চিরতার উপকারিতা অতুলনীয়। এটি এমন একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে
প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। চিরতা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে
রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কৃমি নিধনে কার্যকর।
লিভার পরিষ্কার রাখা এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোতেও চিরতা গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখে।
এছাড়াও, চিরতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, কারণ এটি রক্তে শর্করার
মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। কৃমি দূর করায় শিশুর পাশাপাশি
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও উপকারী। চর্মরোগ, ব্রণ, একজিমা এবং ত্বকের অ্যালার্জি
কমাতে চিরতার ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সঠিক মাত্রা ও সময়ে ব্যবহার করলে চিরতা
আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় একটি অনন্য ভূমিকা পালন করে।
চিরতার উপকারিতা রয়েছে অনেক। এটি একটি বহুবছরজীবী ঔষধি উদ্ভিদ, যা প্রাচীনকাল
থেকেই আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি মূলত তার তিক্ত
স্বাদের জন্য পরিচিত, কিন্তু এই তিতকুটে স্বাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অসাধারণ
উপকারিতা। চর্মরোগ থেকে শুরু করে নানা জটিল রোগের চিকিৎসায় এটি বেশ উপকারি।
নিয়মিত তিতা চিরতার পানি খেলে অসুখ হবার সম্ভাবনা থাকে না। নিচে চিরতার
উপকারিতাগুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলোঃ
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ চিরতা রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। চিরতা দেহে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান সরবরাহ করে। এটি শরীরকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া,
পরজীবী ও ছত্রাকজনিত সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। বারবার সর্দি-কাশি বা জ্বর হলে
এটি খাওয়া উপকারী। রাতে পরিমাণমতো চিরতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে
খালি পেটে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সপ্তাহে ৩-৪ দিন চিরতার পানি
খাওয়া যেতে পারে।
২. জ্বর নিরাময়ে কার্যকরঃ চিরতা শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে এবং
বিভিন্ন ধরনের জ্বর যেমন- ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ভাইরাসজনিত জ্বর ইত্যাদিতে
উপকারী। এতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিপাইরেটিক উপাদান থাকে, যা শরীরের প্রদাহ কমায়
এবং জ্বরের সময় যকৃতের উপর বাড়তি চাপ হ্রাস করে।ভাইরাসজনিত ইনফেকশন থেকেও
শরীরকে রক্ষা করে। ২-৩টি চিরতা ডাঁটা এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে
সকালে খালি পেটে পান করুন।
৩. রক্ত পরিশোধক হিসেবে কাজ করেঃ চিরতাতে প্রচুর পরিমাণে
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা রক্তে থাকা ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করে। এটি শরীরের
কোষকে সজীব রাখে এবং ত্বকে উজ্জ্বলতা বাড়ায়। চিরতা লিভার ও কিডনিকে উদ্দীপিত
করে, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। এর ফলে রক্তে জমে থাকা দূষিত
উপাদান ধীরে ধীরে দূর হয়। এটি রক্তে থাকা ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যান্য
ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে এবং শরীরকে অভ্যন্তরীণভাবে পরিষ্কার রাখে। রক্ত
বিশুদ্ধ হলে ব্রণ, ফুসকুড়ি, চুলকানি, এলার্জি, একজিমা ইত্যাদি চর্মরোগ
স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়।
