টিন সার্টিফিকেট কি
টিন সার্টিফিকেট কি আমরা অনেকেই জানিনা। TIN সার্টিফিকেট (TIN = Taxpayer
Identification Number) হলো একটি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পরিচয় নম্বর, যা
একজন করদাতাকে সনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত আয়কর বিভাগের কাছে
আপনার পরিচয় প্রমাণের একটি উপায়। এটি একটি ডিজিটাল ডকুমেন্ট, যেখানে
আপনার নাম, ঠিকানা, এবং একটি অন্যতম ইউনিক নম্বর (TIN নম্বর) থাকে।
বাংলাদেশে এটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কর্তৃক প্রদান করা হয়।
অর্থাৎ, টিআইএন বা টিন সার্টিফিকেট একজন করদাতার পরিচয়পত্রের মতোই কাজ
করে। বর্তমানে এটি e-TIN (ইলেকট্রনিক TIN) নামে পরিচিত এবং অনলাইনের
মাধ্যমে সহজেই পাওয়া যায়। এই সার্টিফিকেটে করদাতার নাম, ঠিকানা ও একটি
নির্দিষ্ট TIN নম্বর থাকে, যা রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। TIN
সার্টিফিকেট সাধারণত ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ফ্রিল্যান্সার, ঠিকাদার, জমি বা
গাড়ির মালিক, এবং বিদেশগামী ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজনীয়।
এটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা, পাসপোর্ট রিনিউ, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, জমি
ক্রয়-বিক্রয় এবং টেন্ডার জমা দেওয়ার মতো অনেক কাজে দরকার হয়। TIN
সার্টিফিকেট পেতে হলে অনলাইনে
https://etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে
রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। আবেদনকারীকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ব্যবহার করে
একটি ফর্ম পূরণ করতে হয়। রেজিস্ট্রেশন শেষে একটি e-TIN নম্বর ও একটি
প্রিন্টযোগ্য সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
টিন সার্টিফিকেট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
টিন সার্টিফিকেট করার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। টিন
সার্টিফিকেট একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি, যা একজন ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের কর
শনাক্তকরণের জন্য ব্যবহার হয়। এটি সাধারণত ব্যবসা, চাকরি, ব্যাংকিং
কার্যক্রম, ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ, বা বিভিন্ন আর্থিক কার্যক্রমে প্রয়োজন
হয়। টিন সার্টিফিকেট করতে হলে প্রথমেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র প্রস্তুত
করতে হবে। নিচে আমি পয়েন্ট আকারে কাগজপত্রের তালিকা তুলে ধরেছি।
১. জাতীয় পরিচয়পত্রঃ টিন সার্টিফিকেট করার প্রধান শর্ত হলো আপনার
নিজস্ব জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা। টিন সার্টিফিকেট করার জন্য জাতীয়
পরিচয়পত্র (NID) থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাথমিক শর্ত। টিন
সার্টিফিকেট ছাড়া আপনি টিন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে পারবেন
না। এটি কর দপ্তর আপনার পরিচয় যাচাই করার জন্য ব্যবহার করে। যদি আপনার
NID না থাকে, তাহলে এটি প্রথমে সংগ্রহ করুন।
২. এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবিঃ এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি টিন
সার্টিফিকেট করার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ দস্তাবেজ হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও
অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে অনেক সময় ছবি সরাসরি আপলোড করতে হয় না, কিন্তু
যদি আপনি হাতে লিখিত ফরম পূরণ করে কর অঞ্চল অফিসে সরাসরি জমা দেন, তখন এক
কপি পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক হয়। ব্যবসার জন্য টিন
সার্টিফিকেট হলে মালিকের ছবিও প্রয়োজন হতে পারে।
৩. সক্রিয় মোবাইল নম্বরঃ মোবাইল নম্বর টিন সার্টিফিকেট করার সময়
একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসেবে ধরা হয়। এটি মূলত আপনার যোগাযোগের জন্য
ব্যবহার করা হয় এবং কর অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যেকোনো প্রয়োজনীয় তথ্য বা
নোটিশ পাঠানোর জন্য প্রয়োজন। নির্ধারিত OTP ও ভেরিফিকেশন কোড পাঠানোর জন্য
মোবাইল নম্বর গুরুত্বপূর্ণ। আবেদন করার পরেও মোবাইল নম্বর পরিবর্তন প্রয়োজন
হলে, সংশ্লিষ্ট কর অফিসে যোগাযোগ করে অথবা অনলাইনে আপডেট করতে হয়।
৪. ইউটিলিটি বিলের কপিঃ আপনার বাসার বর্তমান ঠিকানা যাচাই করতে
ইউটিলিটি বিলের একটি কপি জমা দিতে হতে পারে। ইউটিলিটি বিলের কপি টিন
সার্টিফিকেট করার সময় ঠিকানা যাচাইয়ের প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বিলটি সাম্প্রতিক ৩ মাসের মধ্যে হতে হবে এবং আপনার নামে অথবা পরিবারের কারো
নামে হলে ভালো হয়। যদিও এটি সব সময় বাধ্যতামূলক নয়, তবে কিছু নির্দিষ্ট
ক্ষেত্রে কর অঞ্চল বা NBR অফিস এটি চেয়ে নিতে পারে।
৫. ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্সঃ ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড
লাইসেন্স টিন সার্টিফিকেট করার অন্যতম প্রধান ও আবশ্যিক কাগজপত্র। যদি আপনি
ব্যবসায়ী হন, তাহলে আপনার ট্রেড লাইসেন্সের একটি কপি অবশ্যই দিতে হবে। এটি
আপনার ব্যবসার আইনগত অস্তিত্ব ও কার্যক্রমের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। এটি
