আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায়
আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায় বা প্রচলিত কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যা অনেকেই ব্যবহার
করে থাকেন। আঁচিল হলো ত্বকের উপর একটি অতিরিক্ত বৃদ্ধি বা গাঁট জাতীয় গঠন, যা
Human Papillomavirus (HPV) নামক ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। এটি সংক্রামক,
অর্থাৎ একজনের থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে, বিশেষত সরাসরি সংস্পর্শে এলে বা একই
জিনিস ব্যবহার করলে।
নারী অথবা পুরুষ উভয়েরই আঁচিল হয়ে থাকে, তবে বয়স্কদের মধ্যে এটি হতে বেশি দেখা
যায়। আঁচিল শরীরের একটি সমস্যার নাম, ছোট বড় অনেকের এটি হতে দেখা যায়। এ সমস্যা
অনেকেই গুরুত্বসহকারে দেখে না, তবে পরবর্তীতে আঁচিল থেকে মারাত্মক সমস্যা হতে
পারে। তাই আঁচিল সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা উচিত।
আঁচিল চেনার উপায়
আঁচিল হলো ত্বকের উপর একটি ছোট, শক্ত ও খসখসে গঠন, যা সাধারণত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV)-এর সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। এই আঁচিল সংক্রামক, সোজাসুজি স্পর্শ অথবা ত্বকের ছোট ফাটলের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশ বা অন্য ব্যক্তির ত্বকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা আঁচিল সঠিকভাবে চিনতে পারেন না। তাই চলুন জেনে নিন আঁচিল চেনার উপায় সম্পর্কে।
- রঙ ও আকৃতিঃ এগুলো গোলাকৃতি বা অনিয়মিত আকৃতির হতে পারে এবং রঙ ধূসর থেকে হলদে-বাদামী বা বাদামী হতে পারে।
- গঠনঃ আঁচিলের উপরের পৃষ্ঠটি খসখসে এবং অনেক সময় ফেটে-যাওয়া ফুলকপির মতো গঁথন থাকে। এর ফলে রুচিকর নয়; কার্ডবোর্ডের মত দৃঢ় টেক্সচারের অনুভূতি দেয়।
- কেন্দ্রের বিন্দুঃ মাঝে মাঝে আঁচিলের মধ্যে ছোট ছোট কালচে বা লালচে বিন্দু দেখা যায়। এগুলো ক্ষুদ্র রক্তনালীর ক্লট (জমাট) যা আঁচিলের ভেতরের রক্তনালীর সংকোচনের কারণে হয়ে থাকে।
- স্পর্শ ও ব্যথাঃ স্পর্শ করলে এই ধরনের আঁচিল সাধারণত শক্ত ও খসখসে অনুভূত হয়, কিন্তু বেশিরভাগ সময় ব্যথা দেয় না। তবে পায়ের তলায় বা নখের আশেপাশে যদি আঁচিল গজায়, সেখানে চাপ পড়লে হাঁটলে বা চাপ দিলে ব্যথা বা মাঝে মাঝে রক্তপাত হতে পারে।
সাধারণ আঁচিল অনেক সময় আঙুল, হাত, পা বা হাঁটুর পেছনের ত্বকে বেশি দেখা যায়। এর কারণ এই স্থানগুলো প্রায়ই ক্ষত বা ছিদ্রপ্রাপ্ত হয়, যেখানে ভাইরাস সহজে প্রবেশ করতে পারে। তাছাড়া ঠোট, গলা, ঘাড়ের আশপাশেও ছোট ফুঁসকুড়ি-সদৃশ আঁচিল (বিশেষ করে ফিলিফর্ম ওয়ার্ট) হতে পারে। সাধারণত, পায়ের তালুতে এবং হাতের তালুতে (পামার ওয়ার্ট) আঁচিল হয়ে থাকে। অধিকাংশ আঁচিল ব্যথাহীন, তবে পায়ের নিচে হলে হাঁটা-চলাফেরায় ব্যথা হতে পারে।
ভাইরাসজনিত সাধারণ আঁচিলগুলো সাধারণত ছোট দানা বা ফোঁড়ার মতো হয়ে থাকে, রঙ হলুদ বা বাদামি, পৃষ্ঠটা খসখসে। পায়ের তলায় বা নখের পাশে ব্যথা হতে পারে। মধ্যভাগে ছোট কালচে বিন্দু (রক্তনালীর ক্লট) থাকতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো হালকা ও ব্যথাহীন, এবং সময়ের সাথে নিজেই কমে যায়। পরিচ্ছন্নতা ও খেয়াল রাখলে আঁচিলের বিস্তার রোধ করা যায়। যেহেতু আঁচিল সাধারণত ফাইটাল ধরণের টিস্যু থেকে তৈরি, তাই ক্যান্সার হয়ে ওঠার আশঙ্কা খুব কম। তবে যদি কোনও আঁচিল দ্রুত বড় হয়, সংক্রমণ দেখা দেয় (লাল হয়ে ফুলে ওঠে), অথবা ব্যথা করে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায়
আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায় বা প্রচলিত কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যা অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। আঁচিল একটি ছোঁয়াচে রোগ, যা খুব সহজেই একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে সক্রমিত হতে পারে। আঁচিল প্রাথমিক অবস্থায় বের হলে তা ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে দূর হয়ে যেতে পারে। এটি শুরুতে তেমন বিপজ্জনক নয়, তবে পরবর্তীতে কিছু আঁচিলের ক্ষেত্রে তা বিপজ্জনক হতে পারে। জেনে নিন আঁচিল দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়ঃ
আরও পড়ুনঃ গরমে ত্বকের যত্নে কিছু কার্যকরী টিপস
১. অ্যাসপিরিনঃ অ্যাসপিরিন শুধু মাথাব্যথা বা জ্বর কমানোর জন্যই নয়, এটি আঁচিল দূর করার জন্যও একটি কার্যকর ঘরোয়া উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এতে থাকা স্যালিসিলিক অ্যাসিড আঁচিলের কোষগুলোকে ভেঙে দেয় এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে ফেলে। অনেকের বাড়িতেই এই ওষুধ রাখেন। অ্যাসপিরিন গুঁড়ো করে তার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা জল মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ বানিয়ে নিন। মিশ্রণটি আঁচিলের উপর লাগিয়ে দিন। এ বার গজ দিয়ে ঢেকে সারা রাত রেখে দিন। অ্যাসপিরিনের স্যালিসিলিক অ্যাসিড সহজেই আঁচিলের বৃদ্ধি আটকে দিতে পারে। নিয়মিত এই টোটকা মেনে চললে তবেই পাবেন উপকার।
২. অ্যাপল সিডার ভিনেগারঃ অ্যাপল সিডার ভিনেগার আঁচিল দূর করার অন্যতম জনপ্রিয় ও প্রমাণিত একটি ঘরোয়া প্রতিকার। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যাসিডিক গুণ (অ্যাসেটিক অ্যাসিড), যা আঁচিল সৃষ্টিকারী ভাইরাস ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং ধীরে ধীরে আঁচিল শুকিয়ে ফেলে। এটি আঁচিলের কোষগুলোকে ধ্বংস করে এবং ত্বক থেকে আলগা করে দেয়। অ্যাপল সিডার ভিনেগার এর মধ্যে তুলো ভিজিয়ে, সে তুলো আঁচিলের উপর সারা রাত রেখে দিন। এভাবে প্রতিদিন টানা পাঁচদিন করবেন, ভিনেগারের মধ্যে থাকা এসিড আঁচিল সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে।
