মাইক্রোসফট এক্সেল শিখে যেভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন

মাইক্রোসফট এক্সেল শিখে যেভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন, তা বুঝতে হলে প্রথমেই আপনার এক্সেলের বেসিক থেকে অ্যাডভান্সড স্কিল অর্জন করা জরুরি। এরপর অ্যাডভান্সড লেভেলে VBA, ম্যাক্রো ও ড্যাশবোর্ড তৈরির দক্ষতা অর্জন করুন। শেখার পাশাপাশি রেগুলার প্র্যাকটিস করে নিজের দক্ষতা আরও পোক্ত করুন।
মাইক্রোসফট-এক্সেল-শিখে-যেভাবে-ফ্রিল্যান্সিং-করবেন
দক্ষতা অর্জনের পর Fiverr, Upwork, Freelancer-এর মতো মার্কেটপ্লেসে প্রোফাইল তৈরি করুন। ছোট ছোট প্রজেক্ট নিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় কাজের দিকে এগিয়ে যান। Excel দিয়ে ডেটা এন্ট্রি, রিপোর্টিং, অটোমেশন, ড্যাশবোর্ড তৈরি সব কাজেরই ভালো চাহিদা রয়েছে। তাই মাইক্রোসফট এক্সেল শিখে আপনি সহজেই একটি সফল ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ মাইক্রোসফট এক্সেল শিখে যেভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন

ভূমিকা

আপনি যদি মাত্র একটি সফটওয়্যারের কাজ খুব ভালোভাবে জানেন, তাহলে অনলাইন এবং অফলাইন দুই সেক্টরে আপনার এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সফল ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। ছোট হোক বা বড়, সকল সেক্টরে একটি সফটওয়্যারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম সেটি হলো মাইক্রোসফট এক্সেল। যখনই কোন সহজ বা জটিল হিসাব নিকাশ সামনে আসে তখন প্রথমে মাথায় আসে মাইক্রোসফট এক্সেলের কথা।
দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন সবক্ষেত্রে যে সফটওয়্যারের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয় সেটা হল মাইক্রোসফট এক্সেল। Excel শব্দের আভিধানিক অর্থ হল শ্রেষ্ঠতর হওয়া বা সীমা অতিক্রম করা। Microsoft Excel সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যান্য অনেক প্রোগ্রাম থেকে শ্রেষ্ঠতর। মাইক্রোসফট এক্সেল হল মানুষের সময় বাঁচানোর যুগান্তকারী আবিষ্কার। যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ, থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় হিসাব নিকাশ করা যায় মাইক্রোসফট এক্সেল দিয়ে।

ডাটাভিত্তিক নির্ভুল তথ্যের জন্য মাইক্রোসফট এক্সেল এর ব্যবহার জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আপনি যে পেশারই হোন না কেন, এই সফটওয়্যারটির উপর দক্ষতা আপনার প্রফেশনাল ক্যারিয়ারকে আরও সুদৃঢ় করে তুলবে। এক্সেলে এমন অসাধারণ সব টুল ও ফিচার রয়েছে যা দিয়ে অনেক সহজে ডেটা এনালাইসিস থেকে শুরু করে অনেক জটিল জটিল কাজও করে ফেলা যায়। আর তাই একাডেমিক থেকে কর্মক্ষেত্র, সব জায়গাতেই এম এস এক্সেল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল হিসেবে বিবেচিত হয়।

মাইক্রোসফট এক্সেল কি

এক্সেল হলো মাইক্রোসফট অফিসের উইন্ডোজ ভিত্তিক এক প্রকার স্প্রেডশিট এনালাইসিস প্রোগ্রাম। মূলত এক্সেল এর সাহায্যে যাবতীয় হিসাব নিকাশ এবং ডাটা এন্ট্রি উভয় ধরনের কাজ করা যায়। এক্সেল এর পৃষ্ঠাটি অনেকগুলো সারি এবং কলামে বিভক্ত হওয়ায় এতে ডাটা এন্ট্রি করে নিখুঁতভাবে গ্রাফ তৈরির মাধ্যমে বিশাল তথ্যকে বিশ্লেষণ করা যায়। আর এজন্যই এই সফটওয়্যারকে স্প্রেডশিট এনালাইসিস প্রোগ্রাম বলা হয়।

স্প্রেডশীট শব্দের আভিধানিক বাংলা অর্থ হলো ছড়ানো পাতা। অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামটির সাহায্যে জটিল গাণিতিক গণনা, ডাটা এন্ট্রি ও তথ্যকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনায় নিখুঁতভাবে চার্ট বা গ্রাফ তৈরি করা ইত্যাদি আরও অনেক জটিল কাজকে অতি সহজে সমাপন করা যায়। মাইক্রোসফট এক্সেল এ লেখার জায়গাকে অর্থাৎ কাজ করার জায়গাকে ওয়ার্কশীট বলা হয়। মাইক্রোসফট এক্সেল এর প্রত্যেকটি ওয়ার্কশীটে ১৬৩৮৪ টি কলাম এবং ১০৪৮৫৭৬ টি রো থাকে।

আর কলাম ও রো এর সমন্বয়ে সৃষ্ট প্রতিটি ছোট ছোট ঘরকে সেল বলে। এক্সেল এর স্প্রেডশিটকে একটি বিশাল পৃষ্ঠার সাথে তুলনা করা যায়। খাতার মধ্যে আমরা কলম, রাবার অথবা ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে যা যা করতে পারি এক্সেল শীটে আমরা তার চেয়েও জটিল কাজগুলো খুব সহজে করতে পারি। কিবোর্ড এর কি গুলোকেই কলমের মতো ব্যবহার করে এক্সেল শিটে গাণিতিক তথ্যগুলোকে আমরা নিজেদের ইচ্ছে মতো সাজিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যালকুলেশন করতে পারি।

মাইক্রোসফট এক্সেল এর স্প্রেডশিটে কলামের মধ্যে সাধারণত আলফাবেটিক লেটার এবং রো’তে নিউমেরিক্যাল ডাটা লেখা হয়। কিন্তু আপনি চাইলে আপনার ইচ্ছামত প্রয়োজন অনুযায়ী এটিকে ব্যবহার করতে পারবেন। নিউমেরিক্যাল ও স্ট্যাটিসটিক্যাল ডাটা রেকর্ড ও বিশ্লেষণ করার জন্য এতে অসংখ্য ফিচার রয়েছে। যেমনঃ প্রোগ্রামিং, ক্যালকুলেশন, গ্রাফ টুল, কন্ডিশনাল ফরমেটিং, ইত্যাদি।

মাইক্রোসফট এক্সেল শিখে যেভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এবং চাহিদাসম্পন্ন ক্যারিয়ার অপশনগুলোর মধ্যে একটি হলো ফ্রিল্যান্সিং। ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বৈশ্বিক ক্লায়েন্টদের কাজ করে আয় করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে এই পেশা। তবে ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে অবশ্যই কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা বা স্কিল থাকতে হবে। এই দক্ষতাগুলোর মধ্যে মাইক্রোসফট এক্সেল একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমাত্রিক স্কিল, যা শিখে আপনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠতে পারেন।

বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং শুধু একটি পেশা নয়, বরং স্বাধীনভাবে নিজের সময় ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আয় করার একটি চমৎকার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি এক রকম মুক্তির পথ—যেখানে বসের নির্দেশ বা অফিসে আটকে থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। মাইক্রোসফট এক্সেল শেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। এখানে ধাপে ধাপে দেখানো হলো মাইক্রোসফট এক্সেল শিখে যেভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেনঃ

১. একটি নির্দিষ্ট স্কিল বেছে নিনঃ ফ্রিল্যান্সিংয়ের জগতে প্রবেশের জন্য প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো—একটি নির্দিষ্ট স্কিল বেছে নেওয়া। অনেকেই একসাথে অনেক কিছু শিখতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুতেই ভালোভাবে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন না। তাই শুরুতেই একটি স্কিলের ওপর ফোকাস করুন। যেহেতু আপনি Microsoft Excel শিখতে চান, এক্সেলকেই নিজের প্রধান স্কিল হিসেবে বেছে নিন।

শুধু বেসিক জানা যথেষ্ট নয়, আপনাকে Advanced Excel, Formulas & Functions, Pivot Table, Data Visualization, VBA Macros, এবং Dashboard Creation এসব অংশেও পারদর্শী হতে হবে। ইউটিউব, কোরস প্ল্যাটফর্ম (যেমন Udemy, Coursera, বা local training center) থেকে বেসিক থেকে অ্যাডভান্সড পর্যন্ত এক্সেল শেখার সুযোগ রয়েছে।

২. প্র্যাকটিস করুন রেগুলারলিঃ শুধু থিওরি জানলেই হবে না, রেগুলার প্র্যাকটিস করতেই হবে। একটা কথা মনে রাখবেন, কোনো স্কিল শেখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে নিয়মিত অনুশীলন। এক্সেল এমন একটি সফটওয়্যার যেখানে আপনি যত ব্যবহার করবেন, ততই দক্ষতা বাড়বে। শুধু ভিডিও দেখে বা বই পড়ে থিওরি জানা যাবে ঠিকই, কিন্তু বাস্তব কাজ করতে গেলে হোঁচট খেতে হবে যদি আপনি হাতে-কলমে চর্চা না করেন।

প্রতিদিন অন্তত ১ থেকে ২ ঘণ্টা সময় এক্সেলে কাজ করার পেছনে বিনিয়োগ করুন। যেহেতু আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ করতে চান, তাই এমন ডেটাসেট নিয়ে প্র্যাকটিস করুন যেগুলো বাস্তব প্রজেক্টের মতো। অনলাইনে অনেক ওয়েবসাইট আছে যেখানে এক্সেলের ডেমো ডেটা পাওয়া যায় (যেমন: KaggleExcelPracticeOnline)।

৩. রিয়েল লাইফ প্রজেক্টে কাজ করুনঃ শেখা যদি হয় প্রথম ধাপ, তাহলে বাস্তব প্রজেক্টে কাজ করাটা হলো সেই শেখাকে কাজে লাগানোর মূল মঞ্চ। আপনি যতই ইউটিউব ভিডিও দেখুন বা কোর্স করুন না কেন, যতক্ষণ না আপনি রিয়েল লাইফ কোনো সমস্যার সমাধানে এক্সেল ব্যবহার করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত শেখাটা পূর্ণতা পায় না। অনেকেই ভেবে থাকেন, আমি তো এখনো শিখছি, আমি কিভাবে রিয়েল প্রজেক্টে কাজ করবো? 

আসলে এটাই আপনার শেখার সেরা সময়। কারণ, রিয়েল প্রজেক্টে কাজ করার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কোন জায়গাগুলোতে আপনি দুর্বল, আর কোথায় আপনি ভালো করছেন। আপনি চাইলে ফ্রি প্রজেক্ট করে অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। পরিচিতদের কাছ থেকে ডেটা নিয়ে ছোটখাটো রিপোর্ট তৈরি করুন, কিংবা ফেসবুক গ্রুপে “ফ্রি সার্ভিস অফার” দিয়ে অনুশীলনের সুযোগ নিন। এটি আপনার প্রোফাইল বিল্ডিংয়ে সাহায্য করবে।

৪. অনলাইন মার্কেটপ্লেসে প্রোফাইল তৈরি করুনঃ রিয়েল লাইফ প্রজেক্টে কাজ করার পর আপনাকে এখন নিয়ে যেতে হবে আন্তর্জাতিক বা বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে। এজন্য দরকার একটি প্রফেশনাল অনলাইন প্রোফাইল, যেখানে ক্লায়েন্টরা আপনার দক্ষতা দেখে সরাসরি কাজ দেবেন। এক্সেল শেখা হয়ে গেলে Fiverr, Upwork, Freelancer.com এর মতো মার্কেটপ্লেসে প্রোফাইল খুলুন। আপনার প্রোফাইলের প্রথম ইমপ্রেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিজের আসল নাম ব্যবহার করুন এবং একটি পরিষ্কার, পেশাদার প্রোফাইল ছবি দিন। ফটোতে খুব বেশি ফিল্টার বা ক্যাজুয়াল ছবি ব্যবহার করবেন না। নিজের দক্ষতার বিবরণ দিয়ে পরিষ্কারভাবে গিগ তৈরি করুন। যেমন: "I will do Excel Data Entry, Cleaning, and Dashboard Creation".

৫. পোর্টফোলিও বানানঃ ফ্রিল্যান্সিংয়ের জগতে পোর্টফোলিও হলো আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি। এটা হলো আপনার কাজের বাস্তব প্রমাণ, যা ক্লায়েন্টদের কাছে আপনার দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা তুলে ধরে। ভালো একটা পোর্টফোলিও থাকলে কাজ পাওয়ার সুযোগ অনেক বেশি থাকে, কারণ ক্লায়েন্টরা দেখতে পায় আপনি সত্যিই কী করতে পারেন। Excel দিয়ে করা ড্যাশবোর্ড, রিপোর্ট, বা অটোমেশন স্ক্রিপ্টের স্ক্রিনশট ও ডকুমেন্ট রেখে একটি Google Drive বা Behance প্রোফাইল তৈরি করুন এবং ক্লায়েন্টকে দেখানোর জন্য প্রস্তুত রাখুন।

পোর্টফোলিও হলো কাজের নমুনাগুলোর সংগ্রহ, যা আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেয় একজন দক্ষ প্রফেশনাল হিসেবে। এটি হতে পারে Excel ফাইলের স্ক্রিনশট বা ভিডিও ডেমো, রিপোর্ট, ড্যাশবোর্ড বা অটোমেশন স্ক্রিপ্টের উদাহরণ, কোনো প্রজেক্টের ডেটা বিশ্লেষণ ও তার আউটপুট, কাজের বর্ণনা ও ক্লায়েন্টের ফিডব্যাক। কিভাবে পোর্টফোলিও তৈরি করবেন? যে স্কিলগুলো আপনি শিখেছেন, সেগুলো ব্যবহার করে ছোটখাটো কাজ করুন। যেমন: ডেটা এন্ট্রি, পিভট টেবিল, চার্ট, রিপোর্ট তৈরির নমুনা তৈরি করুন।