প্রমাণ করে যে আপনি একটি বৈধ ও নিবন্ধিত ব্যবসা পরিচালনা করছেন। NBR
(জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) আপনার ব্যবসার ধরন ও অবস্থান নির্ধারণে এটি ব্যবহার
করে।।
৬. জন্মনিবন্ধন সনদঃ টিন সার্টিফিকেট করার সময় NID বাধ্যতামূলক
হলেও, কেউ যদি এখনো NID তৈরি না করে থাকে, তবে প্রাথমিকভাবে জন্মনিবন্ধন
সনদ জমা দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে। সাধারণত ১৮ বছরের নিচে
আবেদনকারী বা NID প্রক্রিয়াধীন থাকলে NBR কিছু ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন গ্রহণ
করে, তবে তা স্থায়ী নয়। পরবর্তীতে NID জমা দিতে হয়। এই কপি দিয়ে
স্থায়ীভাবে টিন সার্টিফিকেট পাওয়া কঠিন; এটি শুধুমাত্র অস্থায়ী বা প্রাথমিক
ভিত্তিতে বিবেচিত হয়।
৭. ব্যাংক স্টেটমেন্টঃ ব্যাংক স্টেটমেন্ট টিন সার্টিফিকেটের আবেদন
প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষত তখনই যখন
আবেদনকারী ইতিমধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দেন বা ব্যবসায়িক টিন (Business
TIN) এর জন্য আবেদন করছেন। যদি আপনি পূর্বে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন,
তাহলে তা যাচাই করতে NBR অনেক সময় ব্যাংক লেনদেনের বিবরণ দেখতে চায়।
ব্যবসার ক্ষেত্রে, প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে
হয়।
টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম
টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম একদম সহজ। টিন সার্টিফিকেট করতে হলে আপনাকে
প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি এখন পুরোপুরি ইলেকট্রনিক
হওয়ায় আপনার কাজ আরো সহজ হবে। টিন সার্টিফিকেট হচ্ছে কর প্রদানকারী
ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একটি বিশেষ শনাক্তকরণ নম্বর, যা কর সংক্রান্ত
কার্যক্রমে বাধ্যতামূলক। নিচে টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম ধাপে ধাপে
দেখানো হলোঃ
১. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করুনঃ টিন সার্টিফিকেট করার জন্য
সাধারণত জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অপরিহার্য। এছাড়াও আবেদনকারীর পাসপোর্ট
সাইজ ছবি, ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে ইউটিলিটি বিল বা বাসার লিজ এগ্রিমেন্ট,
এবং ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্সের কপি প্রয়োজন হতে পারে। ব্যক্তিগত
আবেদনকারীর ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং মোবাইল নম্বর যথেষ্ট।
ব্যবসায়ী হলে অতিরিক্ত কাগজপত্র দাখিল করতে হয়।
২. অনলাইনে বা সরাসরি আবেদন করুনঃ বাংলাদেশে টিন করার সবচেয়ে সহজ
ও দ্রুত উপায় হলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
https://etaxnbr.gov.bd এ গিয়ে
অনলাইনে আবেদন করা। এখানে “নতুন করদাতা নিবন্ধন” অপশন থেকে ফরম পূরণ করতে
হয়। অনলাইনে আবেদন করতে গেলে প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, মোবাইল
নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পেশা বা ব্যবসার ধরণ ইত্যাদি সঠিকভাবে
পূরণ করতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে ছবি আপলোড করতে হতে পারে।
৩. ফরম পূরণ ও যাচাইঃ টিন সার্টিফিকেট অনলাইনে আবেদন করার সময়
"ফরম পূরণ ও যাচাই" ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইন ফরম সাবমিশনের পর
আবেদনকারীর তথ্য যাচাইয়ের জন্য একটি ওটিপি (OTP) পাঠানো হয় মোবাইলে, যা
নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহার করতে হয়। সব তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করলে আবেদন
জমা দিতে পারবেন।
৪. অফিসে গিয়ে সরাসরি আবেদনঃ অনলাইনে আবেদন করার পাশাপাশি এখনো
অনেকেই অফিসে গিয়ে সরাসরি টিন সার্টিফিকেটের আবেদন করেন, বিশেষ করে যারা
ইন্টারনেট ব্যবহার করতে অস্বচ্ছন্দ বা অনলাইন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানেন
না। প্রথমে আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চল (Tax Circle/Zone)-এ যেতে
হবে। কর অঞ্চলের ঠিকানা আপনি অনলাইনে অথবা স্থানীয়ভাবে জেনে নিতে পারেন।
কর অফিস থেকে একটি নির্ধারিত টিন আবেদন ফরম পাওয়া যায়। সেখানে প্রয়োজনীয়
তথ্য পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে কাগজপত্রের হার্ডকপি সংযুক্ত করতে হয়।
সবকিছু ঠিকভাবে পূরণ করে কাগজপত্রসহ জমা দিলে কর অফিস একটি রিসিভ কপি
দিতে পারে, যা ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেওয়া উচিত। যাচাই-বাছাই শেষে কর অফিস
থেকে একটি TIN নম্বর ইস্যু করা হয়, যা আপনি কাগজে অথবা অনলাইনেও পরে
ডাউনলোড করতে পারেন।
৫. অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসিং ও টিন সার্টিফিকেট পাওয়াঃ অনলাইনে আবেদন
সফলভাবে করার পর সঙ্গে সঙ্গে একটি টিন নম্বর পাওয়া যায়, যা ডাউনলোড ও
প্রিন্ট করা যায়। অফিসে আবেদন করলে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে
প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার জন্য। টিন নম্বর পাওয়ার পরে আপনি নিয়মিত কর ফাইল
করতে এবং সরকারি সেবা নিতে পারবেন।
৬. মোবাইল নম্বর ও ইমেইল ব্যবহারঃ টিন সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য বা
আপডেট পেতে মোবাইল নম্বর ও ইমেইল সঠিক থাকা জরুরি। রিটার্ন জমা দেওয়ার
