ধ্বজভঙ্গ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
ধ্বজভঙ্গ রোগের লক্ষণ হলো যৌন উত্তেজনার সময় লিঙ্গ যথাযথভাবে উত্তেজিত না হওয়া
বা উত্তেজনা ধরে রাখতে না পারা। এটি ধীরে ধীরে শুরু হলেও অনেকের ক্ষেত্রে হঠাৎ
করেও দেখা দিতে পারে। সকালবেলার স্বাভাবিক ইরেকশনের অভাব, যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস,
কিংবা যৌনমিলনের সময় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, সবই এই সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি জরিপে দেখা গেছে, পুরুষরা নারীদের তুলনায় ডাক্তারের কাছে
কম যান। এর পেছনে কারণ হলো, পুরুষেরা যেকোনো রোগকে গুরুত্ব কম দেন। পুরুষের
দৃষ্টিগোচোর হওয়া এমন একটি রোগ হলো ধ্বজভঙ্গ। ধ্বজভঙ্গ রোগ কি এবং কেন হয় তা
অনেকের কাছেই অজানা। তাই আজ আমি এই রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ধ্বজভঙ্গ রোগ কি
ধ্বজভঙ্গ রোগ শব্দটি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতির একটি পুরাতন শব্দ, যা মূলত
পুরুষের যৌন দুর্বলতা বা লিঙ্গ উত্তেজনার সমস্যাকে বোঝায়। আধুনিক চিকিৎসা
বিজ্ঞানে একে বলা হয় ইরেকটাইল ডিসফাংশন Erectile Dysfunction (ED)। এটি এমন
একটি অবস্থা, যেখানে পুরুষ যৌন উত্তেজনার সময় লিঙ্গের যথেষ্ট দৃঢ়তা (ইরেকশন)
অর্জন করতে ব্যর্থ হয় অথবা দীর্ঘ সময় ধরে তা ধরে রাখতে পারে না, যার ফলে
যৌনমিলনে সমস্যা হয়।
ধ্বজভঙ্গ অর্থ এমন একটি অবস্থা, যেখানে লিঙ্গ উত্তেজিত হয় না বা উত্তেজিত
হলেও তা টিকে না থাকে। এই রোগটি শুধুমাত্র শারীরিক নয়, বরং মানসিক ও সামাজিক
দিক থেকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বর্তমান সময়ে এই সমস্যাটি দিন দিন
বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলের উচ্চচাপপূর্ণ জীবনে। এটি শরীরের শুক্র
ধাতু দুর্বল হলে দেখা দেয় এবং মানসিক ও শারীরিক নানা সমস্যার কারণে শরীরের
যৌন শক্তি হ্রাস পায়।
এই রোগ নিয়ে বহু মানুষ বহু মতামত পোষণ করেন। আসলে সহবাসের ইচ্ছা থাকার
সত্ত্বেও লিঙ্গের শিথিলতার জন্য সহবাসে ব্যর্থ হলে তাকে ধ্বজভঙ্গ রোগ বলে।
সহবাসে লিপ্ত হতে যাওয়ার সময় লিঙ্গ শক্ত এবং উথ্যান না হওয়ায় কারণে
সহবাস করতে ব্যর্থ হয়। মূলত ধ্বজভঙ্গ রোগ যেসব পুরুষদের হয়ে থাকে তাদের
বীর্য খুব কম তৈরি হয়। বীর্য হলেও তা হয় পাতলা, যার ফলে যৌন সম্পর্ক স্থাপন
করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়।
ধ্বজভঙ্গ রোগের লক্ষণসমূহ
ধ্বজভঙ্গ রোগের লক্ষণসমূহ অনেক সময় ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়, আবার কখনো হঠাৎ
করেও দেখা দিতে পারে। ধ্বজভঙ্গ হলো এমন একটি শারীরিক ও মানসিক সমস্যা
যেখানে একজন পুরুষ যৌন মিলনের জন্য প্রয়োজনীয়ভাবে লিঙ্গোত্থান (ইরেকশন)
অর্জন বা তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। এটি সাময়িক বা স্থায়ী হতে পারে, এবং
একাধিক লক্ষণ ও উপসর্গের মাধ্যমে ধরা পড়ে। নিচে ধ্বজভঙ্গ রোগের লক্ষণগুলো
ধারাবাহিকভাবে ব্যাখ্যা করা হলোঃ
১. যৌন উত্তেজনা সত্ত্বেও লিঙ্গ উত্তেজিত না হওয়াঃ এটি ধ্বজভঙ্গ
(Erectile Dysfunction - ED)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পষ্ট লক্ষণ। অনেক
পুরুষই এ সমস্যার সম্মুখীন হন, যেখানে শরীরে বা মনে যৌন উত্তেজনা থাকলেও
লিঙ্গ ঠিকভাবে উত্তেজিত হয় না বা ইরেকশন আসে না। এটি শুধু শারীরিক নয়,
মানসিক কারণেও হতে পারে। সমস্যাটি যে মানসিক বা শারীরিক তা নির্ণয় করে
যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
২. ইরেকশন হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী না হওয়াঃ এটি ধ্বজভঙ্গ (Erectile
Dysfunction - ED)-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ। এ ক্ষেত্রে পুরুষ যৌন
উত্তেজনার ফলে লিঙ্গোত্থান (ইরেকশন) পান ঠিকই, কিন্তু তা পর্যাপ্ত সময়
স্থায়ী হয় না—অর্থাৎ মিলনের আগে বা মাঝপথেই লিঙ্গ আবার নিস্তেজ হয়ে যায়। এই
সমস্যা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ও জীবনযাপন সংক্রান্ত নানা কারণে হতে পারে।
এটি অবহেলা করলে ভবিষ্যতে আরও জটিলতা বাড়তে পারে।
৩. যৌনমিলনে অক্ষমতাঃ যৌনমিলনে অক্ষমতা বলতে বোঝানো হয়, একজন পুরুষ