৬. ছোট কাজ দিয়ে শুরু করুনঃ ফ্রিল্যান্সিং জগতে সফল হওয়ার জন্য বড় লক্ষ্য থাকা জরুরি, কিন্তু শুরুতে ছোট কাজগুলোই আপনাকে সঠিক পথে নিয়ে যাবে। অনেকেই বড় কাজ পেতে আগ্রহী হন, কিন্তু শুরুতেই বড় প্রজেক্ট নেওয়ার চেষ্টা করলে হতাশা বা ভুলের সম্মুখীন হতে পারেন। তাই ধাপে ধাপে, ছোট ছোট কাজ দিয়ে ক্যারিয়ার গড়া বুদ্ধিমানের কাজ। নতুন নতুন কাজ করার মাধ্যমে আপনি অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন, যা পরবর্তী বড় কাজের জন্য দরকার। ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ভালো রিভিউ পেলে আপনার প্রোফাইল শক্তিশালী হয়, যা ভবিষ্যতে বড় প্রজেক্ট পেতে সাহায্য করে।

মাইক্রোসফট এক্সেল শিখে ফ্রিল্যান্সিংয়ে যে ধরনের কাজ করা যায়

মাইক্রোসফট এক্সেল শিখে ফ্রিল্যান্সিংয়ে অনেক ধরনের কাজ করা যায়। মাইক্রোসফট এক্সেল একটি বহুমুখী সফটওয়্যার, যা ডেটা সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ, রিপোর্টিং এবং অটোমেশন সহ অসংখ্য কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। অনেকেই মনে করেন এক্সেলে শুধু টেবিল তৈরি বা বেসিক রিপোর্ট তৈরি করা যায়। তবে যারা এর নানাবিধ ফিচার সসম্পর্কে জানে, তারাই ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জন করছেন। এক্সেল শিখে থাকলে আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ে যেধরনের কাজ পেতে পারেন চলুন দেখে নিইঃ

১. ডাটা এন্ট্রি এবং স্টোরেজঃ ডাটা এন্ট্রি হলো বিভিন্ন উৎস (যেমন পিডিএফ, ওয়েবসাইট, স্ক্যান কপি, বা হ্যান্ডরিটেন ডকুমেন্ট) থেকে সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করে এক্সেল বা অন্য সফটওয়্যারে ইনপুট দেওয়ার প্রক্রিয়া। এটি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সবচেয়ে সাধারণ ও জনপ্রিয় কাজগুলোর একটি। এক্সেলে ডাটা এন্ট্রি করতে হলে দ্রুত টাইপিং, মনোযোগ, এবং তথ্য সঠিকভাবে বুঝে সাজানোর দক্ষতা থাকতে হয়। অনেক সময় ডেটাকে ক্লিন, ফিল্টার বা ফরম্যাট করেও দিতে হয়।

ডাটা স্টোরেজ বলতে বোঝায় ডেটাকে নিরাপদভাবে সংগঠিত করে সংরক্ষণ করা, যাতে পরবর্তীতে সহজে ব্যবহার ও বিশ্লেষণ করা যায়। এক্সেলে স্টোরেজের জন্য টেবিল, শিট বা নির্দিষ্ট কাঠামো ব্যবহার করা হয়। এই স্কিলগুলো দিয়ে আপনি ইনভয়েস, কাস্টমার লিস্ট, প্রোডাক্ট ডেটাবেস, রিপোর্ট ইত্যাদি তৈরি করতে পারেন, যা বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নিয়মিত প্রয়োজন হয়। ফলে ডেটা এন্ট্রি ও স্টোরেজ ফ্রিল্যান্সিংয়ে একটি স্থায়ী চাহিদাসম্পন্ন কাজ।

২. ডেটা ক্লিনিংঃ ডেটা ক্লিনিং হলো ডেটার এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে অপ্রয়োজনীয়, ভুল, অসম্পূর্ণ বা অসংগঠিত তথ্যগুলো ঠিক করা হয়, যাতে ডেটা বিশ্লেষণ বা ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয়। অনেক কোম্পানি, স্টার্টআপ ও ফ্রিল্যান্স ক্লায়েন্টের কাছে অপরিষ্কৃত ডেটা থাকে, যা বিশ্লেষণের আগে পরিষ্কার করতে হয়। এ কারণে ডেটা ক্লিনিংয়ের কাজ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডেটা ক্লিনিংয়ের মধ্যে সাধারণত যেসব কাজ পড়ে তা হলোঃ

  • ডুপ্লিকেট ডেটা রিমুভ করা
  • ফাঁকা সেল পূরণ করা
  • ডেটা ফরম্যাট ঠিক করা (যেমন তারিখ, নাম্বার)
  • স্পেলিং বা টাইপো ঠিক করা
  • আননেসেসারি স্পেস বা ক্যারেক্টার রিমুভ করা
  • টেক্সট থেকে নির্দিষ্ট তথ্য আলাদা করা (Text to Columns)
  • ফিল্টারিং ও সোর্টিং
এই কাজগুলোর জন্য Excel-এর বিভিন্ন ফিচার যেমন Find & Replace, Flash Fill, Data Validation, ও Formulas (TRIM, CLEAN, PROPER) ব্যবহার করা হয়। পরিষ্কার ও গুছানো ডেটা বিশ্লেষণের আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য কোম্পানিগুলো ভালো ডেটা ক্লিনিং স্কিল থাকা ফ্রিল্যান্সারদের খুঁজে থাকে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে এই ধরনের কাজের চাহিদা বেশ ভালো। এটি দিয়ে আপনি সহজেই ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।

৩. ক্যালকুলেট করাঃ মাইক্রোসফট এক্সেলে এমন অনেক ফিচার ও ফর্মুলা আছে যা ডাটার সাথে রিলেটেড। ধারনা করা হয়, এখানে প্রায় ৪৫০ এরও বেশি ফাংশন আছে বিভিন্নভাবে ক্যাটেগরি করা। উল্লেখযোগ্য ফাংশনগুলো হলো: ফিন্যান্সিয়াল, টেক্সট, লজিক, ডেট এন্ড টাইম ইত্যাদি। এগুলো আপনি আপনার প্রয়োজন মতো স্প্রেডশিট এর কলাম, সারি বা সেলে ব্যবহার করতে পারবেন। যেসব কোম্পানি কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করে না ডাটা মেইনটেইন এর জন্য, তাদের একাউন্টস পুরোপুরি এক্সেল এর উপর ডিপেন্ডেন্ট। তাই এই স্কিল ডেভেলপ করে আপনি খুব সহজেই একাউন্টস এর কাজগুলো কমপ্লিট করতে পারবেন।

৪. রিপোর্ট এন্ড ভিজুয়ালাইজেশনঃ রিপোর্ট এন্ড ভিজুয়ালাইজেশন হলো ডেটা বিশ্লেষণ করে তা সহজবোধ্যভাবে উপস্থাপন করার একটি প্রক্রিয়া, যেখানে বিভিন্ন চার্ট, গ্রাফ, টেবিল ও সারাংশ (summary) ব্যবহার করা হয়। এক্সেলে এটি করার জন্য Pivot Table, Chart, Conditional Formatting, এবং Dynamic Formulas (যেমন SUMIFS, AVERAGEIFS) ব্যবহৃত হয়। রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট বা ব্যবসার মালিক তার ডেটা থেকে কী ঘটেছে, কেন ঘটেছে ও কী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত—তা দ্রুত বুঝতে পারেন।

