ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করার সকল উপায়
ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করার উপায় বর্তমানে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি
অনলাইনে আয়ের একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। যদিও
অনেকেই মনে করেন, ইমেইল মার্কেটিং করা কঠিন বা জটিল, তবে বাস্তবে এটি খুব সহজেই
শেখা যায়।
আপনি যদি ধৈর্য ধরে নিয়মিত শিখেন ও অনুশীলন করেন, তাহলে ইমেইল মার্কেটিং হতে পারে
আপনার জন্য একটি সহজ, সুবিধাজনক এবং লাভজনক আয়ের মাধ্যম। বর্তমানে ছোটখাটো কাজেও
ইমেইল ব্যবহার করে আয় করা সম্ভব, যা এই মাধ্যমটির কার্যকারিতা ও জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে
দিয়েছে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করার উপায়
- ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করার উপায়
- ইমেইল মার্কেটিং কি এবং কিভাবে কাজ করে
- ফ্রিতে ইমেইল মার্কেটিং শেখার সহজ উপায়
- ইমেইল মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবেন
- ঘরে বসে ইমেইল মার্কেটিং করে ইনকাম করার নিয়ম
- ইমেইল লিস্ট সহজে তৈরি করার নিয়ম
- ইমেইল মার্কেটিং দিয়ে কিভাবে অনলাইন বিজনেস বাড়ানো যায়
- ইমেইল মার্কেটিং-এর মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম করার কৌশল
- ইমেইল মার্কেটিং-এর বেস্ট টুলস কোনগুলো
- নতুনদের জন্য ইমেইল মার্কেটিং গাইডলাইন
- শেষ কথাঃ ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করার উপায়
ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করার উপায়
ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করার উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন। অনলাইনে
ইনকাম করার জন্য অনেক ধরনের প্লাটফর্ম রয়েছে তার মধ্যে ইমেইল মার্কেটিং অন্যতম।
বিশেষ করে যারা ঘরে বসে কিছু শিখে ইনকাম করতে চান, তাদের জন্য ইমেইল মার্কেটিং
একটা ভালো সুযোগ। এটি এমন একটি মার্কেটিং কৌশল যেখানে আপনি আপনার নির্দিষ্ট
শ্রেণির পাঠকদের ইমেইলের মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক তথ্য, পণ্য বা সার্ভিস প্রস্তাব করেন
এবং সেই মাধ্যমে আয় করেন। সফলভাবে আয় করতে হলে কয়েকটি ধাপে কাজ করতে হয়।
এর জন্য প্রথমেই দরকার একটি নির্দিষ্ট নিশ নির্বাচন করা। নিশ বলতে বোঝায় এমন
একটি বিষয় যেখানে আপনি কাজ করবেন, যেমন স্বাস্থ্য, ফিটনেস, প্রযুক্তি, অনলাইন
ইনকাম, ইসলামিক বিষয়, শিক্ষা ইত্যাদি। নির্দিষ্ট নিশ থাকলে আপনি সেই বিষয়ে
ধারাবাহিক ও প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন। ফলে পাঠকগণ সহজেই বুঝতে পারবেন
আপনি কার জন্য তথ্য দিচ্ছেন এবং তারা নিয়মিত ইমেইল ওপেন ও পড়ার সম্ভাবনা
বাড়বে। এটি আপনার ইমেইল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিকে আরও সুসংগত ও কার্যকর করে
তোলে।
এরপর দরকার একটি শক্তিশালী ইমেইল লিস্ট তৈরি করা, যা ইমেইল মার্কেটিংয়ের সফলতার
মূল ভিত্তি। আপনি আপনার ব্লগ, ওয়েবসাইট কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ইমেইল
সংগ্রহ করতে পারেন। এর জন্য একটি আকর্ষণীয় অফার বা lead magnet প্রদান করতে হবে,
যেমন ফ্রি ইবুক, চেকলিস্ট, অনলাইন কোর্স বা কার্যকর টিপস। এই অফার পাঠকদের আগ্রহ
সৃষ্টি করে এবং তারা স্বেচ্ছায় ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করে। একটি সক্রিয় ও
আগ্রহী ইমেইল লিস্ট ভবিষ্যতে আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়ায়।
ইমেইল লিস্ট তৈরি হলে পরবর্তী ধাপ হলো একটি উপযুক্ত ইমেইল মার্কেটিং টুল ব্যবহার
করা। এই ধরনের টুলের সাহায্যে আপনি পেশাদারভাবে ইমেইল পাঠাতে পারবেন এবং পুরো
প্রক্রিয়াটি অটোমেট করতে পারবেন। জনপ্রিয় কিছু ইমেইল মার্কেটিং টুল হলো:
Mailchimp, ConvertKit, Brevo (আগের নাম Sendinblue), GetResponse ইত্যাদি। এসব
টুলের মাধ্যমে আপনি ইমেইল অটোমেশন সেট করতে পারবেন, যেমন কেউ সাবস্ক্রাইব করলেই
স্বাগত বার্তা পাঠানো, ধারাবাহিক ইমেইল সিরিজ তৈরি করা, বা নির্দিষ্ট লিঙ্কে