৪. ক্ষুধা বাড়ায়ঃ চিরতা প্রাকৃতিকভাবে ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে। যাদের
খাবারে অরুচি, খিদে না পাওয়া, বা অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়ার মতো সমস্যা রয়েছে
তাদের জন্য চিরতা একটি পরীক্ষিত ও কার্যকর ভেষজ উপাদান। চিরতার তিক্ত স্বাদ
মুখে লালা ও পাকস্থলীতে হজমরস তৈরিতে সহায়তা করে। এতে পেট ফাঁপা বা গ্যাস্ট্রিক
কমে, এবং ক্ষুধা ফিরে আসে। চিরতা শরীরের বিপাকক্রিয়া সঠিকভাবে চালাতে সাহায্য
করে। এতে শরীরের ক্লান্তি ও খাবারে অরুচির সমস্যা কমে যায়। চিরতা লিভারের
কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে খাদ্যহজমে সহায়তা করে, ফলে শরীর খাবারের জন্য আগ্রহী হয়।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ চিরতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে
একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। আয়ুর্বেদ ও লোকজ চিকিৎসায় বহু
শতাব্দী ধরে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও ইনসুলিনের
কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য। এতে থাকা বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান যেমন amarogentin,
swertiamarin, এবং mangiferin গ্লুকোজের শোষণ হ্রাস করে ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা
বাড়ায়। চিরতা অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন নিঃসরণের প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে, ফলে শরীরে
প্রাকৃতিকভাবে রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় থাকে। মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেট
খাওয়ার পর রক্তে যে হঠাৎ শর্করা বেড়ে যায়, চিরতা তা হ্রাসে সহায়ক।
৬. এলার্জির সমস্যা দূর করেঃ চিরতা তার শক্তিশালী অ্যান্টি-অ্যালার্জিক,
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং রক্ত পরিশোধক বৈশিষ্ট্যের জন্য শরীরে এলার্জির
প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রক্তে জমে থাকা টক্সিন ও
অপ্রয়োজনীয় প্রোটিন অনেক সময় এলার্জির মূল কারণ হয়। চিরতা রক্ত পরিষ্কার করে,
যা ত্বক ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এলার্জির প্রভাব কমায়। চিরতার
অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ ত্বকে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে। এলার্জি থেকে সৃষ্ট
নানা উপসর্গ যেমন ত্বকে চুলকানি, র্যাশ, ফুসকুড়ি, নাক বন্ধ বা পানি পড়া,
শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি উপসর্গ কমাতে এটি সহায়ক।
৭. সংক্রমণ প্রতিরোধ করেঃ চিরতার প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল,
অ্যান্টিভাইরাল, ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যের কারণে শরীরকে নানা ধরনের
সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে জীবাণুর
বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। চিরতার তিক্ত উপাদান যেমন amarogentin ও
swertiamarin শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। এর ফলে অন্ত্র, ত্বক বা
শ্বাসতন্ত্রের জীবাণুজনিত সংক্রমণ কমে। ঋতু পরিবর্তনজনিত জ্বর, সর্দি, কাশি
প্রভৃতি ভাইরাল সংক্রমণে এটি উপকারী।
৮. ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করেঃ চিরতা একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ইমিউন
বুস্টার, যা শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তোলে। চিরতা রক্তে উপস্থিত
সাদা রক্তকণিকা (WBC), বিশেষ করে লিম্ফোসাইট ও ফ্যাগোসাইট-এর কার্যক্ষমতা
