বাসক পাতার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সমূহ জেনে নিন

বাসক পাতার উপকারিতা ও গুণ সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা রয়েছে। এটি ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ, যার medicinal গুণাগুণ বহু বছর ধরে স্বীকৃত। বাসক গাছের শুধু পাতা নয়, এর ফুল, ফল, শিকড় এবং বাকলও বিভিন্ন ধরনের ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর পাতার রস  শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
বাসক-পাতার-উপকারিতা-ও-ক্ষতিকর-দিক-সমূহ
বাসক পাতার অন্যতম প্রধান উপকারিতা হলো এটি শ্বাসনালীর সমস্যা যেমন কাশি, সর্দি, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যালকালয়েড ও ভাসিসিন উপাদান শরীর থেকে ক্ষতিকারক ময়লা দূর করে, রক্ত বিশুদ্ধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া বাসক পাতা ব্যথা কমাতে, বাত ও যক্ষ্মার মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে উপশম দিতে সাহায্য করে।

তাছাড়া বাসক পাতা শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে শরীরকে পরিষ্কার ও সুস্থ রাখে। বর্তমানে অনেক ভেজাল খাবার ও পরিবেশ দূষণের কারণে মানুষের শরীরে নানা জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় বাসক পাতার মত প্রাকৃতিক ওষুধের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং বাসক পাতা শুধুমাত্র একটি ঔষধ নয়, বরং স্বাস্থ্য রক্ষায় এক প্রাকৃতিক উপহার।

পোস্ট সূচিপত্রঃ বাসক পাতার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সমূহ

বাসক পাতা

বাসক পাতা ঔষধি গুণ সম্পুন্ন একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা বাংলায় 'বাসক' নামে পরিচিত। এটি আয়ুর্বেদিক, ইউনানী ও প্রাকৃতিক চিকিৎসাশাস্ত্রে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আদি যুগ থেকেই বাসক পাতা ভেষজ গুণে গুনাম্বিত। বিশেষ করে কাশি ও শ্বাসকষ্টে এটি অত্যন্ত উপকারী। বাসক শব্দের অর্থ সুগন্ধকারক। বাসক গাছ ঝোপাকৃতির এবং সাধারণত ৫-৬ ফুট লম্বা হয়। এর পাতাগুলি মাঝারি আকারের, সবুজ ও লম্বাটে।
বাসক পাতার মূল বৈশিষ্ট্য হলো এতে বিদ্যমান প্রাকৃতিক উপাদান “ভ্যাসিকিন” (Vasicine), যা এক ধরনের অ্যালকালয়েড। এই উপাদানটি শ্বাসতন্ত্রে জমে থাকা কফ সরিয়ে ফেলতে সহায়তা করে এবং শ্বাসনালিকে প্রসারিত করে, যার ফলে ফুসফুস সহজে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। এজন্য এটি কাশি, ঠান্ডা, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং টনসিলসহ বিভিন্ন শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যায় বিশেষ উপকারী। বাসক পাতা সাধারণত রস আকারে, চা হিসেবে বা শুকিয়ে গুঁড়ো করে ব্যবহৃত হয়।

এতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে। এটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং জ্বর-সর্দিতেও কার্যকর। তবে বাসক পাতা ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন। অতিরিক্ত সেবনে ডায়রিয়া বা হজমে সমস্যা হতে পারে। গর্ভবতী নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাসক পাতা সেবন করা ঠিক নয়। সব মিলিয়ে বাসক পাতা হলো একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান, যা প্রাচীনকাল থেকে স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বাসক পাতার উপকারিতা

বাসক পাতার উপকারিতা রয়েছে অনেক, এটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ। বাসক পাতা প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ, ইউনানী ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এর শুধু পাতায় নয়, মূল, ফুল এবং আরো অন্যান্য অংশ ওষুধ তৈরির কাজে লাগে। বিশেষ করে শ্বাসতন্ত্রের রোগে এটি অদ্বিতীয়। বাসক পাতার প্রধান কার্যকর উপাদান Vasicine, যা একটি প্রাকৃতিক অ্যালকালয়েড। বাসক পাতার উপকারিতাগুলো হলোঃ
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ বাসক পাতায় রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এতে থাকা ভ্যাসিকিন (Vasicine) ও অন্যান্য অ্যালকালয়েড শরীরের কোষে সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করে এবং ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব কমায়। এই পাতা শরীরে জমে থাকা টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, ফলে রক্ত পরিশুদ্ধ হয় এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর কার্যকারিতা বাড়ে। 

এটি শরীরকে নানা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম করে তোলে। বাসক পাতার নিয়মিত সেবনে ঠান্ডা-কাশি, ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, ব্রঙ্কাইটিস, ও জ্বরের মতো রোগ প্রতিরোধ সহজ হয়। বিশেষ করে যাদের ফুসফুস দুর্বল বা শ্বাসতন্ত্র বারবার সংক্রমণে আক্রান্ত হয়, তাদের জন্য বাসক পাতা একটি প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরকে সতেজ ও সংক্রমণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