যৌনমিলনের সময় পর্যাপ্ত লিঙ্গোত্থান (ইরেকশন) অর্জন করতে না পারা বা তা ধরে
রাখতে না পারার কারণে যৌনক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হন। এটি ধ্বজভঙ্গ
রোগের সবচেয়ে স্পষ্ট ও প্রকট লক্ষণ। এর প্রভাব শুধু যৌনজীবনে সীমাবদ্ধ থাকে
না, মানসিক, দাম্পত্য ও আত্মবিশ্বাসেও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে
টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কমে গেলে যৌনমিলনের ইচ্ছা ও সক্ষমতা কমে যায়।
৪. লিঙ্গোত্থান হতে দেরি হওয়া বা না হওয়াঃ পুরুষের যৌন উত্তেজনার
একটি স্বাভাবিক ফল হলো লিঙ্গোত্থান বা ইরেকশন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা
যায়, যৌন উত্তেজনা থাকলেও লিঙ্গোত্থান হতে অনেক সময় লাগে বা একেবারেই হয়
না। এটি ধ্বজভঙ্গ (Erectile Dysfunction) রোগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
সমস্যাটি শারীরিক, মানসিক এবং জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট অনেক কারণে হতে পারে।
সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে এটি ধ্বজভঙ্গ রোগে রূপ নিতে পারে।
৫. সকালের স্বাভাবিক ইরেকশন কমে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়াঃ সকালের
স্বাভাবিক লিঙ্গোত্থান বা "নকচার্নাল পেনাইল টিউমেসেন্স (NPT)"—একটি সুস্থ
পুরুষের জন্য অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এটি শরীরের স্বাভাবিক
হরমোনচক্র, স্নায়ু-সক্রিয়তা এবং রক্ত চলাচলের একটি প্রাকৃতিক ইঙ্গিত। এই
ইরেকশন সাধারণত ঘুমের REM (Rapid Eye Movement) পর্যায়ে ঘটে এবং প্রমাণ করে
যে পুরুষের শরীর এখনও ইরেকশনের সক্ষমতা রাখে। এটি সাধারণত ২০–৪০ মিনিট
স্থায়ী হয় এবং প্রতিদিন না হলেও, সপ্তাহে ৩–৫ দান সকালের ইরেকশন হওয়া
স্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়। তবে যদি এই ধীরে ধীরে কমে আসে বা একেবারেই না ঘটে,
তা হতে পারে কোনো শারীরিক, মানসিক, বা জীবনযাপনজনিত সমস্যার লক্ষণ।
৬. যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাসঃ যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস (Low Libido) হলো এমন
এক অবস্থা, যেখানে একজন পুরুষ বা নারী যৌন সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন বা
আগ্রহ অনেকটাই কমে যায়। এটি ধ্বজভঙ্গ বা অন্যান্য যৌন সমস্যার একটি
গুরুত্বপূর্ণ মানসিক ও শারীরিক উপসর্গ। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানে Hypoactive
Sexual Desire Disorder (HSDD) বলা হয়। এই সমস্যা সাময়িক বা দীর্ঘস্থায়ী
হতে পারে এবং ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস, সম্পর্ক, ও মানসিক স্বাস্থ্যে গভীর
প্রভাব ফেলতে পারে। এটি প্রভাবিত হয় হরমোন, মানসিক অবস্থা, সম্পর্কের
গুণমান, ও দৈনন্দিন অভ্যাস দ্বারা।আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পেলে যৌন সম্পর্কের
প্রতি আগ্রহ কমে যায়, যা দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েন সৃষ্টি করতে পারে
৭. যৌন মিলনের সময় আত্মবিশ্বাসের অভাবঃ যৌন সম্পর্কের সময়
আত্মবিশ্বাসের অভাব (sexual performance anxiety) হলো এমন এক মানসিক
অবস্থা, যেখানে ব্যক্তি নিজের সক্ষমতা, পারফরম্যান্স বা সঙ্গীকে সন্তুষ্ট
করতে পারবে কি না, এই চিন্তায় ভীত, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বা অনিরাপদ অনুভব করে।
এই মানসিক চাপ শরীরের প্রাকৃতিক যৌন প্রতিক্রিয়া ব্যাহত করে, যা ধ্বজভঙ্গ,
সময়ের আগে বীর্যপাত, কিংবা যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যৌন
মিলনের সময় আত্মবিশ্বাসের অভাব সম্পূর্ণরূপে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এটি কোনো
দুর্বলতা নয় বরং একটি মানসিক বাধা যা সঠিক দিকনির্দেশনা, আন্তরিক সম্পর্ক
এবং সচেতন অনুশীলনের মাধ্যমে দূর করা যায়।
ধ্বজভঙ্গ রোগের কারণসমূহ
ধ্বজভঙ্গ রোগের পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। ধ্বজভঙ্গ রোগ হলো এমন একটি
শারীরিক ও মানসিক সমস্যা, যেখানে পুরুষ যৌন উত্তেজনার সময় তার লিঙ্গ
যথাযথভাবে দৃঢ়তা লাভ করতে পারে না অথবা সেই দৃঢ়তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। এটি
অস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী উভয় ধরনের হতে পারে। সমস্যাটি অনেক সময় যৌন জীবনের
