রুপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার


রুপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার ত্বকের জন্য খুবই উপকারি একটি প্রাকৃতিক উপাদান। হলুদ সাধারনত আমরা রান্নার কাজে, মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। তবে হলুদের মধ্যে এমন কিছু ভেষজ গুন রয়েছে যা আমাদের ত্বক, চুল ও দাঁতের যত্নে খুবই উপকারি। হলুদ আমাদের ত্বককে উজ্জল, মসৃন ও ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে।
রুপচর্চায়-কাঁচা-হলুদের-ব্যবহার
হলুদের ফেইসপ্যাক ব্যবহারে আপনি পেয়ে যাবেন সুন্দর ও আকর্ষনীয় ত্বক। তবে রুপচর্চায় হলুদের সঠিক ব্যবহার এবং হলুদের ফেইসপ্যাক কিভাবে বানাবো তা আমাদের মধ্যে অনেকের জানা নেই। যারা কাঁচা হলুদের সঠিক ব্যবহার এবং কাঁচা হলুদের ফেইসপ্যাক বানানোর নিয়ম সম্পর্কে সঠিক ধারনা নিতে চান,

তারা আমাদের বলা আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। কারন আজকের আর্টিকেলে আমি এসব তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। রুপচর্চার অন্যতম উপাদান হলো কাঁচা হলুদ। রুপচর্চার কথা উঠলেই হলুদের নাম চলে আসছে প্রাচীন কাল থেকেই। ত্বকের বিভিন্ন দাগ ছোপ দূর করে ত্বককে সুন্দর করতে, হলুদের কার্যকারীতা অনেক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ রুপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার

কাঁচা হলুদের উপকারিতা

কাঁচা হলুদের উপকারিতা রয়েছে প্রচুর। কাঁচা হলুদ একটি প্রাকৃতিক ভেষজ যা হাজার বছর ধরে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতিদিনের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে কাঁচা হলুদ খুবই উপকারী একটা উপাদান। এটি শুকনো হলুদের মতোই উপকারী, তবে কাঁচা হলুদের কিছু অতিরিক্ত গুণাগুণ রয়েছে যা এর কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে। নিচে কাঁচা হলুদের বিভিন্ন উপকারিতা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলোঃ
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কাঁচা হলুদে কারকিউমিন থাকে। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ-বিরোধী যৌগ। কারকিউমিন রোগ প্রতিরোধক কোষের কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এছাড়া হলুদের প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। অতিরিক্ত শক্তি শোষণ এবং উপকারিতা সর্বাধিক করার জন্য মধু এবং গোল মরিচের সঙ্গে কুচি করা কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খান।

২. স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ কারকিউমিন মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (বিডিএনএফ) নামক হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এটি স্মৃতিশক্তি এবং শেখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং স্নায়ু কোষের দীর্ঘায়ুকে সহায়তা করে। যদিও এই সুবিধাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করার জন্য আরও মানব গবেষণার প্রয়োজন, তবে প্রাথমিক ফলাফলগুলো উৎসাহজনক।

৩. হজমশক্তি উন্নত করেঃ অনেক সময় আমাদের খাবার হজমের অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কাঁচা হলুদ পিত্ত উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, হজমে সহায়তা করে এবং পেট ফাঁপা বা বদহজম প্রতিরোধ করে। এটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে প্রদাহ প্রশমিত করে, মসৃণ হজম নিশ্চিত করে। জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কারকিউমিন পেটে ব্যথা এবং পেটফাঁপাসহ ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম এর সমস্যা দূর করে। দৈনন্দিন রুটিনে কাঁচা হলুদ যোগ করলে অন্ত্র সুস্থ থাকে এবং ভালো হজমে সহায়তা করে।

৪. জয়েন্ট ভালো রাখে এবং প্রদাহ কমায়ঃ বিভিন্ন কারণে জয়েন্টের ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যা বাড়তে পারে, বিশেষ করে আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। হলুদের শক্তিশালী প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য ব্যথা উপশম করতে এবং জয়েন্টের নমনীয়তা উন্নত করতে সহায়তা করে। নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে তা জয়েন্টের অস্বস্তি মোকাবিলায় সাহায্য করে, যা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার রোগীদের জন্য এটি একটি চমৎকার প্রাকৃতিক প্রতিকার।

৫. ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করেঃ কাঁচা হলুদ প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে, এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত সকালে উঠে কাঁচা হলুদ খেলে দেহের অন্দরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সুযোগই পায় না।

৬. ক্যান্সার প্রতিরোধে​ সাহায্য করেঃ কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রক্তকণিকাকে নিরাপদ রাখে। ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী একটি রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে কাঁচা হলুদ। কাঁচা হলুদে এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যান্সার সেলের বৃদ্ধি আটকে দিতে পারে। ফলে স্তন ক্যানসার, পাকস্থলী, কোলন ও ত্বকের ক্যানসার তৈরি হতে পারে না। তাই এই মারণরোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে কাঁচা হলুদ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
 
৭. ক্ষত সারাতে সাহায্য করেঃ কাঁচা হলুদে উপস্থিত কার্কিউমিন এবং আরও নানা সব অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যে কোনো ধরনের ক্ষতের যন্ত্রণা কমায়। এটা আঘাত সারাতেও দারুণভাবে কাজ করে। এ কারণেই তো ছোট বাচ্চাদের নিয়মিত কাঁচা হলুদ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এছাড়া ক্ষতস্থানে অল্প পরিমাণে হলুদ বেঁটে লাগিয়ে দিলেও কিন্তু সমান উপকার পাওয়া যায়।