৩. কাস্টর অয়েলঃ আঁচিল বা তিল সরাতে কাস্টর অয়েল খুবই ভাল কাজ করে। আঁচিল সাধারণত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) এর কারণে হয়ে থাকে। ক্যাস্টর অয়েলে অ্যান্টিভাইরাল উপাদান থাকায় এটি ভাইরাস প্রতিরোধে সহায়ক। এটি আঁচিলের আশেপাশের ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং শক্ত হয়ে যাওয়া আঁচিল ধীরে ধীরে নরম করে দেয়। এক চা-চামচ কাস্টর অয়েলের সঙ্গে এক চা-চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে তা আঁচিলের উপর লাগিয়ে সারা রাত রেখে দিতে হবে, তার পর তা সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। যতদিন না আঁচিল খসে পড়বে ততোদিন এটি ব্যবহার করুন।
৪. পেঁয়াজের রসঃ পেঁয়াজের রস আঁচিল দূর করার একটি কার্যকর ঘরোয়া উপায়। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাংগাল ও সালফারযুক্ত যৌগ, যা ত্বকের অস্বাভাবিক কোষ গঠনে বাধা দিয়ে আঁচিল শুকিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। সালফার আঁচিল সৃষ্টিকারী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে এবং কোষ গঠনে ভারসাম্য আনে। এটি বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। পেঁয়াজ কুচি করে কেটে আধা চামচ লবণ মিশিয়ে সেই পেঁয়াজ কুচি সারাদিন ঢাকনা দিয়ে রেখে দিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি আঁচিলের উপর ব্যবহার করুন। পরদিন সকালে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিরাতে এটি ব্যবহার করুন দেখবেন আঁচিল দ্রুত সেরে গেছে।
৫. আনারসঃ আনারস শুধু সুস্বাদু ফলই নয়, আঁচিল দূর করার একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া উপায় হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এতে কিছু প্রাকৃতিক এনজাইম ও অ্যাসিড রয়েছে, যা আঁচিলের কোষ ভেঙে ফেলতে সাহায্য করতে পারে। আনারসে থাকা প্রাকৃতিক অ্যাসিড আঁচিল নরম করে ও ধীরে ধীরে শুকিয়ে দিতে পারে। একটি পাত্রে সামান্য পরিমাণ আনারসের রসের সঙ্গে কিছুটা পরিমাণ সামুদ্রিক লবণ মিশিয়ে নিতে হবে। এবার ওই মিশ্রণটি আঁচিলের ওপর লাগিয়ে স্ক্রাব করুন। প্রতিদিন ব্যবহার করলে সাধারণত ৭–১৪ দিনের মধ্যে ভালো ফল মিলতে পারে। তবে কারো ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগতেও পারে।
৬. বেকিং সোডাঃ বেকিং সোডা আঁচিল দূর করার একটি জনপ্রিয় ও কার্যকর ঘরোয়া উপায়। বেকিং সোডা হলো একটি প্রাকৃতিক ক্ষারজাতীয় পদার্থ, যা জীবাণুনাশক, অ্যান্টিসেপটিক এবং প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকের মৃত কোষ ভেঙে ফেলতে এবং ভাইরাস প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।আঁচিল দূর করতে বেকিং সোডা ও ক্যাস্টর অয়েলের একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটা আঁচিলের উপর ভালো করে লাগিয়ে সারারাত এভাবে বেঁধে রাখুন। দু-তিন দিন পর থেকেই ফল পেতে শুরু করবেন। বেকিং সোডা কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে শুষ্কতা বা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে প্রয়োজনে ভ্যাসলিন বা নারিকেল তেল ব্যবহার করুন পাশের ত্বকে।
৭. রসুনঃ রসুন আঁচিল দূর করার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপাদান। এটি ভাইরাসজনিত আঁচিলের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে কারণ এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ। রসুনের মধ্যে রয়েছে অ্যালিসিন নামক উপাদান, যা আঁচিল দূর করতে সহায়তা করে থাকে। সেক্ষেত্রে রসুনকে পিসে পেস্ট তৈরী করুন এবং আঁচিলের ওপর সরাসরি লাগিয়ে কয়েক ঘন্টা রেখে দিন। সাধারণত ৫–৭ দিনের মধ্যে আঁচিল নরম হয়ে শুকিয়ে আসতে শুরু করে, তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ২ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
৮. কাঁচা গোল আলুঃ কাঁচা গোল আলু দিয়ে আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায় বহু প্রাচীন ও জনপ্রিয়। এটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক, আর ত্বকে সহজে সহনীয়, তাই সংবেদনশীল ত্বকেও ব্যবহার করা যায়। গোল আলুতে আছে ক্যাটেকলেস ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বক পুনর্গঠনে সহায়ক। আঁচিল দূর করতে সতেজ একটি কাঁচা আলু গোল করে কেটে আঁচিলের উপর ঘষুন। এর এনজাইম ও আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষ ভেঙে ফেলে ও আঁচিল ধীরে ধীরে শুকিয়ে দেয়। যদি আপনার আঁচিল প্রাথমিক অবস্থায় থাকে তাহলে এভাবে কয়েকদিন করলে দূর হয়ে যাবে।
৯. অ্যালোভেরা জেলঃ অ্যালোভেরা জেল আঁচিল দূর করার জন্য একটি প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ উপাদান। বিশেষ করে ত্বকে যারা সংবেদনশীল, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ ঘরোয়া চিকিৎসা। অ্যালোভেরা জেলে থাকা উপাদান (যেমন Aloin) ভাইরাসজনিত আঁচিল ধ্বংসে সহায়ক। এটি নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে, যার ফলে পুরনো আঁচিল শুকিয়ে পড়ে। আঁচিল দূর করতে অ্যালোভেরার জেল বের করে তা আঁচিলে লাগিয়ে রাখুন। এটি নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে, যার ফলে পুরনো আঁচিল শুকিয়ে পড়ে। কয়েকদিন এভাবে জেল লাগালে আঁচিল নিজে নিজেই পড়ে যাবে।