সময়সীমা, জরিমানা নোটিশ, বা কর পরিশোধের স্মারক মোবাইল ও ইমেইলের মাধ্যমে
পাঠানো হয়। মোবাইল নম্বর ও ইমেইল অবশ্যই আপনার নিজস্ব ও সচল হওয়া উচিত।
প্রয়োজনে এগুলো পরিবর্তন করার জন্য কর অফিসে যোগাযোগ করতে হয়।
টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার নিয়ম
টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার নিয়ম খুব সহজ একটি প্রক্রিয়া, যা আপনি ঘরে
বসেই অনলাইনে করতে পারেন। ইন্টারনেটের সহায়তায় এখনকার সময়ে টিন সার্টিফিকেট
ডাউনলোড করার প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)
এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি যেকোনো সময় আপনার ই-টিআইএন (e-TIN)
সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। নিচে ধাপে ধাপে টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড
করার নিয়ম বর্ণনা করা হলো।
ধাপ-১ঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশঃ প্রথমে আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে
যেকোনো ব্রাউজার, যেমন Chrome, Firefox ওপেন করুন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের
ই-টিআইএন সিস্টেমের ওয়েবসাইট
https://etaxnbr.gov.bd লিখে প্রবেশ
করুন। এই লিংকে ক্লিক করার পরে অফিশিয়াল National Board of Revenue (NBR)
ওয়েবসাইটটি চলে আসবে।
ধাপ-২ঃ লগইন করুনঃ ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর উপরের ডান পাশে “Login” বা
“লগইন” অপশনটি পাবেন। সেখানে ক্লিক করে আপনার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড
দিয়ে লগইন করুন। ইউজার আইডি আপনার ই-টিআইএন নম্বর, পাসওয়ার্ড
রেজিস্ট্রেশনের সময় নির্ধারিত পাসওয়ার্ড। যদি পাসওয়ার্ড ভুলে যান, তাহলে
“Forgot Password” অপশন থেকে পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
ধাপ-৩ঃ ড্যাশবোর্ডে যানঃ লগইন করার পর আপনি নিজের প্রোফাইল বা
ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করবেন। এখান থেকে আপনি আপনার টিন সার্টিফিকেট, প্রোফাইল
তথ্য, রিটার্ন হিস্টোরি ইত্যাদি দেখতে পারবেন।
ধাপ-৪ঃ সার্টিফিকেট ডাউনলোড অপশন নির্বাচনঃ ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করার
পর “Download TIN Certificate” বা “e-TIN Certificate” নামে একটি অপশন
দেখতে পাবেন। এতে ক্লিক করলে একটি নতুন পৃষ্ঠায় নিয়ে যাবে।
ধাপ-৫ঃ সার্টিফিকেট যাচাই এবং ডাউনলোডঃ এই পৃষ্ঠায় আপনার নাম,
ই-টিআইএন নম্বর, জন্মতারিখ ইত্যাদি দেখাবে। যাচাই করে “Download” বা
“Print” বাটনে ক্লিক করুন। আপনি চাইলে এটি PDF আকারে সংরক্ষণ করতে পারেন
অথবা সরাসরি প্রিন্ট করে হার্ডকপি নিতে পারেন।
টিন নাম্বার দিয়ে টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড
টিন নাম্বার দিয়ে টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন সহজেই। টিন নাম্বার
ব্যবহার করে অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ এবং
সময় সাশ্রয়ী। যারা ইতোমধ্যে ই-টিন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন এবং একটি বৈধ
TIN নাম্বার পেয়েছেন, তারা নিজেই সরকারি ওয়েবসাইটে গিয়ে এই সার্টিফিকেট
ডাউনলোড করতে পারেন। নিচে ধাপে ধাপে টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার নিয়ম
বর্ণনা করা হলো।
ধাপ ১ঃ সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুনঃ প্রথমে কম্পিউটার বা
স্মার্টফোনের যেকোনো ব্রাউজারে গিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অফিসিয়াল ই-টিআইএন
সিস্টেম ওয়েবসাইটে
https://etaxnbr.gov.bd প্রবেশ করুন।
ধাপ ২ঃ লগইন পেইজে যানঃ ওয়েবসাইটের হোমপেজে প্রবেশ করার পর উপরের দিকে
"Login" বা "লগইন" বোতামে ক্লিক করুন। এতে আপনাকে লগইন পেইজে নিয়ে যাবে।
ধাপ ৩ঃ ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিনঃ লগইন অপশনে ক্লিক করার পরে আপনাকে
সেখানে আপনার ‘User ID’ এবং ‘Password’ দিয়ে লগইন করতে হবে। লগইন বাটনে প্রেস
করার পর এখানে আপনার ইউজারনেম হিসেবে আপনার মোবাইল নাম্বারটি প্রদান করুন এবং
আপনার পাসওয়ার্ড প্রদান করুন। সবকিছু সঠিকভাবে পূরণ করার পর "Login" বাটনে
ক্লিক করুন।
ধাপ ৪ঃ প্রোফাইলে প্রবেশ করুনঃ লগইন সফল হলে আপনি নিজের ই-টিন
প্রোফাইল বা ড্যাশবোর্ড-এ চলে যাবেন। এখানে আপনি বেশ কয়েকটি অপশন দেখতে
পাবেন। সেখান থেকে ‘General Information’ সেকশনে প্রবেশ করতে হবে। তারপরে
এখানে আপনার টিন নাম্বার টি প্রদান করে দিতে হবে।
ধাপ ৫ঃ টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড অপশন নির্বাচনঃ তথ্যগুলো দেওয়া
সম্পন্ন হয়ে গেলে আপনাকে উপরে দেওয়া ‘Check’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। চেক
বাটনে ক্লিক করে দেওয়ার পরে দেখবেন সাথে সাথে আপনার টিন সার্টিফিকেটের
তথ্যগুলো চলে এসেছে।
ধাপ ৬ঃ সার্টিফিকেট যাচাই ও প্রিন্টঃ এখান থেকে আপনি টিন সার্টিফিকেট
সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য গুলো জানতে পারবেন। আপনার নাম, টিন নাম্বার, ঠিকানা,
ইস্যু তারিখ ইত্যাদি দেখানো হবে। সবকিছু সঠিক থাকলে “Download” বা “Print”
বাটনে ক্লিক করুন। আপনি চাইলে সার্টিফিকেটটি PDF আকারে সংরক্ষণ করতে পারেন।
চাইলে সরাসরি প্রিন্ট করে হার্ডকপি সংগ্রহ করাও সম্ভব।
টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোডের সময় প্রয়োজনীয় তথ্য
টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার সময় কিছু নির্দিষ্ট তথ্যের প্রয়োজন হয় যা
আপনার পরিচয় নিশ্চিত করতে এবং সঠিক প্রোফাইলে অ্যাক্সেস পেতে সহায়তা করে।
এই তথ্যগুলো সঠিকভাবে জানা ও ব্যবহার করা জরুরি, যাতে আপনি সহজে জাতীয়
রাজস্ব বোর্ড (NBR) এর ওয়েবসাইট থেকে আপনার ই-টিন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে
পারেন। নিচে টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোডের সময় প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো
বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলোঃ
১. ই-টিন নাম্বারঃ ই-টিন নাম্বার হলো আপনার করদাতা পরিচয়ের অন্যতম
প্রধান উপাদান, যা টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোডসহ কর সংক্রান্ত সব কার্যক্রমে
প্রয়োজন হয়। এটি একটি ১২ সংখ্যার ইউনিক নম্বর, যা টিন রেজিস্ট্রেশনের সময়
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) আপনাকে প্রদান করে। এটি প্রতিটি করদাতার জন্য
আলাদা এবং সারাজীবনের জন্য প্রযোজ্য থাকে (যদি বাতিল বা পরিবর্তন না হয়)।
ই-টিন নাম্বারই মূলত আপনার "User ID" হিসেবেও ব্যবহৃত হয় ই-টিআইএন পোর্টালে
লগইন করার সময়।
২. পাসওয়ার্ডঃ পাসওয়ার্ড হচ্ছে ই-টিন পোর্টালে লগইনের জন্য
অপরিহার্য একটি তথ্য, যা আপনি রেজিস্ট্রেশনের সময় নিজে নির্ধারণ করেন। এটি
ছাড়া আপনি আপনার টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন না। এই পাসওয়ার্ড
দিয়েই আপনি ভবিষ্যতে কর রিটার্ন ফাইল করা, প্রোফাইল আপডেট, বা তথ্য যাচাই
করতে পারবেন। যদি আপনি পাসওয়ার্ড ভুলে যান, তাহলে “Forgot Password” অপশনে
গিয়ে মোবাইল OTP দিয়ে নতুন পাসওয়ার্ড সেট করতে পারবেন।
৩. মোবাইল নম্বরঃ আপনার রেজিস্ট্রেশনকৃত সক্রিয় মোবাইল নম্বর
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নম্বরে OTP (One Time Password) পাঠানো হয়, যা
দিয়ে আপনার পরিচয় যাচাই করা হয়। ভুল মোবাইল নম্বর থাকলে পাসওয়ার্ড রিসেট বা
লগইন করা সম্ভব হয় না। ই-টিন অ্যাকাউন্টের সকল প্রকার যাচাই, রিসেট বা
প্রোফাইল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মোবাইল ভেরিফিকেশন অপরিহার্য। এটা নিশ্চিত
করে যে শুধুমাত্র আসল ব্যবহারকারীই অ্যাক্সেস পাচ্ছেন। কর রিটার্ন জমা
দেওয়ার সময়সীমা, নতুন কর নীতিমালা, বা জরিমানার বার্তা এই নম্বরে SMS-এর
মাধ্যমে পাঠানো হয়।
৪. জন্মতারিখঃ টিন রেজিস্ট্রেশনের সময় যে জন্মতারিখটি আপনি
দিয়েছিলেন, সেটিই আপনার প্রোফাইলে সংরক্ষিত থাকে। অনেক সময় লগইনের পর বা
প্রোফাইল যাচাইয়ের সময় আপনার জন্মতারিখ দিতে হতে পারে। কখনো কখনো টিন
সার্টিফিকেট প্রিন্ট করার আগে সিস্টেম আপনার জন্মতারিখ এবং জাতীয়
পরিচয়পত্রের তথ্যের সাথে মিলিয়ে নেয়। এটি অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী
সঠিক হতে হবে। ভুল তারিখ দিলে প্রোফাইল এক্সেস বন্ধ হতে পারে।
৫. ক্যাপচা কোডঃ ক্যাপচা কোড (Captcha Code) হলো একটি নিরাপত্তা
যাচাই ব্যবস্থা যা নিশ্চিত করে যে আপনি একজন মানুষ, কোনো স্বয়ংক্রিয় বট বা
স্ক্রিপ্ট নয়। ই-টিন সার্টিফিকেট সিস্টেমে লগইন করার সময় এই ক্যাপচা কোড
বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হয়। এটি সাধারণত ছবি আকারে একটি কোড, যাতে থাকে
এলোমেলো অক্ষর (বড় হাতের বা ছোট হাতের) ও সংখ্যা। এটি সঠিকভাবে টাইপ করতে
হয়, তা না হলে লগইন হবে না।
৬. ইমেইলঃ ইমেইল ঠিকানা ই-টিন সার্টিফিকেট ব্যবস্থায় একটি অতিরিক্ত,
তবে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ও নিরাপত্তা উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। টিন
রেজিস্ট্রেশন বা রিটার্ন দাখিলের পর অনেক সময় কর অফিস থেকে প্রাসঙ্গিক
নোটিশ, অনুস্মারক বা তথ্যাবলী ইমেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয়। আপনি যদি আপনার
পাসওয়ার্ড ভুলে যান এবং OTP পেতে ব্যর্থ হন, তাহলে কিছু ক্ষেত্রে রিসেট
লিংক ইমেইলে পাঠানো হয়। এতে আপনি নতুন পাসওয়ার্ড সেট করতে পারেন।
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম খুবই সহজ। আপনি ঘরে বসেই
অনলাইনে কিভাবে টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করবেন সেই বিষয়ে ধাপে ধাপে
জানাবো। বর্তমানে বাংলাদেশে ই-টিন সার্টিফিকেট অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের
মাধ্যমে খুব দ্রুত ও সহজেই পাওয়া যায়, যার জন্য কোথাও যেতে হয় না। চলুন
তাহলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট
রেজিস্ট্রেশন করবেনঃ
প্রথম ধাপঃ একাউন্ট রেজিস্ট্রেশনঃ টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন এর
প্রথম ধাপে আপনাকে টিন সার্টিফিকেট এর একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এর
জন্য প্রথমেই আপনাকে যেকোনো ব্রাউজার (Chrome, Firefox, Safari) থেকে
https://etaxnbr.gov.bd
এই ঠিকানায় প্রবেশ করতে হবে। এটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) ই-টিন
পোর্টাল। এখানে প্রবেশ করার পর দেখবেন মেনুবারে বেশ কিছু অপশন দেখাবে।
এসব অপশন হতে রেজিস্টার নামে যে অপশনটি রয়েছে এই অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে।
এই অপশনে ক্লিক করলে একটি নতুন পেজ আপনার সামনে আসবে। যেটি মূলত একটি
সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন ফরম। এই ফরমে আপনাকে লিগ্যাল ও সঠিক তথ্য প্রদান