বাড়ায়। এর ফলে শরীর দ্রুত জীবাণু শনাক্ত করে এবং ধ্বংস করে। চিরতাতে থাকা
প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যেমন amarogentin ও xanthones শরীরের
কোষগুলোকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকাল থেকে রক্ষা করে। এতে কোষ সুস্থ থাকে ও রোগ
প্রতিরোধক্ষমতা বজায় থাকে।
৯. কৃমি দূর করেঃ চিরতা প্রাচীনকাল থেকে পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ, যার
অন্যতম কার্যকর গুণ হলো কৃমিনাশক বা অ্যান্টিহেলমিন্থিক (Anthelmintic) ক্ষমতা।
এটি অন্ত্রে থাকা বিভিন্ন ধরনের কৃমি বা প্যারাসাইট ধ্বংস করে এবং পেট পরিষ্কার
রাখতে সাহায্য করে। চিরতায় থাকা তিতকুটে রাসায়নিক উপাদান যেমন amarogentin,
swertiamarin, ও xanthones অন্ত্রে থাকা কৃমিকে দুর্বল করে এবং তাদের বেঁচে
থাকার পরিবেশ ধ্বংস করে।
১০. লিভার পরিষ্কার রাখেঃ চিরতা লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
চিরতা একটি শক্তিশালী হেপাটোপ্রোটেকটিভ ভেষজ, যা লিভারের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে
এবং লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে
সহায়ক, ফলে লিভার পরিষ্কার ও সুস্থ থাকে। চিরতার তিক্ত উপাদান লিভারের এনজাইম
সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে, যা রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ ও টক্সিনগুলো দ্রুত
ছড়িয়ে দেয় এবং শরীর থেকে বের করে দেয়। যারা লিভারের সমস্যায় ভুগছেন তারা
নিয়মিত চিরতার পানি পান করুন।
১১. বমি ভাব দূর করেঃ চিরতা পাচক এনজাইম বৃদ্ধি করে, যা খাদ্য সহজে হজমে
সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় বমি ভাব কমায়। অন্ত্রে জমে থাকা গ্যাস বা
অম্বলতা বমি ভাব বাড়ায়। চিরতার গ্যাস নিরোধক ও জোলাপক বৈশিষ্ট্য গ্যাস দূর করে
পেট স্বস্তি দেয়। চিরতার নির্দিষ্ট রাসায়নিক উপাদান মস্তিষ্কের সেই অংশকে শিথিল
করে, যা বমি ভাবের জন্য দায়ী। অন্ত্রের প্রদাহ কমিয়ে বমি ভাব ও পেট ব্যথা কমায়।
এক্ষেত্রে ৫ গ্রাম চিরতা থেঁতো করে ২ কাপ গরম পানিতে ২ থেকে ৩ ঘন্টা ভিজিয়ে
রাখুন। এরপর সেই পানি ছেঁকে অল্প অল্প করে খেতে থাকুন। এতে বমি ভাব দূর হবে।
১২. হজমের সমস্যা দূর করেঃ হজমের সমস্যা দূর করতে চিরতার উপকারিতা
অপরীসিম। চিরতা পাচনতন্ত্রে পাচক এনজাইমের উৎপাদন বাড়ায়, যা খাদ্য দ্রুত ও
সুষ্ঠুভাবে হজম করতে সাহায্য করে।চিরতা তিক্ত স্বাদের কারণে দীর্ঘকাল ধরে হজম
সমস্যা দূর করতে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি পাচনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে পেটের
বিভিন্ন অস্বস্তি ও জটিলতা কমায়। হজম শক্তি না থাকলে এসিডিটি, বদহজম,
কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ব্যথার মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ সকল সমস্যা থেকে
মুক্তি পেতে নিয়মিত চিরতার পানি পান করুন। উপকার পাবেন।
১৩. টক্সিন দূর করেঃ চিরতা শরীরকে পরিষ্কার করতে খুব উপকারী। চিরতা
লিভারের ডিটক্সিফিকেশন এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে, যা রক্ত থেকে ওষুধ, বিষ, ও
অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ দ্রুত বের করে দেয়। এটি বিশেষ করে লিভার ও রক্তকে
পরিষ্কার করে, যার ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সুস্থ থাকে। চিরতার তিক্ত
পদার্থ শরীরের মধ্যে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেগুলোকে
নিষ্ক্রিয় করে ও শরীর থেকে বের করে দেয়। নিয়মিত চিরতার রস পান করলে শরীর থেকে
টক্সিন নামক ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে যায়। ফলে শরীর ভেতর থেকে পরিস্কার ও
ফ্রেশ থাকে।