১০. কলার খোসাঃ কলার খোসা আঁচিল দূর করার জন্য একটি অতি পরিচিত, সহজলভ্য ও প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায়। এতে থাকা নির্দিষ্ট এনজাইম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আঁচিলের কোষ নরম করে এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। কলার খোসায় থাকে লুটেইন ও অন্যান্য ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস যা ভাইরাস-জনিত আঁচিলের বিরুদ্ধে কাজ করে। আঁচিলের কারণ হিসেবে ধরা হয় HPV, যেটিকে দুর্বল করতে কলার খোসা সহায়ক। সেক্ষেত্রে কলার খোসার ভেতরের অংশ দিনে কয়েকবার আঁচিলের উপর ঘষুন। অথবা কলার খোসার পেস্ট বানিয়ে রাতে ব্যবহার করতে পারেন। কয়েকদিন করলে আঁচিল দূর হয়ে যাবে।
১১. ডালিমের খোসা ও লেবুর রসঃ ডালিমের খোসা এবং লেবুর রস, দুইটি প্রাকৃতিক উপাদান যা আঁচিল দূর করার জন্য খুবই কার্যকর হতে পারে। এই দুটি উপাদান একসাথে ব্যবহার করলে তাদের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিভাইরাল ও এক্সফোলিয়েটিং গুণ আঁচিলের জন্য উপকারী। ডালিমের খোসা ৩-৪ দিন রোদে শুকিয়ে নিয়ে গুড়া করে নিন। ডালিমের খোসার গুঁড়োর সাথে কয়েকফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি আঁচিলে লাগান। সাধারণত ৫-৭ দিন ব্যবহারের মধ্যে আঁচিলের আকার ছোট হতে শুরু করে। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে আঁচিল শুকিয়ে বা নরম হয়ে পড়ে যাবে।
১২. ভিটামিন-ই ক্যাপসুলঃ ভিটামিন-ই ক্যাপসুল আঁচিল দূর করতে উপকারী। ই ক্যাপ ত্বকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, সেল রিপেয়ার বাড়ায় এবং ত্বককে সুরক্ষা দেয়। এটি ত্বকে প্রতিরোধী প্রক্রিয়া শুরু করতে সাহায্য করে, যা আঁচিল সৃষ্টি করতে সক্ষম ভাইরাসের কার্যকারিতা কমায়। ভিটামিন-ই ত্বকে গভীরভাবে ময়েশ্চার প্রদান করে, যার ফলে ত্বক নরম থাকে, এবং আঁচিল দ্রুত শুকিয়ে আসে। ওষুধের দোকানে অল্প দামেই ভিটামিন ই ক্যাপসুল পাওয়া যায়। যে স্থানে আঁচিল হয়েছে সে স্থানে ই ক্যাপসুলের তেল বের করে লাগিয়ে তার উপর ব্যান্ডেজ করে সারারাত রেখে দিন। এভাবে টানা ১৫ দিন করলে উপকার পাবেন।
১৩. টি ট্রি অয়েলঃ টি ট্রি অয়েল আঁচিল দূর করার জন্য একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাংগাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল তেল, যা ত্বকের ইনফেকশন এবং ভাইরাসজনিত সমস্যা মোকাবিলায় সহায়ক। টি ট্রি অয়েলে থাকা terpinen-4-ol ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে, যা HPV নামক ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট আঁচিলকে দুর্বল করে। প্রথমে কিছু পরিমান তুলো টি ট্রি অয়েলে ভিজিয়ে নিন, তারপর আঁচিলের স্থানে কয়েক ঘন্টা লাগিয়ে রেখে দিন। টি ট্রি অয়েল ত্বকের উপরের মরা কোষ দূর করে নতুন কোষের গঠনকে উৎসাহিত করে, যার ফলে আঁচিল শুষ্ক হয়ে পড়ে।
আঁচিলের ধরণ বা প্রকারভেদ
আঁচিলের বিভিন্ন ধরণ আছে, এবং প্রতিটি ধরনের আলাদা বৈশিষ্ট্য ও অবস্থান থাকতে পারে। আঁচিল (Wart) হলো ত্বকের উপর একটি ছোট, শক্ত, অস্বাভাবিক বৃদ্ধিযুক্ত অংশ, যা সাধারণত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই ভাইরাসটি ত্বকের ওপরিভাগে প্রবেশ করে কোষ বিভাজনের হার বাড়িয়ে দেয়, ফলে নির্দিষ্ট জায়গায় ত্বক স্ফীত বা মোটা হয়ে যায়। নিচে আঁচিলের প্রতিটি ধরন বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলোঃ
আরও পড়ুনঃ রূপচর্চায় মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম
১. সাধারণ আঁচিলঃ সাধারণ আঁচিল (Common Wart), যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে Verruca Vulgaris বলা হয়, হলো সবচেয়ে সাধারণ ধরণের আঁচিল যা Human Papillomavirus (HPV) সংক্রমণের কারণে হয়। এটি মূলত শরীরের এমন জায়গায় হয় যেখানে ত্বক খোলা থাকে বা ছোট খাটো কাটাছেঁড়ার সুযোগ থাকে। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হাতের পিঠ, আঙুলের গাঁটে, হাঁটু, নখের চারপাশে।
২. পায়ের আঁচিলঃ পায়ের আঁচিল (Plantar Wart), চিকিৎসাবিজ্ঞানে যাকে Verruca Plantaris বলা হয়, এটি হলো (HPV) সংক্রমণের ফলে পায়ের তলায় বা গোড়ালির অংশে সৃষ্ট আঁচিল। এটি অন্যান্য আঁচিলের তুলনায় ব্যতিক্রম, কারণ এটি শরীরের ওজনের চাপে ভেতরের দিকে বাড়ে এবং অনেক সময় তা চলাফেরায় ব্যথা বা অস্বস্তি তৈরি করে। ভাইরাসটি ফাটা বা ভেজা ত্বক দিয়ে প্রবেশ করে। ভেজা জায়গা, যেমনঃ সুইমিং পুল, জিম, শাওয়ার রুমে খালি পায়ে হাঁটলে সহজে সংক্রমণ ঘটে।
৩. সমতল আঁচিলঃ সমতল আঁচিল (Flat Wart), যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে Verruca Plana বলা হয়, এটি একটি হালকা প্রকৃতির আঁচিল, যা দেখতে ছোট, মসৃণ এবং ত্বকের সঙ্গে প্রায় মিশে থাকে। এটি Human Papillomavirus (HPV), বিশেষ করে টাইপ-৩, ১০, ২৮ ও ৪৯ দ্বারা সংক্রমিত হয়ে সৃষ্টি হয়। Flat Wart সাধারণত মুখমণ্ডল ও শরীরের ওপরের অংশে হয়ে থাকে, যেমন মুখ (গাল, কপাল, থুতনি), হাতের পিঠ, পা বা হাঁটু, ঘাড়, বাহু, বুক ইত্যাদি জায়গায়। এটি কিশোর-কিশোরী এবং শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তাই একে অনেক সময় Juvenile Wart ও বলা হয়।
৪. ফিলিফর্ম আঁচিলঃ ফিলিফর্ম আঁচিল (Filiform Wart) হলো একটি বিশেষ ধরনের আঁচিল যা সাধারণত মুখে, গলায়, চোখের আশেপাশে, ঠোঁট বা নাকের পাশে দেখা যায়। এগুলো চিকন ও লম্বাটে আকারের হয়, দেখতে অনেকটা শুঁড়ের মতো বা তন্তুর মতো মনে হয়। ফিলিফর্ম আঁচিল HPV (Human Papillomavirus) নামক ভাইরাসের কারণে হয়, বিশেষ করে HPV টাইপ-১, ২, ৪, ২৭, ও ২৯ এর জন্য দায়ী। এটি সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে বিশেষ করে শেভ করার সময় কেটে গেলে।