ক্লিক করলে আলাদা ক্যাম্পেইন চালু করা।
এরপর আসে কনটেন্ট ডেলিভারির বিষয়, যা ইমেইল মার্কেটিংয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ
দিক। আপনি যখন সাবস্ক্রাইবারদের কাছে ইমেইল পাঠাবেন, তখন সেই কনটেন্ট অবশ্যই হতে
হবে উপকারী, শিক্ষামূলক ও পাঠকের সমস্যার সমাধানমূলক। শুধুমাত্র প্রোডাক্ট
বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে বারবার প্রচারণামূলক ইমেইল পাঠালে পাঠক বিরক্ত হতে পারে এবং
সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে দিতে পারে। তাই শুরুতে বিশ্বাস তৈরি করাই মূল উদ্দেশ্য
হওয়া উচিত। মানসম্মত ও মূল্যবান কনটেন্ট পাঠানোর মাধ্যমে আপনি পাঠকের আস্থা
অর্জন করবেন।
ইমেইল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় আয়ের মাধ্যম হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
এই পদ্ধতিতে আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রমোট করেন এবং
বিক্রির উপর নির্দিষ্ট কমিশন অর্জন করেন। ধরুন, আপনি স্বাস্থ্যবিষয়ক ইমেইল
পাঠান, যেখানে আপনি একটি নির্দিষ্ট হারবাল পণ্যের রিভিউ, উপকারিতা বা অফার উল্লেখ
করলেন এবং সেই ইমেইলে একটি অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করলেন। যদি কোনো পাঠক সেই
লিংকে ক্লিক করে প্রোডাক্টটি ক্রয় করে, তাহলে আপনি কমিশন পাবেন। অ্যামাজন,
ClickBank, Digistore24, Impact ইত্যাদি জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক।
আপনি চাইলে ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে নিজের ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি করেও আয়
করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা রাখেন, তাহলে
সেই বিষয়ে একটি ইবুক, ভিডিও কোর্স, বা কনসালটেশন সার্ভিস তৈরি করে ইমেইলের
মাধ্যমে প্রচার করতে পারেন। যেহেতু আপনার ইমেইল লিস্টের সদস্যরা আগ্রহী ও
নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সাবস্ক্রাইব করেছে, তাই প্রাসঙ্গিক প্রোডাক্ট
তাদের কাছে অফার করলে বিক্রির সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ট্রাফিক ও বিশ্বাস এটাই ইমেইল মার্কেটিং আয়ের
মূল চাবিকাঠি। আপনি যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন এবং তাদের ইমেইল লিস্টে
যুক্ত করতে পারবেন, তত বেশি সম্ভাব্য ক্রেতা তৈরি হবে। তবে কেবল সংখ্যাই যথেষ্ট
নয়, তাদের আস্থা অর্জন করাটাই আসল। যদি সাবস্ক্রাইবাররা মনে করে আপনি সত্যিকারের
উপকারী তথ্য দেন এবং তাদের উপকারে আসেন, তাহলে তারা আপনার প্রস্তাবিত প্রোডাক্ট
বা সার্ভিসের প্রতি আগ্রহী হবে। আশা করি, ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করার
উপায় জেনে গেছেন।
ইমেইল মার্কেটিং কি এবং কিভাবে কাজ করে?
ইমেইল মার্কেটিং হলো এমন একটি ডিজিটাল পদ্ধতি, যেখানে আপনি ইমেইলের মাধ্যমে
মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। এতে করে আপনি আপনার পণ্য, সেবা
কিংবা উপকারি তথ্য পাঠকের ইনবক্সে পৌঁছে দিতে পারবেন। ধীরে ধীরে পাঠকের সঙ্গে
একটি আস্থাভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা ভবিষ্যতে আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন
করে। সহজভাবে বললে, ইমেইল মার্কেটিং মানে কারও ইনবক্সে গিয়ে এমন কিছু জানানো, যা
তার উপকারে আসে এবং তাকে আপনার কাছ থেকে কিছু কিনতে আগ্রহী করে তোলে।
ধরুন, আপনি একটি অনলাইন কোর্স তৈরি করেছেন। এখন যদি আপনি শুধু ফেসবুকে পোস্ট দেন,
তবে অনেকেই সেটি দেখবে না কারণ ফেসবুকের এলগরিদম, সময় বা মনোযোগের সীমাবদ্ধতা
রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি আগেই সেই বিষয়ে আগ্রহীদের একটি ইমেইল লিস্ট তৈরি করে
রাখতেন, তাহলে সহজেই তাদের ইনবক্সে কোর্সটির তথ্য পাঠাতে পারতেন। এতে তারা
গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি পড়ত এবং আপনার প্রতি বিশ্বাস তৈরি হতো। ইমেইল মার্কেটিংয়ের
অন্যতম বড় সুবিধা হলো, এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য ও ব্যক্তিগত মাধ্যম।