১৪. চর্মরোগে উপকারীঃ চিরতা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য চর্মরোগ যেমন ফুসকুড়ি, একজিমা, ফোলাভাব,
চর্মশোস ইত্যাদিতে বিশেষ উপকারি। চিরতার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ত্বকের
ফোলাভাব ও লালচে ভাব কমিয়ে দেয়, যার ফলে আরাম মেলে। চিরতা রক্ত পরিষ্কার করার
মাধ্যমে ত্বকের ভিতরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ কমায়, ত্বক সুন্দর ও
স্বাস্থ্যবান হয়।ত্বকের ফোস্কা বা ক্ষত দ্রুত সেরে ওঠার ক্ষেত্রে চিরতার ভূমিকা
রয়েছে।
১৫. হাঁপানি রোগেঃ হাঁপানি রোগে চিরতার বেশ সুনাম রয়েছে। চিরতা
প্রাচীনকাল থেকে হাঁপানি (Asthma) ও শ্বাসকষ্টের জন্য ব্যবহৃত একটি কার্যকরী
ভেষজ। এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও ব্রঙ্কোডায়লেটর (বাতাস নলির পেশী
শিথিলকারী) গুণ হাঁপানি ও শ্বাসনালীতে জমে থাকা কফ কমাতে সাহায্য করে। চিরতার
নির্যাস শ্বাসনালীর পেশী শিথিল করে, শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ করে। হাঁপানি রোগে
আক্রান্ত রোগীরা আধা গ্রাম চিরতার গুড়োর সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুণ ফল
পাবেন।
১৬. ক্ষত সারতেঃ শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই
ক্ষত সারতে চিরতা দারুণ কার্যকর। চিরতার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি,
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং সেল পুনর্জন্ম বৃদ্ধিকারী গুণের কারণে ক্ষত দ্রুত
সারে এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। চিরতার তিক্ত উপাদান ক্ষতে ব্যাকটেরিয়ার
সংক্রমণ রোধ করে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। এক কাপ গরম পানিতে ৪ থেকে ৫
গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে সেই পানি ছেঁকে সেটা দিয়ে ক্ষত
স্থান ভালো ভাবে পরিষ্কার করুন। এভাবে ৪ থেকে ৫ দিন ব্যবহারে আপনার ক্ষত সেরে
যাবে।
১৭. ত্বকের যত্নঃ ত্বকের যত্নে চিরতা কার্যকর ভুমিকা রাখে। চিরতা
প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও রক্ত পরিশোধক গুণে
ভরপুর, যা ত্বককে উজ্জ্বল, পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যবান রাখতে সাহায্য করে।
প্রাচীনকাল থেকেই চিরতা ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চিরতা রক্ত থেকে টক্সিন
বের করে দিলে ত্বকের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা
যেমন ত্বকের ব্রন, ঘা, ক্ষত এবং ত্বকের ইনফেকশন সারতে নিয়মিত চিরতা ভেজানো
পানি পান করুন।
১৮. তারুণ্য ধরে রাখেঃ চিরতা তারুণ্য ধরে রাখতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে
থাকে। চিরতা ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধে এবং তারুণ্য ধরে রাখতে খুবই উপকারী একটি
প্রাকৃতিক ভেষজ। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতিকর
মুক্ত মৌল (free radicals) থেকে রক্ষা করে, ফলে ত্বক দীর্ঘদিন তরুণ ও স্বচ্ছ
থাকে। চিরতার পানি রক্ত পরিস্কার করে ও রক্ত সঞ্চালনা বৃদ্ধি করে। তাই তারুণ্য
ধরে রাখতে নিয়মিত চিরতার পানি পান করুণ।
চিরতার পুষ্টিগুণ
চিরতার আলাদা পুষ্টিগুণ রয়েছে। ফলে এটিকে বিভিন্ন ঔষধে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
হিসাবে ব্যবহার করা হয়। চিরতা (Swertia chirata) একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উদ্ভিদ
যা বহু শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদ ও ইউনানী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি মূলত
তিক্ত স্বাদের হলেও এতে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ ও বায়োঅ্যাকটিভ
উপাদান, যা শরীরের জন্য উপকারী। নিচে চিরতার প্রধান পুষ্টিগুণগুলো তুলে ধরা