ভিজুয়ালাইজেশন ডেটাকে আকর্ষণীয় ও বোধগম্য করে তোলে, যেমন: সেলস ট্রেন্ড, টার্গেট বনাম অ্যাচিভমেন্ট, অথবা রিজিওনভিত্তিক পারফরমেন্স। ফ্রিল্যান্সিংয়ে এই কাজগুলো অনেক জনপ্রিয়, বিশেষ করে ম্যানেজমেন্ট রিপোর্ট, মার্কেট অ্যানালাইসিস, এবং প্রেজেন্টেশন বানানোর ক্ষেত্রে। সঠিক ও প্রফেশনাল রিপোর্ট তৈরি করলে আপনি ভালো রেটের কাজ পেতে পারেন এবং ক্লায়েন্টদের সাথে দীর্ঘমেয়াদে কাজের সম্ভাবনাও বাড়ে।

৫. ডাটা এনাইলাইসিস এবং ইন্টারপ্রেটেনশনঃ ডাটা আ্যানালাইসিস মাইক্রোসফট এক্সেলের অন্যতম অপরিহার্য অংশ। তথ্য স্প্রেডশিটে স্টোর করে রাখা ছাড়াও এক্সেল এর নানা ব্যবহার রয়েছে। ডাটা স্প্রেডশিটে আপডেট করার পর আপনি চাইলেই সূত্র ব্যবহার করে সহজেই হিসাব নিকাশ করে তা আবার অ্যানালাইসিসও করতে পারবেন। ম্যানুয়ালি করতে অবশ্যই আপনার অনেক বেশি সময় এর পিছনে দিতে হবে।

আর টেবিল দিয়ে ডাটা খুব ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। আর এই ফিচারগুলো ব্যবহার করে অনেকগুলো ডাটা সহজে ইন্টারপ্রেট করা যাবে। বিশেষ করে আপনি যেই স্পেসিফিক ডাটা চাচ্ছেন সেটা সহজেই ফিল্টার বা সোয়াপ আউট করতে পারবেন। আর আপনি চাইলে স্প্রেডশিটে ডাটা গুছিয়ে রাখতে পারবেন প্রয়োজনমতো সহজেই।

৬. ডেটা ভ্যালিডেশন ও কন্ডিশনাল ফরম্যাটিংঃ মাইক্রোসফট এক্সেল শুধু ডেটা টাইপ করার জন্য নয়, বরং সঠিকভাবে ও মানসম্পন্ন ডেটা ইনপুট ও প্রেজেন্টেশনের জন্য অসাধারণ দুটি টুল রয়েছে – ডেটা ভ্যালিডেশন এবং কন্ডিশনাল ফরম্যাটিং। এই দুটি টুল ফ্রিল্যান্সিং কাজের গুণগত মান বাড়াতে এবং প্রফেশনাল আউটপুট দিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডেটা ভ্যালিডেশন ও কন্ডিশনাল ফরম্যাটিং হলো এক্সেলের এমন দুটি টুল, 

যা একজন ফ্রিল্যান্সারকে প্রফেশনাল এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। এই স্কিল দুটি আয়ত্ত করলে আপনি শুধু ডেটা ইনপুট বা বিশ্লেষণই করবেন না, বরং ক্লায়েন্টকে একটা স্মার্ট ও ভিজ্যুয়ালি আকর্ষণীয় ডেলিভারি দিতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে যারা “Excel Dashboard”, “Data Entry Form”, “Sales Tracker” এসব কাজ খোঁজেন তারা প্রায়শই চায় ডেটা ভ্যালিডেশন ও কন্ডিশনাল ফরম্যাটিং অন্তর্ভুক্ত থাকুক।

৭. অটোমেশন– VBA ও ম্যাক্রোঃ এক্সেলে অটোমেশন মানে হলো সময়সাপেক্ষ ও পুনরাবৃত্ত কাজগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করা। এর জন্য মূলত দুটি মাধ্যম ব্যবহৃত হয়: ম্যাক্রো এবং VBA (Visual Basic for Applications)। ম্যাক্রো হলো একটি রেকর্ডিং টুল, যা দিয়ে আপনি একবার যেভাবে কোনো কাজ করেন, তা রেকর্ড করে রেখে পরবর্তীতে এক ক্লিকে বারবার চালাতে পারেন। এটি সাধারণ কাজের জন্য খুবই কার্যকর।

VBA হলো এক ধরণের কোডিং ভাষা, যা ব্যবহার করে আরও কাস্টমাইজড, জটিল ও বুদ্ধিমান অটোমেশন তৈরি করা যায়। যেমন: একাধিক শীটে ডেটা প্রসেস, ফর্ম তৈরি, রিপোর্ট অটো জেনারেট, ইমেইল সেন্ড ইত্যাদি। ফ্রিল্যান্সিংয়ে অটোমেশন স্কিলের চাহিদা অনেক বেশি, কারণ এটি ক্লায়েন্টের সময় বাঁচায় ও কাজকে নিখুঁত করে তোলে। তাই, এক্সেলে দক্ষতা বাড়াতে চাইলে VBA ও ম্যাক্রো শেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৮. ড্যাশবোর্ড তৈরির কাজঃ এক্সেল ড্যাশবোর্ড হচ্ছে এমন একটি ইন্টারেক্টিভ ভিজ্যুয়াল রিপোর্টিং সিস্টেম, যেখানে বিভিন্ন ডেটা বিশ্লেষণ করে চার্ট, গ্রাফ, সংখ্যা ও কী ইনসাইট একসাথে উপস্থাপন করা হয়। এটি ব্যবস্থাপনা বা ক্লায়েন্টদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে ড্যাশবোর্ড তৈরির কাজ খুবই চাহিদাসম্পন্ন। ক্লায়েন্টরা সাধারণত বিক্রয়, মার্কেটিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, ফিনান্স, বা এইচআর-সংক্রান্ত ডেটাকে এক জায়গায় গুছিয়ে দেখার জন্য এক্সেল ড্যাশবোর্ড ব্যবহার করে।

ড্যাশবোর্ড তৈরি করে আপনি ক্লায়েন্টের জন্য জটিল রিপোর্টিং সহজ, দ্রুত ও বুঝতে সুবিধাজনক করে দিতে পারেন। এতে আপনার কাজে প্রফেশনাল মানসিকতা প্রকাশ পায়, এবং আপনি ভালো রেটেও কাজ পেতে পারেন। এ ধরনের প্রজেক্টের জন্য ৫০–২০০ ডলার পর্যন্ত আয় সম্ভব, এমনকি আরও বেশি। তাই এক্সেল ড্যাশবোর্ড স্কিল শেখা একটি স্মার্ট ও লাভজনক সিদ্ধান্ত।

৯. ক্যালেন্ডার এবং শিডিউলঃ ক্যালেন্ডার এবং শিডিউল তৈরি এক্সেলের মাধ্যমে সময়, কাজ ও দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পরিকল্পনা ও ট্র্যাক করার একটি কার্যকর পদ্ধতি। ফ্রিল্যান্সিং বা অফিস ব্যবস্থাপনায় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্কিল। এক্সেলে কাস্টম ক্যালেন্ডার তৈরি করে আপনি দিনে, সপ্তাহে বা মাসে কোন কাজ কখন হবে তা নির্ধারণ করতে পারেন। এতে ব্যবহার হয় Conditional Formatting, Drop-down List, এবং Date Functions (যেমন: TODAY, NETWORKDAYS, WORKDAY)।