ইমেইল মার্কেটিং মূলত তিনটি ধাপে কাজ করেঃ
১. ইমেইল সংগ্রহ করাঃ ইমেইল মার্কেটিংয়ের প্রথম ধাপ হলো আগ্রহী মানুষের
ইমেইল সংগ্রহ করা। এজন্য আপনি একটি ফ্রি গিফট, চেকলিস্ট, ইবুক বা মিনি কোর্স এর
মতো আকর্ষণীয় অফার দিতে পারেন। এই অফারগুলো দিয়ে মানুষকে আপনার ওয়েবসাইট বা
ল্যান্ডিং পেজে নিয়ে এসে তাদের ইমেইল ঠিকানা নিতে হয়। এই কৌশলকে বলা হয় Lead
Magnet, যা পাঠকের জন্য এমন কিছু মূল্যবান এবং প্রয়োজনীয় উপহার হিসেবে কাজ করে,
যাতে তারা স্বেচ্ছায় ইমেইল সাবস্ক্রাইব করে। এর ফলে আপনি একটি কার্যকর ও
টার্গেটেড ইমেইল লিস্ট তৈরি করতে পারেন, যা ভবিষ্যতে আপনার মার্কেটিং ও আয়ের জন্য
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. সম্পর্ক গড়ে তোলাঃ ইমেইল সংগ্রহের পর সরাসরি বিক্রি করার চেষ্টা না
করে আগে পাঠকের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি। এজন্য তাদের উপকারে
আসবে এমন মূল্যবান কনটেন্ট নিয়মিত পাঠাতে হবে, যেমন কার্যকর টিপস, সমস্যা
সমাধানের উপায়, শিক্ষা বিষয়ক তথ্য বা মোটিভেশনাল বার্তা। এই ধারাবাহিক কনটেন্ট
পাঠানোর মাধ্যমে পাঠকরা আপনাকে চিনবে, বিশ্বাস করবে এবং মানসিকভাবে আপনার ভবিষ্যত
অফারের জন্য প্রস্তুত হবে। বিশ্বাস ও সম্পর্ক তৈরিই সফল ইমেইল মার্কেটিংয়ের মূল
চাবিকাঠি।
৩. অফার করাঃ যখন দেখবেন পাঠকরা আপনার প্রতি আস্থাশীল এবং আপনার কনটেন্ট
গ্রহণ করছে, তখন উপযুক্ত সময় হলো প্রোডাক্ট, সার্ভিস বা অ্যাফিলিয়েট লিংক
পাঠিয়ে অফার করার। এই সময় পাঠকরা আপনার প্রস্তাবকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করবে
এবং যারা প্রকৃত আগ্রহী তারা সেটি কিনবে। এই ধাপে আপনার আয় শুরু হয়। সুতরাং
ধৈর্য ধরে সম্পর্ক গড়ে তোলার পর সঠিক সময়ে অফার দেওয়াই সফল ইমেইল
মার্কেটিংয়ের মূল কৌশল।
ইমেইল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে ভালো দিক হলো এটি ব্যক্তিগত ও সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ
করে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ার মতো এলগোরিদমের ওপর নির্ভর করতে হয় না। বরং আপনি
নিশ্চিত থাকেন যে, আপনার বার্তাটি টার্গেট পাঠকের ইনবক্সে পৌঁছেছে। তবে একটি
বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে রাতারাতি কিছুই হয় না। পাঠকের বিশ্বাস অর্জন করতে
সময় লাগে। আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, নিয়ম মেনে কনটেন্ট পাঠাতে হবে এবং পাঠকের
চাহিদা বুঝে তাদের জন্য উপযোগী তথ্য দিতে হবে।
ফ্রিতে ইমেইল মার্কেটিং শেখার সহজ উপায়
ফ্রিতে ইমেইল মার্কেটিং শেখার সহজ উপায় রয়েছে। বর্তমানে অনলাইনে আয় করতে চাইলে
ইমেইল মার্কেটিং জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন, এটি শিখতে হলে
প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো যদি আপনার ইচ্ছা ও ধৈর্যশক্তি
থাকে, তাহলে ফ্রিতেও ইমেইল মার্কেটিং শেখা সম্ভব। এর জন্য শুধু সঠিক পথ এবং
ধৈর্যের প্রয়োজন। প্রথমেই আপনি ইউটিউব থেকে শুরু করতে পারেন। এখানে অনেক
বাংলাদেশি ও বিদেশি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে, যারা একেবারে শূন্য থেকে ধাপে ধাপে
ইমেইল মার্কেটিং শেখায়।
ভিডিও দেখে সহজেই হাতে-কলমে শিখতে পারবেন। এছাড়াও কিছু বিশ্বস্ত অনলাইন
প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যেমন Coursera, HubSpot Academy, Google Digital Garage এই
সাইটগুলোতে আপনি ফ্রিতে ইমেইল মার্কেটিং শিখার পাশাপাশি সার্টিফিকেটও পেতে পারেন।
শুধু শেখা যথেষ্ট নয়, প্র্যাকটিস করাও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি Mailchimp,
GetResponse বা Systeme.io এর মতো জনপ্রিয় টুল ব্যবহার করে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে
পারেন। এতে করে শিখার পাশাপাশি দক্ষতাও তৈরি হবে। প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে সময়
দিলেও, আপনি ইমেইল মার্কেটিংয়ে দক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন।
ইমেইল মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবেন?