২. কাশি ও ঠান্ডা উপশম করেঃ আদিকাল থেকেই বাসক পাতার সবচেয়ে প্রচলিত ব্যবহার কাশি ও ঠান্ডা নিরাময়ে। এটি শ্লেষ্মা বা কফ দূর করে এবং শ্বাসনালিকে প্রশমিত করে। বিশেষ করে শুকনো কাশি বা কফযুক্ত কাশির ক্ষেত্রে বাসক পাতার রস বা সিরাপ খুবই উপকারী। যদি আপনারও এমন হয় বা বহু পুরনো সর্দি-কাশি থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ২-৩ টি বাসক পাতা বেটে এর রস পান করতে পারেন। তবে এক চামচ মধুর সাথে এক চামচ বাসক পাতার রস নিয়মিত কয়েকদিন খেতে পারলে অতি দ্রুত ফল পাওয়া যাবে।

৩. হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিসে উপকারীঃ অনেক সময় আমাদের শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা বড় আকারে দেখা দিয়ে থাকে। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা যেমন হাঁপানি বা ব্রঙ্কাইটিসে বাসক পাতা কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি শ্বাসনালীকে প্রশস্ত করে এবং কফ পাতলা করে সহজে বের করতে সহায়তা করে। এর ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ হয় এবং রোগী স্বস্তি পায়। শ্বাসকষ্টের সমস্যা তৈরি হলে ২ চামচ বাসকের রস সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। নিয়মিত কয়েকদিন খেলে বেশ উপকার পাবেন। 

৪. জ্বর ও সংক্রমণে সহায়কঃ বাসক পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল গুণ রয়েছে, যা বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ঋতু পরিবর্তনের কারণে হোক অথবা অন্যান্য কোনো কারণে আমরা প্রায় জ্বর আক্রান্ত হয়ে থাকি। জ্বর হলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা বেশি থাকে এইসময় এই ভেষজ উদ্ভিদ পাতার রস আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে। শরীরে ভাইরাসজনিত জ্বর হলে বাসক পাতার রস বা পাতা ফুটানো পানি খেলে উপকার মেলে।

৫. রক্ত পরিশোধক হিসেবে কাজ করেঃ বাসক পাতা রক্তের অশুদ্ধতা দূর করতে সহায়তা করে। শরীরের রক্ত পরিষ্কার না থাকলে আমাদের মুখে ব্রণ হওয়া, পেটের সমস্যা বা এলার্জি আরো ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। এটি লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকের নানা সমস্যা যেমন ফুসকুড়ি, চুলকানি ইত্যাদিতে উপকার পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার রক্তকে পরিষ্কার রাখতে চান তাহলে আপনার দৈনিক রুটিনে বাসক পাতাকে অবশ্যই রাখুন।

৬. মাসিক অনিয়মে সহায়কঃ বাসক পাতা শুধু কাশি বা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাতেই নয়, নারীদের মাসিক অনিয়ম সমস্যা সমাধানেও প্রাকৃতিকভাবে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। বাসক পাতায় থাকা প্রাকৃতিক উপাদান জরায়ুর পেশিকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে এবং হরমোনের ভারসাম্য আনতে সহায়তা করে, যার ফলে ঋতুচক্র নিয়মিত হতে শুরু করে। বাসক পাতার রস বের করে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে বা পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে, গরম পানিতে চা বানিয়ে দিনে ১-২ বার খাওয়া উপকারী।

৭. জন্ডিসের সমস্যা দূর করতেঃ যারা জন্ডিসের মত সমস্যায় ভুগছেন তারা বাসকের শরণাপন্ন হতে পারেন। এটির রস জন্ডিসের মত সমস্যা দূর করতে বেশ উপকারী। বাসক পাতায় থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলো লিভারের টক্সিন দূর করে ও রক্ত বিশুদ্ধ করে, যা জন্ডিস নিরাময়ে সহায়তা করে। এক চামচ বাসকের রস এর সাথে এক চামচ মধু অথবা চিনি মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে জন্ডিস অনেকটা সেরে যাবে। জন্ডিস নিয়ে সমস্যায় পড়ে থাকলে এটি করে দেখতে পারেন।

৮. দাঁতের সমস্যা দূর করেঃ বাসক পাতা শুধুমাত্র শ্বাসতন্ত্র বা লিভারজনিত রোগেই নয়, দাঁতের সমস্যায়ও এই ভেষজ উদ্ভিদের রস অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ, যা দাঁতের নানা সমস্যা যেমন দাঁতের ব্যথা, মাড়ির ফোলা, রক্ত পড়া এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। এই ধরনের সমস্যায় বাসকের পাতাকে ভালোমতো ধুয়ে দুই কাপ জল নিয়ে তাতে ফুটিয়ে নিন। এরপর সে জলগুলো দিয়ে কুলকুচি করুন দেখবেন দাঁতের সমস্যা অনেকখানি দুর হয়ে যাবে।