৮. হাড় জোড়া লাগাতে সাহায্য করেঃ হাত বা পা মচকে গেলে চুন-হলুদ লাগানোর কথা তো আমরা সবাইই জানি। এছাড়া কাঁচা হলুদ বেটে ভাঙ্গা হাড়ের জায়গায় লাগালে তা উপকার দেয়। দুধে কাঁচা হলুদ দিয়ে খেলেও তা এক্ষেত্রে উপকার দেয়। হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ব্যথা, প্রদাহকে কমায় এবং হাড়ের টিস্যুগুলিকে রক্ষা করে ও ভাঙা হাড় জোড়া লাগতে সাহায্য করে।

৯. প্রদাহ থেকে মুক্তি মিলেঃ প্রদাহের মতো জটিল সমস্যার বিরুদ্ধে প্রথমেই ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী সময়ে তা ভয়ানক হতে সময় লাগবে না। এমনকি এ কারণে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে একাধিক ক্রনিক রোগ। তাই চিকিৎসকরা প্রদাহ প্রশমিত করতে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।  কাঁচা হলুদের মূল উপাদান কারকিউমিন, যা প্রদাহ প্রশমিত করার কাজে ভীষণ উপকারী।

​১০. ক্ষতিকর পদার্থ বেরিয়ে যেতে সাহায্য করেঃ বিপাকের পরে আমাদের শরীরে তৈরি হয় একাধিক ক্ষতিকর পদার্থ। আর এই পদার্থগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে না যেতে পারলে একাধিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাঁচা হলুদ শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কাটানোর কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রাকৃতিক উপাদান রোজ এক টুকরো খেয়ে নিলেই ক্ষতিকর ফ্রি ব়্যাডিকেলস নিউট্রিলাইজ করা সম্ভব হবে। তাই সুস্থ থাকতে কাল থেকেই কাঁচা হলুদ খান।
১১. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ এখন তো কম বয়সেই অনেকে হার্টের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। তাই চিকিৎসকরা সবাইকে হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। আপনার হাতের কাছে উপস্থিত এক টুকরো কাঁচা হলুদই হার্টের খেয়াল রাখার কাজে একাই একশ। এতে উপস্থিত কারকিউমিন নামক উপাদান হার্টের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারে। তাই হার্ট অ্যাটাকের ফাঁদ এড়াতে চাইলে প্রতিদিন সকালে কাঁচা হলুদ খাওয়া আবশ্যক।

১২. খাদ্য সংক্রমণ থেকে বাঁচায়ঃ হলুদে থাকা কারকিউমিনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান থাকায় তা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে খাদ্যনালীকে বাঁচায়। আমরা রোজ যে খাবার খাই, তার মধ্যে অনেকসময়ই নানা জীবাণু থেকে যেতে পারে। খাবারে কাঁচা হলুদ বা হলুদ গুঁড়া ব্যবহার করলে তা খাদ্যনালীকে ক্ষতিকারক জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচায় ও খাদ্যনালীর প্রদাহের সম্ভাবনা কমায়।

রুপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার

রুপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। ফর্সা, কোমল ও দাগহীন ত্বক পেতে আমরা সবাই চাই। ত্বকের ব্রন, মেশতা, কালো ছোপ দাগ আমাদের মুখের সঠিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। ত্বকের বিভিন্ন দাগ আমাদের চিন্তায় ফেলে দেয়। তবে চিন্তার কোনো কারন নেই কাঁচা হলুদ ব্যবহারে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হলুদ অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে চমৎকার কাজ করে, ব্রন ও মুখের ত্বকের ক্ষত সারাতে খুবই কার্যকারী উপাদান।
কাঁচা হলুদ ব্যবহারেই মিলবে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান। ত্বকের সমস্যা দূর করার জন্য হলুদের মতো উপাদান বিশেষ ভূমিকা পালন করে। হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট ত্বককে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ত্বককে ব্রনের হাত থেবে বাঁচিয়ে, ত¦ককে উজ্জল করে তোলে। ত্বকে ইনফেকশন হলে, ত্বকে ব্রন ও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আর এ সমস্যা দূর করতে কাঁচা হলুদ যেভাবে ব্যবহার করবেনঃ

১. হলুদ ও ময়দাঃ যে কোনো ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক স্ক্রাব তৈরি করতে হলুদ ও ময়দা মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি ত্বকের জন্য বেশ সংবেদনশীল ও উপকারি। এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল কমায়। হলুদ ও ময়দার সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে নিন। উজ্জ্বল ও কোমল ত্বক পেতে চক্রাকারভাবে এটি ত্বকে লাগান এবং শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

২. হলুদ ও লেবুর রসঃ লেবুর রসে আছে ব্লিচিং উপাদান এবং হলুদে আছে ত্বক উজ্জ্বল করার উপাদান। ত্বক উজ্জ্বল করতে হলুদের গুঁড়া ও লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ব্যবহার করুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

৩. হলুদ ও দুধঃ হলুদ ও দুধের মিশ্রণ ত্বকের ক্ষতি করে এমন উপাদানের বিরুদ্ধে কাজ করে ত্বককে সুস্থ রাখে। কাঁচাদুধের সঙ্গে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে মুখ ও গলায় লাগাতে হবে। শুকিয়ে আসলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৪. হলুদ ও মধুঃ ত্বকের ভেতরের আর্দ্রতা রক্ষা করে উজ্জ্বল ত্বক ফুটিয়ে তুলতে হলুদ ও মধুর মিশ্রণ সাহায্য করে। মধুতে আছে প্রাকৃতিক ভাবে ত্বক আর্দ্র রাখার ক্ষমতা যা ত্বক উজ্জ্বল করে। মধু ও হলুদের তৈরি প্যাক ত্বক স্বাভাবিকভাবে চকচকে ও সুন্দর করে তোলে।