উপর গভীর প্রভাব ফেলে, দাম্পত্য কলহ, আত্মবিশ্বাসের অভাব, এমনকি বিষণ্নতা
সৃষ্টি করে। নিচে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলোঃ
১. শারীরিক কারণঃ ধ্বজভঙ্গ রোগ বা Erectile Dysfunction
(ED)-এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো শারীরিক জটিলতা। ধ্বজভঙ্গ তখনই ঘটে যখন
লিঙ্গে পর্যাপ্ত রক্তপ্রবাহ না হয়, স্নায়ু সংকেত ব্যাহত হয়, বা যৌন
উত্তেজনার সময় হরমোনের সঠিক ভারসাম্য থাকে না। এসব বিষয় প্রায় সবই শারীরিক
কার্যপ্রণালীর সঙ্গে সম্পর্কিত। নিচে ধ্বজভঙ্গ রোগের প্রধান শারীরিক
কারণসমূহ বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলোঃ
- ক. রক্ত সঞ্চালনজনিত সমস্যাঃ লিঙ্গে ইরেকশন তৈরি হয় মূলত রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে। লিঙ্গ উত্তেজনার সময় রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা লিঙ্গকে দৃঢ় করে। উত্তেজনার সময় রক্ত লিঙ্গের স্পঞ্জের মতো টিস্যুতে প্রবেশ করে এবং তা আটকে গিয়ে লিঙ্গ শক্ত হয়। রক্ত চলাচলের যেকোনো ব্যাঘাত ইরেকশনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ধমনীর সংকোচন বা এথেরোস্ক্লেরোসিস (Atherosclerosis) এর কারণে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়।
- খ. ডায়াবেটিসঃ ডায়াবেটিস ধ্বজভঙ্গ (Erectile Dysfunction বা ED)-এর একটি অন্যতম ও শক্তিশালী শারীরিক কারণ। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রায় ৩৫%–৭৫% পুরুষ কোনো না কোনো সময় যৌন অক্ষমতায় ভুগে থাকেন, যা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। ডায়াবেটিসের ফলে দীর্ঘমেয়াদে স্নায়ু ও রক্তনালীর ক্ষতি হয়। এর ফলে যৌনাঙ্গে অনুভূতি হ্রাস পায় এবং রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। ডায়াবেটিক পুরুষদের মধ্যে ধ্বজভঙ্গ রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি।
- গ. স্নায়বিক সমস্যাঃ ধ্বজভঙ্গ রোগ বা Erectile Dysfunction (ED)-এর অন্যতম কারণ হলো স্নায়বিক সমস্যা বা নিউরোজেনিক কারণ। লিঙ্গ উত্তেজনার জন্য মস্তিষ্ক থেকে সঠিক স্নায়ুবাহিত সংকেত প্রয়োজন হয়। ইরেকশন বা লিঙ্গোত্থানের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে মস্তিষ্ক, স্নায়ু, হরমোন, রক্তনালী এবং পেশির সমন্বয়ে ঘটে। যদি স্নায়বাহিত সংকেতগুলোর কোথাও বিঘ্ন ঘটে, তবে যৌন উত্তেজনা সঠিকভাবে লিঙ্গে পৌঁছাতে পারে না এবং ধ্বজভঙ্গ দেখা দেয়।
- ঘ. হরমোনজনিত কারণঃ ধ্বজভঙ্গ সমস্যার পিছনে হরমোনজনিত কারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা অনেক সময় অজানা থেকে যায়। হরমোন হলো এমন রাসায়নিক বার্তাবাহক যা শরীরের বিভিন্ন অংশে সংকেত পাঠিয়ে কার্য সম্পাদন করায়। যৌন উত্তেজনা, আকাঙ্ক্ষা (libido), টেস্টোস্টেরন উৎপাদন ও লিঙ্গোত্থান, সবকিছুর পেছনে হরমোনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইরেকশন প্রক্রিয়ায় হরমোনের সঠিক ভারসাম্য না থাকলে লিঙ্গে যৌন উত্তেজনা সঠিকভাবে কাজ করে না, ফলে ধ্বজভঙ্গ দেখা দেয়।
২. মানসিক কারণঃ ধ্বজভঙ্গ রোগ কেবল শারীরিক সমস্যা নয়, এর
পেছনে মানসিক কারণও সমানভাবে দায়ী। লিঙ্গোত্থান শুরু হয় মস্তিষ্ক থেকে-
ভাবনা, অনুভূতি ও অনুভব থেকেই যৌন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এই উত্তেজনা
স্নায়ুর মাধ্যমে সংকেত হিসেবে নিচের অঙ্গে যায়। কিন্তু যদি মস্তিষ্ক
ভয়, উদ্বেগ,মানসিক চাপ বা দ্বিধায় ভরে থাকে, তাহলে সে সংকেত ঠিকভাবে
যায় না ফলে লিঙ্গ সাড়া দেয় না। নিচে ধ্বজভঙ্গ রোগের প্রধান
মানসিকক কারণসমূহ ব্যাখ্যা করা হলোঃ
- ক. অতিরিক্ত মানসিক চাপঃ মানসিক চাপ (Stress) আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হলেও, অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ধ্বজভঙ্গ রোগ বা Erectile Dysfunction (ED)। লিঙ্গোত্থানের প্রক্রিয়া শুধু রক্তপ্রবাহ বা স্নায়ুব্যবস্থার নয়, এটি মস্তিষ্ক, মন ও আবেগের সংমিশ্রণ। যখন মন অত্যধিক চাপে থাকে, তখন মস্তিষ্ক যৌন উদ্দীপনাকে সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করতে পারে না। ফলে ইরেকশন দুর্বল হয় বা হয়ই না।