৯. বাতের ব্যথা উপশম করতেঃ বাসক পাতা বাতের ব্যথা বা গাঁটে ব্যথা উপশমে একটি কার্যকর ভেষজ উপাদান হিসেবেও পরিচিত। এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহনাশক) ও অ্যানালজেসিক (ব্যথানাশক) উপাদান শরীরের ফোলা বা জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। বাসক পাতা বেটে গরম করে ব্যথার স্থানে পেস্টের মতো করে লাগিয়ে রাখতে পারেন। চাইলে সরিষার তেল মিশিয়ে মালিশ করলেও ভালো উপকার পাওয়া যায়। বাসক পাতার চা বানিয়ে দিনে ১-২ বার পান করতে পারেন। এটি শরীরের ভেতরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

১০. যক্ষা প্রতিরোধে বাসক পাতাঃ বাসক পাতা প্রাকৃতিকভাবে এমন কিছু গুণাবলি ধারণ করে, যা যক্ষার মতো জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বাসক পাতা বিশেষ করে যক্ষা (Tuberculosis বা TB)-এর প্রাথমিক উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর বলে মনে করেন। বাসক পাতায় থাকা ভ্যাসিকিন (Vasicine) উপাদানটি শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে, কফ অপসারণ করে এবং ফুসফুসে প্রদাহ কমায়। যক্ষা সাধারণত ফুসফুসে আক্রমণ করে, তাই এই পাতা বিশেষভাবে উপকারী।

বাসক পাতার ঔষধি গুণ

বাসক পাতার ঔষধি গুণাগুণ সত্যিই বিস্ময়কর। বহু প্রাচীনকাল থেকে বাসক গাছটি প্রাকৃতিক চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ভেষজ উপাদানের মধ্যে বাসক পাতা একটি শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য নাম, যার পাতা, ফুল, বাকল ও শিকড় সবকিছুতেই রয়েছে অসামান্য ওষুধি বৈশিষ্ট্য। এ গাছের পাতা, ফুল ও শিকড় সবই ভেষজ চিকিৎসায় উপযোগী হলেও পাতার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।
বাসক পাতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান হলো ভ্যাসিকিন (Vasicine), যা একটি অ্যালকালয়েড। এটি শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস ও যক্ষা রোগে অত্যন্ত উপকারী হিসেবে কাজ করে। এছাড়া এতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা শরীরের নানাবিধ সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করে। বর্তমান সময়ে অস্বাস্থ্যকর ও ভেজালযুক্ত খাবারের কারণে নানা রকম রোগব্যাধি দেহে বাসা বাঁধছে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ ঠান্ডা-কাশি থেকে শুরু করে জটিল শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হজমের সমস্যা, ত্বকের রোগ ইত্যাদি বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এর বিপরীতে আমাদের আশেপাশেই রয়েছে এমন কিছু ভেষজ সম্পদ, যেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে অনেক রোগের প্রতিকার ঘরেই করা সম্ভব। এমনই একটি উপকারী ভেষজ হচ্ছে বাসক পাতা। বাসক পাতায় রয়েছে শক্তিশালী রাসায়নিক উপাদান যেমনঃ

  • Vasicine
  • Vasicinone
  • Essential Oils
  • Alkaloids
  • Flavonoids
এই উপাদানগুলো বাসক পাতাকে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ডিটক্সিফাইং বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন করে তোলে। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়, কোষের ক্ষয় রোধ করে এবং বার্ধক্যের গতিকে ধীর করে। বাসক পাতার পাশাপাশি এর ফুল, বাকল এবং শিকড়-এও রয়েছে ঔষধি গুণ। ঐতিহ্যগত ভেষজ চিকিৎসায় এগুলোকেও বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়। বাসক পাতার ঔষধি গুণাগুণ যেমনঃ

  • কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, ও যক্ষা রোগে কফ দূর করে শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে।
  • জ্বর ও সংক্রমণজনিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
  • লিভার পরিষ্কার করে এবং রক্ত বিশুদ্ধ করে যা জন্ডিস প্রতিরোধে সহায়ক।
  • দাঁতের মাড়ির প্রদাহ, মুখের দুর্গন্ধ এবং ব্যথায় কার্যকর।
  • নারীদের মাসিক অনিয়মে উপকারী এবং জরায়ুর কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
  • বাত ও গাঁটের ব্যথায় আরাম দেয়।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।

বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

বাসক পাতা বহু প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক এবং লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পাতা, শিকড়, বাকল ও ফুলে রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর অংশ হচ্ছে পাতা, এবং সেই পাতার রস নিয়মিত ও সঠিকভাবে খাওয়া হলে অনেক রোগের প্রাকৃতিক প্রতিকার সম্ভব। তবে বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম, পরিমাণ, সময় এবং সতর্কতা জানা জরুরি, নইলে উপকারের বদলে ক্ষতিও হতে পারে।
১. কখন খাবেনঃ সকালে খালি পেটে বাসক পাতার রস খাওয়া সবচেয়ে উপকারী বলে ধরা হয়। এতে শরীর দ্রুত রস শোষণ করতে পারে এবং উপাদানগুলো সহজে কার্যকর হয়। চাইলে এর সাথে সামান্য পরিমান মধু মিশিয়ে নিলে স্বাদ ভালো হয় এবং এর উপকারিতাও বৃদ্ধি পায়। বিকল্প হিসেবে, বাসক পাতা শুকিয়ে চা বানিয়ে খাওয়া যায়। তবে বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা অনুযায়ী রাতে খাওয়াও উপযোগী হতে পারে।

২. খাওয়ার পরিমাণঃ

  • প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে ১–২ বার, প্রতিবার ১ চা চামচ (৫–১০ মি.লি.)। সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগে। বিশেষ করে কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকলে দিনে ২ বার যথেষ্ট।
  • ১০ বছরের বেশি শিশুদের জন্য দিনে ১ বার, ১/২ চা চামচ করে সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে।
  • ৫ বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত বাসক পাতার রস খাওয়ানো উপযুক্ত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়ানোই ভালো।
  • গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের বাসক পাতার রস জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে। তাই এদের ক্ষেত্রে এটি সেবন নিষিদ্ধ, চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।
৩. কতদিন খাবেনঃ বাসক পাতার রস সেবনের মেয়াদ নির্ভর করে আপনার শারীরিক সমস্যা, রোগের প্রকৃতি এবং শরীরের প্রতিক্রিয়ার ওপর। এটি একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান হওয়ায় দীর্ঘদিন খাওয়া সম্ভব হলেও কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিন পরপর সেবন করলে ভালো ফলাফল দেখা যায়। প্রতি মাসে ৫–৭ দিনের একটি কোর্স করলে শরীর ডিটক্সিফায় হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

কাশি, কফ, সর্দি বা শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে উপসর্গ দূর হলে খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তবে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ১৫ দিন পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারেন। যক্ষা বা দীর্ঘমেয়াদি রোগে সবসময় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে গ্রহণ করা উচিত। দীর্ঘমেয়াদে খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিক বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৪. কোন সমস্যায় কিভাবে খাওয়া উচিত

  • কাশি, সর্দি, কফঃ খালি পেটে সকালে বাসক পাতার রস খেলে শ্লেষ্মা দুর হয়।
  • শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানিঃ দিনে ২ বার খেলে শ্বাসপ্রশ্বাসে আরাম মেলে।
  • জন্ডিস ও লিভার ক্লিনজঃ প্রতিদিন সকালে খেলে লিভার পরিষ্কার হয় এবং রক্ত বিশুদ্ধ হয়।
  • মাসিক অনিয়মঃ ঋতুর আগের সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন সকালে ১ চা চামচ করে রস খাওয়া যেতে পারে।
  • দাঁতের ব্যথা বা মুখের দুর্গন্ধঃ রস মুখে নিয়ে ১-২ মিনিট রেখে কুলি করলে জীবাণু ধ্বংস হয়।
৫. কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতাঃ

  • গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য বাসক পাতার রস সেবন নিষিদ্ধ।
  • রস খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত ঝাল, তেল বা দুধজাত খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।
  • যাদের পেটে আলসার বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করুন।
  • যেকোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (যেমন বমি, পেটব্যথা, বা এলার্জি) দেখা দিলে সাথে সাথে বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বাসক পাতার রস তৈরির নিয়ম

বাসক পাতার রস তৈরির নিয়ম খুবই সহজ। বাসক একটি বহুল পরিচিত ওষুধি গাছ, যার পাতায় রয়েছে কাশি, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, জন্ডিস, রক্ত বিশুদ্ধিকরণ ও রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর উপাদান। বাসক পাতার সবচেয়ে উপকারী ও জনপ্রিয় ব্যবহার হলো এর রস তৈরি করে খাওয়া। এটি একটি প্রাকৃতিক ভেষজ ওষুধ, যা সঠিকভাবে প্রস্তুত করলে দেহের নানা সমস্যায় দ্রুত আরাম এনে দেয়। নিচে বাসক পাতার রস তৈরির নিয়ম তুলে ধরা হলোঃ