৫. হলুদ ও নারিকেল তেলঃ হলুদ ও নারিকেল তেলে আছে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। তাছাড়া নারিকেলের তেল খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। খাঁটি নারিকেল তেলের সঙ্গে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে লালচেভাব, সংক্রমণ ও শুষ্কতা কমাতে ব্যবহার করা যায়। ত্বক পরিষ্কার করে মুছতে পাতলা ভেজা কাপড় ব্যবহার করলে ত্বককে বেশ প্রাণবন্ত মনে হবে।

৬. হলুদ ও পানিঃ ত্বকের অবাঞ্ছিত লোমের বৃদ্ধি কমাতে প্রতিদিন হলুদ ও পানির মিশ্রণ তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। যে স্থানে অবাঞ্চিত লোমের বৃদ্ধি কমাতে চান সেখানে হলুদ ও পানির মিশ্রণ তৈরি করে একটি অসমতল ও পরিষ্কার বস্তুর সাহায্যে ঘষতে হবে। শুকিয়ে এলে তা পরিষ্কার পানির সাহায্যে ধুয়ে ফেলতে হবে। পার্থক্য দেখতে যতবার সম্ভব এটি করতে পারেন।

৭. হলুদ ও জলপাইয়ের তেলঃ হলুদে আছে নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বক তরুণ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। জলপাইয়ের তেল ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করে। হলুদ ও জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে তা মুখ ও গলায় লাগান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হালকা মালিশ করুন। এতে নতুন কোষ বৃদ্ধি পাবে। পানি দিয়ে ধুয়ে নমনীয় ত্বক অনুভব করতে পারবেন।

৮. হলুদের সঙ্গে লেবুর রস ও মধুঃ এই মিশ্রণ ত্বক ব্রণ মুক্ত রাখতে ও ত্বকের নির্জীবতা দূর করতে সাহায্য করে। হলুদের সঙ্গে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে মুখ এবং গলায় ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে উজ্জ্বল ভাব বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্রণও দূর হবে।

কাঁচা হলুদের পুষ্টিগুণ

হলুদে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিন সি থাকে ও কারকিউমিন নামক রাসায়নিক থাকে যা বিভিন্ন রোগের হাত থেকে আমাদের বাঁচায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁচা হলুদ খেলে যে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে, খাবার ঠিকমতো হজম হয়। চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক কাঁচা হলুদের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা হলুদে পুষ্টিগুণ রয়েছেঃ
উপাদান পরিমান
ক্যালরি ৩৩৪ গ্রাম
শর্করা ৬৪.৯ গ্রাম
প্রোটিন ৭.৮৩ গ্রাম
ফ্যাট ৯.৮৮ গ্রাম
ফাইবার ২১ গ্রাম
ফোলেট ৩৯ আইইউ
নায়াসিন ৫.১৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ২৫.৯ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই ৩.১০ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে ১৩.৪ আইইউ
ক্যালশিয়াম ১৮৩ মিলিগ্রাম
আয়রন ৪১.৪২ মিলিগ্রাম
জিংক ৪.৩৫ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ২৬৮ মিলিগ্রাম

ত্বকে কাঁচা হলুদ ব্যবহারের উপকারিতা

ত্বকে কাঁচা হলুদ ব্যবহারের উপকারিতা ও এর গুণের কথা সকলেরই জানা। ত্বকের যত্নে হলুদের জুড়ি মেলা ভার। রূপটানের কথা উঠলে একদম প্রথমদিকেই থাকবে হলুদের নাম। মুখের নিষ্প্রাণ বিবর্ণভাব কাটিয়ে সতেজ উজ্জ্বলতা এনে দিতে, মুখের কালো দাগছোপ হালকা করতে, ব্রণ-ফুসকুড়ি নির্মূল করার কাজে, মুখের যে কোনও প্রদাহ কমাতে হলুদের ব্যবহার বহু প্রাচীন। অন্য উপকরণের মতো এই উপকরণের ব্যবহার জেনে তবেই ত্বকে ব্যবহার করা উচিত।
ত্বকের যত্নে প্রাচীনকাল থেকেই হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। শুষ্ক, সাধারণ ও তৈলাক্ত ত্বকভেদে হলুদের ব্যবহারও ভিন্ন হয়ে থাকে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হলুদের সঙ্গে কাঁচা দুধ, বেসন/আটা/ময়দা, মধু, লেবু ব্যবহার করা যায়। ত্বক শুষ্ক হলে অবশ্যই মধুর বদলে টকদই ব্যবহার করুন। ত্বক যে ধরনেরই হোক না কেনো, হলুদ ব্যবহারের পরপরই রোদে বের হবেন না। এতে করে ত্বক জ্বলে যেতে পারে। চলুন জেনে নেয়া যাক ত্বকে কাঁচা হলুদ ব্যবহারের উপকারিতাগুলো কি কিঃ

ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখেঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতেই মূলত হলুদ ব্যবহার করা হয় সবচেয়ে বেশি। হলুদের মধ্যে রয়েছে একটি বিশেষ উপাদান কারকিউমিন। এটি শুধু হলুদেই পাওয়া যায়। কারকিউমিনের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিবায়োটিক গুণ। এই উপাদান রং ফর্সা করে, ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। ২ টেবিল চাম চ ময়দা, এক চা-চামচ হলুদ বাটা, এক টেবিল চামচ আমন্ড অয়েল আর তিন টেবিল চামচ দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। মুখে লাগিয়ে মিনিট ১৫ রেখে তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ব্রণ দূর করেঃ হলুদের মধ্যে রয়েছে এন্টিসেপ্টিক এবং এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান যেটি ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। এটি শুধু ব্রণই দূর করে না, তার সাথে ব্রণের দাগ এবং লোমকূপ থেকে তেল বের হওয়ার পরিমাণও কমিয়ে দেয়। কাঁচা হলুদ বাটা, চন্দন গুঁড়া, লেবুর রস মিশিয়ে একটি মাস্ক বানিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তাছাড়া ব্রণের উপর কাঁচা হলুদ বাটা এবং পানি মিশিয়ে দিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য রাখুন, ব্রণ তাড়াতাড়ি চলে যাবে।

