পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আজকের পোস্টে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করেন অথবা কনটেন্ট ক্রিয়েটর। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে দেশের বাইরে থেকে পেমেন্ট বাংলাদেশের রিসিভ করে থাকেন। আর সেই পেমেন্ট নেওয়ার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো পেওনিয়ার একাউন্ট।
পেওনিয়ার-একাউন্ট-খোলার-নিয়ম
আপনি চাইলে পেওনিয়ার একাউন্টের মাধ্যমে যেকোনো দেশ থেকে পেমেন্ট রিসিভ করতে পারবেন।পেওনিয়ার হচ্ছে একটি অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসিং প্লাটফর্ম। পেওনিয়ার ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস যেমন ফাইভার, আপওয়ার্ক ইত্যাদি থেকে ডলার ট্রান্সফার করতে পারবেন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

পেওনিয়ার কি

পেওনিয়ার হলো একটি নিউইয়র্ক ভিত্তিক ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি যা দ্রুত অনলাইন মানি ট্রান্সফার ও ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা প্রদান করে থাকে। বিশেষ করে ব্লগার ও ফ্রিল্যান্সারগণ এই সেবা ব্যবহার করে থাকেন। পেওনিয়ারকে বর্তমানে পেপাল এর সেরা বিকল্প হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে পেপাল এর অফিসিয়াল সেবা না থাকার কারণে এখানে পেওনিয়ার এর জনপ্রিয়তা অত্যন্ত বেশি।

বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সার এবং বৈদেশিক ব্যবসায়ী ও সেবা প্রদানকারীদের বিশ্বব্যাপী কোম্পানি এবং মার্কেটপ্লেসে পেমেন্ট গ্রহণ ও প্রদানের জন্য পেওনিয়ার একাউন্ট সহজলভ্য উপায়।  এটি প্রায় ২০০ টিরও বেশি দেশে ১৫০ টিরও বেশি কারেন্সিতে গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন সেবা দিয়ে থাকে। বিভিন্ন মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানি যেমনঃ গুগল, অ্যামাজন, এয়ারবিএনবি ও ফাইভার, পেমেন্ট মেথড হিসেবে পেওনিয়ার ব্যবহার করে থাকে।

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম খুব সহজ। আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করেন অথবা কনটেন্ট ক্রিয়েটর। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে দেশের বাইরে থেকে পেমেন্ট রিসিভ করেতে হয়। আর সেই পেমেন্ট নেওয়ার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো পেওনিয়ার একাউন্ট। আপনি চাইলে পেওনিয়ার একাউন্টের মাধ্যমে যেকোনো দেশ থেকে পেমেন্ট রিসিভ করতে পারবেন। নিচে ধাপে ধাপে একাউন্ট খোলার নিয়ম তুলে ধরা হলোঃ
পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পেওনিয়ার ওয়েবসাইট থেকে রেজিস্ট্রেশন পেজে প্রবেশ করুন। এখানে ক্লিক করে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার পেজে প্রবেশ করতে পারবেন।

এরপর আপনি কি পেশায় আছেন তা জানতে চাওয়া হবে। ফ্রিল্যান্সার, এজেন্সি, সার্ভিস প্রোভাইডার, ইত্যাদি অপশন প্রদান করা হবে। প্রদর্শিত কোনো পেশা আপনার সাথে না মিললে সেক্ষেত্রে “ব্যক্তি” সিলেক্ট করেও পেওনিয়ার একাউন্ট খোলা যাবে।

এরপর কি কাজে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে চান, তা জানতে চাওয়া হবে। “I’m looking to get paid by international clients or freelance marketplaces” ও “Pay my service providers and suppliers” অপশন থেকে যেটি আপনার দরকারের সাথে মিলে সেটি সিলেক্ট করুন। এরপর আপনার মাসিক আয়ের পরিমাণ সিলেক্ট করুন ও “Register” অপশনে ক্লিক করুন।

এরপর আপনি Individual নাকি Company হিসেবে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে চান তা জানতে চাওয়া হবে। প্রদর্শিত অপশন থেকে আপনার যথাযথ অপশন সিলেক্ট করুন। উল্লেখ্য যে আপনি যদি Company সিলেক্ট করেন তাহলে কোম্পানির বিভিন্ন অফিসিয়াল তথ্য দিতে হবে।

এরপর আসবে ব্যক্তিগত তথ্য পূরণের পালা। সরকার কতৃক ইস্যুকৃত কোনো আইডি, যেমনঃ এনআইডি বা পাসপোর্ট এর সাথে মিল রেখে নাম, জন্মতারিখ, ইমেইল এড্রেস, ইত্যাদি তথ্য প্রদান করুন। এরপর পরবর্তী স্ক্রিনে আপনার দেশ, ঠিকানা, শহর, পোস্টাল কোড প্রদান করতে বলা হবে।