করতে হবে।
-
প্রথমত আপনি কোন নামে আপনার একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে চান সেটা ইউজার
নেইম হিসেবে লিখতে হবে। আর এখানে আপনাকে অন্তত ৮ ক্যারেক্টারের একটি
নাম দিতে হবে।
-
ইউজারনেম দেওয়ার পর আপনাকে নিচে একটি পাসওয়ার্ড দিতে হবে।
পাসওয়ার্ডটি কমপক্ষে ৮ অক্ষরের হতে হবে এবং তাতে বড় হাতের অক্ষর, ছোট
হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং একটি বিশেষ চিহ্ন (@, #, $, %) থাকতে হবে।
পাসওয়ার্ডটি শক্তিশালী করে দিলে ভালো হয়। সেটি আপনার জন্য একটা আলাদা
নিরাপত্তা বহন করবে।
-
আপনাকে এই ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ডটি ভবিষ্যতে লগইনের জন্য
অবশ্যই মনে রাখতে হবে। প্রয়োজনে এটি কোথাও লিখে রাখুন।
-
এরপর দেখবেন Retype Password বিদ্যমান রয়েছে। এখানে আপনি প্রথমে যে
পাসওয়ার্ডটি লিখেছেন সেই পাসওয়ার্ডটি পুনরায় এখানে লিখে দিতে হবে।
-
তারপরে Security Question নামক অপশন থেকে পাসওয়ার্ড মনে না থাকলে
উত্তর দিয়ে পাসওয়ার্ড রিকভার করতে পারবেন।
-
এজন্য আপনার পছন্দমত যেকোনো একটি প্রশ্ন এখানে লিখুন এবং আপনার পছন্দমত
একটি উত্তর নিচের বক্সে বসিয়ে দিন। তাহলে যখন আপনি পাসওয়ার্ড ভুলে
যাবেন তাহলে এই কোশ্চিনের উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার পাসওয়ার্ড
রিকভার করতে পারবেন খুব সহজেই।
-
এরপর কান্ট্রি বাংলাদেশ দেওয়া থাকবে। বাংলাদেশ দেওয়া না থাকলে এটি
বাংলাদেশ সিলেক্ট করে দিতে হবে।
-
এরপর নিচে দেখবেন মোবাইল নাম্বারের অপশন রয়েছে। এখানে আপনার একটি সচল
মোবাইল নাম্বার দিতে হবে।
-
এরপর দেখবেন ইমেইল এড্রেস এর অপশন রয়েছে। আপনার ইমেইল এড্রেস এখানে
বসিয়ে দিন। না দিলেও সমস্যা নেই কারণ এটি বাধ্যতামূলক নয়।
-
এরপর সর্বশেষ একটি ক্যাপচা দেওয়া থাকবে। এই ক্যাপচাটি সঠিকভাবে পূরণ
করে নিচের বক্সে বসে দিতে হবে।
-
তারপরে নিচে Register নামক একটি অপশন আছে সেখানে ক্লিক করে একাউন্ট
রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে।
-
এর পরের ধাপে আপনাকে এক্টিভেশন কোড ভেরিফিকেশন করতে হবে অর্থাৎ আপনি যে
মোবাইল নম্বর দিয়েছেন সেই মোবাইল নম্বরে একটি কোড চলে যাবে। এই কোডটি
আপনাকে পরের পেজে বসিয়ে দিতে হবে।
-
কোড সঠিকভাবে প্রদান করে Activate বাটনে ক্লিক করলে একাউন্ট তৈরি হয়ে
যাবে।
দ্বিতীয় ধাপঃ আবেদন ফরম পূরণ করাঃ আপনার যখন টিন সার্টিফিকেট
অ্যাকাউন্ট তৈরি হবে তখন আপনার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনার
একাউন্টে লগইন করুন। লগইন করার পর আপনি বেশ কিছু অপশন দেখতে পাবেন। এখান
থেকে TIN Application অপশনে ক্লিক করতে হবে। TIN Application অপশনে ক্লিক
করার পর আপনাকে পরের পেজে নিয়ে যাওয়া হবে।
-
এই পেজে প্রথমেই দেখবেন Taxpayer’s Status অপশন রয়েছে। আপনি যদি
বাংলাদেশী নাগরিক হোন তাহলে Individual Bangladeshi সিলেক্ট করতে হবে।
আর আপনি বাংলাদেশি না হলে তখন আপনার ক্ষেত্র অনুযায়ী অপশন বেছে নিতে
হবে।
-
আপনার যদি NID থাকে তাহলে Having NID অপশন বাছাই করে আপনার এনআইডি
নাম্বার দিতে হবে। আর যদি এনআইডি না থাকে অথবা আপনি যদি ১৮ বছরের নিচে
হোন তাহলে আপনাকে Minor/ Dependent অপশন বাছাই করতে হবে।
-
এরপর নিচে আপনাকে আপনার আয়ের উৎস নির্বাচন করতে হবে। আপনি যদি
চাকরিজীবী হোন তাহলে আপনাকে Service অপশন বাছাই করতে হবে। অন্য কোন
পেশাজীবী হয়ে থাকলে বা ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী, চার্টার্ড ইত্যাদি
হলে Profession অপশন সিলেক্ট করতে হবে।
-
আপনার যদি কোন ব্যবসা থেকে থাকে তাহলে আপনাকে এখানে Business নির্বাচন
করতে হবে।এরপর Go to Next বাটনে ক্লিক করতে হবে।
-
পরের ধাপে আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা বসিয়ে দিতে হবে। এই
পেইজে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। এই
তথ্যগুলো সঠিক ভাবে ইংরেজিতে পূরণ করে দিতে হবে। একটা বিষয় অবশ্যই
খেয়াল রাখা জরুরি সেটা হচ্ছে এই পেজে আপনাকে সমস্ত তথ্য নিজের এনআইডি
অনুযায়ী প্রদান করতে হবে।
-
এরপর নিচের অংশে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা একই হলে শুধু “Same as
Address” এ টিক দিয়ে Go to Next বাটনে ক্লিক করুন।
-
এরপরে নিচে দেখবেন ‘I hereby affirm that all information given above
is correct and complete and I have not taken any TIN‘ এরকম একটি লেখা
থাকবে। এই লেখার পাশে টিক চিহ্ন দিতে হবে।
-
এরপর Submit Application বাটনে ক্লিক করে অনলাইনে ই-টিন সার্টিফিকেট
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।
-
এই বাটনে ক্লিক করলে আপনার টিন সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে যাবে এবং পরের
পেজে আপনার সমস্ত তথ্য দেখা যাবে।
টিন সার্টিফিকেট পেতে কতদিন সময় লাগে
টিন সার্টিফিকেট পেতে কতদিন সময় লাগে এ সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করেন। টিন
সার্টিফিকেট পেতে সাধারণত খুব বেশি সময় লাগে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)
এর ডিজিটালাইজেশন উদ্যোগের ফলে এখন ই-টিন রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ অনলাইনে
সম্পন্ন করা যায় এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে ই-টিন সার্টিফিকেট পাওয়া সম্ভব।
সময়কাল নির্ভর করে আপনি অনলাইন পদ্ধতিতে করছেন নাকি সরাসরি কর অফিসে গিয়ে