বলিরেখা দূর করেঃ হলুদ ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। ২-৩ চিমটি হলুদ গুঁড়া, চালের গুঁড়া, টমেটো রস, কাঁচা দুধের সাথে মিশিয়ে মুখে মাস্ক হিসাবে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের ফাইন লাইন্স এবং ঝুলে পড়া ত্বক কে স্বাভাবিক করতে, ত্বককে ফর্সা করতে অত্যন্ত কার্যকরী।

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করেঃ অনেকের চোখের নিচে কালচে দাগ পড়ে। এই কালো দাগ তুলতেও কার্যকরী ভূমিকা নেয় হলুদ। এক্ষেত্রে হলুদ বাটার সঙ্গে ২ চামচ টক দই, ১ চামচ চালের গুঁড়ো, ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিতে হবে। তার পর ওই মিশ্রন হাত, পা, মুখে ভাল করে লাগাতে হবে।২০ মিনিট পরে ঠান্ডা পানিতে হাত-মুখ ধুয়ে নিলেই কাজ শেষ। পর পর কয়েকদিন এই মিশ্রন মুখে লাগালে চোখের নিচের বলিরেখা সহ কালো দাগও দূর করবে।

ব্রণের দাগ দূর করেঃ আপনার মুখে ব্রণ বা যেকোনো দাগ-ছোপ থাকলে তা দূর করার জন্য কার্যকরী একটি উপাদান হতে পারে হলুদ। হলুদে থাকা অনেক উপাদান ত্বকের দাগ দূর করতে দারুণ কার্যকরী। সেইসঙ্গে ব্রণ থেকে মুক্তি পেতেও সাহায্য করে এই উপাদান। লেবুর রসের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। এভাবে মিনিট দশেক অপেক্ষা করে এরপর ধুয়ে ফেলুন।

বলিরেখা দূর করতেঃ ত্বকের বলিরেখা দূর করতে কাঁচা হলুদ বেশ কার্যকরী। হলুদের কারকিউমিন সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে আর বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। বয়সের ছাপ কমাতেও সহায়তা করে হলুদ। কাঁচা হলুদ বাটা আর দুধের সর মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে মেখে রেখে দিন এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে বলিরেখা কমে।

বয়স ধরে রাখেঃ  বয়স ধরে রাখতে কে না চায়। এজন্য ১ দিন পর পর বেসন, কাঁচা হলুদ বাটা, টক দই মিশিয়ে মুখ সহ সারা শরীরে লাগিয়ে রাখুন শুকানো না পর্যন্ত। শুকিয়ে গেলে ঘড়ির কাটার উলটো দিকে স্ক্রাব করে মাসাজ করুন। এটি ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করার সাথে সাথে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে।

রোদে পোড়া দাগ দূর করতেঃ হলুদ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সাহয্য করে। কারণ এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।এক টেবিল চামচের চার ভাগের এক ভাগ হলুদের গুঁড়া, এক টেবিল চামচ টকদই, এক টেবিল চামচ টমেটোর পিউরি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১০-১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। রোদে পোড়া দাগ দূর করতে এই প্যাকটি দারুণ কাজ করে।

অবাঞ্ছিত লোম দূর করতেঃ ত্বকের অবাঞ্ছিত লোমের বৃদ্ধি কমাতে প্রতিদিন হলুদ ও পানির মিশ্রণ তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। যে স্থানে অবাঞ্ছিত লোমের বৃদ্ধি কমাতে চান সেখানে হলুদ ও পানির মিশ্রণ তৈরি করে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানির সাহায্যে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ব্রণের কালো দাগ কমায়ঃ হলুদ ব্রণের বিরুদ্ধে কাজ করে জ্বলুনি কমায় বিশেষ করে যাদের ত্বক সংবেদনশীল তাদের ত্বকে হলুদ খুব ভালো কাজ করে। হলুদে থাকা কারকিউমিন এমন এক ধরনের এঞ্জাইম যা রোদ ও ‘হাইপার পিগমেন্টেইশনের কারণে হওয়া কালো দাগ ও পোড়াভাব কমাতে কার্যকর।

পায়ের গোড়ালির ফাটা দাগ দূর করেঃ গোসলের যাওয়ার আগে কাঁচা হলুদের সাথে, নারিকেল তেল অথবা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখলে পায়ের ফাটা দাগ কমবে, পায়ের ত্বক সুন্দর এবং নরম থাকবে।