এরপর আসবে মোবাইল ভেরিফিকেশনের পালা। বর্তমানে সচল আছে আপনার এমন একটি ফোন নাম্বার প্রদান করুন। উল্লেখ্য যে এই নাম্বারটি পরবর্তীতে পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে বা কোনো তথ্য আপডেট করতে কাজে আসবে। ফোন নাম্বার প্রদানের পর ফোনে একটি ভেরিফিকেশন কোড আসবে যা এসএমএস আসার ৩০সেকেন্ডের মধ্যে প্রদান করতে হবে। ওটিপি কোড প্রদান করে Next অপশনে ক্লিক করুন।

পরের পেজে সিকিউরিটি ডিটেইলস পূরণ করতে হবে। প্রথমে পেওনিয়ার একাউন্টে একটি পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। এরপর আপনার আইডেন্টিটি ডকুমেন্ট হিসেবে ন্যাশনাল আইডি, পাসপোর্ট বা ড্রাইভার লাইসেন্স প্রদান করুন। আপনার স্থানীয় নাম, অর্থাৎ বাংলা ভাষায় নাম প্রদান করুন। ক্যাপচা পূরণ করে Next এ ক্লিক করুন।

পেওনিয়ার একাউন্টে থাকা অর্থ ব্যাংক থেকে তুলতে হলে অবশ্যই ব্যাংক ডিটেইলস প্রদান করতে হবে। আপনার ব্যাংক একাউন্টের ধরন, ব্যাংকের নাম, একাউন্টের নাম ও ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার প্রদান করুন। এরপর শর্তসমূহে সম্মতি প্রকাশ করতে Agree ও এরপর Submit বাটনে ক্লিক করুন।

সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পর আপনার পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার রিকোয়েস্ট গৃহীত হবে। এরপর একাউন্ট রিভিউয়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে। পরবর্তী তিন বিজনেস ডে এর মধ্যে ইমেইলের মাধ্যমে একাউন্ট রিভিউ এর কনফার্মেশন পেয়ে যাবেন। একাউন্ট কনফার্মেশনের ইমেইল পাওয়ার পর পরবর্তী ধাপে যেতে পারবেন।

একাউন্ট এপ্রুভাল হওয়ার পর পেওনিয়ার একাউন্ট আপ টু ডেট রাখতে সঠিক ডকুমেন্ট প্রদান করতে হবে। পেওনিয়ার একাউন্টে ইমেইল ও পাসওয়ার্ড প্রদান করে লগিন করুন। এরপর Settings থেকে Verification Center অপশনে প্রবেশ করুন। এরপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সম্পর্কিত নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। যে ডকুমেন্ট চাওয়া হয়েছে তা আপলোড করে Submit এ ক্লিক করুন।

আপনার প্রদত্ত সকল ডকুমেন্ট সফলভাবে গ্রহণ করা হলে কয়েকদিনের মধ্যে ‘Your Payoneer account is successfully approved.’ লেখাযুক্ত একটি ইমেইল পেয়ে যাবেন। এভাবে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে খুব সহজে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন।

পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে যেসকল কাগজপত্র প্রয়োজন

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়বে। উক্ত কাগজপত্র গুলো ছাড়া আপনি সফলভাবে পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারবেন না। তবে, প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের নীতিমালা ভেদে ডকুমেন্টের requirement ভিন্ন হতে পারে। কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করে আপনি সহজেই পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারবেন। পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে বাংলাদেশে সাধারণত নিচের কাগজপত্র ও তথ্যাদি প্রয়োজন হয়ঃ
  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা পাসপোর্টঃ আপনার পরিচয় যাচাইয়ের জন্য বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের স্ক্যান কপি প্রয়োজন হবে। তবে যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন।
  • ব্যাংক একাউন্টের তথ্যঃ বাংলাদেশে আপনার নামে খোলা একটি স্থানীয় ব্যাংক একাউন্টের তথ্য প্রদান করতে হবে, যাতে আপনি পেওনিয়ার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারেন।
  • ঠিকানা প্রমাণঃ সাম্প্রতিক (সর্বোচ্চ ৩ মাস পুরনো) ইউটিলিটি বিল (গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, ল্যান্ডলাইন ফোন, ইন্টারনেট বা কেবল টিভি বিল) অথবা ব্যাংক/ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট। বিলে আপনার নাম ও ঠিকানা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে, যা পেওনিয়ারে রেজিস্ট্রেশনের সময় প্রদত্ত ঠিকানার সাথে মিলবে।
  • ইমেইল ঠিকানা ও ফোন নম্বরঃ যাচাইয়ের জন্য একটি সক্রিয় ইমেইল ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর প্রয়োজন।
  • ফ্রিল্যান্সিং বা ব্যবসার প্রমাণঃ যদি আপনি ফ্রিল্যান্সার, ই-কমার্স বিক্রেতা বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হন, তবে আপনার কাজের প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট মার্কেটপ্লেস প্রোফাইলের লিংক, ওয়েবসাইট বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদান করতে হতে পারে।
পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার সময় এই তথ্যগুলো সঠিকভাবে প্রদান করলে আপনার আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে। তবে, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত তথ্য বা কাগজপত্রের প্রয়োজন হতে পারে। সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনার জন্য পেওনিয়ারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা কাস্টমার সাপোর্টের সাথে যোগাযোগ করা উত্তম।