সবার আগে স্বাস্থ্যবান, সবুজ ও তরতাজা বাসক পাতা বেছে নিতে হবে। বেশি পুরোনো বা শুকিয়ে যাওয়া পাতা ব্যবহার না করাই ভালো। ৫–৭টি মাঝারি আকারের পাতা সংগ্রহ করুন। ভালোভাবে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন, যাতে ধুলাবালি বা কীটনাশকের সম্ভাবনা না থাকে। একটি পাটায় হাতে বাটতে পারেন বা আধুনিক পদ্ধতিতে ব্লেন্ডার ব্যবহার করতে পারেন। পাতা বাটার সময় সামান্য পানি (১–২ চা চামচ) মেশানো যেতে পারে, যাতে রস সহজে বের হয়।

বাটা বা ব্লেন্ড করা মিশ্রণটি একটি পরিষ্কার পাতলা কাপড় বা ছাঁকনির সাহায্যে ছেঁকে নিন। নিচে পড়া তরলটাই হলো বাসক পাতার রস। এটি তাজা অবস্থায়ই খাওয়া ভালো। বাসক পাতার রস একটু তেতো স্বাদের হওয়ায়, অনেকেই এটি মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান। ১ চা চামচ বাসক পাতার রসে আধা চা চামচ খাঁটি মধু মিশিয়ে খেলে এটি খেতে সহজ হয় এবং উপকারিতাও বাড়ে। চাইলে ১ ফোঁটা লেবুর রসও যোগ করা যেতে পারে, বিশেষ করে লিভার সমস্যায়।

বাসক পাতার ব্যবহার পদ্ধতি

বাসক পাতা বাংলার প্রাচীন ভেষজ ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর পাতা, ফুল, বাকল ও শিকড়ে রয়েছে নানাবিধ ঔষধি গুণ, যা বহু প্রজন্ম ধরে কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, জন্ডিস, রক্ত বিশুদ্ধকরণ, মাসিক অনিয়ম, দাঁতের ব্যথা, গাঁটের ব্যথা এমনকি যক্ষার মতো জটিল রোগেও ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে এই উপকারিতাগুলো পাওয়ার জন্য বাসক পাতাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানতে হবে। নিচে বাসক পাতার কিছু জনপ্রিয় ও কার্যকর ব্যবহার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো।
১. পাতার রসঃ বাসক পাতার রস হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদ ও প্রাচীন ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই রস শরীরের ভেতরের নানা রোগ প্রতিরোধে এবং উপসর্গ উপশমে অত্যন্ত কার্যকর। এতে আছে শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান যেমন ভ্যাসিকিন (Vasicine) ও ভ্যাসিসিনোন, যা কাশি, শ্বাসকষ্ট, জন্ডিস, কফ জমা, সর্দি, ফুসফুসের সংক্রমণ ইত্যাদিতে দারুণভাবে কাজ করে। ১-২ চা চামচ রস সকালে ও রাতে খালি পেটে, মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

২. বাসক চাঃ বাসক চা হলো বাসক পাতার নির্যাস দিয়ে তৈরি একটি প্রাকৃতিক ভেষজ পানীয়, যা কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, জন্ডিস, লিভার সমস্যাসহ নানা রোগে উপকারী। বাসক পাতায় থাকা শক্তিশালী উপাদান ভ্যাসিকিন (Vasicine) ও ভ্যাসিসিনোন (Vasicinone) শ্বাসনালীর কফ পরিষ্কার করে, প্রদাহ কমায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শুকনো পাতা ফুটিয়ে দিনে ১-২ বার পান করলে কাশি ও হজমে উপকার হয়।

৩. পেস্ট বা তেলঃ বাসক পাতা শুধু রস বা চা হিসেবে খাওয়ার জন্যই নয়, বাহ্যিকভাবে পেস্ট বা তেল হিসেবেও দারুণ কার্যকর। পাতা বেটে ব্যথার স্থানে লাগানো যায় বা তেলে গরম করে মালিশ করা যায়। বিশেষ করে গাঁটে ব্যথা, বাত, ত্বকের রোগ, ফোলা বা চর্মরোগে এর ব্যবহার অত্যন্ত উপকারী। ৮–১০টি তাজা বাসক পাতা পাতা ধুয়ে পাটায় বা ব্লেন্ডারে বেটে পেস্ট তৈরি করুন। প্রয়োজন হলে সামান্য পানি যোগ করতে পারেন। ব্যথা বা ফোলা স্থানে সরাসরি লাগান। ২০–৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। দিনে অন্তত ১–২ বার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