রুপচর্চায় কাঁচা হলুদের ফেসপ্যাক

মুখের নিষ্প্রাণ বিবর্ণভাব কাটিয়ে সতেজ উজ্জ্বলতা এনে দিতে, মুখের কালো দাগছোপ হালকা করতে, ব্রণ-ফুসকুড়ি নির্মূল করার কাজে বা মুখের যে কোনো প্রদাহ কমাতে হলুদের ব্যবহার প্রাচীন কাল থেকে। হলুদের অ্যান্টি-সেপটিক, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের বিভিন্ন ইনফেকশন দূর করে। এছাড়া এর প্রাকৃতিক উপাদান ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে থাকে। আসুন আজ হলুদের কিছু কার্যকরী ফেসপ্যাকের সাথে পরিচিত হওয়া যাক।
রুপচর্চায়-কাঁচা-হলুদের-ফেসপ্যাক
১.  কাঁচা হলুদ, মধু এবং দুধের প্যাকঃ ১-৪ চা চামচ হলুদের গুঁড়ো, এক চা চমচ মধু, এবং এক চা চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি ত্বকে ব্যবহার করুন। প্যাকটি ব্যবহারের আগে ত্বক ক্লেনজার দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এরপর হলুদের প্যাক-টি ত্বকে ব্যবহার করুন। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। প্যাক শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

প্রতি সপ্তাহে একবার প্যাক-টি ব্যবহার করুন। মধু ত্বক হাইড্রেট করে নরম ও কোমল করে তোলে। এর অ্যান্টি-সেপটিক এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের ব্যাকটেরিয়া দূর করে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে। দুধে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল এবং ভিটামিন রয়েছে যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বক কোমল করে থাকে। এছাড়া ত্বকের রিংকেল এবং মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে।

২. কাঁচা হলুদ, অ্যালোভেরা ও মধুর ফেসপ্যাকঃ একটি বাটিতে কাঁচা হলুদের পেস্ট ১ চা চামচ, অ্যালোভেরা জেল ১ চা চামচ ও মধু ১/২ চা চামচ পরিমাণে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার এটি ত্বকে ১০ মিনিট রেখে, ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাক ব্যবহারে আপনার ত্বকর ব্রণ ও র‍্যাশ কমবে, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে ও ত্বক থাকবে সতেজ।

৩. কাঁচা হলুদ, অ্যাভোকাডো এবং টকদইঃ ১/৪ চা চামচ হলুদের গুঁড়ো, এক টেবিল চামচ অ্যাভোকাডার পেস্ট এবং এক চা চামচ টকদই একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। প্যাকটি ত্বকে ব্যবহার করুন। ১০ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অ্যাভকোডার ভিটামিন-ই, ন্যাচারাল অয়েল এবং ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক হাইড্রেট করে। এর অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি-এজিং উপাদান ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

৪. কাঁচা হলুদ, দুধ ও বেসনের ফেসপ্যাকঃ এই ফেসপ্যাকটি যেকোনো অকেসন কিংবা ইভেন্টে অংশ নেওয়ার আগে ব্যবহার করলে ত্বকে আসবে ইনস্ট্যান্ট উজ্জ্বলতা। এটা তৈরি করতে আমাদের লাগবে কাঁচা হলুদের পেস্ট ১ চা চামচ,বেসন – ১ চা চামচ ও কাঁচা দুধ পরিমাণমতো। এবার সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। ফেসপ্যাকটি ফুল ফেইসে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

৫. কাঁচা হলুদ, লেবুর রস এবং মধুঃ লেবুর রস ত্বকের কালো দাগ, ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ত্বকের লোমকূপ সংকুচিত করে থাকে। মধু প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। শুধু তাই নয় মধু ব্রণ হওয়ার প্রবণতা রোধ করে। ১/৪ চা চামচ হলুদের গুঁড়ো, ১/২ চা চামচ লেবুর রস এবং ১ টেবিল চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন। নিয়মিত ব্যবহারে এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।

৬. কাঁচা হলুদ, বেসন এবং গোলাপ জলের প্যাকঃ বেসন ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নিয়ে ত্বককে রাখে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত এবং ব্রণ হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে। এছাড়া বেসন প্রাকৃতিক এক্সফলিয়েট হিসেবে কাজ করে। ১ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো, ২ টেবিল চামচ বেসন, ১ থেকে ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল একসাথে মিশিয়ে নিন। প্যাক-টি ব্যবহারের আগে মুখটি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপর পেস্ট-টি ত্বকে ব্যবহার করুন। ১০-১৫ মিনিট পর মুখ শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে এটি ত্বকের ব্রণ হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে।

৭. কাঁচা হলুদ, টকদই এবং টমেটোঃ ত্বকের সানবার্ন দূর করতে এই প্যাকটি বেশ কার্যকর। ১/৪ টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়ো, ১ টেবিল চামচ টকদই, ১ টেবিল চামচ টমেটোর পিউরি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এটি ত্বকে ব্যবহার করুন। ১০-১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

৮. কাঁচা হলুদ, চন্দনের গুঁড়া ও দুধের ফেসপ্যাকঃ এই প্যাকটি তৈরি করতে আমাদের লাগবে কাঁচা হলুদের পেস্ট ১ চা চামচ,চন্দনের গুঁড়া ১ চা চামচ,কাঁচা দুধ ২ চা চামচ। এবার এই উপকরণগুলো একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। ফেসপ্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহারে ত্বকের কালো দাগ-ছোপ দূর হবে ও ত্বক হবে ফর্সা ও মসৃণ।

৯. কাঁচা হলুদ, টকদই, ও ময়দাঃ এই প্যাকটা বানানোর জন্য এক টেবিল চামচ টকদই, এক টেবিল চামচ হলুদ, এক টেবিল চামচ ময়দা মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এখন প্যাকটি মুখে মেখে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর হারকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বক উজ্জ্বল করার পাশাপাশি ত্বক টানটানও করে।