পাসপোর্ট ছাড়াই পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

পাসপোর্ট ছাড়াই পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম বেশ সহজ। অনেকে মনে করেন, পাসপোর্ট ছাড়া পেওনিয়ার একাউন্ট খুলা সম্ভব নয়, এটি তাদের একান্ত ভুল ধারনা। পাসপোর্ট ছাড়াও আপনি বাংলাদেশ থেকে সহজেই পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে পারবেন। পেওনিয়ার বিভিন্ন ধরনের সরকারি আইডি গ্রহণ করে, যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং পাসপোর্ট। তাহলে চলুন দেখে নিই পাসপোর্ট ছাড়া একাউন্ট খোলার নিয়মঃ

  • প্রথমে পেওনিয়ার লিখে গুগলে সার্চ করে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে www.payoneer.com প্রবেশ করতে হবে।
  • অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা পর সাইনআপ অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে।
  • এরপর কোন কাজের জন্য একাউন্ট খুলবেন সেটি সিলেক্ট করতে হবে।
  • ব্যক্তিগত হলে (Individual) বা ব্যবসায়িক হলে (Business) একাউন্ট নির্বাচন করুন।

  • এরপর আপনি কত টাকা আয় করেন সেই অনুযায়ী যেকোনো একটি অপশন সিলেক্ট করতে হবে।
  • " ০ ইউ এস ডলার, আমি শুধু শুরু করছি" অর্থাৎ প্রথম অপশন সিলেক্ট করা যাবে না।
  • এরপর আপনার সামনে নিবন্ধন অপশন চলে আসবে।
নিবন্ধন অপশনটি আসার পরই মূলত আপনার আসল কাজ শুরু। এখানে আকাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে ৪টি ধাপে ফর্ম পূরণ করতে হবে। আপনি যদি কোন এক জায়গায় ভুল তথ্য দেন তাহলে পরবর্তীতে আপনার একাউন্ট লক লেগে যেতে পারে। তাই সঠিক তথ্য দিয়ে ফর্ম গুলো পূরণ করতে হবে। প্রথম ধাপে আপনার নাম, ইমেইল অ্যাড্রেস ও জন্ম তারিখ দিতে হবে। উক্ত তথ্য গুলো অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পরে অনুযায়ী দিতে হবে।

এরপরের ধাপে যাওয়ার পর আপনাকে আপনার ঠিকানা সঠিকভাবে দিতে হবে। আপনার দেশ, জেলা, বিভাগ ইত্যাদি অ্যাড্রেস ফর্মে চাইতে পারে। আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের পেছনের অংশে এই ঠিকানা গুলো দেওয়া থাকে। তাই জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী ঠিকানা গুলো নির্ভুল করে পূরণ করতে হবে। ঠিকানা দেওয়া হয়ে গেলে এবার আপনাকে আপনার একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে হবে। উক্ত মোবাইল নাম্বার অবশ্যই সচল থাকতে হবে। কেননা এই নাম্বারে ওটিপি আসতে পারে।

দ্বিতীয় ধাপ সফল ভাবে সম্পূর্ন করলে এর পরের ধাপ অর্থাৎ তৃতীয় ধাপে আপনাকে আপনার একাউন্টের নিরাপত্তার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলবে। প্রথমেই আপনার ওই ইমেইল অ্যাড্রেসটি আবারো দিতে হবে এবং সেই সাথে একটি পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। পাসওয়ার্ডটি অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে। এরপর একটি সিকিউরিটি প্রশ্ন সেট করে তার উত্তর নিজ মত দিয়ে দিতে হবে। এরপর আইডি টাইপ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র সিলেক্ট করতে হবে এবং জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার দিতে হবে। এরপর বাংলাদেশ সিলেক্ট করে নেক্সট করে দিতে হবে।