- খ. উদ্বেগ বা হতাশাঃ ধ্বজভঙ্গ রোগ অনেক সময় শুধুমাত্র শারীরিক কোনো সমস্যা ছাড়াই হতে পারে, বিশেষ করে যদি কেউ উদ্বেগ (Anxiety) বা হতাশায় (Depression) ভোগেন। পুরুষদের মধ্যে এই দুই মানসিক অবস্থা লিঙ্গোত্থানের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে এবং যৌন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। লিঙ্গোত্থান একটি মানসিক-স্নায়বিক-হরমোন-রক্তপ্রবাহ নির্ভর প্রক্রিয়া। মন যদি স্বস্তিতে না থাকে, তাহলে শরীরও সাড়া দেয় না। উদ্বেগ বা হতাশা থাকার ফলে মস্তিষ্ক যৌন উদ্দীপনাকে প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যর্থ হয়। এতে স্নায়বিক সংকেত, হরমোনের নিঃসরণ ও রক্তপ্রবাহ সবকিছু বিঘ্নিত হয়।
- গ. যৌন বিষয়ে আতঙ্ক বা আত্মবিশ্বাসের অভাবঃ ধ্বজভঙ্গ রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অবহেলিত মানসিক কারণ হলো, যৌন আতঙ্ক বা আত্মবিশ্বাসের অভাব। এই আতঙ্কই ধীরে ধীরে মানসিক চাপে পরিণত হয়ে ইরেকশনের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। যৌন আতঙ্ক (Performance Anxiety) বলতে বোঝায় যৌন মিলনের সময় নিজেকে কৃতকার্য হতে হবে এই ভয় ও চাপ। এই ভয় এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, ব্যক্তি মিলনের সময় একদমই স্বস্তি অনুভব করেন না, বরং মনে হয়—আমি যদি ব্যর্থ হই, ও যদি আমাকে ছোট করে, এই মানসিক চাপ থেকেই ধ্বজভঙ্গের সূচনা হয়।
৩. জীবনযাপন এবং অভ্যাসঃ ধ্বজভঙ্গ রোগ বা ইরেকটাইল ডিসফাংশন
(Erectile Dysfunction) কেবল শারীরিক বা মানসিক রোগের ফল নয়, অনেক
ক্ষেত্রেই এটি আমাদের জীবনযাপন ও দৈনন্দিন অভ্যাসের সরাসরি প্রতিফলন।
খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, শরীরচর্চা, মাদক গ্রহণ, স্ট্রেস ব্যবস্থাপনা, এসব
অভ্যাসের গঠন বা অবনতি সরাসরি যৌনক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। নিচে বিস্তারিত
আলোচনা করা হলো কীভাবে জীবনযাপন ও অভ্যাস ধ্বজভঙ্গের কারণ হতে পারেঃ
আরও পড়ুনঃ তালমাখনার উপকারিতা ও অপকারিতা
- ক. ধূমপান, মদ্যপান, বা মাদক গ্রহণঃ ধ্বজভঙ্গ অনেক সময়ই আমাদের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের ফলাফল, যার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো ধূমপান, মদ্যপান ও মাদক গ্রহণ। এই তিনটি উপাদানই শরীরের রক্তনালী, স্নায়ু, হরমোন ও মনস্তাত্ত্বিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে, যার ফলে পুরুষের স্বাভাবিক যৌন ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধূমপান রক্তনালীতে প্লাক জমিয়ে এথেরোস্ক্লেরোসিস সৃষ্টি করে, যা ধীরে ধীরে ইরেকশনের ক্ষমতা হ্রাস করে। মদ স্নায়ুতন্ত্রের গতি ধীর করে, ফলে লিঙ্গে উত্তেজনা পৌঁছায় না।
- খ. অপুষ্টি ও অনিয়মিত ঘুমঃ ধ্বজভঙ্গ রোগ শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। যদি শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পায় বা যদি ঘুমে অনিয়ম থাকে, তবে হরমোন উৎপাদন, স্নায়বিক স্বাভাবিকতা ও রক্ত চলাচলে সমস্যা তৈরি হয়, যা ধ্বজভঙ্গের আশঙ্কা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে হরমোন (বিশেষ করে টেস্টোস্টেরন) লেভেল কমে যায়, যার কারণে রক্তনালী দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে লিঙ্গে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয় ও স্নায়বিক সংকেত সঠিকভাবে লিঙ্গে পৌঁছাতে পারে না
- গ. অতিরিক্ত হস্তমৈথুন বা পর্নগ্রাফির আসক্তিঃ বর্তমানে পর্নগ্রাফি ও হস্তমৈথুনের আসক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা যৌন স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। অতিরিক্ত হস্তমৈথুন বা পর্নগ্রাফির আসক্তি দীর্ঘকাল ধরে চললে, এটি ধ্বজভঙ্গ বা যৌন অক্ষমতার কারণ হয়ে উঠতে পারে। শরীর ও মন বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত হয়, যার ফলে যৌন ক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং যৌন সম্পর্কের প্রতি আগ্রহও হারিয়ে যেতে পারে। দীর্ঘকালীন পর্নগ্রাফি আসক্তি এবং হস্তমৈথুনের ফলে মস্তিষ্কের ডোপামিন রিসেপটর কম প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে। যার ফলে, মস্তিষ্ক স্বাভাবিক যৌন উত্তেজনায় একই পরিমাণ আনন্দ অনুভব করতে পারে না, এবং বাস্তব যৌনতা এক ধরনের ফ্ল্যাট বা নিষ্প্রাণ অনুভূতি হয়ে যায়।