৫. জেনিটাল আঁচিলঃ জেনিটাল আঁচিল (Genital Wart) যাকে কনডাইলোমা অ্যাকুমিনাটা (Condyloma Acuminata) বলা হয়। এটি একটি যৌনবাহিত রোগ (STD), যা Human Papillomavirus (HPV), বিশেষ করে টাইপ-৬ ও ১১ দ্বারা হয়ে থাকে। এটি লিঙ্গ, অণ্ডকোষ, মলদ্বার ও তার আশেপাশের ত্বকে ছোট, নরম, মাংসপিণ্ড সদৃশ বা ফুলকপি সদৃশ গুটি আকারে দেখা যায়। জেনিটাল আঁচিল দূর করা গেলেও HPV ভাইরাস শরীরে থাকতে পারে, এবং ভবিষ্যতে আবার ফিরে আসতে পারে। তাই চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণ দুই-ই জরুরি।
৬. মোজাইক আঁচিলঃ মোজাইক আঁচিল (Mosaic Wart) হলো এমন একটি ধরনের আঁচিল যা একত্রে অনেকগুলো ছোট ছোট আঁচিল মিলিয়ে একটি বড়, সমতল বা সামান্য উঁচু গুচ্ছ তৈরি করে। এটি প্রধানত পায়ের তলদেশে হয়ে থাকে এবং দেখতে টাইল বা মোজাইক প্যাটার্নের মতো লাগে, এজন্য এর নাম মোজাইক আঁচিল। এটি (HPV), বিশেষ করে টাইপ-২ ও ১ দ্বারা সংক্রমিত হয়ে হয়ে থাকে। এটি Plantar Wart-এর এক ধরনের অগ্রসর ও সংবদ্ধ রূপ। মোজাইক আঁচিল সাধারণত বেশ জেদি ও সময়সাপেক্ষ চিকিৎসা চায়। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, তত ভালো।
আঁচিল কেনো হয় বা আঁচিল হওয়ার কারণ
আঁচিল কেনো হয় বা আঁচিল হওয়ার পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। এগুলো শরীরের ভেতরের জৈবিক প্রক্রিয়া, পরিবেশগত প্রভাব, বা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত কারণে হতে পারে। আঁচিল অনেক সময় খুবই সাধারণ একটি সমস্যা হলেও, এর পেছনের কারণ ভালোভাবে না জানলে তা অবহেলিত অবস্থায় জটিল হতে পারে। সচেতনতা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ত্বক পরীক্ষা করাই এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভালো অস্ত্র। নিচে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলোঃ
আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ
১. বংশগত বা জেনেটিক কারণঃ বংশগত বা জেনেটিক কারণে আঁচিল হওয়া একটি খুবই সাধারণ ও স্বাভাবিক বিষয়। অনেকের শরীরে আঁচিল জন্মগতভাবেই থাকে। একে বলে Congenital Mole বা Nevus।যদি পরিবারের কারও (বাবা-মা, দাদা-দাদি) আঁচিল থাকে, তাহলে সন্তানদের মধ্যে আঁচিল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এটি সাধারণত নিরীহ, তবে বড় বা অস্বাভাবিক রঙ হলে পর্যবেক্ষণ জরুরি।
২. সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিঃ সূর্যের আলোতে থাকা অতিবেগুনি রশ্মি (Ultraviolet rays) ত্বকের কোষকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে ত্বকের মেলানিন কোষ অতিরিক্তভাবে সক্রিয় হয়ে আঁচিল (mole) বা ত্বকে কালো দাগ তৈরি করতে পারে। নিয়মিত রোদে বের হলে, বিশেষ করে মুখ, গলা, হাত-পা, ঘাড়, বুক এই সব অঞ্চল সূর্যের আলো বেশি পায় বলে এখানে আঁচিলের ঝুঁকি বেশি।বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন (SPF 30 বা বেশি) ব্যবহার করা জরুরি।
৩. হরমোনের পরিবর্তনঃ হরমোন হলো শরীরের রাসায়নিক বার্তাবাহক, যা শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়া যেমন বৃদ্ধির হার, ত্বকের গঠন, মেলানিন উৎপাদন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। যখন শরীরে হরমোনের মাত্রা হঠাৎ পরিবর্তিত হয়, তখন ত্বকের নিচে থাকা মেলানোসাইট (melanocyte) কোষগুলো অতিরিক্ত মেলানিন তৈরি করে, যা আঁচিল বা কালো দাগে পরিণত হতে পারে। সাধারণত তিনটি সময়ে বেশি দেখা যায় কিশোর বয়সে, গর্ভাবস্থায়, মেনোপজ বা হরমোন থেরাপির সময়।
৪. ভাইরাস সংক্রমণঃ আঁচিল কখনো কখনো ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণেও হয়। মূলত Human Papilloma Virus (HPV) নামের একটি ভাইরাস ত্বকে সংক্রমণ ঘটিয়ে ছোঁয়াচে ধরনের আঁচিল (Wart) তৈরি করে। HPV (Human Papilloma Virus) একটি ডিএনএ-ভিত্তিক ভাইরাস, যা ত্বকের উপরিভাগে প্রবেশ করে কোষের বৃদ্ধি অস্বাভাবিক করে তোলে। এটি প্রায় ১০০+ ধরনের হয়, যার কিছু প্রকার ত্বকের আঁচিল, আবার কিছু প্রকার জরায়ুমুখ ক্যান্সার সৃষ্টিতে সক্ষম।
৫. ত্বকে ঘর্ষণ বা বারবার চুলকানিঃ ত্বকের উপর বারবার ঘর্ষণ (Friction) বা চুলকানি হলে ওই স্থানে ত্বকের কোষগুলো অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, যা একসময় আঁচিল বা ত্বকে দানাদার গঠন হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। ত্বকে ঘর্ষণ বা ঘাম জমে ঘষা লাগলে, সেই অংশের মেলানোসাইট কোষ (রঙ তৈরি করে) উত্তেজিত হয়। এতে সেই স্থানে মেলানিন বা কোষ বেড়ে গিয়ে এক জায়গায় জমে যায়। সময়ের সঙ্গে সেখানে একটি ছোট, উঁচু ও কালো দাগ বা আঁচিল তৈরি হতে পারে।
৬. ত্বকের অস্বাস্থ্যকর অবস্থাঃ ত্বক আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ, যা বাহ্যিক পরিবেশ থেকে রক্ষা করে। ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য, আর্দ্রতা, মসৃণতা এবং রঙ যখন নষ্ট হয় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তখন একে অস্বাস্থ্যকর ত্বক বলা হয়। যখন ত্বক পর্যাপ্ত যত্ন না পায় বা বিভিন্ন কারণে অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে, তখন সেখানে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়, তার মধ্যে আঁচিল বা আঁচিল সদৃশ গঠন একটি সাধারণ বিষয়। নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখলে এবং হাইজিন বজায় রাখলে আঁচিলের ঝুঁকি কমে যায়।
আঁচিল দূর করার ঔষধ
আঁচিল দূর করার জন্য বাজারে অনেক ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। এগুলোর বেশিরভাগই