সর্বশেষ ধাপে আপনাকে আপনার লোকাল ব্যাংক একাউন্টের অ্যাড্রেস দিতে হবে। এর জন্য প্রথমে একাউন্টের ধরন পাসসোনাল সিলেক্ট করতে হবে এবং দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সিলেক্ট করতে হবে। এরপর আপনার লোকাল ব্যাংক একাউন্ট কোন ব্যাংকে আছে সেটি দেওয়ার পর আপনার ব্যাংকের ব্রাঞ্চ এর নাম দিতে হবে। এরপর নিচে যদি আবার একটি খালি ঘর আসে তাহলে সেখানে আইডি সিলেক্ট করে আপনার জাতীয় পরিচয় পরের নাম্বার দিয়ে দিতে হবে। সব শেষে দুইটি টিক মার্ক করে সাবমিট করে দিলেই আপনার একাউন্ট খোলার কাজ শেষ।

পাসপোর্ট ছাড়া Payoneer অ্যাকাউন্ট খোলার ভিডিও গাইড (বাংলায়)। সঠিকভাবে সকল তথ্য প্রদান করলে, পেওনিয়ার কর্তৃপক্ষ আপনার একাউন্ট দ্রুত যাচাই করে দেবে। আপনি যদি তথ্যগুলো সঠিকভাবে দিয়ে থাকেন তাহলে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনার একাউন্ট অ্যাক্টিভ হয়ে যাবে। যদি অতিরিক্ত ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়, তবে তারা আপনাকে ইমেইলের মাধ্যমে জানাবে। আবেদন করার ৩ দিনের মত সময় লাগতে পারে আপনার একাউন্ট অ্যাক্টিভ হতে।

পেওনিয়ার একাউন্ট খুলে ৫০ ডলার বনাস পাওয়ার উপায়

পেওনিয়ার একাউন্ট খুলে ৫০ ডলার বনাস পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। বিশষ করে নতুনদের এই শর্তগুলো পূরণ করতে অনেক সময় লাগতে পারে। প্রথমত নতুন পেওনিয়ার একাউন্ট খুলে ৫০ ডলার নেওয়ার জন্য কারো রেফারেল আইডি দিয়ে একাউন্ট খুলতে হবে। দ্বিতীয়ত একাউন্ট খোলার পর ১০০০ ডলার পেওনিয়ার একাউন্টে প্রবেশ করাতে হবে। উক্ত শর্তগুলো পূরণ করতে পারলে আপনি পেওনিয়ার থেকে ৫০ ডলার বোনাস নিতে পারবেন।

কীভাবে এই $50 বোনাস পাওয়া যায়ঃ Payoneer বলে, “When you sign up using a referral link, and receive $1,000 or more in payments into your Payoneer account within 12 months, both you and the referrer get $50 each.” অর্থাৎ আপনি যদি কারো রেফার করা লিংকে সাইন আপ করেন, তারপর আপনার একাউন্টে $1,000 ডলার বা তার বেশি টাকা ঢোকে (এক বা একাধিক ট্রান্সফারে),তাহলে আপনি এবং যিনি রেফার করেছেন দুজনেই $50 বোনাস পাবেন।

রেফারেল লিংক সংগ্রহঃ আপনার কোনো বন্ধু বা পরিচিত যাদের বৈধ (ফ্রিল্যান্সিং/বিজনেস) পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট আছে, তাদের কাছ থেকে রেফার লিংক চাইতে পারেন। লিংক সাধারণত https://www.payoneer.com/friend-referral/?referrer=XYZ123 এমন হবে। উপরের দেওয়া রেফারাল লিংকে ক্লিক করে সাইন আপ করুন। আপনি নিজে সরাসরি Payoneer.com থেকে রেজিস্টার করলে বোনাস পাবেন না, অবশ্যই রেফারাল লিংক ব্যবহার করতে হবে।

কিভাবে $1,000 রিসিভ করবেনঃ আপনাকে ১ বছরের মধ্যে Payoneer-এ মোট $1,000 USD বা সমপরিমাণ অর্থ পেমেন্ট নিতে হবে। যেকোনো মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করলে তা গণ্য হবে যেমন-Freelancing Site (Fiverr, Upwork, Freelancer.com), Direct Clients (Request a payment), Affiliate Networks (Amazon, CJ, etc.), Marketplaces (Envato, GettyImages, etc.) ব্যাংক ট্রান্সফার বা ব্যক্তিগত অর্থ পাঠালে বোনাস যোগ্যতা পাবেন না। যখন $1,000 সফলভাবে আপনার একাউন্টে জমা হবে, Payoneer আপনাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে $50 বোনাস দেবে। আপনি এই বোনাস “Activity > Transactions” মেনুতে দেখতে পাবেন।