শিডিউলিংয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী টাস্ক, মিটিং, প্রজেক্ট ডেলিভারি, ছুটির তালিকা ইত্যাদি সহজে ট্র্যাক করা যায়। এটি ক্লায়েন্ট বা টিম ম্যানেজমেন্টের জন্য দারুণ সহায়ক। অনেক ফ্রিল্যান্সার এক্সেলে ক্লায়েন্টের জন্য ইভেন্ট ক্যালেন্ডার, ক্লাস রুটিন, প্রজেক্ট টাইমলাইন বা স্টাফ শিডিউলিং সিস্টেম তৈরি করে ইনকাম করে থাকেন। এই ধরনের প্রজেক্টে দক্ষতা থাকলে সহজেই ভালো রেট পাওয়া যায় এবং পুনরাবৃত্ত ক্লায়েন্টও তৈরি হয়।

মাইক্রোসফট এক্সেল এর কাজ কি

মাইক্রোসফট এক্সেলের মাধ্যমে আপনি নানা রকমের কাজ করতে পারবেন। মাইক্রোসফট এক্সেল হলো একটি শক্তিশালী স্প্রেডশীট সফটওয়্যার, যা প্রধানত ডেটা সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সংখ্যাগত ও টেক্সট ডেটা সাজিয়ে রাখতে পারেন, সহজ ও জটিল হিসাব করতে পারেন, এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য পাওয়া যায়। মাইক্রোসফট এক্সেলের মাধ্যমে সাধারনত যে কাজগুলো করা যায় তা হলঃ

১. ক্যালকুলেশন করাঃ ক্যালকুলেশন অর্থাৎ যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ এগুলো হলো এক্সেল এর বেসিক বিষয়। মাইক্রোসফট এক্সেলে অসংখ্য প্রিভিল্ড ফিচার এবং ফর্মুলা রয়েছে। শুধু তাই নয়, ৪৫০ এরও বেশি ক্যাটাগরাইজড ফাংশন রয়েছে এখানে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলঃ লজিক ফাংশন, ত্রিকোণমিতিক ফাংশন, ডেট এন্ড টাইম ইত্যাদি। কিন্তু মাইক্রোসফট এক্সেল এর কাজ এই ৪৫০ টি ফাংশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নিজেদের প্রয়োজন মত কাস্টম ফর্মুলা তৈরি করেও এখানে কাজ করা সম্ভব।

২. ডাটা এন্ট্রি এবং স্টোরেজঃ ডাটা এন্ট্রি হলো বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সঠিকভাবে এক্সেল বা অন্য সফটওয়্যারে ইনপুট দেওয়ার কাজ। এটি দ্রুত, নির্ভুল ও মনোযোগীভাবে করতে হয় যাতে ডেটা সঠিকভাবে রেকর্ড হয়। ফ্রিল্যান্সিংয়ে এটি খুবই জনপ্রিয় ও চাহিদাসম্পন্ন কাজ। ডাটা স্টোরেজ মানে হলো ডেটাকে সুসংগঠিত ও নিরাপদভাবে সংরক্ষণ করা, যাতে ভবিষ্যতে সহজে তথ্য পুনরায় পাওয়া ও বিশ্লেষণ করা যায়। এক্সেলে টেবিল, শীট বা ডাটাবেস স্ট্রাকচার ব্যবহার করে ডেটা স্টোরেজ করা হয়। ডাটা এন্ট্রি ও স্টোরেজ দক্ষতা থাকলে ব্যবসায়িক রিপোর্ট, ইনভয়েস, কাস্টমার ডেটাবেস, প্রোডাক্ট লিস্ট ইত্যাদি তৈরিতে সহায়তা করা যায়। ফলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে এই স্কিল দিয়ে নিয়মিত কাজ পেয়ে আয় করা সম্ভব।

৩. ডাটা অ্যানালাইসিস এবং ইন্টারপ্রেটেনশনঃ ডাটা অ্যানালাইসিস হলো সংগৃহীত তথ্যগুলোকে বিভিন্ন টুল ও টেকনিক ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করা, যাতে তা থেকে অর্থবহ তথ্য ও প্যাটার্ন পাওয়া যায়। এক্সেলে পিভট টেবিল, ফিল্টার, চার্ট, ফাংশন (যেমন SUMIFS, COUNTIFS) ব্যবহার করে ডেটাকে সহজে বিশ্লেষণ করা যায়। ইন্টারপ্রেটেশন অর্থাৎ বিশ্লেষিত ডেটার অর্থ বোঝা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক তথ্য বের করা। এটি ব্যবসায়িক বা গবেষণাগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রিল্যান্সাররা ডাটা অ্যানালাইসিস করে ক্লায়েন্টের জন্য রিপোর্ট ও ভিজুয়ালাইজেশন তৈরি করেন, যা ব্যবসার প্রবৃদ্ধি, বাজারের চাহিদা ও কর্মক্ষমতা বুঝতে সাহায্য করে। ডাটা থেকে সঠিক ইন্টারপ্রেটেশন করলে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত দ্রুত ও কার্যকর হয়।

৪. রিপোর্টিং ও ভিজুয়ালাইজেশনঃ রিপোর্ট তৈরি বা ভিজুয়ালাইজেশন এর কাজকে গ্রাফ এবং চার্ট ফিচার এর মাধ্যমে মাইক্রোসফট এক্সেল আরো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে তুলেছে। এক্সেল এর সাহায্যে শুধু একটা টেমপ্লেটে ব্যবহারের মাধ্যমেই সাদামাটা টেবিলের আকর্ষণীয় একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করা সম্ভব। এক্সেলে রিপোর্টিং ও ভিজুয়ালাইজেশনের জন্য Pivot Table, Chart, Conditional Formatting, ও Dynamic Formulas ব্যবহৃত হয়। ভাল রিপোর্ট ও ভিজুয়ালাইজেশন ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে দ্রুত ও কার্যকর করে তোলে।

রিপোর্টিং হলো তথ্য বা ডেটাকে সংগঠিত ও বিশ্লেষণ করে ক্লায়েন্ট, ম্যানেজার বা decision makerদের কাছে সহজবোধ্যভাবে উপস্থাপন করা। এটি ব্যবসার কাজের অগ্রগতি, বিক্রয়, ব্যয় বা অন্য কোনো বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়। ভিজুয়ালাইজেশন হলো ডেটাকে চার্ট, গ্রাফ, টেবিল বা ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে চিত্রায়িত করা, যাতে তথ্য দ্রুত ও সহজে বোঝা যায়। ভিজুয়ালাইজেশন তথ্যকে আকর্ষণীয় এবং বোধগম্য করে তোলে।

৫. একাউন্টিং ও বাজেটিংঃ একাউন্টিং হলো অর্থনৈতিক লেনদেনের রেকর্ড, শ্রেণীবিন্যাস, এবং বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া, যা ব্যবসার আর্থিক অবস্থা বুঝতে সাহায্য করে। এক্সেলে একাউন্টিং করার মাধ্যমে বিক্রয়, খরচ, আয়-ব্যয় ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা হয়। বাজেটিং হলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আয় ও ব্যয়ের পরিকল্পনা করা, যাতে ব্যবসা বা ব্যক্তি তাদের আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করতে পারে। এক্সেলে বাজেট তৈরি করে বিভিন্ন খাত অনুযায়ী ব্যয় নির্ধারণ ও ট্র্যাক করা যায়। এক্সেলের ফর্মুলা ও ফাংশন যেমন SUM, IF, VLOOKUP, এবং Pivot Table ব্যবহার করে সহজে একাউন্টিং রিপোর্ট ও বাজেট রিপোর্ট তৈরি করা যায়।