স্যালিসিলিক অ্যাসিড বা অ্যান্টিভাইরাল প্রভাবযুক্ত উপাদান দিয়ে কাজ করে।
স্যালিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত ওষুধ আঁচিল দূর করার জন্য সবচেয়ে প্রচলিত ও
প্রমাণিত চিকিৎসা পদ্ধতির একটি। এটি ত্বকের উপরিভাগের মৃত কোষকে ধীরে ধীরে
গলিয়ে ফেলে এবং আঁচিলের গভীরে থাকা ভাইরাস সংক্রমিত কোষগুলো ধ্বংস করে। নিচে
কিছু সাধারণ ও কার্যকর ওষুধের তালিকা দেওয়া হলোঃ
জনপ্রিয় স্যালিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত ওষুধের তালিকাঃ স্যালিসিলিক অ্যাসিড ত্বকের উপরের শক্ত কেরাটিন স্তর গলিয়ে দেয়। আঁচিলের ভিতরের ভাইরাস আক্রান্ত কোষ নষ্ট করে এবং ধীরে ধীরে আঁচিল শুকিয়ে ফেলে এবং তা পড়ে যায়। সাধারণত ১৭%–৪০% স্যালিসিলিক অ্যাসিড আঁচিল চিকিৎসার জন্য ব্যবহার হয়।
নাম | ফর্ম | কার্যকারিতা | নোট |
---|---|---|---|
Duofilm | লিকুইড | সাধারণ আঁচিলের জন্য জনপ্রিয় | দিনে ১–২ বার ব্যবহার |
Compound W | লিকুইড, জেল, প্যাড | সহজে ব্যবহারের জন্য পরিচিত | প্যাড ফর্ম ঘুমের সময় ব্যবহারযোগ্য |
Dr. Scholl’s Clear Away | ডিস্ক + লিকুইড | কার্যকরভাবে আঁচিলের উপর চাপ দেয় | ১০–১২ দিনব্যাপী ব্যবহারের জন্য |
Wart-Off (Salicylic Acid 20–40%) | ক্রিম বা জেল | শক্ত আঁচিলের জন্য কার্যকর | সংবেদনশীল ত্বকে সাবধানে |
Clearasil Wart Remover | লিকুইড | হালকা আঁচিলের জন্য উপযুক্ত | দিনে ১ বার ব্যবহারের নির্দেশ |
ব্যবহার পদ্ধতিঃ গরম পানি দিয়ে আঁচিল ৫–১০ মিনিট ভিজিয়ে নরম করুন।
শুকিয়ে নিয়ে মরা চামড়া কেটে ফেলুন (পিউমিক স্টোন বা নরম Emery board দিয়ে,
রক্ত যেন না বের হয়)। স্যালিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত ওষুধ আঁচিলের উপর লাগান।
চাইলে ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে রাখতে পারেন। প্রতিদিন ১–২ বার নিয়মিত ব্যবহার করুন। ১–৩
সপ্তাহে ফলাফল শুরু হয়, পুরোপুরি যেতে ৪–৬ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে।
সতর্কতাঃ সংবেদনশীল ত্বক, চোখ, মুখ, জেনিটাল বা খোলা ক্ষত জায়গায়
ব্যবহার করবেন না। ডায়াবেটিস রোগী বা রক্ত সঞ্চালন সমস্যায় আক্রান্ত
ব্যক্তি ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ব্যবহার স্থানে যদি
ব্যথা, জ্বালাপোড়া বা রক্তপাত হয়, ব্যবহার বন্ধ করুন।
আঁচিল দূর করার চিকিৎসা পদ্ধতি
আঁচিল দূর করার চিকিৎসা পদ্ধতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা আঁচিলের ধরণ,
আকার এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে। আঁচিলের চিকিৎসা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই
সফল, তবে এটি ধৈর্য, সময় এবং প্রক্রিয়া অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। ঘরোয়া
চিকিৎসা, টপিকাল চিকিৎসা, চিকিৎসকের পদ্ধতি, এবং অতি গুরুতর অবস্থায়
সার্জারি বা লেজার থেরাপি সবই বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োগ করা হয়। নিচে
বিস্তারিতভাবে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির বিশ্লেষণ করা হলোঃ
আরও পড়ুনঃ ত্বকের যত্নে কমলার খোসার উপকারিতা
১. টপিকাল চিকিৎসাঃ এটি সাধারণত সহজ এবং প্রথম পর্যায়ের চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এখানে কিছু সাধারণ ওষুধ বা ক্রিম ব্যবহার করা হয়ঃ
- সালিসাইলিক অ্যাসিডঃ সালিসাইলিক অ্যাসিড একটি keratolytic উপাদান, যা ত্বকের উপরের স্তর বা কোষগুলোকে দ্রবীভূত করে এবং আঁচিল ধীরে ধীরে সারে। এটি আঁচিলের কোষগুলিকে ধ্বংস করে এবং ত্বক থেকে মুছে ফেলতে সাহায্য করে। সালিসাইলিক অ্যাসিড সাধারণত ক্রিম বা লিকুইড আকারে পাওয়া যায়। দিনে একবার আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। তবে, এটি ব্যবহারে সময়সীমা (অন্তত কয়েক সপ্তাহ) প্রয়োজন, যাতে পুরোপুরি আঁচিল চলে যায়। এই টপিকাল চিকিৎসা খুবই জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে সাধারণত ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে আঁচিল সেরে যায়।
- ইমিকুইমোড ক্রিমঃ এটি একটি ইমিউনোগুলেটর যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপ্ত করে, ফলে আপনার শরীর নিজে নিজে HPV ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয়। এটি বিশেষত জেনিটাল আঁচিল বা অ্যানাল এলাকায় ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত রাতে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলা হয়। সপ্তাহে ৩-৫ দিন এটি ব্যবহারের পর, কিছু সপ্তাহের মধ্যে ফল দেখা যায়। এটি অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শে ব্যবহার করা উচিত, কারণ অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
২. ক্রায়োথেরাপিঃ ক্রায়োথেরাপি একটি শক্তিশালী চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে তরল
নাইট্রোজেন ব্যবহার করে আঁচিলের কোষগুলোকে ফ্রিজ করে মারা হয়। চিকিৎসকরা
তরল নাইট্রোজেনকে একটি কাপড়ে বা স্প্রে ডিভাইসে ব্যবহার করে, আক্রান্ত
স্থানে এটি প্রয়োগ করেন। এর ফলে আঁচিলের কোষগুলো জমে গিয়ে মারা যায় এবং
ধীরে ধীরে পড়ে যায়। এই পদ্ধতিতে কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা, লালভাব বা ফোসকা
হতে পারে। একাধিক সেশন প্রয়োজন হতে পারে। এটি পায়ের পাতায় বা মুখের
আশেপাশে, বিশেষ করে গায়ে ফোস্কা তৈরির মতো কোনো জায়গায় ব্যবহৃত হলে
চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
৩. ইলেকট্রোকাওটারিঃ এই পদ্ধতিতে উচ্চ তাপ ব্যবহার করে