বিকাশ অ্যাপ থেকে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

বিকাশ অ্যাপ থেকে পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম। বিকাশ অ্যাপ থেকে সরাসরি পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার সুবিধা এখন বাংলাদেশে চালু হয়েছে, বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন তাদের জন্য এটি খুবই সহজ একটি পদ্ধতি। এখানে আপনি বিকাশ অ্যাপ থেকেই কয়েকটি ধাপে Payoneer অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন এবং পরবর্তীতে সহজেই ফ্রিল্যান্সিং ইনকাম উত্তোলন করতে পারবেন।
বিকাশ-অ্যাপ-থেকে-পেওনিয়ার-একাউন্ট-খোলার-নিয়ম
১. বিকাশ অ্যাপ থেকে নতুন পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে বিকাশ হোম পেজের রেমিটেন্স আইকনে ট্যাপ করুন। রেমিটেন্স সেকশনে আপনি “Payoneer” নামের একটি বাটন দেখতে পাবেন, এতে ক্লিক করুন।

২. এখন “Register” নামে একটি বাটন দেখাবে এখানে ট্যাপ করলে আপনাকে Payoneer-এর রেজিস্ট্রেশন ফর্মে নিয়ে যাবে। অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন ফর্মে আপনার কাছ থেকে নিচের তথ্যগুলো চাওয়া হবে-

  • পূর্ণ নামঃ জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ইংরেজিতে দিন
  • জন্ম তারিখঃ (DD/MM/YYYY ফরম্যাটে)
  • ইমেইলঃ Gmail বা Yahoo যেটা সচল আছে
  • বর্তমান ঠিকানাঃ ইংরেজিতে ঠিকানা লিখুন (যেমন: 123, ABC Road,Rajshahi )
  • শহর/জেলাঃ যেটা আপনার ঠিকানার সাথে মেলে
  • মোবাইল নম্বরঃ বিকাশ রেজিস্টারড নম্বর
  • পরিচয়পত্রঃ আপনার NID কার্ড
  • পেশাঃ Freelance, IT, বা যেটা আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
৩. ফর্ম পূরণ করে সাবমিট করলে, Payoneer থেকে একটি ইমেইল ভেরিফিকেশন মেইল পাঠানো হবে। সেখানে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে আপনার ইমেইল Confirm করুন।

৪. Payoneer টিম আপনার দেওয়া তথ্য যাচাই করে সব ঠিক থাকলে ১ থেকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে অ্যাকাউন্ট অ্যাপ্রুভ করবে। আপনাকে ইমেইলে জানানো হবে Your Payoneer Account Has Been Approved.

পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড পাওয়ার সহজ উপায়

পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড হলো একটি আন্তর্জাতিক প্রিপেইড কার্ড যার মাধ্যমে আপনি ATM থেকে টাকা তুলতে পারেন, অনলাইনে/অফলাইনে যেকোনো দেশে কেনাকাটা করতে পারেন, এমনকি ফ্রিল্যান্স আয়ের টাকা সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন। Payoneer থেকে ফ্রি মাস্টার কার্ড পাওয়ার জন্য আপনাকে কিছু সহজ ধাপ অনুসরণ করতে হবে। এখন জেনে নেওয়া যাক পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড পাওয়ার সহজ উপায়। নিচে আমরা সেই ধাপগুলো উল্লেখ করেছি-

ধাপ ১ঃ পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খোলাঃ প্রথমে আপনাকে Payoneer এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে এবং একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য নিচের তথ্যগুলো প্রয়োজন-

  • পূর্ণ নাম
  • ইমেইল অ্যাড্রেস
  • পাসওয়ার্ড
  • ঠিকানা এবং ফোন নম্বর
  • ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তথ্য
ধাপ ২ঃ পরিচয় যাচাইকরণঃ আপনার Payoneer অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পর, পরিচয় যাচাইকরণের জন্য আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি আপলোড করতে হবে। এই ধাপটি সম্পন্ন হলে আপনার অ্যাকাউন্টটি যাচাই হবে।

ধাপ ৩ঃ প্রথম অর্থ গ্রহণঃ পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড ফ্রি পেতে আপনাকে অন্তত $100 অর্থ গ্রহণ করতে হবে। অর্থপ্রাপ্তির পর আপনি ফ্রি মাস্টার কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নিচের মাধ্যমগুলো থেকে অর্থ গ্রহণ করতে পারেন-

  • Amazon FBA, Fiverr, Upwork, বা অন্য ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস থেকে
  • আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্ট থেকে ইনভয়েস তৈরি করে অর্থ গ্রহণ
  • ই-কমার্স সাইটের পেমেন্ট
ধাপ ৪ঃ পেওনিয়ার মাস্টার কার্ডের জন্য আবেদনঃ প্রথম $100 গ্রহণ করার পর, আপনার Payoneer অ্যাকাউন্টের 'Card' সেকশনে গিয়ে আপনি ফ্রি মাস্টার কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার জন্য আপনার ঠিকানা প্রদান করতে হবে যেখানে কার্ডটি পাঠানো হবে। সাধারণত ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে আপনার কার্ড পৌঁছে যাবে।

পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা আনার নিয়ম

পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা আনার নিয়ম অনেক সহজ। পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা আনার জন্য প্রথমে বিকাশ অ্যাপ থেকে পেওনিয়ার একাউন্টে ইউজার নেইম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করুন। এরপর বিকাশের সাথে পেওনিয়ার একাউন্ট লিংক করার জন্য বিকাশকে পেওনিয়ার একাউন্টে এক্সেস দিন। সবশেষে আপনার প্রয়োজন ও সুবিধামত ২৪/৭ সময়ে পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা আনতে পারবেন, দেখে নিন পুরা প্রক্রিয়াটি।

  • পেওনিয়ার থেকে বিকাশে টাকা আনার জন্য প্রথমে আপনাকে যথারীতি বিকাশ মোবাইল নাম্বার এবং পিন দিয়ে বিকাশ অ্যাপে লগইন করুন। লগইন করার পর, আরও বা More অপশনে প্রবেশ করুন। এরপর, রেমিটেন্স (Remittance) অপশনে প্রবেশ করুন। এখান থেকে পেওনিয়ার একাউন্ট সিলেক্ট করুন।
  • এখন আপনার Payoneer Account টি bKash একাউন্টের সাথে লিংক করতে হবে। এজন্য আপনার পেওনিয়ার একাউন্ট লিংক করুন (Link my Payoneer Account) বাটনে ট্যাপ করুন। তারপর, পেওনিয়ার ইউজার আইডি/ ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করুন। পেওনিয়ার একাউন্ট বিকাশের সাথে যুক্ত করার জন্য অবশ্যই বিকাশ একাউন্টের নাম ও পেওনিয়ার একাউন্টের নাম একই হতে হবে।
  • বিকাশের সাথে পেওনিয়ার একাউন্ট লিংক করার জন্য আপনি চাইলে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করতে পারেন। এজন্য Turn on বাটনে ট্যাপ করুন। এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য (Recovery Code) রিকভারি কোডটি নিরাপদ স্থানে লিখে রাখুন।
  • এরপর আপনার পেওনিয়ার একাউন্টের মোবাইল নম্বরে একটি OTP ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হবে। ভেরিফিকেশন কোডটি লিখে Submit করুন। এরপর bKash কে পেওনিয়ার একাউন্টে এক্সেস প্রদানের জন্য আপনার অনুমতি চাওয়া হবে।
  • অনুমতি দিতে Agree সম্মত বাটনে ট্যাপ করুন। আপনি প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করার পরে, আপনাকে জানানো হবে যে আপনার Payoneer অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করা হয়েছে। আপনার বিকাশ অ্যাপে, আপনি যে বৈদেশিক মুদ্রা উত্তোলন করতে চান তা সিলেক্ট করুন। তারপর কি পরিমাণ উত্তোলন করতে চান তা লিখুন। বিকাশে উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিনিময় মূল্য কমপক্ষে ১০০০ টাকা বা তার বেশি হতে হবে।
  • এরপর আপনি বাংলাদেশি টাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রুপান্তরিত পরিমাণ দেখতে পারবেন। আপনি উত্তোলন করতে রাজি থাকলে, Tap to Continue বাটনে ট্যাপ করুন। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই লেনদেনটি সম্পন্ন হবে। আলাদাভাবে এই পরিষেবাটি পেতে আর কোনো ফর্ম পূরণ করার কোনো ঝামেলা নেই। বরং বিনামূল্যে যেকোনো জায়গা থেকে ২৪ ঘন্টাই এই সেবা পাওয়া যাবে। এর ফলে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিদেশ থেকে বিকাশে রেমিটেন্স আনা সহজ হল।

ফ্রিল্যান্সারদের পেওনিয়ার ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা

ফ্রিল্যান্সারদের পেওনিয়ার ব্যবহারের যেমন রয়েছে সুবিধা ঠিক তেমনি রয়েছে অসুবিধা। পেওনিয়ার বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য একটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট মাধ্যম। যদি আপনি নিয়মিত ডলার ইনকাম করেন তাহলে পেওনিয়ার ব্যবহার করলে খুব সহজে, দ্রুত ও নিরাপদভাবে আপনার আয় উত্তোলন করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সারদের Payoneer ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলোঃ
ফ্রিল্যান্সারদের-পেওনিয়ার-ব্যবহারের-সুবিধা-ও-অসুবিধা
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেওনিয়ার ব্যবহারের সুবিধাঃ ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেওনিয়ার ব্যবহারের সুবিধাগুলো নিচে সহজভাবে ও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো, যাতে আপনি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারেন কেন এটি আপনার জন্য উপকারী হতে পারেঃ