- ঘ. শরীরচর্চার অভাবঃ শরীরচর্চা বা শারীরিক ব্যায়াম শুধু ওজন নিয়ন্ত্রণ বা পেশী গঠনের জন্যই নয়, বরং এটি আমাদের যৌন স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়ামের অভাবে রক্তনালিগুলোতে চর্বি জমে যেতে পারে, ফলে লিঙ্গে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। লিঙ্গোত্থান (erection) একটি রক্তনির্ভর প্রক্রিয়া, তাই পর্যাপ্ত রক্ত না পৌঁছালে উত্তেজিত হলেও লিঙ্গ শক্ত হয় না। শরীরচর্চা না করলে টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কমে যায়, যা পুরুষদের যৌন ইচ্ছা এবং উত্তেজনার জন্য অপরিহার্য। হরমোনের ঘাটতি সরাসরি যৌন ইচ্ছা ও কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৪. বয়সজনিত কারণঃ ধ্বজভঙ্গ রোগ বা ইরেকটাইল ডিসফাংশন (ED) সাধারণত
মধ্যবয়স এবং বৃদ্ধ বয়সে বেশি দেখা গেলেও এটি বয়সের একমাত্র ফল নয়। তবে, বয়স
বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন ঘটে, যা যৌনক্ষমতার উপর
সরাসরি প্রভাব ফেলে। এখানে আমরা ব্যাখ্যা করবো কীভাবে বয়সজনিত বিভিন্ন
পরিবর্তন ধ্বজভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়ায়ঃ
- ক. হরমোনের মাত্রা হ্রাসঃ ধ্বজভঙ্গ বা ইরেকটাইল ডিসফাংশন (ED)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাস। এই হরমোন পুরুষদের যৌন ইচ্ছা, উত্তেজনা, লিঙ্গোত্থান এবং সামগ্রিক যৌন সক্ষমতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পুরুষদের বয়স ৩০–৩৫ এর পর প্রতি বছর গড়ে ১% হারে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমতে থাকে। টেস্টোস্টেরন হলো যৌন ইচ্ছা, লিঙ্গোত্থান এবং যৌন কর্মক্ষমতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হরমোন। এই হরমোনের অভাবে যৌন উত্তেজনা কমে যায়, এবং লিঙ্গ পর্যাপ্তভাবে দৃঢ় হয় না।
- খ. রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়াঃ লিঙ্গোত্থান (ইরেকশন) একটি জটিল শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যার মূল ভিত্তি হলো রক্তনালির মধ্যে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ। এই রক্তপ্রবাহ যদি বাধাগ্রস্ত হয়, বিশেষ করে রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা কমে গেলে, তাহলে লিঙ্গে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয় না এবং ধ্বজভঙ্গ রোগ (Erectile Dysfunction বা ED) দেখা দিতে পারে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রক্তনালিগুলো সঙ্কুচিত ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে লিঙ্গে রক্তপ্রবাহ কমে যায় এবং ইরেকশন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
- গ. স্নায়ু সংবেদনশীলতা কমে যাওয়াঃ ধ্বজভঙ্গের পেছনে যে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক কারণ থাকে, তার মধ্যে স্নায়ু সংবেদনশীলতা হ্রাস একটি গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় কারণ। যৌন উত্তেজনা এবং লিঙ্গোত্থান, এই দুটি প্রক্রিয়ার জন্য স্নায়ুতন্ত্রের সঠিকভাবে কাজ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। স্নায়ু সংবেদনশীলতা বলতে বোঝায় শরীরের যেকোনো অঙ্গ থেকে মস্তিষ্কে এবং মস্তিষ্ক থেকে সেই অঙ্গে সংকেত পাঠানোর ক্ষমতা। যখন এই স্নায়ুপ্রবাহ ব্যাহত হয় বা স্নায়ুগুলো ঠিকভাবে সংকেত পাঠাতে পারে না, তখন ইরেকশনের সমস্যা দেখা দেয়। বয়স বাড়লে স্নায়ুগুলোর কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে যৌন উত্তেজনার প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।
- ঘ. অন্য শারীরিক রোগের প্রভাবঃ ধ্বজভঙ্গ (ED) শুধুমাত্র যৌনাঙ্গের সমস্যা নয়, এটি শরীরের বৃহত্তর স্বাস্থ্য সমস্যার একটি লক্ষণ হিসেবেও দেখা যেতে পারে। বহু শারীরিক রোগ আছে যেগুলো সরাসরি বা পরোক্ষভাবে পুরুষের যৌনক্ষমতায় প্রভাব ফেলে। এসব রোগ স্নায়ুতন্ত্র, রক্তসঞ্চালন, হরমোন, বা মানসিক অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা লিঙ্গোত্থানের (ইরেকশন) প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনেক পুরুষ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, প্রোস্টেট সমস্যা ইত্যাদিতে ভোগেন, যা যৌন সক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়।