আঁচিলের কোষগুলো পোড়ানো হয়, যাতে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। বৈদ্যুতিক যন্ত্রের
মাধ্যমে আঁচিলের ওপর তাপ প্রয়োগ করা হয়, যার ফলে এটি শুকিয়ে পড়ে।
চিকিৎসায় সাধারণত লঘু ব্যথা অনুভূত হয় এবং পরবর্তীতে কিছু সময়ের জন্য
স্থানটি শুষ্ক বা শুকিয়ে যেতে পারে। এই পদ্ধতি সঠিকভাবে করতে হবে এবং
চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করা উচিত, বিশেষ করে কালো বা কঠিন আঁচিলের
ক্ষেত্রে।
৪. লেজার থেরাপিঃ লেজার থেরাপি শক্তিশালী লেজার ব্যবহার করে
আঁচিলের কোষগুলোকে ধ্বংস করে। এটি আঁচিলকে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে মেরে
ফেলে।বিশেষ ধরনের লেজার (যেমন: CO2 লেজার বা আর্গন লেজার) ব্যবহার করে
আঁচিলের উপর ফোকাস করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে রক্তপাত বা ব্যথা হতে পারে এবং
পরবর্তীতে ছোট ফোসকা বা আঘাত হতে পারে। এটি প্রায়ই কঠিন বা গভীর আঁচিলের
ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
৫. সার্জারিঃ কীভাবে কাজ করে: সার্জারিতে, চিকিৎসক বিশেষ
কাঁচি বা স্ক্যালপেল ব্যবহার করে আঁচিলটি কেটে বের করে ফেলেন। সাধারণত
এটি বড় আঁচিল, গভীর আঁচিল, বা একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে সেরে না ওঠা
আঁচিলের ক্ষেত্রে করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে সেলাই প্রয়োজন হতে পারে এবং এই
পদ্ধতিতে সাধারণত কিছু সময়ের জন্য ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। একে
সাধারণত অপারেশন বা আক্রমণাত্মক চিকিৎসা হিসেবে মনে করা হয়, তাই এটি
ডাক্তারি তত্ত্বাবধানে করা উচিত।
৬. ডিপ্লোম্যাটিক চিকিৎসাঃ এই পদ্ধতিতে, আক্রান্ত স্থানে
আঠালো টেপ লাগানো হয়, এবং এটি কয়েক দিনের জন্য রেখে দেওয়া হয়। এটি
আঁচিলের ওপর আঠালো সৃষ্টি করে, যা ধীরে ধীরে আঁচিলের কোষগুলোকে ধ্বংস
করে। এটি একে প্রাকৃতিক এবং সস্তা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তবে
এটি সবার ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। এই পদ্ধতিতে অনেক সময় অস্বস্তি বা
ত্বকের ক্ষতি হতে পারে, তাই সতর্কভাবে ব্যবহার করতে হবে।
৭. হোম রেমেডিঃ এগুলি প্রাকৃতিক পদ্ধতি এবং অনেক মানুষই একে
ব্যবহার করে, তবে এগুলোর কার্যকারিতা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত নয়।
রসুনের মধ্যে অ্যান্টিভাইরাল গুণ থাকে, এবং অনেক সময় এটি আঁচিলের উপর
প্রয়োগ করা হয়। অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের অ্যাসিডিক উপাদান আঁচিলের
কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করতে পারে।
মুখের কালো আঁচিল দূর করার উপায়
মুখের কালো আঁচিল দূর করার সবচেয়ে নিরাপদ উপায় নির্ভর করে আঁচিলের ধরণ, আকার
এবং অবস্থান অনুযায়ী। যেহেতু মুখের ত্বক খুবই সংবেদনশীল ও দৃশ্যমান, তাই
আঁচিল দূর করার সময় ধীরে ও সতর্কভাবে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মুখের কালো আঁচিল
সাধারণত ছোট, উঁচু, কখনো কখনো তিলের মতো দেখতে হয়, যা HPV ভাইরাস এর কারণে
হতে পারে, বংশগত বা বয়সজনিত কারণেও দেখা দিতে পারে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক
মুখের কালো আঁচিল দূর করার উপায়গুলো কি।
১. ক্রায়োথেরাপিঃ ক্রায়োথেরাপি (Cryotherapy) একটি আধুনিক চিকিৎসা
পদ্ধতি যা ঠাণ্ডা বা ফ্রিজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ত্বকের নির্দিষ্ট কোষ
ধ্বংস করে দেয়। এই পদ্ধতিতে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করে খুব কম তাপমাত্রায়
(-196°C) আঁচিল বা ত্বকের টিস্যু হিমায়িত করে ধ্বংস করা হয়। এটি মুখের কালো
আঁচিল, ত্বকের ট্যাগ বা অন্যান্য ত্বকের বাড়তি গঠন সরাতে কার্যকর একটি উপায়।
১–২ দিনের মধ্যে জায়গাটি লালচে বা ফোলাভাব হতে পারে এবং ৭–১০ দিনের মধ্যে
আঁচিলটি শুকিয়ে পড়ে যাবে। ক্রায়োথেরাপির খরচ সাধারণত ১,৫০০–৫,০০০ টাকা এর
মধ্যে হয়, আঁচিলের আকার, জায়গা ও ক্লিনিক অনুসারে।
২. লেজার থেরাপিঃ লেজার থেরাপি হলো একটি আধুনিক, কার্যকর ও
তুলনামূলকভাবে নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি, যা মুখসহ শরীরের যেকোনো অংশের আঁচিল
(তিল বা mole) দূর করতে ব্যবহৃত হয়। লেজার থেরাপিতে উচ্চ-নির্দিষ্ট লাইট বিম
(light beam) বা লেজার রশ্মি ব্যবহার করে আঁচিলের কোষগুলোকে ধ্বংস করা হয়।
এটি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে কাজ করে, আশপাশের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত না করে কেবল
আঁচিলের কোষ নষ্ট করে। লেজার মেশিন থেকে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো
আঁচিলের কোষে প্রবেশ করে। এই আলো কোষের রঞ্জক পদার্থ (melanin)-কে লক্ষ্য করে
কোষগুলোকে ধ্বংস করে।ধীরে ধীরে আঁচিল শুকিয়ে পড়ে যায় বা রঙ হালকা হয়ে অদৃশ্য
হয়ে যায়।
৩. কিউরেটাজঃ কিউরেটাজ হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে বিশেষ ধাতব
যন্ত্র দিয়ে আঁচিল, স্কিন ট্যাগ, অথবা ত্বকের উপরের অপ্রয়োজনীয় কোষ বা গঠন
ঘষে তুলে ফেলা হয়। এই পদ্ধতি সাধারণত সার্জিকাল স্কিন রিমুভাল প্রক্রিয়ার
অন্তর্ভুক্ত এবং অনেক সময় ইলেক্ট্রোডেসিকেশন (বিদ্যুৎ দিয়ে পোড়ানো)-এর সাথে
একত্রে করা হয়। প্রথমে স্থানীয় অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে জায়গাটিকে অসাড় করা
হয়।তারপর একটি বিশেষ কিউরেট (curette) নামে গোলাকার ধারালো ধাতব যন্ত্র দিয়ে
আঁচিল বা টিস্যু ধীরে ধীরে স্ক্র্যাপ (ঘষে) করে তুলে ফেলা হয়। প্রয়োজনে
ইলেক্ট্রোডেসিকেশন দিয়ে জায়গাটি পোড়ানো হয়, যাতে রক্তপাত বন্ধ হয় এবং কোষ