কি ভাবছেন, ইমেইল মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবেন? ইমেইল মার্কেটিং এ সফল হতে হলে
আপনাকে বিভিন্নভাবে আপনার কাস্টমারের সাথে কানেক্টেড থাকতে হবে। নির্দিষ্ট একটি
সময় পর পর তাদের ইমেইলে আপনার নতুন নতুন অফার কিংবা বিজনেসের নতুন আপডেট সম্পর্কে
জানাতে হবে। এইভাবে আপনি ডিজিটালি তাদের সাথে একটি ভাল সম্পর্ক তৈরি করতে পারবেন।
আসুন এবার ইমেইল মার্কেটিং করতে গেলে কিভাবে শুরু করতে হয় সেটা জেনে নিই।
১. টেকনিক্যাল স্কিলঃ একজন ভালো ইমেইল মার্কেটার হতে হলে টেকনিক্যাল স্কিল
থাকা জরুরি। যদিও প্রোগ্রামিং জানা বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিভিন্ন ইমেইল মার্কেটিং
টুল এবং অটোমেশন পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক। অটোমেশনের মাধ্যমে আপনি
একসাথে হাজার হাজার ইমেইল পাঠাতে পারবেন, এমনকি ইমেইল ওপেনের ভিত্তিতে পরবর্তী
ইমেইলও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঠাতে পারবেন। এসব কাজ সহজ করতে Mailchimp, Systeme.io,
GetResponse ইত্যাদি টুলের ব্যবহার শিখতে হবে। অনলাইনে অনেক ভালো কোর্স রয়েছে
যেগুলো নতুনদের জন্য উপযোগী। এসব দক্ষতা আপনাকে ইমেইল মার্কেটিংয়ে দ্রুত সফল হতে
সাহায্য করবে।
২. কমিউনিকেশন স্কিলঃ কমিউনিকেশন স্কিল একজন ইমেইল মার্কেটারের অন্যতম
প্রধান শক্তি। আপনি যত ভালোভাবে আপনার পণ্য বা সেবা কাস্টমারের কাছে উপস্থাপন
করতে পারবেন, তত বেশি সাড়া পাবেন। একটি সুন্দরভাবে লেখা ইমেইল কাস্টমারের আগ্রহ
তৈরি করতে পারে, আবার দুর্বল উপস্থাপনা সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে।
ইমেইলের ভাষা হতে হবে সহজ, পরিষ্কার এবং পাঠকের প্রয়োজন অনুযায়ী। আকর্ষণীয়
সাবজেক্ট লাইন, ব্যক্তিগতকরণ এবং কার্যকর কল-টু-অ্যাকশন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি
যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারেন। তাই নিজের কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে নিয়মিত
প্র্যাকটিস ও শেখার মনোভাব রাখা জরুরি।
৩. সঠিক কন্টেন্ট নির্বাচনঃ সঠিক কন্টেন্ট নির্বাচন ইমেইল মার্কেটিংয়ের
সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কাস্টমাররা কোন ধরনের কন্টেন্টে সাড়া দেন, তা বুঝে
তেমন কনটেন্ট তৈরি করতে পারলে রেসপন্স অনেক গুণ বেড়ে যায়। টেক্সট, গ্রাফিক, ভিডিও
কিংবা অডিও – প্রত্যেক ধরনের কনটেন্টের নিজস্ব প্রভাব আছে। আপনাকে টেস্টিং ও
অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে বুঝতে হবে কোন ফরম্যাটে পাঠকরা বেশি আগ্রহ দেখায় এবং
কোনটি বিক্রিতে সহায়ক। এছাড়া প্রোডাক্ট বা সার্ভিস অনুযায়ী কনটেন্টের ধরন
নির্ধারণ করতে হবে। যদি কনটেন্ট বাছাই ভুল হয়, তাহলে পুরো ক্যাম্পেইনই ব্যর্থ হতে
পারে। তাই সঠিক কন্টেন্ট বাছাইয়ে সময়, রিসার্চ ও কৌশল বিনিয়োগ করা জরুরি।
ঘরে বসে ইমেইল মার্কেটিং করে ইনকাম করার নিয়ম
ঘরে বসে ইমেইল মার্কেটিং করে ইনকাম করা বর্তমানে কঠিন কোনো বিষয় নয়। সামান্য
দক্ষতা, ধৈর্য ও সঠিক পরিকল্পনা থাকলে আপনি নিজেই ঘরে বসে ইমেইল মার্কেটিংয়ের
মাধ্যমে ভালো পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন। এর জন্য প্রথমেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে
হবে আপনি কোন বিষয় নিয়ে কাজ করতে চান। উদাহরণস্বরূপঃ ডিজিটাল প্রোডাক্ট ( ইবুক,
কোর্স), অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, নিজের সার্ভিস (কোচিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব
ডিজাইন ইত্যাদি)। এরপর আপনার সেই বিষয়ে আগ্রহী মানুষের একটি ইমেইল লিস্ট তৈরি
করতে হবে।
এই কাজটি আপনি ফেসবুক, ইউটিউব, ব্লগ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করতে পারেন। একটি ফ্রি
গিফট, চেকলিস্ট, ইবুক বা মিনি কোর্স অফার দিয়ে আপনি সহজেই মানুষের ইমেইল সংগ্রহ
করতে পারেন। এই কৌশলকে বলা হয় Lead Magnet। একবার ইমেইল লিস্ট তৈরি হয়ে গেলে,
আপনাকে নিয়মিত সেই পাঠকদের জন্য উপকারী কনটেন্ট পাঠাতে হবে যেমন টিপস, সমস্যা
সমাধানের পরামর্শ, প্রেরণামূলক বার্তা ইত্যাদি। এতে পাঠকদের মধ্যে আপনার প্রতি
বিশ্বাস ও আস্থা তৈরি হবে।
ধীরে ধীরে আপনি সেই পাঠকদের কাছে নিজের পণ্য, সার্ভিস বা অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার
করতে পারবেন। আগ্রহী ব্যক্তিরা তা ক্রয় করলে আপনি ইনকাম করতে পারবেন। এই কাজগুলোর
জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন কিছু ফ্রি ইমেইল মার্কেটিং টুল যেমন Mailchimp,
GetResponse, Systeme.io। সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো, এই কাজটি করতে আপনাকে কোনো অফিসে