হলোঃ
- সুইরিন ও এমারোজিনিন
- ফ্ল্যাভোনয়েড
- ট্যানিন
- অ্যালকালয়েডস
- কিউমারিন
- ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ ও জিঙ্ক
চিরতা শুধু একটি তিতা ভেষজই নয়, বরং এতে রয়েছে শরীরের জন্য উপকারী
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও লিভার-সুরক্ষাকারী উপাদান।
যদিও এতে প্রচলিত ভিটামিন ও মিনারেল বেশি পরিমাণে থাকে না, তবে এর
বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ শরীরের নানা সমস্যায় কার্যকর প্রাকৃতিক সহায়ক হিসেবে কাজ
করে।
খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা প্রচুর। প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান হিসেবে চিরতা
বহু শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদ ও ইউনানী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর তিক্ত স্বাদ
একে বিশেষ করে তোলে এবং এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট,
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও রক্ত পরিশোধক গুণাবলি। খালি
পেটে গ্রহণ করলে শরীর দ্রুত এর কার্যকরী উপাদান গ্রহণ করতে পারে এবং এর
উপকারিতা আরও বাড়ে। উপকারিতা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলোঃ
১. রক্ত পরিশোধন ও টক্সিন নির্গমনঃ খালি পেটে চিরতা খেলে শরীরের ভিতরে
জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ (toxins) ধীরে ধীরে বের হয়ে যায়। এটি রক্ত পরিষ্কার
করতে সহায়তা করে এবং শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সুস্থ রাখে। বিশেষ করে যাদের ব্রণ,
ফুসকুড়ি, এলার্জি বা চর্মরোগ হয়, তারা চিরতার নিয়মিত সেবনে উপকার পেতে পারেন।
২. লিভার পরিষ্কার রাখে ও সুস্থ রাখেঃ চিরতা লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়
এবং লিভার পরিষ্কার রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খালি পেটে চিরতা খেলে
লিভার থেকে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ সহজে বেরিয়ে যায়। ফলে যকৃতের সুস্থতা বজায়
থাকে এবং হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন লিভার-সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি কমে।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ চিরতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে
রাখতে সাহায্য করে। খালি পেটে এটি গ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থিতিশীল
থাকে। প্রাকৃতিকভাবে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় বলে এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিস
রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী। যদিও এটি চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে ইনসুলিনের
বিকল্প নয়।
৪. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে ও গ্যাস-অম্বল কমায়ঃ চিরতা হজমে সহায়ক একাধিক
তিক্ত উপাদান (bitter principles) ধারণ করে, যা পাচক রস নিঃসরণে সহায়তা করে।
খালি পেটে চিরতা খাওয়ার ফলে: হজম শক্তি বাড়ে, বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমে, পেটের
গ্যাস, অম্বল বা অম্বলজনিত ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
৫. ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করেঃ চিরতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। খালি পেটে এটি গ্রহণ
করলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয় এবং ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক
সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম হয়। এতে ঠান্ডা-কাশি, জ্বর, সংক্রমণ ইত্যাদির ঝুঁকি
কমে।