আবেদন করছেন।
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট পেতে সময় লাগে যদি আপনি
etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে ই-টিন রেজিস্ট্রেশন করেন, তাহলে সঠিক তথ্য
দিয়ে ফরম পূরণ করলে এবং মোবাইলে OTP ভেরিফিকেশন সঠিকভাবে সম্পন্ন করলে
মাত্র ৫-১০ মিনিটেই আপনার টিন সার্টিফিকেট পেয়ে যাবেন।অনলাইন সিস্টেমটি
স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় মানুষের হস্তক্ষেপ নেই এবং প্রক্রিয়াটি তাৎক্ষণিকভাবে
সম্পন্ন হয়।
আপনি রেজিস্ট্রেশন শেষ করেই ড্যাশবোর্ড থেকে সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে
পারবেন। যদি সরাসরি কর অফিসে গিয়ে হাতে ফরম পূরণ করে আবেদন করেন, তাহলে
পুরো প্রক্রিয়াটি তুলনামূলকভাবে ধীর হতে পারে। সাধারণত কর অঞ্চল অফিসে
আবেদনপত্র পূরণ ও জমা, কাগজপত্র যাচাই-বাছাই, প্রয়োজন অনুযায়ী সাক্ষাৎকার
বা তথ্য স্পষ্টকরণ, রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে অফিস থেকে টিন নম্বর
প্রদান।
এই পুরো প্রক্রিয়ায় সময় লাগে সাধারণত ২-৩ কর্মদিবস, তবে কিছু ক্ষেত্রে
আরও বেশি সময় লাগতে পারে, যেমন: যদি কাগজপত্রে সমস্যা থাকে, কর অফিসে
জনবল সংকট বা অতিরিক্ত ভিড় থাকে, অতিরিক্ত যাচাই-বাছাই প্রয়োজন হয়। সময়
নির্ভর করে যেসব বিষয়ের উপরঃ
-
তথ্যের সঠিকতাঃ যদি আপনি ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য দেন,
তাহলে সিস্টেম তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করবে না। এতে সময় বাড়তে পারে।
-
OTP যাচাইঃ মোবাইলে OTP না পৌঁছালে বা ভুল OTP দিলে
প্রক্রিয়া থেমে যায়, ফলে আবার করতে হয়।
-
ইন্টারনেট সংযোগ ও প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতাঃ অনেকে
নিজে করতে না পারলে অন্যের সাহায্যে করলে সময় লাগতে পারে।
-
কর অফিসের কার্যক্রমঃ সরাসরি কর অফিসে গেলে কর্মকর্তাদের
যাচাই বা সিস্টেমে তথ্য এন্ট্রির ওপর ভিত্তি করে সময় নির্ধারিত হয়।
টিন সার্টিফিকেট কেনো দরকার
টিন সার্টিফিকেট কেনো দরকার এটি অনেকেই জানতে চান। টিন সার্টিফিকেট একটি
গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) প্রদত্ত একটি ইউনিক
নম্বরের প্রমাণস্বরূপ ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত একটি করদাতার পরিচয়পত্র, যা
বিভিন্ন সরকারিভাবে পরিচালিত আর্থিক বা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে অপরিহার্য।
ব্যক্তি হোন বা ব্যবসায়ী, আয় হোক কম বা বেশি টিন থাকলে আপনি অনেক ধরনের
সুবিধা পাবেন। নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
১. আয়কর দাখিলের জন্য অপরিহার্যঃ টিন সার্টিফিকেট হলো বাংলাদেশের
কর ব্যবস্থায় একটি মৌলিক উপাদান, যার মাধ্যমে করদাতার পরিচয় নিশ্চিত করা
হয়। বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তির বার্ষিক আয়
নির্দিষ্ট সীমার উপরে, তাদের প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন (Income Tax Return)
জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই আয়কর দাখিলের পূর্বশর্ত হলো, আপনার টিন নাম্বার
(TIN Number) থাকতে হবে। আর এই নম্বরটি আপনি টিন সার্টিফিকেট পাওয়ার
মাধ্যমে নিশ্চিত করেন।
২. শূন্য রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রেও টিন আবশ্যকঃ এমন অনেক ব্যক্তি
আছেন যাদের আয় এখনও করযোগ্য সীমার নিচে। কিন্তু ভবিষ্যতের বিভিন্ন প্রয়োজনে
যেমন পাসপোর্ট আবেদন, ব্যাংক লোন, ব্যবসার লাইসেন্স ইত্যাদির সময় আয়কর
রিটার্নের কপি চাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে আপনি “শূন্য রিটার্ন” (যেখানে আপনার
কোনো করযোগ্য আয় নেই) দাখিল করতে পারেন, যার জন্য টিন থাকা বাধ্যতামূলক।
৩. পাসপোর্ট করার সময় টিন আবশ্যকঃ বর্তমানে বাংলাদেশে নতুন পাসপোর্ট
(ই-পাসপোর্ট) করার সময় টিন সার্টিফিকেট যুক্ত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও
প্রয়োজনীয় দলিল হিসেবে গণ্য হচ্ছে, বিশেষত ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যেসব
আবেদনকারীর নিজস্ব আয় রয়েছে। এটি মূলত আবেদনকারীর আর্থিক সক্ষমতা ও পরিচয়
নিশ্চিত করার একটি উপায়। টিন থাকা মানে আপনি একজন করদাতা বা কর সচেতন
নাগরিক। এটি দেখায় আপনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী এবং বৈধ পথে আয় করেন।
৪. ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় প্রয়োজনঃ বাংলাদেশে যেকোনো ব্যবসা শুরু
করার আগে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। তবে ট্রেড লাইসেন্সের পাশাপাশি টিন
সার্টিফিকেটও বাধ্যতামূলক, কারণ এটি ব্যবসার কর আইডেন্টিটি হিসেবে বিবেচিত
হয়। যেসব ব্যবসায় ভ্যাট (VAT) আদায়ের প্রয়োজন হয়, সেখানে ভ্যাট
রেজিস্ট্রেশন পেতে গেলে টিন নাম্বার দিতে হয়। NBR-এর অধীনে ভ্যাট ও ট্যাক্স
উভয় ক্ষেত্রেই এই নম্বর গুরুত্বপূর্ণ। ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, আমদানি-রপ্তানি
লাইসেন্স, ও বিভিন্ন সরকারি দরপত্রে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও টিন অপরিহার্য।
৫. ব্যাংকিং ও আর্থিক লেনদেনেঃ অনেক ব্যাংকেই এখন কারেন্ট
অ্যাকাউন্ট বা ব্যবসায়িক হিসাব খোলার সময় টিন সার্টিফিকেট চাওয়া হয়। এটি
নিশ্চিত করে যে অ্যাকাউন্টধারী ব্যক্তি একজন বৈধ আয়কারী ও করদাতা। যারা