যেতে হবে না। শুধুমাত্র একটি মোবাইল বা ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই ঘরে
বসে শুরু করতে পারবেন।
ইমেইল লিস্ট সহজে তৈরি করার নিয়ম
ইমেইল লিস্ট তৈরি করার নিয়ম খুব সহজ। ইমেইল মার্কেটিং করতে চাইলে সবচেয়ে প্রথম ও
গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো একটি মানসম্মত ইমেইল লিস্ট তৈরি করা। এই তালিকায় এমন
মানুষদের ইমেইল থাকতে হবে, যারা আপনার নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি আগ্রহী এবং
ভবিষ্যতে আপনার অফার গ্রহণ করতে পারে। এই তালিকা তৈরীর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো
মানুষকে কিছু ফ্রি, উপকারী রিসোর্স অফার করুন এবং বিনিময়ে তাদের ইমেইল সংগ্রহ
করুন।
যদি আপনি কোনো বিষয়ে ভালো জানেন, তাহলে একটি ছোট ইবুক, চেকলিস্ট, বা ভিডিও গাইড
তৈরি করুন। সেটিকে ফ্রি ডাউনলোড হিসেবে অফার করুন। ডাউনলোড করতে চাইলে,
ব্যবহারকারীকে একটি ছোট ফর্মে ইমেইল দিতে বলুন। এই পদ্ধতিকে বলা হয় Lead Magnet
Strategy, যা ইমেইল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। এই কাজের জন্য আপনি
চাইলে Mailchilmp, GetResponse ও Systemo.io এই টুলগুলোতে খুব সহজেই ইমেইল
সংগ্রহের ফর্ম তৈরি করতে পারবেন।
সেটি আপনার ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারবেন এবং ইমেইল লিস্ট
স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ করতে পারবেন। ভালো মানের ইমেইল লিস্ট একদিনে তৈরি হয় না।
ধাপে ধাপে ধৈর্য ও নিয়মিত পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হয়। একবার যদি আপনি
বিশ্বস্ত ও আগ্রহী মানুষদের একটি ইমেইল লিস্ট তৈরি করতে পারেন, তাহলে এই লিস্ট
থেকেই আপনি বারবার ইনকাম করতে পারবেন নতুন করে টাকা খরচ করা ছাড়াই।
ইমেইল মার্কেটিং দিয়ে কিভাবে অনলাইন বিজনেস বাড়ানো যায়
ইমেইল মার্কেটিং দিয়ে অনলাইন বিজনেস বাড়ানো যায়। ইমেইল মার্কেটিং অনলাইন
বিজনেস বাড়ানোর জন্য একটি অসাধারণ ও শক্তিশালী কৌশল। কারণ, ইমেইল সরাসরি মানুষের
ব্যক্তিগত ইনবক্সে পৌঁছে যায় যেখানে তারা অন্য যেকোনো প্ল্যাটফর্মের তুলনায় বেশি
মনোযোগ দেয়। আপনি যদি নিয়মিত উপকারী তথ্য, নতুন পণ্যের আপডেট কিংবা বিশেষ অফার
পাঠান, তাহলে আপনার গ্রাহকের সঙ্গে একটি বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। এই
বিশ্বাসের ভিত্তিতেই গ্রাহক বারবার আপনার সাইটে ফিরে আসবে এবং সম্ভাব্যভাবে
পণ্য/সেবা কিনবে।
ধরে নিন, আপনি একটি অনলাইন শপ চালান। এখন আপনি যদি আপনার সাবস্ক্রাইবারদের মাঝে
সাপ্তাহিক অফার বা নতুন পণ্যের আপডেট পাঠান, তাহলে অনেকেই ক্লিক করে আপনার
ওয়েবসাইটে যাবে এবং অর্ডার করবে। ইমেইল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো খরচ কম
কিন্তু রিটার্ন অনেক বেশি। সোশ্যাল মিডিয়া বা বিজ্ঞাপনের তুলনায় এটি অনেক বেশি
টার্গেটেড এবং কনভার্সন রেটও বেশি। ছোট ব্যবসা হোক বা বড়, ইমেইল মার্কেটিং হতে
পারে আপনার অনলাইন বিজনেস বাড়ানোর সবচেয়ে সাশ্রয়ী, কার্যকর এবং দীর্ঘস্থায়ী
কৌশল।
ইমেইলের মাধ্যমে ব্যবসা বাড়াতে আপনার টার্গেট গ্রাহকদের জন্য উপকারী, তথ্যবহুল
এবং আকর্ষণীয় কনটেন্ট পাঠান। এতে তাদের আগ্রহ ও আস্থা বাড়বে। সীমিত সময়ের জন্য
ডিসকাউন্ট অফার বা এক্সক্লুসিভ কুপন পাঠালে দ্রুত বিক্রি বাড়ে এবং গ্রাহকরা
দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। যারা আগে আপনার কাছ থেকে কিছু কিনেছে, তাদের মাঝে নতুন অফার
বা রিমাইন্ডার পাঠিয়ে পুনরায় সেল বাড়ানো যায়। নতুন কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস
আসলে সাবস্ক্রাইবারদের আগে জানালে তারা আগ্রহী হয় এবং প্রাথমিক পর্যায়েই ক্রয়
করে। এভাবেই ইমেইলের মাধ্যমে বিক্রি বৃদ্ধি পায়।
ইমেইল মার্কেটিং-এর মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম করার কৌশল
ইমেইল মার্কেটিং-এর মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম করার কৌশল এখন সময়োপযোগী ও কার্যকর
একটি অনলাইন ইনকাম মডেল। ইমেইল মার্কেটিং শুধু সক্রিয় আয়ের জন্য নয় বরং এটি
দিয়ে আপনি চাইলে প্যাসিভ ইনকাম অর্থাৎ ঘুমিয়ে বা ঘরে বসেও আয় করতে পারেন। আপনি
যদি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ফ্রি গাইড, চেকলিস্ট বা ভিডিও তৈরি করে মানুষের
ইমেইল সংগ্রহ করেন, তাহলে সেই ইমেইল লিস্ট থেকেই আপনি নিয়মিত আয় করতে পারেন।
ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম করার কৌশল দেখে নিনঃ
১. নির্দিষ্ট একটি বিষয় নির্বাচন করুনঃ ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে
সফলভাবে প্যাসিভ ইনকাম করতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ও জনপ্রিয় টপিক
বেছে নিতে হবে। যেমনঃ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বা অনলাইন ইনকাম, এই তিনটি বিষয় সবসময়
মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। আপনি যেই বিষয়ে ভালো জানেন বা আগ্রহ আছে,
সেটি নির্বাচন করুন। কারণ, নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপর ফোকাস করলে আপনি নির্ভুল
কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন এবং আগ্রহী সাবস্ক্রাইবারদের জন্য মানসম্মত তথ্য দিতে
পারবেন। এতে ইমেইল লিস্ট দ্রুত বড় হবে এবং আয়ও বাড়বে।
২. ফ্রি রিসোর্স তৈরি করুনঃ আপনার নির্বাচিত টপিক অনুযায়ী একটি ফ্রি গাইড,
চেকলিস্ট অথবা মিনি কোর্স তৈরি করুন, যা সহজবোধ্য এবং উপকারী হয়। মানুষ যখন দেখে
বিনামূল্যে কিছু দরকারি তথ্য পাচ্ছে, তখন তারা আগ্রহী হয়ে তা নিতে চায়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার টপিক হয় অনলাইন ইনকাম, তাহলে আপনি প্রথম ৭ দিনে ঘরে বসে
ইনকাম শুরু করার গাইড তৈরি করতে পারেন। এই রিসোর্সটি ডাউনলোড করার সময় আগ্রহী
ব্যক্তির ইমেইল সংগ্রহ করুন। এইভাবে, আপনি একটি শক্তিশালী ইমেইল লিস্ট তৈরি করতে
পারবেন এবং ভবিষ্যতে তাদের মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম অর্জন করা সম্ভব হবে।
৩. ইমেইল সংগ্রহ করুনঃ আপনার তৈরি করা ফ্রি রিসোর্স (যেমন গাইড, চেকলিস্ট
বা কোর্স) দেওয়ার বিনিময়ে ব্যবহারকারীর ইমেইল সংগ্রহ করুন। এভাবে আপনি ধীরে
ধীরে একটি আগ্রহী মানুষের ইমেইল লিস্ট তৈরি করতে পারবেন, যাদের ভবিষ্যতে আপনার
কনটেন্ট বা প্রোডাক্ট প্রোমোট করা যাবে। ইমেইল সংগ্রহ করার জন্য আপনি ব্যবহার
করতে পারেন জনপ্রিয় ও ফ্রেন্ডলি প্ল্যাটফর্ম যেমনঃ Mailchimp, GetResponse বা
Systeme.io। এসব টুল দিয়ে সহজেই একটি সাইন-আপ ফর্ম তৈরি করে তা ওয়েবসাইট,
ল্যান্ডিং পেজ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত করা যায়। এইভাবে আপনি একটি বিশ্বস্ত এবং
লাভজনক ইমেইল লিস্ট গড়ে তুলতে পারবেন।
৪. নিয়মিত মানসম্মত কনটেন্ট পাঠানঃ একবার ইমেইল লিস্ট তৈরি হয়ে গেলে,
সেখানে থেমে না থেকে নিয়মিত মানসম্মত ও প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট পাঠাতে হবে। এই
কনটেন্ট হতে পারে তথ্যবহুল ব্লগ পোস্ট, টিপস, সমস্যার সমাধান, সফলতার গল্প বা
শিক্ষামূলক উপাদান। লক্ষ্য হলো, পাঠকদের সঙ্গে বিশ্বাস এবং সম্পর্ক গড়ে তোলা।
নিয়মিত ইমেইল পাঠানোর মাধ্যমে আপনি তাদের ইনবক্সে থাকবেন, এবং যখন তারা কোনো পণ্য
বা সার্ভিস কিনতে চাইবে, তখন সবার আগে আপনাকেই মনে করবে। এইভাবেই ইমেইল
মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তুলে প্যাসিভ ইনকাম সম্ভব হয়।
৫. প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রমোট করুনঃ নিয়মিত কনটেন্ট পাঠানোর মাঝে আপনি
ধীরে ধীরে পাঠকদের আস্থাভাজন হয়ে উঠবেন। তখন কনটেন্টের মাঝে আপনি স্মার্টভাবে
যুক্ত করতে পারেন অ্যাফিলিয়েট লিংক, নিজের তৈরি ডিজিটাল প্রোডাক্ট (যেমন ইবুক,
কোর্স, টেমপ্লেট) অথবা নিজের ফ্রিল্যান্স সার্ভিস (যেমন ডিজাইন, রাইটিং,
কনসালটেশন)। তবে মনে রাখতে হবে, প্রোমোশন যেন খুবই প্রাসঙ্গিক ও উপকারী হয় এতে
পাঠক বিরক্ত না হয়ে বরং আগ্রহী হবে। এভাবেই ইমেইল মার্কেটিং হয়ে উঠতে পারে আপনার
একটি প্যাসিভ ইনকামের উৎস।
৬. এখান থেকেই শুরু হবে প্যাসিভ ইনকামঃ যখন আপনার ইমেইল মার্কেটিং সিস্টেম
ভালোভাবে সেটআপ হয়ে যাবে (ইমেইল লিস্ট, ফ্রি রিসোর্স, মানসম্মত কনটেন্ট এবং
প্রোডাক্ট প্রমোশন) তখন আপনি সরাসরি না থেকেও ইনকাম করতে পারবেন। মানুষ তাদের
সুবিধামতো সময়ে ইমেইল খুলবে, প্রোডাক্ট দেখবে এবং কিনবে। আপনি তখন ঘুমাচ্ছেন বা
অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলেও সেল হতে থাকবে। এখান থেকেই শুরু হবে আপনার অটোমেটেড ও
প্যাসিভ ইনকাম যেটি ধীরে ধীরে আপনার আয়ের একটি স্থায়ী ও স্কেলযোগ্য উৎসে পরিণত
হতে পারে।
৭. মাঝে মাঝে আপডেট করুনঃ ইমেইল মার্কেটিং থেকে প্যাসিভ ইনকাম পেতে হলে
শুধু একবার সেটআপ করলেই হবে না। সময়ের সাথে আপনার কনটেন্ট, অফার এবং ইমেইল
অটোমেশন সিস্টেম আপডেট করা জরুরি। নিয়মিত দেখতে হবে কোন ইমেইল বেশি ওপেন হচ্ছে,
কোন লিংকে বেশি ক্লিক হচ্ছে, কোন অফার মানুষ পছন্দ করছে। এসব বিশ্লেষণ করে কৌশল
পরিবর্তন করুন, নতুন অফার বা কনটেন্ট যোগ করুন। এতে করে আপনার ইমেইল ক্যাম্পেইন
আরও কার্যকর হবে এবং ইনকামের পরিমাণও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। আপডেট মানেই
উন্নতির পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।
ইমেইল মার্কেটিং-এর বেস্ট টুলস কোনগুলো?