৬. ত্বকের যত্নে সহায়কঃ খালি পেটে চিরতা খাওয়ার ফলে শরীরের ভেতর থেকে
টক্সিন বের হয়ে যায়। যার ফলে ত্বকে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আসে। রক্ত বিশুদ্ধ হলে
ত্বকে ব্রণ, চুলকানি, এলার্জি, চর্মরোগ ইত্যাদি কমে যায়। তাই যারা সৌন্দর্য
সচেতন, তাদের জন্য চিরতা দারুণ কার্যকর হতে পারে।
৭. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ চিরতা পাচন শক্তি বাড়ায় ও শরীরের বিপাকক্রিয়া
(metabolism) সক্রিয় করে। খালি পেটে চিরতা খেলে শরীরে জমে থাকা বাড়তি চর্বি
ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে পারে। এটি ক্ষুধা কমায় না, তবে অপ্রয়োজনীয় চর্বি হজম করতে
সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৮. কৃমিনাশক হিসেবে কার্যকরঃ চিরতা খালি পেটে খেলে অন্ত্রের কৃমি ও
অন্যান্য পরজীবীর (parasites) বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি একটি প্রাকৃতিক কৃমিনাশক,
যা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উপকারী। অন্ত্র পরিষ্কার রাখার জন্য এটি
নিয়মিত খালি পেটে খাওয়া যেতে পারে।
৯. বমি ভাব ও অরুচি দূর করেঃ অনেকের সকালবেলা বমি ভাব বা অরুচি থাকে।
চিরতা এই সমস্যায় কার্যকর ভূমিকা রাখে। খালি পেটে এক কাপ উষ্ণ চিরতার পানি খেলে
বমি ভাব দূর হয় এবং খাবারের প্রতি রুচি বাড়ে।
১০. নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করেঃ চিরতা পাচনতন্ত্র পরিষ্কার রাখে ও
অন্ত্রের গতিশীলতা উন্নত করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে এবং নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা
করে। এটি খালি পেটে খেলে সকালেই পেট পরিষ্কার হয়।
১১. শরীর ও মনের সতেজতা বাড়ায়ঃ চিরতা শরীরের রক্ত পরিষ্কার করে এবং হজমে
সহায়তা করার মাধ্যমে শরীরে হালকা ভাব আনে। এতে করে সারাদিনে মন থাকে সতেজ, ঘুম
ভালো হয় এবং মানসিক চাপ কমে।
চিরতা খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি
চিরতা খাওয়ার সঠিক কিছু পদ্ধতি রয়েছে। এটি আয়ুর্বেদ ও ইউনানী চিকিৎসায় বহু
প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চিরতা তিক্ত স্বাদযুক্ত হলেও এর উপকারিতা
অপরিসীম। তবে চিরতার পূর্ণ উপকার পেতে হলে সঠিক নিয়মে ও পরিমাণে গ্রহণ করা
অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত গ্রহণে উপকারের চেয়ে অপকার হতে পারে।এখানে
বিস্তারিতভাবে চিরতা খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি, পরিমাণ, সময় ও সতর্কতা নিয়ে আলোচনা
করা হলো।
-
নিয়মিত চিরতার পানি পানের ক্ষেত্রে রাত্রে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস বা
সমপরিমাণ পানিতে ৫ থেকে ৭ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে সকালে অর্ধেক এবং বাকি
অংশ রাতে ঘুমানোর আগে পান করা যাবে।
-
কাটা ঘা বা ক্ষত শুকানোর ক্ষেত্রে রাতে ঘুমানোর আগে এক কাপ বা সমপরিমাণ গরম
পানিতে চিরতা ভিজিয়ে রাখলে, সকালে ওই পানি ছেকে তা দিয়ে ক্ষত মুছে নিলে
উপকার পাওয়া যাবে। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করতে হবে।
-
জ্বর সারাতে ৭ থেকে ৮ কাপ গরম পানিতে চিরতা সিদ্ধ করে সেটাকে ২ থেকে তিন
কাপে পরিণত করে সকালে অর্ধেক বিকেলে অর্ধেক খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
-
হাঁপানির সমস্যার বা হঠাৎ কাশি বৃদ্ধি পেলে ১ থেকে দুই গ্রাম চিরতার গুঁড়ার
সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। আশা করা যায় ২ থেকে তিন দিনের মধ্যে
উপকার পাওয়া যাবে।
-
চুলপড়া রোধ করতে ৫ থেকে ৭ গ্রাম চিরতা রাতে গরম পানিতে রাখা চিরতা সকালে
ছেকে নিয়ে সেই পানি দিয়ে মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। পরবর্তীতে মাথা ভালো