৬. ক্যালেন্ডার এবং সিডিউলিংঃ ক্যালেন্ডার হলো সময় নির্ধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও ইভেন্টগুলো ট্র্যাক করার একটি ব্যবস্থা। এক্সেলে কাস্টম ক্যালেন্ডার তৈরি করে মাস, সপ্তাহ বা দিনের ভিত্তিতে কাজের সময়সূচি সাজানো যায়।সিডিউলিং হলো নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কাজ, মিটিং, ডেডলাইন বা অন্যান্য কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ। এটি টিম ম্যানেজমেন্ট এবং প্রজেক্ট প্ল্যানিংয়ে অত্যন্ত জরুরি। এক্সেলে Conditional Formatting, Data Validation, Drop-down লিস্ট, এবং Date Functions (যেমন TODAY, WORKDAY) ব্যবহার করে ক্যালেন্ডার ও সিডিউলিং তৈরি করা যায়, যা ব্যবহারকারীকে সময় অনুযায়ী কাজ সাজাতে ও মনিটর করতে সহায়তা করে।

কেন শিখবেন মাইক্রোসফট এক্সেল

কেন শিখবেন মাইক্রোসফট এক্সেল? মাইক্রোসফট এক্সেল একটি শক্তিশালী এবং বহুমুখী সফটওয়্যার, যা প্রায় সব ধরনের পেশায় ব্যবহার করা হয়, চাকরি হোক বা ব্যবসা, শিক্ষা হোক বা ফ্রিল্যান্সিং। এর কাজের কোন শেষ নাই। আপনি যদি Excel এর ফর্মুলা, ফাংশন সম্পর্কে ভাল ভাবে জানেন তাহলে অফিসে কাজের ক্ষেত্রে সবার থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন সবসময়। নিচে এক্সেল শেখার কয়েকটি প্রধান কারণ তুলে ধরা হলোঃ

১. কর্মক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাঃ আপনি যদি এক্সেলে এক্সপার্ট হতে পারেন তাহলে কর্মক্ষেত্রে অন্য সবার থেকে একটু বেশি সুবিধা পাবেন। কারন অফিসের প্রায় প্রতিটা কাজেই এর ব্যবহার করতেই হবে। অন্য সবার থেকে আপনার আয় অনেক বেড়ে যাবে। শুধু ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার বা অ্যাকাউন্টেন্টসই না, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, গ্রাফিক ডিজাইনার থেকে শুরু করে কমবেশি সবাই এক্সেলের দিকে ঝুঁকছেন। অফিসে আপনার কাজ যাই হোক না কেন, এই স্প্রেডশিট সফটওয়্যারটি আপনার ব্যবহার করতেই হবে। এক্সেল এর কাজ আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে। এটা কিন্তু একটা প্লাস পয়েন্ট!

২. দ্রুত পদন্নোতি হওয়ার সম্ভাবনাঃ আপনি একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন বর্তমানে সরকারি বা বেসরকারি যে কোন কাজের নিয়োগের ক্ষেত্রে যে অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়, তার মধ্যে অন্যতম হল এক্সেল। নিয়োগকর্তারা এমন কর্মীদের নিয়োগ দিতে চান যাদের এই স্প্রেডশিট/ এক্সেল সফটওয়্যারটি সম্পর্কে জ্ঞান আছে৷ কারণ এতে করে আপনার বিশ্লেষণী জ্ঞান সম্পর্কে একটা ধারণা নিয়োগকারী পেয়ে যান। এক্সেলের দক্ষতা আপনাকে কোম্পানির সম্পদে পরিণত করবে৷ এই কারণে নিয়োগকর্তারা চাকরির সার্কুলারে এক্সেল জ্ঞান থাকার ব্যাপারটা উল্লেখ করে দেন৷ তাছাড়া, আপনি কি জানেন এক্সেলের কাজ জানলে আপনার বেতন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

৩. নির্ভুল ও দ্রুততার সাথে কাজের উপায়ঃ দ্রুত সময়ে নির্ভুল ভাবে কাজ করতে এক্সেল এর বিকল্প কিছু নেই। অনেক কাজ রয়েছে যা আপনি ম্যানুয়াল ভাবে করতে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা যেমন থাকে সেই সাথে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। ডাটা অর্গানাইজ ও ম্যানিপুলেট করা বেশ সময়সাপেক্ষ একটা কাজ। কিন্তু এক্সেল এর কাজ হলো, সে এই কাজের গতি কেবল বৃদ্ধিই করবে না, একইসাথে নম্বর গুণা ও ভুল করার হারও কমিয়ে দিবে। এটা আপনাকে বেশি সংখ্যক ডাটা বিশ্লেষণে সহায়তা করে৷ আর আপনি যদি একবার এর সমস্ত ব্যবহার শিখে নিতে পারেন, তাহলে যেকোনো জটিল স্ট্যাটিসটিক্যাল অ্যানালাইসিস ভালোমতো করতে পারবেন৷ এইজন্যই কোম্পানি গুলাতে নিয়োগকর্তারা নিয়োগ এর সময় কর্মীদের এই এক্সেল সফটওয়্যারটির স্কিলের উপর বেশি জোর দেন।

৪. ডাটার সঠিক ব্যবহারঃ এক্সেল দিয়ে আপনি বিশাল পরিমাণ ডাটা সংরক্ষণ করতে পারবেন৷ শুধু তাই নয়, এক ডাটার সাথে আরেক ডাটার সম্পর্কও খুঁজে বের করা যাবে। এই ডাটাগুলো আপনি একা নয়, বিশ্বের যে কেউই ব্যবহার করতে পারবেন। তাও আবার বিনামূল্যে। এটা আপনার কর্মদক্ষতা ও ক্যারিয়ারের উন্নয়ন ঘটাতে পারে। এক্সেল হলো সহজে ব্যবহারযোগ্য সফটওয়্যার যা জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে একটি মূল্যবান হাতিয়ার এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়৷ আপনার অফিস ও ব্যাক্তিগত জীবনে সকল ডাটা সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন এই এক্সেল দিয়ে।

৫. ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজের সুযোগঃ ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে মাইক্রোসফট এক্সেল সম্পর্কিত ডাটা এন্ট্রি, ডাটা এনালাইসিস, ডাটা স্টোরিং ইত্যাদি অনেক কাজে রয়েছে। যেহেতু প্রায় সব ধরনের ব্যবসা এবং প্রতিষ্ঠান তাদের ডেটা পরিচালনা ও বিশ্লেষণের জন্য Excel ব্যবহার করে, তাই এই স্কিলে দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। এক্সেল এ দক্ষতা অর্জন করে আপনি চাইলে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসেও এসব কাজ করে একটি ভালো পেসিভ ইনকাম করতে পারেন। নতুন ফ্রিল্যান্সাররা ছোট কাজ দিয়ে শুরু করে ভালো রিভিউ অর্জনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বড় প্রজেক্টের দিকে অগ্রসর হতে পারেন। Fiverr-এ “Excel Expert” ক্যাটাগরিতে হাজার হাজার গিগ প্রতিদিন খোঁজা হয়, তাই কাজের অভাব নেই। 

কিভাবে শিখবেন মাইক্রোসফট এক্সেল

কিভাবে শিখবেন মাইক্রোসফট এক্সেল এক্সেল? মাইক্রোসফট এক্সেল শেখা একদিকে সহজ, আবার ধারাবাহিকভাবে না শেখলে কিছুটা জটিলও হতে পারে। বর্তমান সময় প্রযুক্তির সময়, আপনি চাইলেই এখন ঘরে বসে ইউটিউব, গুগলে এর মাধ্যমে এক্সেল এর বেসিক কাজগুলা শিখতে পারবেন। বেসিক ব্যবহার শিখতে আপনাকে শুরুতে কোন প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে না। তবে যদি প্রফেশনাল ভাবে শিখতে চান তাহলে অনলাইন থেকে ভাল মানের একটি কোর্স করে নিতে পারেন।