বাসক পাতার রস খাওয়ার সঠিক সময় ও পরিমাণ

বাসক পাতার রস একটি সহজলভ্য কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী প্রাকৃতিক ভেষজ টনিক। এটি যদি সঠিক নিয়মে এবং সঠিক মাত্রায় খাওয়া যায়, তাহলে অনেক কঠিন রোগের প্রতিরোধ এবং প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে এটি কাজ করে। তবে যেকোনো ভেষজ উপাদানের মতোই, সচেতনতা এবং নিয়ম মেনে ব্যবহার করাটাই সবচেয়ে জরুরি। নিচে বাসক পাতার রস খাওয়ার সঠিক সময় ও পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ 
সকালে খালি পেটেঃ সকালে খালি পেটে বাসক পাতার রস খাওয়া ভেষজ চিকিৎসায় অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। এই সময়টি বাসক পাতার রস খাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী। কারণ এই সময়ে আমাদের পরিপাকতন্ত্র সবচেয়ে সক্রিয় ও গ্রহণযোগ্য অবস্থায় থাকে, ফলে রসের উপাদানগুলো শরীরে দ্রুত শোষিত হয়ে কাজ করতে পারে। খালি পেটে খাওয়ার পরপরই ভারী খাবার না খাওয়াই ভালো অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। গ্যাস্ট্রিকের প্রবণতা থাকলে সামান্য গরম পানি বা ১ চিমটি আদা মিশিয়ে খেতে পারেন। মধু মিশিয়ে খেলে স্বাদ ভালো হয় এবং কার্যকারিতাও বাড়ে।

রাতে ঘুমানোর আগেঃ বাসক পাতার রস রাতে ঘুমানোর আগে খেলে এটি শরীর ও মন দুটোকেই স্বস্তি দেয় এবং নির্দিষ্ট কিছু রোগ উপশমে অতুলনীয় কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে যাদের রাতে কাশি বেড়ে যায় বা ঘুমের সমস্যা হয়, তাদের জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক ও নিরাপদ সমাধান। রাতের খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ১ ঘণ্টা পর বাসক পাতার রস খেতে হবে। এরপর অন্তত ১৫–২০ মিনিট পানি পান না করাই ভালো, যেন রস শরীরে সহজে কাজ করতে পারে। চাইলে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন, এতে স্বাদ ও উপকারিতা বাড়ে।

বাসক পাতার রস খাওয়ার সঠিক পরিমাণঃ

  • প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে ১–২ বার, প্রতিবার ১ চা চামচ (৫–১০ মি.লি.)। সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগে। বিশেষ করে কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকলে দিনে ২ বার যথেষ্ট।
  • ১০ বছরের বেশি শিশুদের জন্য দিনে ১ বার, ১/২ চা চামচ করে সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে।
  • ৫ বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত বাসক পাতার রস খাওয়ানো উপযুক্ত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়ানোই ভালো।
  • গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের বাসক পাতার রস জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে। তাই এদের ক্ষেত্রে এটি সেবন নিষিদ্ধ, চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।

বাসক পাতার রস যাদের খাওয়া উচিত নয়

বাসক পাতার রস প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে খুবই উপকারী হলেও এটি সবার খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ পরিস্থিতি ও রোগে এই রস শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই যেকোনো ভেষজ উপাদান সেবনের আগে ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এটি একটি শক্তিশালী ভেষজ রস হওয়ায় কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা ও রোগে এটি খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। তাই নিচে বাসক পাতার রস যাদের খাওয়া উচিত নয় তাদের তালিকা তুলে ধরা হলো।
১. গর্ভবতী নারীরাঃ গর্ভাবস্থায় বাসক পাতার রস একেবারেই নিষিদ্ধ। বাসকের মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে (যেমন – Vasicine), যা জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে। এর ফলে গর্ভপাত বা অকাল প্রসবের আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে এটি বিশেষভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। তাই গর্ভবতী নারীদের বাসক পাতার যেকোনো রূপ (রস, চা বা পেস্ট) সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

২. স্তন্যদানকারী মায়েরাঃ বাসকের তীব্র উপাদান স্তন্যপানকারী শিশুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।বাসক পাতার রসের কিছু উপাদান বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে পৌঁছাতে পারে, যা সদ্যোজাত শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাছাড়া নবজাতকের লিভার এখনও দুর্বল থাকে, তাই বাসকের সক্রিয় উপাদানগুলো দুধের মাধ্যমে শিশুর দেহে গিয়ে হজমের সমস্যা, অ্যালার্জি বা শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে। ফলে স্তন্যদানরত মায়েদেরও বাসক রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩. ৫ বছরের নিচে শিশুঃ শিশুদের শরীর তুলনামূলকভাবে দুর্বল ও সংবেদনশীল। বাসক পাতার রস শিশুদের জন্য অত্যন্ত তেতো ও শক্তিশালী হতে পারে। ৫ বছরের নিচে শিশুদের হজম ও লিভার সিস্টেম এখনও সম্পূর্ণ বিকশিত হয়নি। বাসক রসের কষা ও তীব্রতা তাদের জন্য পেটের সমস্যা, বমি, ডায়রিয়া বা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। ১২ বছর বয়সের নিচে বাসক রস না দেওয়াই উত্তম। তাই শিশুকে বাসক রস খাওয়ানোর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৪. গ্যাস্ট্রিক বা আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তিঃ গ্যাস্ট্রিক বা আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বাসক পাতার রস খাওয়া সতর্কতা ছাড়া বিপজ্জনক হতে পারে। যাদের দীর্ঘদিনের গ্যাস্ট্রিক, অম্লতা (Acidity) বা পাকস্থলীর আলসার আছে, তাদের জন্য বাসক পাতার রস বিপজ্জনক। বাসক পাতার রস পেটে জ্বালাপোড়া, গ্যাস, ডায়রিয়া বা বমির প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে। বাসকের তীব্র স্বাদ ও রাসায়নিক উপাদান পাকস্থলীকে উত্তেজিত করে, ফলে পেটব্যথা বা আলসার বেড়ে যেতে পারে।