ধ্বজভঙ্গ রোগের ধরণ বা প্রকারভেদ
ধ্বজভঙ্গ রোগের ধরণ বা প্রকারভেদ রোগটির মূল কারণ এবং রোগীর অবস্থার ওপর ভিত্তি
করে ভাগ করা যায়। এর মাধ্যমে সমস্যার ধরন বোঝা সহজ হয় এবং চিকিৎসা পরিকল্পনাও
নির্ভুলভাবে করা যায়।ধ্বজভঙ্গ রোগ সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। সাধারণত এই
দুই ধরণের মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা যায়। নিচে ধ্বজভঙ্গ রোগের প্রকারভেদগুলো
সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাকঃ
১. জন্মগত ধ্বজভঙ্গ রোগঃ যৌবনের গুনাবলী ঠিক যে সময় প্রকাশ পাওয়া
স্বাভাবিক সেটা দেখা যায় না জন্মগত ধ্বজভঙ্গ রোগীদের মধ্যে। যৌনতার ভাব যথাযথ
ভাবে তাদের মাঝে বৃদ্ধি পায় না। দেহের নানা হরমোনের অভাব ও স্নায়ুবিক
অক্ষমতার কারণ দেখা দেয়। যৌবনে পা দিলেও যৌনইন্দ্রিয়ের কোনো উত্তেজনা থাকে
না। পেনিস ঠিক মত শক্ত ও উথ্যান হয় না। সর্বদাই এদের চরিত্রে নারীর মতো
ভাবভঙ্গি প্রকাশ পায়। অদ্ভুদ ধরনের হাবভাব প্রকাশ পায় যা কোন পুরুষের মধ্যে
থাকে না। এদের যৌন উত্তেজনা ও পেনিসের উত্থান কিংবা বীর্যপাত কিছুই দেখা যায়
না। এরা মানুষের কাছে হস্যম্পদ হয়ে থাকে এবং মানুষ তাদের নিয়ে উপহাস করে।
আরও পড়ুনঃ শিমুল মূলের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
২. মানসিক কিংবা দৈহিক ধ্বজভঙ্গ রোগঃ হরমোন ক্রিয়ার কম বেশির জন্য
এবং দীর্ঘকাল যাবৎ বছরের পর বছর ধরে অতিরিক্ত হস্তমৈথুন এর ফলে এই দৈহিক
ধ্বজভঙ্গ রোগ হয়ে থাকে। অনেক সময় রোগ না হয়েও শুধু মাত্র মানসিক কারণেই এই
রোগ দেখা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে যৌন হরমোন বা অন্য কোন গ্রন্থির হরমোন সমান্য
কিছু কম নিঃসরণের জন্য যৌন উত্তেজনা কম হতে পারে। কিন্তু যথাযথ ট্রিটমেন্ট করলে
হরমোনের এই গোলযোগ ঠিক করা যায়। এক্ষেত্রে অধিক মানসিক দূর্বলতা এই রোগের মূল
কারণ হয়ে দাড়ায়।
ধ্বজভঙ্গ রোগের প্রতিকার
ধ্বজভঙ্গ রোগের প্রতিকার মানে হচ্ছে, যৌন উত্তেজনার সময় লিঙ্গোত্থানের
সমস্যাকে সমাধান বা নিয়ন্ত্রণের উপায় খোঁজা। এ রোগ শারীরিক, মানসিক,
হরমোনজনিত ও জীবনযাপনভিত্তিক বিভিন্ন কারণে হতে পারে, তাই প্রতিকারও হতে
হবে বহুমুখী ও ব্যক্তিভিত্তিক। সঠিক প্রতিকার পেতে হলে রোগের কারণ চিহ্নিত
করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের পুরুষদের এই যৌন দুর্বলতা নামক
সমস্যা থেকে মুক্ত করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন যৌনতা বিষয়ক জ্ঞান।
সবাইকে বুঝাতে হবে যৌনতা মানেই খারাপ নয়, যৌনতা মানেই লজ্জার নয়, সুস্থ
সুন্দর ভাবে বাঁচতে হলে যৌনতা বিষয়ক জ্ঞানের প্রয়োজন অপরিহার্য, এই বিশেষ
জ্ঞানের মাধ্যমে যৌনতার প্রয়োজন, যৌনশক্তি ধরে রাখার উপায়, অতিরিক্ত
হস্তমৈথুন বা মাস্টারবেশন করার কুফল, যৌবনের সময় করনীয় এবং বর্জনীয় সহ
যৌনতা সম্পর্কে শিক্ষণীয় জ্ঞানের ব্যাবস্থা করতে হবে।
এছাড়া প্রতিটি পুরুষের যৌন দুর্বলতা নামক এই সমস্যা থেকে নিজেকে মুক্ত
রাখতে পর্যাপ্ত খাবার-দাবার গ্রহন, পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম, মানুষিকভাবে
উৎফুল্ল থাকা তথা স্বাভাবিক নিয়মে জীবন-যাপনের অভ্যাস করতে হবে। পাশাপাশি
যৌন বিষয়ক অতিরিক্ত চিন্তা, অতিরিক্ত পর্ন দেখা, অতিরিক্ত স্বমেহন সহ বিয়ে
বহির্ভূত সহবাস থেকেও নিজেদের মুক্ত রাখতে হবে। তাছাড়া প্রত্যেক বাবা-মার
উচিত তার সন্তানের যৌবন শুরুর পর্যায়ে শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া।
এছাড়া সাময়িক আনন্দের জন্য ভায়াগ্রা/ ওয়ান টাইম ট্যাবলেটগুলো সেবন থেকে
নিজেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। ধ্বজভঙ্গ রোগের প্রতিকার সম্ভব তবে তা
নির্ভর করে আপনি কতটা সচেতন ও ধারাবাহিক চিকিৎসা নিচ্ছেন তার ওপর। এই রোগ
লজ্জার নয়, বরং চিকিৎসাযোগ্য একটি সাধারণ শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। সঠিক
চিকিৎসা, জীবনধারা পরিবর্তন, ও সময়মতো সচেতনতা নিয়ে চললে অধিকাংশ ক্ষেত্রে
রোগ পুরোপুরি সেরে যায়।
ধ্বজভঙ্গ রোগের চিকিৎসা
ধ্বজভঙ্গ রোগ একটি চিকিৎসাযোগ্য রোগ। সঠিক কারণ চিহ্নিত করে জীবনযাপন