অনলাইনে কাজ করে আয় করছেন, যেমন ফ্রিল্যান্সিং, ইউটিউব, অ্যাফিলিয়েট
মার্কেটিং ইত্যাদি, তাদের আয়ের বৈধতা ও কর পরিশোধের জন্য টিন থাকা আবশ্যক।
বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাণিজ্যিক ব্যাংক অনেক সময় অনলাইন আয় সংক্রান্ত ফান্ড
গ্রহণের আগে টিন চায়। আয় বেশি হলে কর রিটার্ন দাখিলেও এটি অপরিহার্য।
৬. জমি-জায়গা ক্রয়-বিক্রয়ে বাধ্যতামূলকঃ বর্তমানে বাংলাদেশে
রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল নিবন্ধনের সময় উভয় পক্ষের (ক্রেতা ও বিক্রেতা) টিন
সার্টিফিকেট চাওয়া হয়। এটি না থাকলে দলিল গ্রহণ বা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া
সম্পন্ন হয় না। জমি বা ফ্ল্যাট বিক্রয় একটি বড় আকারের আর্থিক লেনদেন। এই
লেনদেন থেকে সরকারকে যথাযথ স্ট্যাম্প ডিউটি, রেজিস্ট্রেশন ফি ও আয়কর আদায়
করতে হয়। টিন নম্বর থাকলে কর কর্তন ও হিসাব স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়। সরকার
নিশ্চিত হতে চায় যে জমি বা ফ্ল্যাট কেনার পেছনে যে টাকা ব্যবহৃত হচ্ছে, তা
বৈধ উৎস থেকে এসেছে এবং ক্রেতা কর ব্যবস্থার আওতায় আছেন।
৭. সরকারি চাকরি ও পেনশনেঃ বিভিন্ন উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরিতে
(যেমন প্রশাসন, ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় বা অর্থ মন্ত্রণালয়) আবেদনের সময় টিন
নম্বর চাওয়া হয়। বড় কর্পোরেট কোম্পানি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগের
সময় প্রার্থীর ট্যাক্স আইডেন্টিটি যাচাই করে। টিন থাকলে আবেদনকারীকে
বিশ্বস্ত ও দায়িত্বশীল বলে ধরা হয়। চাকরির সময় বেতনভিত্তিক উৎসে কর (AIT)
কর্তন হয়। এই কর কর্তনের হিসাব এবং রিটার্ন দাখিলের জন্য টিন থাকা আবশ্যক।
তাছাড়া পেনশন তোলার ক্ষেত্রেও অনেক সময় কর সংক্রান্ত বিষয়ে টিন চাওয়া হতে
পারে।
৮. বৈদেশিক লেনদেন ও ভ্রমণে সুবিধাঃ বৈদেশিক লেনদেন ও আন্তর্জাতিক
ভ্রমণের ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর
দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি শুধু করদাতার পরিচয়পত্র নয়, বরং
আন্তর্জাতিক লেনদেন ও চলাফেরায় আর্থিক স্বচ্ছতার একটি চিহ্ন। যারা বিদেশে
টাকা পাঠান বা বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করেন (যেমন: রেমিটেন্স, ফ্রিল্যান্স
আয়), তাদের ক্ষেত্রে টিন নম্বর থাকলে আর্থিক লেনদেন বেশি স্বচ্ছ ও কর
সুশাসনের মধ্যে থাকে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রেও আর্থিক স্বচ্ছতা
প্রমাণে টিন গুরুত্বপূর্ণ।
৯. আইনগত দায়িত্ব পালনে সহায়কঃ টিন সার্টিফিকেট থাকা শুধু একটি
কাগজের দলিল নয়, বরং এটি একজন নাগরিকের আইন মেনে চলা ও দেশের প্রতি
দায়বদ্ধতা পালনের একটি প্রমাণ। আয়কর প্রদান এবং কর ব্যবস্থার আওতায় আসা
প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব। দেশের উন্নয়ন
কর্মকাণ্ড—যেমন অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা—এসবের ব্যয় সরকার
বহন করে কর আদায়ের মাধ্যমে। আপনি টিনের মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় যুক্ত হয়ে
সরকারের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করেন।
উপরোক্ত ক্ষেত্রে যদি আপনার আয়ের পরিমাণ করসীমার বাহিরে থাকে তবুও আপনাকে
টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তা না হলে আপনার এসব আয় কালো টাকা
হিসেবে গণ্য করা হবে এতে করে বাংলাদেশ আইন অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ
আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টিন সার্টিফিকেটের সুবিধা ও অসুবিধা
টিন সার্টিফিকেটের সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে অনেক। টিন সার্টিফিকেট
বাংলাদেশের কর ব্যবস্থায় এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বহুমুখী দলিল। এটি
মূলত একজন ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও করদাতা পরিচয় নিশ্চিত করে।
যেকোনো বৈধ আয়, ব্যবসা, সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, বিদেশ ভ্রমণ, ব্যাংক
লেনদেনসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই এখন টিন সার্টিফিকেট অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
তবে এই প্রক্রিয়ায় কিছু সুবিধা থাকলেও কিছু অসুবিধাও রয়েছে। নিচে
বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

টিন সার্টিফিকেটের সুবিধাঃ
-
টিন সার্টিফিকেট ছাড়া বাংলাদেশে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যায় না।
যাদের বার্ষিক আয় করযোগ্য সীমার ওপরে, তাদের জন্য টিন থাকা
আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। এমনকি যাদের আয় কম, তারা ভবিষ্যতের প্রয়োজন
মেটাতে "শূন্য রিটার্ন" জমা দিতে পারেন, যার জন্যও টিন প্রয়োজন।
-
ব্যাংকে চালু হিসাব (current account) খোলা, লোন আবেদন, সঞ্চয়পত্র
কেনা বা অনলাইন পেমেন্ট গ্রহণে টিন নম্বর থাকা বাড়তি সুবিধা দেয়।
অনেক ব্যাংকে বড় অঙ্কের ট্রানজেকশনে বা ব্যবসায়িক হিসাবের ক্ষেত্রে
টিন বাধ্যতামূলক।
-
কোনো ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে, ট্রেড লাইসেন্সের পাশাপাশি
টিন সার্টিফিকেট আবশ্যক। ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, আমদানি-রপ্তানি
লাইসেন্স, ই-কমার্স বা স্টার্টআপ শুরু করতেও এটি প্রয়োজন হয়।