ইমেইল মার্কেটিং-এর জন্য বেস্ট টুলস ব্যবহার করা খুবই জরুরী, কারণ ভালো টুলস
থাকলে কাজ অনেক সহজ হয় এবং ফলাফলও উন্নত হয়। ভালো টুলস ব্যবহার করে আপনি ইমেইল
লিস্ট সহজেই ম্যানেজ করতে পারবেন, অটোমেশন সেটআপ করতে পারবেন এবং
সাবস্ক্রাইবারদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ রাখতে পারবেন। নিচে কিছু জনপ্রিয় এবং
কার্যকর ইমেইল মার্কেটিং টুলস এর বর্ণনা দেওয়া হলো যেগুলো বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী
বহুল ব্যবহৃতঃ
১. Mailchimp-নতুনদের জন্যঃ Mailchimp ইমেইল মার্কেটিং টুলসের মধ্যে
অন্যতম জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম। এটি নতুনদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী
কারণ এর ব্যবহার অনেক সহজ এবং শুরুতেই ফ্রি প্ল্যান দিয়ে ৫০০ পর্যন্ত
সাবস্ক্রাইবার পর্যন্ত ইমেইল পাঠানো যায়। Mailchimp এ কোডিং না জেনে ড্র্যাগ
অ্যান্ড ড্রপ ফিচারের মাধ্যমে সহজে আকর্ষণীয় ইমেইল তৈরি করা সম্ভব। এছাড়া
স্বয়ংক্রিয় ওয়েলকাম ইমেইল ও ক্যাম্পেইন সেটআপ করার সুবিধা রয়েছে। ইমেইল খোলা ও
ক্লিকের তথ্য বিশ্লেষণ করে মার্কেটিং উন্নত করা যায়। এই সহজ ও শক্তিশালী
বৈশিষ্ট্যের কারণে নতুনদের মধ্যে Mailchimp খুবই জনপ্রিয়।
২. Systeme.io-অল-ইন-ওয়ান বিজনেস টুলঃ Systeme.io হলো একটি পূর্ণাঙ্গ
অনলাইন বিজনেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, যা ইমেইল মার্কেটিং ছাড়াও সেলস ফানেল,
ল্যান্ডিং পেজ, এবং কোর্স বিক্রির সুবিধা প্রদান করে। এটি নতুন উদ্যোক্তা এবং ছোট
থেকে মাঝারি ব্যবসার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। Systeme.io-তে সহজে ফানেল তৈরি,
সাবস্ক্রাইবার ম্যানেজমেন্ট ও স্বয়ংক্রিয় ইমেইল পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এর
ফ্রি প্ল্যানেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফিচার পাওয়া যায়, যা ব্যবহারকারীদের দ্রুত শুরু
করতে সাহায্য করে। এক কথায়, Systeme.io আপনার পুরো ডিজিটাল বিজনেসকে এক জায়গায়
ম্যানেজ করার জন্য আদর্শ টুল।
৩. GetResponse-পেশাদারদের জন্যঃ GetResponse হলো একটি উন্নত ইমেইল
মার্কেটিং টুল যা বিশেষভাবে পেশাদার, মাঝারি এবং বড় ব্যবসার জন্য উপযোগী। এতে
রয়েছে শক্তিশালী অটোমেশন সিস্টেম, যা ব্যবসার বিভিন্ন ধাপ স্বয়ংক্রিয় করতে
সাহায্য করে। ওয়েবিনার হোস্ট করার সুবিধা, ল্যান্ডিং পেজ ও সেলস ফানেল তৈরি করার
টুলসও এতে অন্তর্ভুক্ত। GetResponse-এ আপনি খুবই কাস্টমাইজড ও প্রফেশনাল ইমেইল
ডিজাইন করতে পারবেন। এই সব ফিচারের কারণে বড় ব্যবসায় যারা তাদের মার্কেটিং আরও
স্কেল করতে চান, তাদের জন্য GetResponse একটি আদর্শ পছন্দ।
৪. ConvertKit-কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্যঃ ConvertKit একটি ইমেইল মার্কেটিং
টুল যা বিশেষভাবে ব্লগার, ইউটিউবার এবং অনলাইন কোর্স ক্রিয়েটরদের জন্য উপযোগী।
এটি ব্যবহার করা সহজ এবং এতে রয়েছে শক্তিশালী অটোমেশন ও সেগমেন্টেশন ফিচার, যা
আপনাকে সাবস্ক্রাইবারদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে তাদের কাছে ব্যক্তিগতকৃত ইমেইল
পাঠাতে সাহায্য করে। ConvertKit-এ ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রির সুবিধা থাকায় আপনি
সহজেই নিজের ইবুক, কোর্স বা সার্ভিস প্রোমোট করতে পারবেন। কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের
জন্য এটি একটি কার্যকর ও সাশ্রয়ী প্ল্যাটফর্ম।
নতুনদের জন্য ইমেইল মার্কেটিং গাইডলাইন
নতুনদের জন্য ইমেইল মার্কেটিং শুরুতে একটু কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে
শিখলে এটি অনেক সহজ হয়ে ওঠে। ইমেইল মার্কেটিং মূলত এমন একটি মাধ্যম যেখানে আপনি