ধ্বংস হয়।
৪. সার্জিক্যাল এক্সিশনঃ সার্জিক্যাল এক্সিশন হলো আঁচিল বা ত্বকের অপ্রয়োজনীয় গঠন সম্পূর্ণ কেটে ফেলার একটি স্থায়ী ও কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি সাধারণত তখন করা হয়, যখন আঁচিলটি বড়, গভীর, অস্বাভাবিক, অথবা ক্যান্সারজাত (সন্দেহজনক) হতে পারে। এটি একটি ছোট সার্জারি, যেখানে স্থানীয় অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে ত্বকের আঁচিল বা টিউমারের জায়গাটি অসাড় করা হয়। এরপর আঁচিল ও চারপাশের কিছুটা সুস্থ টিস্যু ব্লেড দিয়ে কাটা হয়, কাটার পর জায়গাটি সেলাই দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৭–১৪ দিনের মধ্যে সেলাই খোলার পর সুস্থ্য হতে ২–৩ সপ্তাহ সময় লাগে।
আঁচিল দূর করার হোমিওপ্যাথি ঔষধ
আঁচিল দূর করার জন্য হোমিওপ্যাথিতে বেশ কিছু জনপ্রিয় ওষুধ ব্যবহৃত হয়। চর্মরোগের সমস্যাগুলোতে হোমিও ঔষধ খুব ভালো কাজ করে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, হোমিও চিকিৎসা রোগীর শারীরিক গঠন, মনঃস্থিতি ও আঁচিলের ধরন অনুযায়ী আলাদা হতে পারে, তাই নিজে নিজে না নিয়ে, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই নিরাপদ। আঁচিল সমস্যায় সাধারণত যে হোমিও ঔষুধগুলো ব্যবহার করা হয় তা হলোঃ
ওষুধের নাম | ব্যবহারের ক্ষেত্র |
---|---|
Thuja Occidentalis | সবচেয়ে জনপ্রিয় আঁচিল দূরকারী হোমিও ওষুধ। বিশেষ করে মুখে বা গলায় মাংসপিণ্ডের মতো আঁচিলের জন্য |
Calcarea Carbonica | যদি আঁচিল হয় মোটা/শ্লথ ব্যক্তির শরীরে, যাদের ঘাম বেশি হয় |
Causticum | কড়া ধরনের আঁচিল বা যা ব্যথা করে/রক্তপাত হয় |
Nitric Acid | যদি আঁচিলে ফাটল, রক্ত বা তীব্র জ্বালা থাকে |
Dulcamara | আর্দ্র পরিবেশে বাড়ে এমন আঁচিলের জন্য উপযোগী |
Antimonium Crudum | পা বা হাতের নিচে শক্ত আঁচিলের জন্য |
Sepia | নারীদের হরমোনজনিত আঁচিলের জন্য কার্যকর |
ঔষুধগুলো আঁচিল দূর করার জন্য ভালো কাজ করে থাকে। ৩–৪ সপ্তাহে ফল মিললেও, কারও কারও ক্ষেত্রে ২–৩ মাস সময় লাগে। তাই আঁচিল সমস্যা সমাধানের জন্য বেছে নিতে পারেন হোমিওপ্যাথি ঔষধ। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হোমিও ওষুধ সেবন করা থেকে বিরত থাকবেন। হোমিওপ্যাথি ঔষধগুলো রোগির অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসকেরা প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আঁচিল প্রতিরোধের কার্যকর উপায়
আঁচিল প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো HPV ভাইরাসের সংক্রমণ এড়ানো, কারণ এই
ভাইরাসই আঁচিলের মূল কারণ। আঁচিল (Wart) সাধারণত ভাইরাসের কারণে ত্বকে সৃষ্টি হয়,
এবং এটি ছোঁয়াচে। আঁচিল প্রতিরোধ পুরোপুরি সম্ভব না হলেও, কিছু কার্যকর অভ্যাস
গড়ে তুললে নতুন আঁচিল হওয়া কমিয়ে আনা যায় এবং ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস করা যায়। নিচে
আঁচিল প্রতিরোধে কার্যকর ও বাস্তবমুখী কিছু উপায় দেওয়া হলোঃ
১. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুনঃ ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায়
রাখা আঁচিলসহ যেকোনো ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অভ্যাসটি
আপনার শরীরকে HPV ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারে, যা আঁচিলের প্রধান কারণ। বাইরে
থেকে এলে বা কিছু স্পর্শ করার পর হাত ধুয়ে ফেলুন। বিশেষত আঁচিল বা ত্বকের কোনো
অসুস্থ অংশে হাত লাগালে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। স্যাঁতসেঁতে বা
ঘামে ভেজা ত্বকে ভাইরাস সহজে প্রবেশ করে। পা, আঙুলের ফাঁক, বগল, গোপনাঙ্গ এসব
জায়গা দিনে অন্তত ২ বার পরিষ্কার ও শুকনো রাখা উচিত।
২. পাবলিক জায়গায় সাবধান থাকুনঃ আঁচিল প্রতিরোধে পাবলিক জায়গায়
সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস
(HPV) সাধারণত ভেজা, স্যাঁতসেঁতে এবং ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় সহজে ছড়ায়। আপনি যদি
এই ধরনের স্থানে নিয়মিত যাতায়াত করেন, তাহলে কিছু নিয়ম মেনে চলা আপনার ত্বককে
ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। সুইমিং পুল, জিম, কমন বাথরুমে খালি
পায়ে হাঁটবেন না এই জায়গাগুলোতে HPV ভাইরাস অনেকক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। সবসময়
স্যান্ডেল বা স্লিপার ব্যবহার করুন।
৩. ব্যক্তিগত জিনিস শেয়ার করবেন নাঃ আঁচিল প্রতিরোধে ব্যক্তিগত
জিনিস শেয়ার না করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা। কারণ, হিউম্যান
প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) যেটি আঁচিল সৃষ্টি করে তা সংক্রমিত ব্যক্তির ত্বক বা
ব্যবহৃত জিনিস থেকে সহজেই অন্যদের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেক সময় এই ভাইরাস
দৃষ্টিগোচর না হলেও ত্বকে সক্রিয় থাকে এবং ব্যবহার্য জিনিসে ছড়ায়। যদি আপনি এমন
কিছু ব্যবহার করেন যা কেউ আগে ব্যবহার করেছে এবং তার আঁচিল ছিল। আঁচিলযুক্ত
কারও ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। তোয়ালে, রেজার, মোজা, জুতো বা
নেইল কাটার অন্যের সঙ্গে ভাগ করে ব্যবহার করবেন না।
৪. আঁচিল থাকলে সেটি খোঁচাবেন নাঃ আঁচিল থাকলে সেটি খোঁচানো, ঘষা বা
ছেঁড়া একেবারেই উচিত নয়, কারণ এতে শুধু নিজের শরীরে আরও আঁচিল ছড়ায় না বরং
সংক্রমণের ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়। আঁচিল HPV ভাইরাসের কারণে হয়, যা ত্বকের
সংস্পর্শে ছড়ায়। যদি আপনি আঁচিল খোঁচান বা ছিঁড়েন, তাহলে সেই ভাইরাস আপনার হাতের