১. বিশ্বব্যাপী পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতাঃ পেওনিয়ারের মাধ্যমে বিশ্বের দুইশটিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল থেকে পেমেন্ট গ্রহণ করা যায়। ফলে সারা বিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটি একটি খুব দারুণ অপশন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন ফ্রিল্যান্সারের কথা চিন্তা করুন, যিনি ইউরোপ, এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার ক্লায়েন্টের জন্য কাজ করেন- তিনি খুব সহজেই নিজের মুদ্রায় পেমেন্ট নিতে পারবেন। তাকে মুদ্রা পরিবর্তনের জন্য বাড়তি খরচ করতে হবে না।

২. অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় পেওনিয়ারের লেনদেন ফি কমঃ পেওনিয়ারের ট্র্যাঞ্জাকশান ফি প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় কম। ফলে যারা বড় আকারের পেমেন্ট গ্রহণ করেন, তাদের জন্য এটি খুবই ভালো অপশন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পেওনিয়ারের চার্জ ২ শতাংশ থেকে শুরু করে ফ্ল্যাট ১.৫ মার্কিন ডলার/পাউন্ড/ইউরো। একজন ফ্রিল্যান্সার যিনি প্রতি মাসে একাধিক ক্লায়েন্টের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেন, তিনি পেওনিয়ার ব্যবহার করে লেনদেনের ফিতে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করতে পারেন।

৩. অনেকগুলো মুদ্রায় লেনদেনের সুবিধাঃ পেওনিয়ারে একাধিক মুদ্রায় লেনদেন করা যায়। ফলে যারা বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করেন, তাদের জন্য খুবই সহায়ক । জাপান, জার্মানি এবং মেক্সিকোর ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করা ফ্রিল্যান্সাররা ইয়েন, ইউরো এবং পেসোতে পেমেন্ট পেতে এবং মুদ্রা রূপান্তর খরচ এড়াতে পেওনিয়ার ব্যবহার করতে পারেন।

৪. বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া দ্রুততরঃ কোনো কারণে পেমেন্ট আটকে গেলে পেওনিয়ারে তুলনামূলক দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান করতে পারবেন এবং পেমেন্ট রিসিভ করতে পারবেন। আবার পেওনিয়ারের বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া ব্যবহার ও বোঝা তুলনামূলক সহজ, যা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ইতিবাচক। অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় প্রক্রিয়া সহজ ও স্পষ্ট হওয়ায় পেওনিয়ারে স্ক্যামারদের ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা কম।

৫. অ্যাকাউন্ট খোলা সহজঃ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট সেট আপ করা বেশ সহজ। যেকোনো নতুন ফ্রিল্যান্সারও কয়েক মিনিটের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খুলতে ও পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন। আবার অ্যাকাউন্ট খুলতেও সাধারণ কিছু তথ্য প্রয়োজন, অনেকে বেশি তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অ্যাকাউন্ট খোলার পরই আপনি ক্লায়েন্টের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে পেমেন্ট রিকোয়েষ্ট পাঠাতে পারবেন।

এছাড়া তাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ফিচার ও সেবার ব্যবহার সম্পর্কে অনেকগুলো টিউটোরিয়াল আছে। পেওনিয়ারের সহজ সেট আপ প্রক্রিয়া ফ্রিল্যান্সারদের জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট। যারা অনলাইনে পেমেন্ট গ্রহণে নতুন বা ব্যস্ততার কারণে জটিল নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় নেই, তাদের জন্য এটি খুব ভালো অপশন।

৬. পেওনিয়ার নিরাপদঃ ফ্রিল্যান্সার হিসাবে পেওনিয়ার ব্যবহারের আরেকটি বড় সুবিধা হলো এর কঠোর জালিয়াতি বিরোধী সুরক্ষা। পেওনিয়ার তার ব্যবহারকারীদের জালিয়াতি এবং অননুমোদিত লেনদেন থেকে রক্ষা করার জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে উন্নত জালিয়াতি সনাক্তকরণ অ্যালগরিদম, যার ফলে লেনদেনগুলো টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন এবং এনক্রিপশন দ্বারা সুরক্ষিত।

এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফলে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট এবং লেনদেনে অননুমোদিত প্রবেশ রোধ এবং ফ্রিল্যান্সারদের সংবেদনশীল তথ্য সুরক্ষিত রাখা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। প্রতারণামূলক ক্রিয়াকলাপ সনাক্ত এবং প্রতিরোধের জন্য পেওনিয়ার কর্তৃপক্ষ লেনদেনগুলোকে সার্বক্ষণিক নজরদারির আওতায় রাখে। পেওনিয়ারের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফ্রিল্যান্সারদেরকে এই প্ল্যাটফর্মের প্রতি আস্থাশীল করে তুলেছে।