আগ্রহী মানুষের ইমেইল সংগ্রহ করেন এবং তাদের নিয়মিত তথ্য, অফার ও পণ্য সম্পর্কে
জানিয়ে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। নতুনদের জন্য এটি একটি শক্তিশালী টুল যা
ঘরে বসে অনলাইনে আয় করার অন্যতম সেরা উপায়।
প্রথম ধাপ হলো ইমেইল মার্কেটিং কী এবং এটি কিভাবে কাজ করে তা বোঝা। ইমেইল
মার্কেটিং হলো সরাসরি মানুষের ইনবক্সে পৌঁছে তাদের উপকারে আসা কনটেন্ট পাঠানোর
পদ্ধতি। এতে আপনি একটি ইমেইল লিস্ট তৈরি করবেন যেখানে আপনার নিশ বা বিষয়
অনুযায়ী আগ্রহী মানুষের ইমেইল থাকবে। লিস্ট তৈরির জন্য আপনাকে একটি আকর্ষণীয়
ফ্রি রিসোর্স তৈরি করতে হবে, যেমন গাইড, ভিডিও টিউটোরিয়াল বা চেকলিস্ট, যা
বিনামূল্যে দেবে এবং এর বিনিময়ে মানুষ তাদের ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করবে।
এরপর, এই ইমেইল লিস্টের কাছে ইমেইল পাঠানোর জন্য একটি ভালো ইমেইল মার্কেটিং টুল
ব্যবহার করতে হবে। নতুনদের জন্য জনপ্রিয় ও ব্যবহার সহজ টুল হলো Mailchimp,
GetResponse, এবং Systeme.io। এই টুলগুলো ব্যবহার করে আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে
ইমেইল পাঠাতে পারবেন, ইমেইলের খোলার হার ও ক্লিক রেট বিশ্লেষণ করতে পারবেন এবং
পাঠকদের আচরণ বুঝে কনটেন্ট অপটিমাইজ করতে পারবেন।
নিয়মিত এবং মানসম্মত কনটেন্ট পাঠানো ইমেইল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
অংশ। আপনাকে পাঠকদের জন্য উপকারী, শিক্ষামূলক এবং আগ্রহজনক তথ্য দিতে হবে যাতে
তারা আপনাকে বিশ্বাস করতে শুরু করে। একবার বিশ্বাস গড়ে উঠলে, আপনি ধীরে ধীরে
আপনার পণ্য, সার্ভিস বা অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট প্রমোট করতে পারবেন। তবে সরাসরি
বিক্রির প্রচার না করে আগে সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত।
ইমেইল মার্কেটিংয়ে সফলতার জন্য ধৈর্য রাখা আবশ্যক। রাতারাতি সফলতা আসে না, তাই
আপনাকে নিয়মিত কাজ করতে হবে, পাঠকদের চাহিদা বুঝে কনটেন্ট তৈরি ও পাঠাতে হবে এবং
ফলাফল বিশ্লেষণ করে পরিবর্তন করতে হবে। প্রতিদিন কিছু সময় শেখার জন্য ও কাজের
জন্য বরাদ্দ রাখুন। অভিজ্ঞতা আসলেই আপনাকে দক্ষ করে তুলবে। নতুনদের জন্য এই
গাইডলাইন অনুসরণ করলে ইমেইল মার্কেটিংয়ে সফল হওয়া সহজ হবে।
শেষ কথাঃ ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করার উপায়
ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করার উপায় নিয়ে আমার শেষকথা হলো ইমেইল মার্কেটিং একটি
দীর্ঘমেয়াদী এবং ফলদায়ক ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল। যারা ধৈর্য ধরে কাজ করতে পারে
এবং ধারাবাহিকভাবে মানসম্মত কনটেন্ট পাঠিয়ে পাঠকের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম, তারাই
সফলভাবে ইমেইল মার্কেটিং থেকে আয় করতে পারে। আমি মনে করি, শুরুতে একটি ইমেইল
লিস্ট তৈরি করে, ফ্রি রিসোর্স দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে এবং ধাপে ধাপে সম্পর্ক
গড়ে তুলে পণ্য বা সার্ভিস প্রমোট করলে ভালো আয় করা সম্ভব।
বিশেষ করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, কোর্স বিক্রি, ডিজিটাল প্রোডাক্ট বা সার্ভিস
অফার করে অনেকেই ইমেইল মার্কেটিং থেকে মাসে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করতে সক্ষম
হয়েছেন। তবে এর জন্য দরকার পরিকল্পনা, ধৈর্য, দক্ষতা এবং টেকনিক্যাল জ্ঞান। আশা
করি, ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করার উপায় নিয়ে লিখা এই আর্টিকেলটি পড়ে ইমেইল
মার্কেটিং সম্পর্কিত সকল বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারনা ও তথ্য পেয়েছেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url