মাধ্যমে শরীরের অন্য অংশে চলে যেতে পারে এবংনতুন জায়গায় নতুন আঁচিল সৃষ্টি করতে
পারে। মনে রাখবেন আঁচিল যত ঘষাবেন, তত ছড়াবে তাই খোঁচানো মানেই বিপদ ডেকে আনা।
৫. হাত ও পায়ের নখ কাটার সময় সতর্কতাঃ হাত ও পায়ের নখ কাটার সময়
সতর্কতা বজায় রাখা শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যও জরুরি,
বিশেষ করে যদি আপনি আঁচিল বা অন্য কোনো ত্বকজনিত সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ,
নখের মাধ্যমে ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হলে HPV ভাইরাস সহজে প্রবেশ করে আঁচিল তৈরি করতে
পারে। নিজস্ব নেইল কাটার ব্যবহার করুন অন্যের ব্যবহার করা নেইল কাটার বা নেইল
ফাইলার শেয়ার করবেন না। আঁচিলযুক্ত ত্বকের সংস্পর্শে আসার পর হাত ধুয়ে ফেলুন ও
নেইল ক্লিপার ও অন্যান্য সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত রাখুন।
৬. HPV ভ্যাকসিন নিনঃ HPV ভ্যাকসিন নেওয়া আঁচিল প্রতিরোধের সবচেয়ে
কার্যকর পদক্ষেপ, বিশেষত কিশোর-কিশোরীদের জন্য, যাতে ভবিষ্যতে HPV-সংক্রান্ত
স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন আঁচিল, জরায়ুমুখ ক্যান্সার, গলা ও মুখের ক্যান্সার
প্রতিরোধ করা যায়। HPV ভাইরাসের কারণে যে ধরনের আঁচিল হয়, বিশেষ করে জেনিটাল ও
অ্যানাল আঁচিল, সেই আঁচিল প্রতিরোধ করা যায়। HPV ভাইরাস জরায়ুমুখ, গলা, মুখ,
আন্ডারআর্ম ইত্যাদির ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে, যা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ
করা সম্ভব। একবার ভ্যাকসিন নেওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের জন্য সুরক্ষা পাওয়া যায়,
বিশেষ করে কিশোর বয়সে ভ্যাকসিন নিলে তা সবচেয়ে কার্যকরী।
৭. সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক বজায় রাখুনঃ সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক বজায় রাখা
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং যৌন রোগের প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। HPV সহ
বিভিন্ন যৌন সংক্রমণ (STIs) থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক অত্যন্ত
জরুরি। কনডম (ম্যাসকুলিন কনডম বা ফেমিনিন কনডম) HPV, HIV, সিফিলিস, গনোরিয়া,
ক্ল্যামিডিয়া ইত্যাদি যৌন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। প্রতি বার যৌন সম্পর্কের
সময় কনডম ব্যবহার নিশ্চিত করুন, এতে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার ছড়ানো রোধ হয়।একাধিক
যৌন সঙ্গী থাকার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা
যৌন স্বাস্থ্য রক্ষা করে। সঙ্গীর HPV বা অন্য কোনো যৌন রোগ থাকলে, তাদের থেকে
সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৮. ইমিউন সিস্টেম ভালো রাখুনঃ ইমিউন সিস্টেম ভালো রাখা শরীরকে নানা
ধরনের সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি শক্তিশালী
ইমিউন সিস্টেম আপনার শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকর
উপাদান থেকে সুরক্ষা দেয়। ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা ভাল রাখতে প্রতিদিন ৭–৮
ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি কারণ ঘুমের সময় শরীরের পুনর্নবীকরণ হয়, যা ইমিউন ফাংশন ভালো
রাখে। দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপ থাকলে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায়। ধ্যান,
যোগব্যায়াম, এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন মানসিক শান্তি আনে, যা শরীরের ইমিউন
প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়।
৯. শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতাঃ শিশুদের ক্ষেত্রে আঁচিলের প্রতি
বিশেষ সতর্কতা নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের ত্বক অনেকটা স্পর্শকাতর এবং
ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়াতে পারে। শিশুদের হাত নিয়মিত ধোয়া উচিত, বিশেষত স্কুল বা
খেলার পর। আঁচিল ছোঁয়াচে, তাই এটা প্রতিরোধে হাত ধোয়া খুবই জরুরি। শিশুদের যদি
আঁচিল থাকে, তাদের ব্যবহৃত টোওয়েল, কাপড় বা বেডশিট আলাদা রাখুন যাতে ভাইরাস ছড়িয়ে
না পড়ে। এই জিনিসগুলো অন্যদের ব্যবহারের জন্য না দিন। শিশুদের আঁচিল বা ত্বকের
সমস্যা নিয়ে খেলতে বা চুলকাতে দেয়ার থেকে বিরত থাকতে বলুন, কারণ এটি আরও ছড়িয়ে
পড়তে পারে।
শেষকথাঃ আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায়
আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে নানা ধরনের টোটকা ও পরামর্শ প্রচলিত থাকলেও, একজন
সচেতন লেখক হিসেবে আমি মনে করি এগুলো ব্যবহারের আগে সাবধানতা ও বাস্তবতা অবশ্যই
বিবেচনায় নেয়া উচিত। অনেকেই বিশ্বাস করেন রসুন, আপেল সিডার ভিনেগার, কাঁচা কলার
কষ বা বেকিং সোডা দিয়ে আঁচিল দূর করা সম্ভব। এগুলো কিছু ক্ষেত্রবিশেষে কার্যকর
হলেও, তা সব ধরনের আঁচিলে প্রয়োগযোগ্য নয়, এবং অনেক সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা
দাগ ফেলে যায়।
ঘরোয়া উপায় সব সময়ই প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে, যদি আঁচিল রঙ বদলায়,
বেড়ে যায় বা ব্যথা হয়, তাহলে দেরি না করে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ঘরোয়া পদ্ধতি চেষ্টা করতেই পারেন, তবে জেনে-বুঝে, ধীরে এবং সবসময় বিকল্প চিকিৎসার
দরজা খোলা রেখে। কারণ, ত্বকের যত্নে ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত অনেক বড় হতে পারে।
আশা করছি, আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url