পরিবর্তন, ওষুধ, থেরাপি কিংবা সার্জারি—যে কোনো উপায়েই এটি নিরাময় করা
সম্ভব। চিকিৎসা পদ্ধতি মূলত রোগটির ধরন, সময়কাল, এবং রোগীর বয়স ও শারীরিক
অবস্থার ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়। এখানে ধ্বজভঙ্গ রোগের প্রাথমিক ও
আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলোঃ
আরও পড়ুনঃ পুরুষদের জন্য বীর্যমনি গাছের উপকারিতা
১. আধুনিক চিকিৎসাঃ ধ্বজভঙ্গ (Erectile Dysfunction – ED) এর
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে এখন অত্যন্ত কার্যকর ও
লক্ষ্যভিত্তিক হয়ে উঠেছে। আধুনিক চিকিৎসা মূলত রোগের কারণ অনুযায়ী
নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে, যাতে দ্রুত এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান পাওয়া
যায়। এখানে ধ্বজভঙ্গ রোগের আধুনিক চিকিৎসাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
- ক. PDE-5 inhibitor ওষুধঃ PDE-5 ইনহিবিটর হলো এমন এক শ্রেণির ওষুধ, যা পুরুষের লিঙ্গে রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে ইরেকশন (লিঙ্গোত্থান) তৈরি ও বজায় রাখতে সাহায্য করে। মানব দেহে একপ্রকার এনজাইম থাকে যার নাম ফসফোডায়েস্টারেজ টাইপ-৫ (PDE-5)। এটি এমন একটি পদার্থ, যা লিঙ্গের রক্তনালিগুলো সংকুচিত করে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়। PDE-5 ইনহিবিটর ওষুধ এই এনজাইমকে আটকে দেয়, ফলে লিঙ্গে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক বা বাড়ে এবং ইরেকশন সহজ হয়।
- খ. হরমোন থেরাপিঃ ধ্বজভঙ্গ রোগের অন্যতম কারণ হতে পারে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বিশেষ করে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি। এই হরমোন পুরুষের যৌন উত্তেজনা, ইরেকশন, শুক্রাণু উৎপাদন এবং সামগ্রিক যৌন স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যায়, তখন হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। অনেক সময় হরমোন থেরাপির মাধ্যমে শুধু শারীরিক নয়, মানসিক উন্নতি (আত্মবিশ্বাস, মানসিক স্থিতি) এবং যৌন সম্পর্কের উন্নতিও দেখা যায়।
- গ. কাউন্সেলিং বা থেরাপিঃ ধ্বজভঙ্গ রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং সম্পর্কজনিত সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রে শরীরের কোনো সমস্যা না থাকলেও কেবল মানসিক কারণে লিঙ্গোত্থান ব্যাহত হতে পারে। ধ্বজভঙ্গ রোগে মানসিক কারণ প্রায় ২০–৩০% ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে যেমন, অতীতের ব্যর্থ যৌন অভিজ্ঞতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, দাম্পত্য কলহ বা সম্পর্কজনিত মানসিক দূরত্ব, পারফর্ম্যান্স বা যৌনমিলন করতে না পারার ভয়। তাই আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ।
- ঘ. ইনজেকশন বা ডিভাইস ব্যবহারঃ যেসব ক্ষেত্রে ওষুধ, হরমোন থেরাপি কিংবা কাউন্সেলিং কাজ করে না, সেখানে ইনজেকশন বা ডিভাইস ব্যবহার ধ্বজভঙ্গের কার্যকর সমাধান হতে পারে। ইনজেকশন প্রয়োগের পর ৫–১৫ মিনিটের মধ্যে লিঙ্গে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায় ফলে ইরেকশন সৃষ্টি হয় যা ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যৌন উত্তেজনা ছাড়াও এটি ইরেকশন ঘটাতে পারে। এগুলো সাধারণত দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে জটিল বা দীর্ঘস্থায়ী ইরেকটাইল ডিসফাংশন রোগীদের জন্য।
২. আয়ুর্বেদিক ও প্রাকৃতিক উপায়ঃ আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি
অনেকেই ধ্বজভঙ্গ রোগে প্রাকৃতিক বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা অনুসরণ করে উপকৃত হন।
আয়ুর্বেদিক ও প্রাকৃতিক উপায়ে ধ্বজভঙ্গ নিরাময় একটি ধৈর্যপূর্ণ ও
পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি। এটি শরীর, মন ও জীবনের অভ্যাসের ওপর সমান গুরুত্ব দেয়।
যদিও এটি একটু ধীরে কাজ করে, কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম এবং দীর্ঘমেয়াদে উন্নতি আনে। এখানে ধ্বজভঙ্গ রোগের প্রাকৃতিক বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বর্ণনা করা হলোঃ