১০. কাঁচা হলুদ, টমেটোর রস ও চালের গুঁড়ার ফেসপ্যাকঃ এটি একটি এক্সফোলিয়েটর ফেসপ্যাক। এটি তৈরি করতে, আমরা একটি বাটিতে কাঁচা হলুদের পেস্ট ১ চা চামচ,টমেটোর রস‌ ১ চা চামচ ও চালের গুঁড়া ১ চা চামচ নিয়ে ভালোভাবে নেড়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার মিশ্রণটি ঘষে ঘষে স্ক্রাবিং করে ১০ মিনিট পর্যন্ত লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। টমেটোতে থাকা আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট ফর্মূলা ত্বকের ট্যান দূর করতে সাহায্য করে ও আনইভেন স্কিন টোন ইভেন করে।

১১. কাঁচা হলুদ, কফি আর টকদইয়ের প্যাকঃ এক টেবিলচামচ কফির গুঁড়োয় খানিকটা টকদই আর এক চাচামচ কাঁচা হলুদবাটা যোগ করে ভালো করে মিশিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। তারপর হালকা গরম জলে ধুয়ে ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে নিন। টকদই সেবাম নিয়ন্ত্রণ করে মুখের বাড়তি তেলাভাব কমিয়ে দেবে, ফলে ব্রণও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কফির গুঁড়ো ত্বক এক্সফোলিয়েট করবে আর হলুদ রুখে দেবে ব্রণের বৃদ্ধি আর সংক্রমণ।

১২. কাঁচা হলুদ ,লেবুর রস ও ওটসের ফেসপ্যাকঃ এটিও একটি এক্সফোলিয়েটর ফেসপ্যাক। এটা তৈরি করতে আমরা প্রথমেই একটি বাটিতে নিব কাঁচা হলুদের পেস্ট ১ চা চামচ, লেবুর রস ২ ফোঁটা ও ওটস ১ চা চামচ। এবার এই মিশ্রণ গুলো একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এবার এটি আপনার পুরো স্কিনে স্ক্রাবের মতো করে লাগিয়ে, ৫-৭ মিনিট ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে ও স্কিন ব্রাইট করতে খুবই কার্যকর।

রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার

রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। ত্বকের যেকোনো সমস্যা দূর করতে কাঁচা হলুদ খুবই গুরত্বপূর্ন একটি উপাদান। ত্বকের সুস্থতার জন্য আমরা যেসব উপাদান ব্যবহার করি, সেগুলোর তালিকায় প্রথমেই হলুদ রাখতে হবে। কারন হলুদ আমাদের ত্বকের অভ্যন্তরিন ও বাহ্যিক দুই ধরনের সমস্যার সমাধান করে থাকে। হলুদে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি সহ বিভিন্ন ঔষধি গুন রয়েছে, যা ত্বককে ভিতর থেকে সুস্থ রাখে।

কাঁচা হলুদের উপকারী উপাদান ত্বকের ব্রণ, র‌্যাশ, অ্যালার্জি এবং ত্বকের পোড়া দাগ দূর করতে সাহায্য করে। তবে হলুদের সাথে যদি দুধ মিক্স করে ব্যবহার করা যায়, তাহলে হলুদের গুনাগুন আরও বৃদ্ধি পায়। দুধ আমাদের স্বাস্থের জন্য যেমন উপকারি তেমনি আমাদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারি একটি উপাদান। দুধ দিয়ে বিভিন্ন ভাবে ফেইসপ্যাক বানিয়ে ত্বকে লাগালেও ত্বক উজ্জল ও মসৃন হয়। চলুন বিস্তারিত ভাবে জানা যাক রূপচর্চায় দুধ ও কাঁচা হলুদের ব্যবহার সম্পর্কে।

  • কাঁচা দুধের সাথে পরিমান মতো কাঁচা হলুদ গুড়ো যোগ করে, ভালোভাবে মিক্স করে নিন। এরপর আপনার মুখের ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন, ত্বকের ব্রনের সমস্যা দূর হবে এবং ত্বক হবে উজ্জল। উজ্জল ত্বক পেতে সপ্তাহে দুদিন এই ফেইসপ্যাকটি ব্যবহার করবেন।
  • কাঁচা হলুদকে বেটে তার সাথে এক চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ কাঁচা দুধ ভালোভাবে মিশিয়ে মিশ্রন তৈরি করুন। এবার মিশ্রনটি আপনার ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন, শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে একদিন করবেন ত্বককে ব্রন থেকে মুক্ত করবে এবং উজ্জল দেখাবে।
  • কাঁচা হলুদের পেস্ট তৈরি করে তার সাথে ১ চা চামচ টক দই মিশিয়ে, মিশ্রন তৈরি করুন। মিশ্রনটি আপনার ত্বকে লাগিয়ে, ১৫ মিনিট মতো অপেক্ষা করুন এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে এবং ত্বক হবে কোমল ও উজ্জল।
  • শুধু কাঁচা দুধ সরাসরি আপনার মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষন ম্যাসাজ করলে, ত্বকের মৃত কোষ দূর হয় এবং ত¦কের তৈলাক্ত ভাব দূর করে।
  • কাঁচা দুধের সাথে পরিমান মতো দুধ মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। ত্বককে ভেতর থেকে ময়েশ্চারাইজার করে তুলবে।
  • অর্ধেক পাকা কলার সাথে কাঁচা দুধ মিক্স করে ত্বকে ব্যবহার করবেন, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবে।
  • দুই টেবিল চামচ দুধের সাথে এক টেবিল চামচ চিনি ও এক টেবিল চামচ বেসন একসাথে মিক্স করে স্ক্রাব বানিয়ে নিন। এরপর স্ক্রাবটি আপনার ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের বলি রেখার সমস্যা দূর করতে এবং হারিয়ে যাওয়া ত্বকের উজ্জলতা ফিরিয়ে আনতে উপরে বলা কাঁচা দুধ ও হলুদের স্ক্রাবগুলো সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন ব্যবহার করবেন। হলুদ নিস্তেজ ত্বককে করে তোলে সতেজ, এছারাও ত্বককে মসৃন, উজ্জল ও দাগহীন করে তোলে এই হলুদ।