করে পরিষ্কর করে নিন।
-
অনেকেরই চুলকানির সমস্যা থাকে। এ ক্ষেত্রে ২৫ গ্রামের মতো চিরতা নিয়ে কে
ব্লেন্ড করে ফেলতে হবে। ১০০ গ্রাম সরিষার তেল চুলায় গরম করুন, ফেনা কমে
গেলে সেখানে চিরতার ব্লেন্ডটি ছেড়ে দিন। চিরতা ভাজা হয়ে গেলে, এবার তেল
ছেকে নিন। এই তেল চুলকানোর স্থানগুলোতে হালকা করে মালিশ করতে হবে। তবে মনে
রাখা দরকার, কেটে যাওয়া বা ক্ষত হয় জায়গায় এই তেল লাগানো যাবেনা।
-
নিয়মিত চিরতা খেতে চাইলে একটানা ২০ থেকে ৩০ দিন সেবনের পর সমপরিমাণ সময়
বিরতি দেওয়া দরকার।
চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে
চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে, এই প্রশ্নটি অনেকেই করেছেন। চিরতা একটি পরিচিত
ভেষজ উদ্ভিদ, যা তিতা স্বাদের জন্য পরিচিত এবং বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী
চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি মূলত রক্ত পরিশোধন, হজম শক্তি বাড়ানো,
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং চর্মরোগে উপকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু অনেকের
মনে প্রশ্ন জাগে, চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করতে পারে? নিচে এই বিষয়ে
বৈজ্ঞানিকভাবে যুক্তিপূর্ণ আলোচনা করা হলো।
প্রাকৃতিকভাবে চিরতা একটি ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে, যা শরীর থেকে টক্সিন
বের করে দিতে সহায়তা করে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি
গুণ কিডনি সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সুরক্ষা দিতে পারে। চিরতা লিভার
ও কিডনি ফাংশন উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে যদি তা সঠিক মাত্রায় ও নিয়মে সেবন
করা হয়। যদিও সঠিক মাত্রায় চিরতা উপকারী, অতিরিক্ত সেবনে তা কিডনির উপর চাপ
সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে নিচের ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরিঃ
-
অতিরিক্ত তিক্ত উপাদানঃ চিরতায় প্রচুর মাত্রায় তিতকসত্ব পদার্থ
থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে শরীরে অ্যাসিড-অ্যালকালাইন ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটাতে
পারে। এতে কিডনির কার্যক্ষমতায় সাময়িক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
-
ডায়রেটিক প্রভাবঃ চিরতা কিছুটা প্রাকৃতিক ডায়রেটিক, অর্থাৎ এটি
প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত ডায়রেটিক প্রভাব শরীরে জলাভাব
সৃষ্টি করে কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
-
দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারঃ দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিদিন অতিমাত্রায় চিরতা
খেলে কিডনির কোষে জ্বালাভাব বা প্রদাহ হতে পারে, বিশেষ করে যাদের কিডনি
পূর্ব থেকেই দুর্বল।
যদি কারো কিডনি ফাংশন আগে থেকেই কম থাকে (যেমন: ক্রিয়েটিনিন বেশি, কিডনি
ফেইলিউর, বা ডায়ালাইসিস চলছে), তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চিরতা সেবন না
করাই ভালো। কারণ এই অবস্থায় যেকোনো ভেষজ উপাদান দেহে অতিরিক্ত কাজের চাপ
সৃষ্টি করতে পারে। চিরতা সাধারণত সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য কিডনির ক্ষতি করে না,
বরং পরিমিত ও সঠিকভাবে গ্রহণ করলে তা শরীরের ডিটক্সিফিকেশনে সহায়ক হতে পারে।
তবে অতিরিক্ত খাওয়া, দীর্ঘদিন একটানা গ্রহণ করা অথবা কিডনি-রোগে আক্রান্তদের
জন্য চিরতা বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। তাই চিরতা সেবনের আগে শরীরের অবস্থা
বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