পেওনিয়ার ব্যবহারের অসুবিধাঃ পেওনিয়ার একটি জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে হলেও, এর কিছু অসুবিধা (Limitations বা Drawbacks) রয়েছে, বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সারদের দৃষ্টিকোণ থেকে। নিচে সেগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করছিঃ

১. দীর্ঘ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়াঃ যেহেতু পেওনিয়ার বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বৈধ, তাই এর ভেরিফিকেশন প্রসেস আরও দ্রুততর ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হতে পারত। যদিও দীর্ঘমেয়াদে এটি ভালো, তারপরও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি ফ্রিল্যান্সারদের কাছে ঝামেলাপূর্ণ মনে হতে পারে।

২. নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টের জন্য চার্জঃ নূন্যতম এক বছর নিষ্ক্রিয় থাকলে পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টের জন্য নির্দিষ্ট চার্জ দিতে হয়। তবে এই চার্জের পরিমাণ নির্ভর করে অ্যাকাউন্টে কত অর্থ আছে, তার উপর। যদি নিষ্ক্রিয় থাকাকলীন অ্যাকাউন্টে অর্থ থাকে, তাহলে এই চার্জ প্রযোজ্য হবে। উদাহরণস্বরুপ, আপনার নিষ্ক্রিয় কাউন্টে যদি ২২ ডলার থাকে, তাহলে ২২ ডলার চার্জ কেটে রাখা হবে। কিন্তু অ্যাকাউন্টে যদি কোনো অর্থ না থাকে, তাহলে কোনো নিষ্ক্রিয় চার্জ নেই।

৩. পেমেন্ট পেতে দেরিঃ ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পেমেন্ট পেতে মাঝে মাঝে দেরি হতে পারে। টেকনিক্যাল সমস্যা, ব্যাংক প্রসেসিং সময় অথবা বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এই দেরি হতে পারে। আবার ক্লায়েন্ট ও ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে যদি পেমেন্ট নিয়ে কোনো বিরোধ দেখা দেয়, তাহলে পেওনিয়ার সেই বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অর্থ আটকে রাখে। এতে ফ্রিল্যান্সারদের পেমেন্ট পেতে আরও দেরি হয়। 

৪. পেমেন্ট গ্রহণ এবং অর্থ উত্তোলনে ফিঃ পেওনিয়ার অর্থ গ্রহণের সময় একবার চার্জ কাটে আবার সেই অর্থ স্থানীয় ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে উত্তোলনের জন্য আরেকবার চার্জ কাটে। এই চার্জ দেশ ও অর্থের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। কিছু কিছু লেনদেনের জন্য এই চার্জ কম হতে পারে। তবে যারা অনেক বড় পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেন, তাদের চার্জ একত্র করলে এর পরিমাণ বেশি হতে পারে।মুদ্রাভেদেও এই চার্জ ভিন্ন হতে পারে। 

৫. অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাঃ পেওনিয়ার থেকে পেওনিয়ার কার্ডে এবং স্থানীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করা যায়। তবে অনেক সময় দেশ ও অর্থের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে সীমাবদ্ধতাও দেওয়া হতে পারে। পেওনিয়ার থেকে সরাসরি ক্যাশ অর্থ উত্তোলন করা যায় না, আবার নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি অর্থও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উত্তেলন করা যায় না।

শেষকথাঃ পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার নিয়ম

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলা এখনকার দিনে একজন ফ্রিল্যান্সার বা অনলাইন ইনকামকারী ব্যক্তির জন্য প্রায় অপরিহার্য। এটি খুব বেশি জটিল নয়, বরং সঠিক তথ্য ও ডকুমেন্ট থাকলে সহজেই কয়েকটি ধাপে একাউন্ট খোলা যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে PayPal-এর মতো জনপ্রিয় পেমেন্ট মাধ্যম সেবা দেয় না, সেখানে Payoneer একটি কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য বিকল্প। আশা করি Payoneer একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

আমার মতে, একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার যখন প্রথমবার অনলাইনে আয় শুরু করে, তখন সে প্রায়ই পেমেন্ট সমস্যা নিয়ে চিন্তিত থাকে। পেওনিয়ার এই সমস্যা দূর করে, কারণ এটি দিয়ে শুধু মার্কেটপ্লেসই নয় বরং ডাইরেক্ট ক্লায়েন্ট থেকেও পেমেন্ট গ্রহণ সম্ভব। তবে, একাউন্ট খোলার পর পরেই Mastercard নেওয়ার সিদ্ধান্ত না নিয়ে, প্রথমে ইনকাম শুরু হোক, তারপর প্রয়োজন বুঝে কার্ড অর্ডার করাই ভালো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url