রুপচর্চায় কাঁচা হলুদ ও নিম পাতার ব্যবহার

রুপচর্চায় কাঁচা হলুদ ও নিম পাতার ব্যবহার ও এর গুণের কথা প্রায় সকলেরই জানা। এই দুইটির মিশ্রন একসাথে ব্যবহারের অনেক উপকারিতা রয়েছে। কাঁচা হলুদ আমাদের ত্বকের জন্য খুবি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। ত্বকের অ্যান্টি-এজিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাঁচা হলুদ খুব ভালো কাজ করে। ডার্ক স্পট, ফাইন লাইনস ও বলিরেখার মতো সমস্যা দূর করতে কাঁচা হলুদের ঝুড়ি মেলা ভার। কাঁচা হলুদ ও নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

১. দুই থেকে তিন টুকরো কাঁচা হলুদ ও কিছু নিমপাতা একসাথে সিদ্ধ করে পানি ছেঁকে আলাদা করে নিন। সিদ্ধ করা পানিতে সামান্য পরিমাণ কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। একটি তুলার সাহায্যে প্রতিদিন দুইবার চোখের নিচে এপ্লাই করুন ডার্ক সাইকেল দূর হয়ে যাবে।

২. দুই চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, এক টেবিল চামচ নিমপাতা বাটা, আধা চা চামচ চন্দনের গুঁড়ো একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর এটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট আপেক্ষা করুন। এর পর পরিস্কার পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধূয়ে নিন। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন এভাবে ব্যবহার করলে ত্বক দুধের মত সাদা হবে।

৩. এক চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, এক চা চামচ নিম পাতা বাটা ও পরিমাণ মতো পানি নিয়ে একটি পেষ্ট তৈরি করে নিন। এরপর এই পেষ্টটি ভালো করে মূখে লাগিয়ে নিন এবং ১০ মিনিট আপেক্ষা করুন। মূখের পেষ্টটি শুকিয়ে গেলে উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুইদিন এভাবে ব্যবহার করুন, ত্বকের উজ্জ্বলতা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

৪. এক চা চামচ হলুদ বাটা, এক চা চামচ নিম পাতা বাটা, এক টেবিল চামচ লেবুর রস ও পরিমাণ মতো মুলতানি মাটি নিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। তারপর ভালো করে সারা মূখে মেখে নিন এবং ৩০ মিনিট আপেক্ষা করুন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে মূখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুইদিন এভাবে ব্যবহার করুন, ত্বকের রোদে পোড়া দাগ পুরোপুরি দূর হবে যাবে।

৫. পরিমাণ মতো কাঁচা হলুদ ও নিমপাতা বেটে নিয়ে তার সাথে দুই চা চামচ এলোভেরা জেল ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেষ্ট বানিয়ে নিন। পেষ্টটি ত্বকে রোদে পুড়ে যাওয়া কালো স্থান গুলোতে ভালো করে লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আপেক্ষা করুন। তারপর পরিষ্কার পানি গিয়ে ধূয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে রোদে পুড়ে যাওয়া স্থানগুলো আবার আগের মতো সাদা হয়ে যাবে।

৬. কয়েক টুকরো কাঁচা হলুদ ও পরিমান মত সিদ্ধ করা নিমপাতা একসাথে বেটে নিন বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর এর মধ্যে তিন চা চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে একটি পেষ্ট তৈরি করে নিন। এই পেষ্টটি মুখ, ঘাড়, গলা সহ হাত-পায়েও লাগিয়ে নিন। তারপর শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে যাওয়ার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করে নিন। ত্বক সতেজ রাখার জন্য এই পেষ্টটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন। তবে এটি ব্যবহার করার পর আবশ্যয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।

৭. খোঁচ-পাচরা ধূর করতে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ এক সাথে বেটে মুখে ও সারা শরীরে ভালো করে লাগিয়ে নিন। তারপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আপেক্ষা করে মিশ্রনটি শুকিয়ে নিন। এরপর গোসল করে নিন। নিয়মিত ৭ দিন এভাবে ব্যবহার করলে আপনার শরীরের খোঁচ-পাচরা ভালো হয়ে যাবে।

উপরিউক্ত টিপস গুলোর মধ্য থেকে আপনি আপনার স্কিনের জন্য যে কোন একটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে আপনার স্ক্রিন কেমন সেটা আমরা জানি না। তাই যে কোন কিছু ত্বকে ব্যবহার করার আগে আবশ্যয় ভেবে নিবেন এবং নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে ঐ উপাদানটি আপনার ত্বকের সাথে মানানসই হবে কিনা।

মুখে কাঁচা হলুদ লাগানোর নিয়ম

রূপচর্চায় কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। তবে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলেই হবে না এর কিছু সঠিক নিয়ম আছে, যা আমাদের জানতে হবে। সেগুলো জেনে হলুদ ব্যবহার করবেন। সঠিক নিয়মে কাঁচা হলুদ ব্যবহার না করলে ত্বকের উপকারের বদল ত্বকের বিভিন্ন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই সঠিক নিয়ম গুলো আমাদের জানা প্রয়োজন। কাঁচা হলুদ ব্যবহারের সঠিক নিয়মগুলো হলোঃ