সরকারি টেন্ডারে অংশ নিতেও টিন বাধ্যতামূলক।
-
বর্তমানে ই-পাসপোর্ট আবেদনকারীদের জন্য টিন নম্বর অনেক ক্ষেত্রেই
প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে যাদের বয়স ১৮ বছরের ওপরে এবং নিজ আয়ে
পাসপোর্ট করছেন। ভিসা আবেদনেও টিন দিয়ে দেওয়া আয়কর রিটার্ন অনেক
দূতাবাসে একটি গ্রহণযোগ্য দলিল।
-
দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের টিন নম্বর থাকা
আবশ্যক। এটি রাজস্ব আদায়ে সরকারের একটি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। টিন
ছাড়া জমি রেজিস্ট্রি করাও এখন প্রায় অসম্ভব।
-
অনলাইনে আয় (যেমন ইউটিউব, ফাইভার, আপওয়ার্ক) গ্রহণে ব্যাংক বা
পেমেন্ট গেটওয়ে অনেক সময় টিন নম্বর চায়। এটি প্রমাণ করে যে আয় বৈধ
এবং আয়কর রিটার্নের মাধ্যমে সরকারের কাছে হিসাব করা যাচ্ছে।
-
টিন নম্বর থাকার অর্থ আপনি কর ব্যবস্থার আওতায় রয়েছেন এবং আপনার আয়
স্বচ্ছভাবে সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতে আপনি আইনি ঝামেলা
থেকে মুক্ত থাকেন এবং ভবিষ্যতের যেকোনো আর্থিক বিরোধে এটি সহায়ক
হতে পারে।
-
ব্যবসায়িক প্রণোদনা, কৃষি ঋণ, স্টার্টআপ ফান্ড, বা শিল্প স্থাপনার
জন্য সরকারি সহযোগিতা চাইলে টিন থাকা বাধ্যতামূলক। এটি আপনাকে একজন
দায়িত্বশীল নাগরিক ও উদ্যোক্তা হিসেবে তুলে ধরে।
-
টিন নম্বর না থাকলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে (যেমন ব্যাংকে এফডিআর,
সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি) উৎসে কর বেশি কেটে নেওয়া হয়। টিন থাকলে কর
হ্রাস পায়, ফলে সঞ্চয়ে লাভ বেশি হয়।
-
সরকারি বা কর্পোরেট চাকরিতে টিন নম্বর থাকলে চাকরি প্রাপ্তিতে
সুবিধা পাওয়া যায়। পেনশনের সময় আয়কর রিটার্ন ও আর্থিক স্বচ্ছতার
প্রমাণ হিসেবে এটি কার্যকর হয়।
টিন সার্টিফিকেটের অসুবিধাঃ
-
টিন নেওয়ার পর আপনি আয়কর ব্যবস্থার আওতায় আসেন। যদি আপনার আয়
করযোগ্য হয়, তাহলে রিটার্ন জমা দিতে হয় এবং প্রতি বছর কর পরিশোধ
করতে হয়, যা অনেকে ঝামেলা মনে করেন।
-
অনেক নতুন টিনধারী রিটার্ন ফর্ম পূরণে সমস্যায় পড়েন। প্রয়োজনীয়
হিসাব, ইনকাম প্রুফ, খরচের বিবরণী না থাকলে ভুল রিটার্ন জমা দিয়ে
জরিমানা বা নোটিশ পেতে পারেন।
-
টিন রেজিস্ট্রেশনের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর,
ঠিকানা, এমনকি ব্যাংক হিসাব সম্পর্কিত তথ্য দিতে হয়। অনেকের কাছে
এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তার হুমকি বলে মনে হতে পারে।
-
টিন থাকার পরও কেউ যদি সময়মতো রিটার্ন না দেন, তাহলে আয়কর অধ্যাদেশ
অনুযায়ী জরিমানা, বিলম্ব ফি ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
-
অনেকেই ভবিষ্যতের সুবিধার জন্য টিন নেন, কিন্তু ব্যবসা বা আয় না
থাকায় প্রতি বছর রিটার্ন দিতে হয়। এটি অনেকের কাছে অনর্থক ঝামেলা
বলে মনে হয়।
-
অনেক সময় দেখা যায়, টিন রেজিস্ট্রেশনের নাম করে কিছু অসাধু ব্যক্তি
অর্থ দাবি করে থাকে বা ভুল তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে দেয়, যা
পরবর্তীতে সমস্যা তৈরি করে।
-
অনলাইনে টিন রেজিস্ট্রেশন ও রিটার্ন দাখিলের প্রক্রিয়া
প্রযুক্তি-নির্ভর হওয়ায় যাদের ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ব্যবহারে
অভিজ্ঞতা নেই, তাদের জন্য এটি একটি বাড়তি সমস্যা।
টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার নিয়ম সম্পর্কে লেখকের মতামত
টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার নিয়ম বর্তমানে খুবই সহজ ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে করা যায়। আগের দিনে কর অফিসে ঘুরে ঘুরে ফর্ম পূরণ, দলিল দাখিল ও সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হতো, এখন তা ঘরে বসেই অনলাইনে সম্ভব। লেখক হিসেবে আমি মনে করি, এই অনলাইন ভিত্তিক পদ্ধতি একদিকে যেমন সময় ও শ্রম বাঁচায়, অন্যদিকে সাধারণ নাগরিকদের কর ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহও বাড়িয়েছে। তবে কিছু প্রযুক্তিগত ও সচেতনতার অভাবজনিত সমস্যা এখনও রয়েছে।
লেখক হিসেবে আমার দৃষ্টিতে, অনলাইন প্রক্রিয়া যেমন সহজ, তেমনই ব্যবহারবান্ধব। বিশেষ করে যারা প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত, তাদের জন্য এটি খুবই সময়সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য একটি প্রক্রিয়া। তবে সবকিছুর মাঝেও কিছু সীমাবদ্ধতা থেকে গেছে। অনেক মানুষ এখনও জানেন না কীভাবে টিন ডাউনলোড করতে হয়, অথবা OTP না এলে কী করবেন। অনেক সময় ওয়েবসাইট স্লো থাকে বা লগইন করতে সমস্যা হয়, যা একজন সাধারণ নাগরিককে হতাশ করতে পারে।
তাই আমার মত হলো, কর অফিসগুলোতে একটি হেল্পডেস্ক বা জনসচেতনতা কেন্দ্র থাকা উচিত, যেখানে সাধারণ মানুষকে এই অনলাইন সেবাগুলোর ব্যবহার শেখানো হবে। সবশেষে বলব, টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোডের এই পদ্ধতি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের একটি সফল দৃষ্টান্ত। এটি আমাদের করব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ও জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে। যদি সঠিকভাবে প্রচার, সহায়তা ও প্রযুক্তিগত মানোন্নয়ন করা যায়, তবে আগামী দিনে আরও বেশি মানুষ কর ব্যবস্থার আওতায় আসবে, এই প্রত্যাশা রাখি।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url