৫. অ্যালার্জি প্রবণতা আছে এমন ব্যক্তিঃ যারা অ্যালার্জি প্রবণতা বা অতিসংবেদনশীলতা সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য বাসক পাতার রস হতে পারে অস্বস্তিকর ও বিপজ্জনক। বিশেষ করে যাদের বিভিন্ন ভেষজ, গন্ধ, খাবার বা ওষুধে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাদের শরীর বাসক পাতার সক্রিয় উপাদানগুলোর প্রতি নেতিবাচকভাবে সাড়া দিতে পারে। যেমন – ত্বকে র‍্যাশ, চুলকানি, গলা চুলচুলে ভাব, বমি বমি ভাব, এমনকি শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। যাদের এরকম অ্যালার্জির ইতিহাস আছে, তাদের বাসক রস সেবন না করাই নিরাপদ।

৬. কিডনি বা হৃদরোগে আক্রান্তরাঃ বাসক পাতার রস বহু শতাব্দী ধরে ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসলেও, কিডনি বা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে বাসক রস সেবনের ফলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। দীর্ঘদিন বাসক রস খেলে লিভার ও কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। যাদের কিডনি সমস্যা, ক্রিয়েটিনিন বেশি, কিংবা লিভার ইনফেকশন আছে, তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।

বাসক পাতার ক্ষতিকর দিক সমূহ

বাসক পাতার ক্ষতিকর কিছু দিক রয়েছে। বাসক পাতা আমাদের কাছে একটি পরিচিত প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান, যার নানা রকম উপকারিতা আছে এ কথা সবাই জানে। তবে অনেকেই জানেন না, এর ভুল ব্যবহার, অতিরিক্ত মাত্রা কিংবা বিশেষ অবস্থায় সেবন করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই উপকারিতার পাশাপাশি এর অপকারিতা সম্পর্কে জেনে সতর্কভাবে ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। নিচে সতর্কতাগুলো জানা অত্যন্ত জরুরি।

১. গ্যাস্ট্রিক বা পেটের সমস্যাঃ বাসক পাতার রস সাধারণত কাশি, সর্দি, জন্ডিস, শ্বাসকষ্ট ও রক্ত বিশুদ্ধকরণে উপকারী হলেও, কিছু মানুষের জন্য এটি গ্যাস্ট্রিক বা পেটের সমস্যা যেমন পেটে জ্বালাপোড়া, বুক জ্বালা বা অ্যাসিডিটি, খাবারের পর অস্বস্তি, ঢেকুর ওঠা বা পেট ফাঁপা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিক, অম্লতা (acidity), বা পেটের অস্বস্তির সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য বাসক পাতার রস সেবনে কিছু ঝুঁকি থাকে। বাসক পাতায় থাকা তিক্ত ও ক্ষারীয় উপাদান (যেমন ভ্যাসিকিন - vasicine) অনেক সময় পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপন্ন করে, যার ফলে গ্যাস্ট্রিকের উপসর্গ বেড়ে যেতে পারে।
২. বমি বা বমি বমি ভাবঃ বাসক পাতার রস অত্যন্ত তেতো, যা পাকস্থলী ও জিহ্বার স্বাদগ্রাহী কোষে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং বমির উদ্রেক ঘটায়। পেট ফাঁকা থাকলে রসের সক্রিয় উপাদান সরাসরি পাকস্থলীর প্রাচীরে গিয়ে বিরক্তি সৃষ্টি করে, ফলে বমি হতে পারে। যাদের পেট অতিরিক্ত সংবেদনশীল বা আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিক, অম্লতা বা হজমে সমস্যা আছে, তাদের শরীর সহজেই রসকে গ্রহণ করতে না পেরে বমি প্রতিক্রিয়া দেখায়। নির্ধারিত মাত্রার বেশি বাসক রস খেলে শরীর প্রতিক্রিয়ায় বমি বা বমি বমি ভাব তৈরি করতে পারে।

