদসম্পন্ন ইকামা ছাড়া সে দেশে অবস্থান করা অবৈধ।

শেষকথাঃ সৌদি আরব ভিসা আবেদন করার নিয়ম

সৌদি আরব ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মন্তব্য বললে, এটি সাধারণত একটি সুসংগঠিত এবং নিয়মমাফিক প্রক্রিয়া যা ধাপে ধাপে অনুসরণ করলে সফল হওয়া যায়। তবে, সঠিক তথ্য, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সময়মতো আবেদন করা খুবই জরুরি। সৌদি আরব ভিসা প্রক্রিয়া অনেক সময় জটিল মনে হতে পারে, বিশেষ করে যারা প্রথমবারের মতো আবেদন করছেন তাদের জন্য।

তাই ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া এবং সরকারিভাবে অনুমোদিত সূত্র বা বিশ্বস্ত এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। বর্তমানে ই-ভিসার ব্যবস্থা হওয়ায় অনেকটাই সহজ হয়েছে, কারণ পুরো আবেদন অনলাইনে করা যায়, যা সময় ও খরচ উভয়ই কমায়। তবে কিছু বিষয় সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হয়, যেমন ভুল তথ্য দেওয়া, অননুমোদিত এজেন্সির হাত ধরা বা অতিরিক্ত খরচ স্বীকার করা থেকে বিরত থাকা।

এছাড়া, ভিসা প্রকারভেদ বুঝে নিজের উদ্দেশ্যের সাথে মিল রেখে সঠিক ভিসা নেওয়া প্রয়োজন। সৌদি আরবের ভিসা প্রক্রিয়া বেশ নিয়ন্ত্রিত ও নিয়মবদ্ধ, তাই ধৈর্য, সততা এবং প্রস্তুতির মাধ্যমে সহজেই সফলতা পাওয়া সম্ভব। সৌদি আরব ভিসা আবেদন করার নিয়ম না জেনে আমরা বিভিন্ন এজেন্সি ও দালালের শরণাপন্ন হই। মাঝে মাঝে তারা ভুল ভিসা দেয় ও দীর্ঘদিন সময় ব্যয় করে। এক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্য জেনে সচেতনতা অবলম্বন করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url