চিরতা কতদিন খাওয়া যায়
চিরতা কতদিন খাওয়া যায়, ই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছেন অনেকেই। চিরতা একটি
প্রাচীন ভেষজ উদ্ভিদ, যা শরীর ডিটক্স, রক্ত পরিশোধন, হজম শক্তি বাড়ানো, ও
লিভার পরিষ্কার রাখার জন্য পরিচিত। তবে এটি প্রতিদিন ও দীর্ঘ সময় খাওয়া
উচিত কি না এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। চিরতা সাধারণত ৭ থেকে ২১ দিন
পর্যন্ত প্রতিদিন খাওয়া নিরাপদ এবং কার্যকর। এই সময়ের মধ্যে এটি শরীরের
টক্সিন দূর করে, হজমে সহায়তা করে এবং লিভার ও কিডনি কার্যক্রম উন্নত করে।
চিকিৎসক বা আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ১ মাসের বেশি সময় চিরতা খাওয়া
উচিত নয়। দীর্ঘমেয়াদি সেবনে চিরতার তিতকসত্ব উপাদান শরীরে ভারসাম্যহীনতা
সৃষ্টি করতে পারে। নিয়মিত ব্যবহারের ক্ষেত্রে: ৭-২১ দিন চিরতা খেয়ে এরপর
৭-১০ দিন বিরতি দেওয়া, প্রয়োজনে আবার সেবন করা যেতে পারে। এই পদ্ধতি অনুসরণ
করলে শরীর চিরতার গুণাগুণ ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
চিরতার ব্যবহার
চিরতা একটি তিক্ত স্বাদের ভেষজ উদ্ভিদ, যার বিভিন্ন অংশ (মূল, কান্ড, পাতা)
আয়ুর্বেদ ও ইউনানী চিকিৎসায় বহুদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি সাধারণত ওষুধ,
টনিক বা পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেহেতু চিরতা একটি ভেষজ খাবার বা উদ্ভিদ
সেহেতু এটিকে বিভিন্ন ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক
বিভিন্ন কোম্পানি এবং সাধারণ মানুষেরা এই চিরতাকে কোন কোন পদ্ধতিতে ব্যবহার
করে উপকৃত হতে পারে সে-সম্পর্কেঃ
১. ডায়াবেটিসের ঔষধে ব্যবহার করা হয়ঃ অনেকেই ডায়াবেটিস রোগের
ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা দূর করতে গ্লিমিপিরাইড (অ্যামারিল),
গ্লাইবারাইড (ডায়াবেটা, গ্লাইনেস প্রেসট্যাব, মাইক্রোনেজ), ইনসুলিন,
পিওগ্লিটাজোন (অ্যাক্টোস), রোসিগ্লিটাজোন (অ্যাভান্ডিয়া), ক্লোরপ্রোপামাইড
(ডায়াবিনিস), গ্লিপিজাইড (গ্লুকোট্রল), টোলবুটামাইডের মতো ইত্যাদি ঔষধ সেবন
করেন। এসব ঔষধ তৈরিতে চিরতা ব্যবহার করা হয়।
২. বিভিন্ন চর্মরোগের চিকিৎসায়ঃ চর্মরোগের বিভিন্ন চিকিৎসা বিশেষ করে
একজিমা এবং ব্রণ দূর করতে যেসব ঔষধ ব্যবহার করা হয় সে-সব ঔষধ তৈরিতেও
ব্যবহার করা হয় এই চিরতাকে। কারণ চিরতা থেকে প্রাপ্ত ক্বাথ ত্বকের ফুসকুড়ি
সারাতে শতভাগ সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও যদি ত্বকে জ্বালাপোড়া, শুষ্কতা এবং
চুলকানির সমস্যা থাকে তা দূর করতেও আপনি চিরতা ব্যবহার করতে পারেন। তবে যাদের
এলার্জির সমস্যা আছে তারা ত্বকে চিরতা ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ
নিতে ভুলবেন না কিন্তু।
৩. কৃমি দূর করতেঃ চিরতা মানবদেহে সরাসরি কৃমি দূর করার কাজে ব্যবহৃত
হয়ে থাকে। চিরতায় থাকা হেলমিন্থ নামের উপাদান মানবদেহে কৃমি দূর করতে কাজ
করে থাকে। এছাড়াও কৃমির মতো বিভিন্ন পরজীবি অর্থ্যাৎ রাউন্ডওয়ার্ম, ফ্লুকস
এবং টেপওয়ার্মও দূর করতে সক্ষম এই চিরতা। সেকারণেই মেডিসিনবিশেষজ্ঞেরা
চিরতাকে কৃমির ঔষধের অন্যতম উপাদান হিসাবে ব্যবহার করে থাকেন।
চিরতার অপকারিতা
চিরতার অপকারিতাও রয়েছে। চিরতা একটি তিক্ত স্বাদের ভেষজ উদ্ভিদ, যা বহু
উপকারিতা থাকার কারণে আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
তবে অন্যান্য ভেষজের মতো, চিরতারও কিছু অপকারিতা রয়েছে যা সতর্কভাবে বিবেচনা
করা জরুরি। চিরতা যেমন উপকারী, তেমনি তা ব্যবহারে সচেতন না হলে তা শরীরের ক্ষতি
করতে পারে। চিরতার অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে নিচের লেখাগুলিতে চোখ রাখুন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url