৩. ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানাঃ বাসক পাতার রস শরীর পরিষ্কার করে বলে পরিচিত, তবে অতিরিক্ত গ্রহণ করলে এটি অন্ত্রের গতি বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। বাসক পাতায় থাকা কিছু উপাদান হালকা রেচক হিসেবে কাজ করে, যা অতিরিক্ত বা অতিসংবেদনশীল অন্ত্রে ঢুকলে হজম ব্যবস্থায় ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। খালি পেটে রস খেলে এটি পাকস্থলীতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং দ্রুত অন্ত্রে নেমে গিয়ে ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যাদের হজম শক্তি দুর্বল বা আগে থেকেই পেটে সংক্রমণ, গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা আছে, তাদের শরীর বাসকের তীব্রতা সইতে না পেরে পাতলা পায়খানা করতে পারে।

৪. অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়াঃ বাসক পাতা ভেষজ চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। তবে অনেক সময় কিছু মানুষের শরীরে এটি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বাসক পাতায় থাকা Vasicine, Alkaloids ও অন্যান্য তীব্র রাসায়নিক উপাদানের প্রতি অনেকের শরীর প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। যাদের ফুল, পাতা, ধুলাবালি বা তেতো খাবারে অ্যালার্জি আছে, তাদের বাসক পাতার রস থেকেও অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এটি বাসক পাতার নির্দিষ্ট রাসায়নিক উপাদানের প্রতি শরীরের অতিসংবেদনশীলতা (hypersensitivity) থেকে সৃষ্টি হয়।

৫. গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিঃ বাসক পাতার অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো এটি জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে। বাসক পাতায় থাকা প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলো Vasicine। এই উপাদানটি প্রাকৃতিকভাবে uterine stimulant অর্থাৎ জরায়ুকে সংকুচিত করার ক্ষমতা রাখে। ফলে এটি গর্ভধারণকালীন জরায়ুর স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যার কারণে গর্ভপাত বা অকাল প্রসবের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই এই সময়ে বাসকের যেকোনো রূপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত এবং বিকল্প ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা বুদ্ধিমানের কাজ।

৬. রক্তচাপ ও হৃদরোগে ঝুঁকিঃ বাসক পাতায় থাকা প্রধান রাসায়নিক উপাদান হলো Vasicine, যা শরীরের স্নায়ুতন্ত্র এবং রক্তনালীর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। Vasicine রক্তনালীতে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। যারা আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এছাড়া এতে থাকে alkaloids, flavonoids, essential oils – যেগুলো শরীরের রক্তপ্রবাহ ও স্নায়ু উত্তেজনায় ভূমিকা রাখে। যার ফলে হৃদস্পন্দনের গতি (pulse rate) বেড়ে যেতে পারে। এতে হৃদরোগীর ক্ষেত্রে বুক ধড়ফড়, অনিয়মিত স্পন্দন বা ঘাম হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

৭. দীর্ঘমেয়াদে লিভার ও কিডনির উপর প্রভাবঃ যদিও বাসক লিভার পরিষ্কারে সহায়ক, তবু অতিরিক্ত এবং দীর্ঘদিন খেলে কিছু ক্ষেত্রে লিভার ও কিডনির কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। বাসকে থাকা Vasicine, Vasicinone, alkaloids, এবং essential oils শরীরে তীব্রভাবে কাজ করে। এগুলোর প্রভাব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বিশেষত লিভার ও কিডনির কার্যক্ষমতার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ ভেষজ উপাদান শরীরে জমা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। শরীরের সুরক্ষায় এই ভেষজ উপাদানটি সঠিক নিয়ম, পরিমাণ ও নির্দিষ্ট সময় মেনে খাওয়াই শ্রেয়।

শেষকথাঃ বাসক পাতার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক

বাসক পাতা প্রাচীনকাল থেকে নানা রোগের প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত একটি মূল্যবান ভেষজ উদ্ভিদ। এর ঔষধি গুণাগুণ যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি কিছু সতর্কতামূলক দিকও রয়েছে। বাসক পাতায় থাকা ভাসিসিন, অ্যালক্যালয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট ও যক্ষ্মার মতো শ্বাসনালী সংক্রান্ত রোগে কার্যকর। এছাড়া এটি রক্ত বিশুদ্ধকরণ, পেটের বিভিন্ন সমস্যা ও বাতের ব্যথা উপশমেও সাহায্য করে।

বাসক পাতা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে। তবে, বাসক পাতার ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অপরিহার্য। গর্ভবতী নারীদের জন্য বাসক পাতার রস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এটি জরায়ু সংকোচন ঘটিয়ে গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। এছাড়া গ্যাস্ট্রিক বা আলসারে ভুগা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বাসক রস পেটের জ্বালাপোড়া ও অম্লতা বাড়াতে পারে। 

দীর্ঘমেয়াদি সেবনে লিভার ও কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাও থাকে। যারা উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে ভুগছেন, তাদের জন্য বাসক পাতার রস খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এটি রক্তচাপ বাড়াতে পারে। তাই বাসক পাতা একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ঔষধ হলেও, এর ব্যবহার চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে এবং সঠিক মাত্রায় হওয়া উচিত। আশা করছি, বাসক পাতার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সমূহ জানতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url