  • সরাসরি কাঁচা হলুদ পেস্ট করে মুখে ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে কাঁচা হলুদের ফেইসপ্যাক বানিয়ে অর্থাৎ কাঁচা হলুদের সাথে অন্য কোনো উপাদান মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করা উত্তম।
  • আমরা অনেকেই মনে করে থাকি প্রতিদিন হলুদ ব্যবহার করলে, হলুদের কার্যকারীতা বেশি পাওয়া যাবে। তাই প্রতিদিন হলুদের ফেইসপ্যাক ব্যবহার করবো, তবে এই ধারনা ভুল। দৈনিক হলুদ ব্যবহার করতে নিষেধ করেন বিশেষজ্ঞরা। তাই সপ্তাতে ২ দিন ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।
  • যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তারা হলুদ ব্যবহার না করায় ভালো। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
  • সর্তকতার সাথে মুখে হলুদ লাগাবেন, হলুদ যাতে চোখের ভিতরে না যায়।
  • হলুদের ফেইসপ্যাক বানিয়ে অনেকক্ষন মুখে লাগিয়ে বসে থাকবেন না। এতে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই মুখে হলুদের প্যাক লাগিয়ে ২০ মিনিটের বেশি রাখবেন না।
  • আপনার ত্বকে হলুদের ফেইসপ্যাক লাগিয়ে কখনই রোদে যাবেন না। রোদে যাওয়ার ফলে ত্বক পুড়ে যাবে এবং কালো হয়ে যাবে। তাই হলুদ দিয়ে রূপচর্চা রাতে করাই ভালো।
  • হলুদের সাথে দুধ অতিরিক্ত মিশিয়ে ব্যবহার করবেন না। কারন হলুদ হলো খুবই শক্তিশালী একটি উপাদান তাই অতিরিক্ত দুধ মিশালে সেটা ত্বকের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
  • মুখে হলুদ ব্যবহারের পর পরই মুখে ফেসওয়াস ব্যবহার করা যাবে না, এতে হলুদের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
উপরের বলা নিয়মগুলো ফলো করে হলুদ ব্যবহার করবেন, ভুল নিয়মগুলো এড়িয়ে চলবেন। ভুল নিয়মে হলুদ ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক নিয়মে, সঠিক পদ্ধতি অনুসরন করে কাঁচা হলুদ রূপচর্চায় ব্যবহার করবেন। তাহলে ত্বকের যত্নে সঠিক উপকার পাবেন।

ত্বকে কাঁচা হলুদ ব্যবহারে সাবধানতা

ত্বকে কাঁচা হলুদ ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। হলুদের প্যাক অ্যাপ্লাই এর পরপরই সরাসরি সূর্যালোক এড়িয়ে চলুন। অনেক সময় কাঁচা হলুদ ব্যবহারের ফলে ত্বক হলুদ বর্ণ ধারণ করতে পারে, যা সহজে উঠতে চায় না। এছাড়া, অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বক শুষ্ক ও সংবেদনশীল হয়ে যেতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করাই ভালো। যদি হলুদ থেকে ফেইসে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা দেয়, তাহলে স্কিনকেয়ারে এই উপাদানটি এড়িয়ে চলায় বেটার।
কাঁচা-হলুদ-ব্যবহারে-সাবধানতা
কাঁচা হলুদ সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করবেন না। অ্যালোভেরা জেল, দুধ বা টকদইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ় করবে। মুখে অনেক্ষণ ধরে হলুদ লাগিয়ে রাখলে কিন্তু ত্বকে হলদে ছোপ তৈরি হয়। সপ্তাহে ১ থেকে ২ বার হলুদের ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। রোজ ব্যবহার করলে আবার ত্বক শুষ্কও হয়ে যেতে পারে। কাঁচা হলুদ ব্যবহারের ফলে ত্বক হলুদ রঙ ধরে গেলে তা সহজে উঠতে চায় না। 

আবার, অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বক শুষ্ক ও সংবেদনশীল হয়ে যেতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে হলুদ ব্যবহার করাই ভালো। হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা ত্বকের প্রদাহ ও লালচে ভাব কমায়। কিন্তু অত্যধিক পরিমাণে হলুদ ব্যবহার করলে এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেলকে নষ্ট করে দিতে পারে। এর জেরে ত্বক ডিহাইড্রেট হয়ে যেতে পারে। ত্বক শুষ্ক ও নিস্তেজ দেখাতে পারে। যদি এগজিমা, সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যা থাকলে, হলুদ ব্যবহার না করাই ভালো।

সেনসিটিভ ত্বক হলে এবং ত্বকে যদি কোনও সমস্যা থাকে, তা হলে হলুদ ব্যবহার করবেন না। তাহলে, বুঝতেই পারলেন কাঁচা হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু এটি ত্বকের প্রকৃত রঙ বদলে ফেলার কোনো ম্যাজিকাল উপাদান নয়। সুস্থ, সুন্দর, উজ্জ্বল ত্বক পেতে সঠিক স্কিনকেয়ার রুটিন অনুসরণ করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান। ব্রাইটেনিং এর জন্য স্কিনকেয়ার রুটিনে ভিটামিন-সি, আলফা আরবুটিন যুক্ত প্রোডাক্ট ইনক্লুড করতে পারেন।

শেষকথাঃ রুপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার

রুপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার অতিপ্রাচীন কাল থেকেই হয়ে আসছে। কাঁচা হলুদ দিয়ে রূপচর্চা বা ত্বকের যত্ন প্রাকৃতিক এবং পুরোপুরি নিরাপদ। নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও স্বাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব। ত্বককে ইনস্ট্যান্ট গ্লো দিতে এবং ব্রণ বা ফুসকুড়ির সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে কাঁচা হলুদ। কাঁচা হলুদের ব্যবহার সম্পর্কে আজকের এই ব্লগে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি রুপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার ও কাঁচা হলুদের ফেইসপ্যাক সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url