তবে এক্সেলে যেহেতু বিভিন্ন ফর্মুলা এবং সূত্র ব্যবহার করে কাজগুলা করা যায় তাই প্র্যাকটিস করতে হবে। নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে করতে একসময় এক্সপার্ট হয়ে যাবেন। সব কিছু তখন আপনার হাতের মুঠোয় চলে আসবে। মাইক্রোসফট এক্সেল এর বেসিক কাজ গুলা শিখতে আপনি এই ভিডিওটি দেখতে পারেন। মাত্র ৩০ মিনিটে এর ভিডিওটি আপনি মনোযোগ সহকারে দেখলে এক্সেল এর বেসিক কাজগুলা সম্পর্কে আপনার কমপ্লিট ধারণা হয়ে যাবে। Microsoft Excel Tutorial

মাইক্রোসফট এক্সেল শেখার ১০ টি সহজ টিপস

মাইক্রোসফট এক্সেল শেখা সহজ, তবে ধারাবাহিকভাবে সঠিক পদ্ধতিতে শেখাটা জরুরি। সাধারণত মাইক্রোসফট এক্সেলের মতো সফটওয়্যারগুলো আয়ত্ত্ব করতে কার্যকরী টেকনিক খুব সহায়তা করে। যারা অভিজ্ঞ তারা সাধারণত এ টিপসগুলো অনুসরণ করেই আজ ক্যারিয়ারে ভালো করছে। মাইক্রোসফট এক্সেল শেখা একবার শুরু করলে প্রতিদিন আপনি নতুন কিছু শিখবেন। তাহলে দেরি না করে চলুন সেই টিপসগুলো জেনে আসি।

১. এক্সেলে ড্যাশবোর্ড সম্পর্কে ভালো ধারণা নিনঃ প্রথমত মাইক্রোসফট এক্সেলের যে ভার্সন আপনি ব্যবহার করছেন তার ইন্টারফেস সম্পর্কে ধারণা নিন। কীভাবে নতুন ফাইল তৈরি করবেন কিংবা টেম্পলেট কীভাবে ব্যবহার করবেন, ডাটা ইনপুট দিবেন কীভাবে, ফাইল সেইভ করবেন কীভাবে ইত্যাদি বিষয়। একই সাথে ফন্ট সাইজ বাড়ানো-কমানো, কালার করা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে প্রথম কয়েকদিন প্রাকটিস করুন। তাছাড়া মাইক্রোসফট এক্সেলের শর্টকার্ট কমান্ডগুলো আয়ত্ত্ব করে নিন।

২. এমএস ওয়ার্ড জানুন এবং টাইপিং স্পিড বাড়ানঃ মাইক্রোসফট এক্সেল শেখার মধ্যে আবার মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কেন শিখতে হবে? আসলে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড যাদের জানা আছে তাদের জন্য মাইক্রোসফট এক্সেলের বেসিক অনেক ইন্টারফেস বুঝতে সুবিধা হয়। তারা দ্রুত মাইক্রোসফট এক্সেল আয়ত্ত্ব করতে পারেন। সুতরাং মাইক্রোসফট এক্সেল শেখার আগে ওয়ার্ড সফটওয়্যারটা আয়ত্ত্ব করা ভালো। সেই সাথে টাইপিং স্পিড আপনার অফিসিয়াল কাজের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার কাজকে নির্ভুল করবে এবং দ্রুততার সাথে আপনি মাইক্রোসফট এক্সেলে কাজ করতে পারবেন। সুতরাং এমএস ওয়ার্ড শিখে নিন এবং টাইডিং স্পিড বৃদ্ধি করার জন্য ইংরেজি এবং বাংলা দুই ভাষাতেই কয়েক সপ্তাহ প্র্যাকটিস করুন।

৩. মেনুগুলা আয়ত্ত্বে আনুনঃ মাইক্রোসফট এক্সেলের মেনুবারে যতোগুলো অপশন পাবেন তা আপনার কাজে প্রয়োগ করুন এবং কী পরিবর্তন হয় তা প্র্যাকটিস করে নিন। সাধারণত File, Home, Insert, Page Layout, Formulas, Data, Review, View, Help এ রকম গুরুত্বপূর্ণ কিছু মেনুর আন্ডারে আপনি আরও অনেক ধরণের ফরমেটিং অপশন পাবেন। সেগুলোর সাথে পরিচিত হোন এবং আয়ত্ত্ব করে ফেলুন। তাহলে আপনার মাইক্রোসফট এক্সেল বুঝতে সুবিধা হবে। সেজন্য অনলাইনে যেকোন টিউটোরিয়াল ফলো করতে পারেন।

৪. পেজ ডিজাইন ও ফরমেটিং শিখুনঃ মাইক্রোসফট এক্সেলে আপনি কীভাবে টেবিল তৈরি করবেন এবং তা কীভাবে ফরমেটিং করবেন তা শিখুন। আপনি নিজে টেবিল তৈরি করে তা বিভিন্ন কালারের মাধ্যমে সুন্দর করে ডিজাইন করুন এবং বোল্ড, ইটালিক ইত্যাদি ফরমেটে তা সুন্দর করে ডিজাইন করা শিখুন। একটি পারফেক্ট টেবিল যদি আপনি তৈরি করতে না পারেন তাহলে পরবর্তী কাজগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপানের সুযোগ আপনি অনেকাংশে হারাবেন। সুতরাং এখানে বেশ টাইম ব্যয় করুন ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করার জন্য।

৫. কলাম রো ইনসার্ট ডিলেটিং শিখুনঃ মাইক্রোসফট এক্সেলে কলাম এবং রো কীভাবে সাজাতে হয় আবার টেবিলের মধ্যে কীভাবে কলাম রো ইনসার্ট করতে হয় তা শিখে নিন। কলাম/রো ডিলেট করার প্রয়োজন হলে তা কীভাবে করবেন তাও শিখে ফেলুন। সাধারণত যেকোন রো বা কলামে কারসার রেখে রাইট ক্লিক করলে ইনসার্ট, ডিলিট, কাট-কপি ইত্যাদি অপশনগুলো পেয়ে যাবেন। এখান থেকে ইনসার্ট ডিলেটিং শিখে ফেলুন।

৬. সিম্পল ম্যাথ কীভাবে ইম্পিলিমেন্ট করতে হয় শিখুনঃ এবার সাধারণ সূত্রের সাহায্যে কীভাবে ক্যালকুলেশন করতে হয় তা আয়ত্ত্ব করুন। আপনি সাধারণ ম্যাথ থেকে জটিল সব ইকুয়েশন খুব সহজে মাইক্রোসফট এক্সেলের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবেন। যোগ, বিয়োগ, গুণ ভাগসহ অটোসামের আরও ফর্মুলা কীভাব কাজ করে তা বেশি বেশি প্রাকটিস করুন। এগুলা আপনাকে মাইক্রোসফট এক্সেলে এডভান্স লেভেলে যেতে সহায়তা করবে।

৭. অটোফিল আয়ত্ত্ব করুনঃ অটোফিল অপশন বেশ কার্যকরী একটি কমান্ড। এই অপশন আপনাকে একই ধরণের ডাটা একাধিক সেলে কপি করতে সহায়তা করে। জাস্ট ড্র্যাগের মাধ্যমে আপনি অটোফিল অপশনের সাহায্যে অনেকগুলা সেল ফিল করতে পারবেন। আপনার কাজকে সহজ এবং দ্রুত করার জন্য এটি খুবই কার্যকরী। আপনি values, series, and formulas সব ধরণের অপশনে অটোফিল ব্যবহার করতে পারবেন। সুতরাং অনেক কাজকে সহজ করতে অটোফিল শিখে নিন।

৮. নাম্বার ফরমেট এবং চার্ট শিখুনঃ মাইক্রোসফট এক্সেলের একটি অসাধারণ ফিচার চার্ট তৈরি করা। আপনার হাজার হাজার ডাটাকে ভিজ্যুয়ালী প্রদর্শনের জন্য চার্ট অপশনটি বেশ কার্যকরী। আপনি ইনসার্ট অপশন থেকে যতো ধরণের চার্টের প্রয়োজন হয় তা পেয়ে যাবেন। আপনার প্রয়োজন অনুসারে আপনি ব্যবহার করবেন। এখন সেগুলো শিখে নিন। সেই সাথে নাম্বার ফরমেটিং বেশ কার্যকরী। বিভিন্ন সাইন বা কারেন্সি ইত্যাদি ফরমেটিং করতে হয় জানা প্রয়োজন হয়। সুতরাং নাম্বার ফরমেটিং শিখে নিন।

৯. টেবিল তৈরি এবং ফরমেটিং শিখুনঃ যদিও টেবিল তৈরি মাইক্রোসফট এক্সেলের অন্যতম একটি কাজ। সুতরাং টেবিল কীভাবে ফরমেট করতে হয় এবং আপনার ডাটার ধরণ অনুসারে কীভাবে তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হয় তা শিখে নিন। আপনার ক্রিয়েটিভিটির ব্যবহার করুন। দেখবেন মাইক্রোসফট এক্সেলের মাধ্যমেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে ক্লায়েন্টকে আরও বেশি খুশি করতে পারছেন। সর্বোপরি আপনি ইনকামের পাশাপাশি বোনাসও পাবেন বেশি বেশি।

১০. কন্ডিশানাল ফরমেটিং শিখুনঃ বর্তমান সময়ে মাইক্রোসফট এক্সেল বেশ এগিয়ে গিয়েছে। স্প্রেডশিট তৈরি বা ড্যাশবোর্ড সবই এখন পাওয়ারফুল কাজের জন্য উপযুক্ত। আপনার ডাটার ধরণ অনুসারে ড্যাশবোর্ড তৈরি করা, বিশেষ করে কন্ডিশনাল ফরমেটিং তৈরি করা আপনার কাজকে অনেক সহজ করে দিবে। আপনি কন্ডিশনাল ফরমেটিং এ অনেক ধরণের অপশন পাবেন। আপনার প্রয়োজন অনুসারে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। আপনার শেখার সময় সেজন্য বেশিরভাগ কন্ডিশনাল ফরমেটিং আয়ত্ত্ব করুন। তাহলে আপনার শেখার পূরা প্রসেসটা আরও শক্তিশালী হবে।

মাইক্রোসফট এক্সেল শিখে কত টাকা ইনকাম করা যায়

মাইক্রোসফট এক্সেল শিখে কত টাকা ইনকাম করা যায়, এই প্রশ্নটি অনেকেই করে থাকেন।মাইক্রোসফট এক্সেল এমন একটি স্কিল যার চাহিদা অনলাইন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস গুলোতে অত্যন্ত বেশি। আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং কাজের ধরন অনুসারে আয়ের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে যে বিষয়েই কাজ করে থাকেন না কেন কোনো নির্দিষ্ট ইনকামের পরিমাণ বলা যায় না।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি ক্লায়েন্টকে যত বেশি খুশি করতে পারবেন সেটির উপর নির্ভর করে আপনার মাসিক ইনকাম। তবে এক্ষেত্রে আপনি যদি মোটামুটি ঠিক ভাবে কাজ করতে পারেন তাহলে অনায়েসে ২৫-৪৫ হাজার টাকার মতো ইনকাম করতে পারবেন। এছাড়াও আপনার দক্ষতা এবং ক্লায়েন্টের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির সাথে সাথে মাসিক ইনকাম বৃদ্ধি পেয়ে যাবে। ফ্রিল্যান্সিং করার শুরুতে যখন আপনি মার্কেটপ্লেসে কাজ করার ট্রাই করবেন,

তখন দেখবেন প্রথমেই জানতে চাইবে তারা আপনার কোন স্কিলটা আছে অথবা আপনি কোন ক্যাটেগরির কাজের জন্য ক্লায়েন্ট খুঁজছেন। আপনার যদি মাইক্রোসফট এক্সেল জানা থাকে, তাহলে আপনার সামনে অনেক এন্ট্রি লেভেল এর কাজ থাকবে। এন্টি লেভেল কাজের জন্য হলেও এক্সেল জানাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে তখনই কোন ক্লায়েন্ট হায়ার করবে যখন আপনি এক্সেল এর মতো কোন ব্যাসিক স্কিল বিষয়ে বিশদ জ্ঞান রাখবেন।

শেষ কথাঃ মাইক্রোসফট এক্সেল শিখে যেভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে কার্যকর ও লাভজনক অনলাইন ক্যারিয়ার গড়ার একটি দারুণ মাধ্যম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। আর মাইক্রোসফট এক্সেল সেই ফ্রিল্যান্সিং দুনিয়ার একটি শক্তিশালী ও চাহিদাসম্পন্ন স্কিল। লেখক হিসেবে আমার মতে, এক্সেল শিখে সফলভাবে ফ্রিল্যান্সিং করা একদিকে যেমন সম্ভব, অন্যদিকে এটি অনেকের জন্য জীবন বদলে দেওয়ার মতো সুযোগ তৈরি করতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে যেকোনো একটি নির্দিষ্ট স্কিলের ওপর আপনার ফোকাস থাকা উচিত।

আর এক্সেল এমন একটি স্কিল, যা শুধু ডেটা এন্ট্রি নয়, বরং অ্যানালাইসিস, রিপোর্টিং, অটোমেশন, ড্যাশবোর্ড, একাউন্টিং, ক্যালেন্ডার ম্যানেজমেন্টসহ বহু ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। এ কারণে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আমি মনে করি, এক্সেল শেখা শুরু করতে খুব বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই—একটি কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ, এবং শেখার ইচ্ছা থাকলেই হয়। ইউটিউব, অনলাইন কোর্স ও ফ্রি রিসোর্স থেকে শেখা সম্ভব।

নিয়মিত প্র্যাকটিস করলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একজন দক্ষ এক্সেল ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ধৈর্য, নিয়মিত চর্চা, এবং ছোট কাজ দিয়ে শুরু করার মানসিকতা। একবার কিছু ভালো রিভিউ ও রেটিং পেলে, এক্সেল-ভিত্তিক কাজ দিয়ে আপনি নিয়মিত আয় শুরু করতে পারবেন। তাই আমার পরামর্শ, দেরি না করে আজ থেকেই Excel শেখা শুরু করুন। আশা করছি মাইক্রোসফট এক্সেল শিখে যেভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url