- ক. অশ্বগন্ধা, শিলাজিত, গোকসুরা ইত্যাদি ভেষজ উপাদানঃ ভেষজ উপাদান হলো এমন প্রাকৃতিক উদ্ভিদজাত উপাদান যেগুলো মানবদেহের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ও প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। ভেষজ উপাদান বলতে বোঝায় উদ্ভিদের মূল, পাতা, ছাল, ফুল, ফল, বীজ বা রস – যেগুলো কোনো রাসায়নিক প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে ব্যবহার করা যায়। আয়ুর্বেদ, ইউনানি, চীনা ও দেশজ চিকিৎসাশাস্ত্রে ভেষজ উপাদান বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। ধ্বজভঙ্গ রোগে ব্যবহৃত বহু ভেষজ উপাদান রয়েছে যা স্নায়ু শক্তি বৃদ্ধি, হরমোন ভারসাম্য রক্ষা, রক্তপ্রবাহ উন্নতকরণ ও যৌন ইচ্ছা জাগাতে কার্যকর।
- খ. পরিমিত খাদ্য ও ঘুমঃ ধ্বজভঙ্গ রোগে পরিমিত খাদ্য ও ঘুমের গুরুত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সুষম পুষ্টি ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম অপরিহার্য। খাদ্যের মাধ্যমে শরীর হরমোন, রক্তসঞ্চালন ও স্নায়ুর জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও শক্তি পায়।পুষ্টিকর ও পরিমিত খাদ্য আপনার হরমোন ও স্নায়ু শক্তি বাড়িয়ে ধ্বজভঙ্গ রোধে সাহায্য করে। নিয়মিত ও গভীর ঘুম শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে, টেস্টোস্টেরনের ভারসাম্য বজায় রাখে।
- গ. মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখাঃ ধ্বজভঙ্গ সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ মানসিক চাপ, উদ্বেগ, হতাশা বা আত্মবিশ্বাসের অভাব। কারণ অতিরিক্ত মানসিক চাপ যৌন উত্তেজনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, কর্টিসল হরমোন বাড়লে টেস্টোস্টেরন কমে যায় এবংআত্মবিশ্বাসের অভাব যৌন ইচ্ছা ও পারফরম্যান্সে বড় বাধা। তাই এ রোগের চিকিৎসায় মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু ওষুধ বা ভেষজ উপাদান গ্রহণ করলেই সমাধান হয় না, সাথে মন শান্ত ও ইতিবাচক না থাকলে চিকিৎসার সুফল অনেকটাই কমে যায়।
৩. জীবনধারা পরিবর্তনঃ জীবনধারা পরিবর্তন হলো এমন কিছু অভ্যাস,
রুটিন ও মানসিকতা পরিবর্তন করা, যা শরীর ও মন উভয়ের ওপর ইতিবাচক প্রভাব
ফেলে। ধ্বজভঙ্গ সমস্যায় ওষুধ ও চিকিৎসার পাশাপাশি
জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন না আনলে দীর্ঘমেয়াদে উন্নতি কঠিন। কারণ,
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, ও শারীরিক
নিষ্ক্রিয়তা সবকিছু যৌনক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। জেনে নিন বিস্তারিতঃ
- ক. ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করাঃ ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করা ধ্বজভঙ্গ রোগের অন্যতম প্রধান প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ। কারণ এই দুইটি অভ্যাস সরাসরি পুরুষের রক্তনালী, স্নায়ু ও হরমোনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করলে শুধু যৌনক্ষমতা নয়, বরং রক্তপ্রবাহ উন্নত হয়, হরমোন স্বাভাবিক হয়, আর মনেও প্রশান্তি আসে। এটি শুধু যৌন জীবনের উন্নতি নয়, বরং একটি স্বাস্থ্যকর, আত্মবিশ্বাসী জীবনের প্রথম ধাপ। এগুলো বন্ধ করলে শরীর দ্রুতই ইতিবাচক সাড়া দেয়, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বহু রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
- খ. নিয়মিত শরীরচর্চাঃ নিয়মিত শরীরচর্চা ধ্বজভঙ্গ রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর ও প্রাকৃতিক পদ্ধতি। কারণ, এটি রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি, হরমোন ভারসাম্য রক্ষা, মানসিক চাপ হ্রাস এবং শরীরের সামগ্রিক সক্ষমতা উন্নত করে। যেসব পুরুষ নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের মধ্যে ইরেকটাইল ডিসফাংশনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ধ্বজভঙ্গ প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যায়াম যেমন- কার্ডিও এক্সারসাইজ, কেগেল এক্সারসাইজ, ওয়েট ট্রেনিং বা রেজিস্ট্যান্স এক্সারসাইজ, যোগব্যায়াম ও স্ট্রেচিং ইত্যাদি।
- গ. অতিরিক্ত লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার পরিহারঃ অতিরিক্ত লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করা ধ্বজভঙ্গ প্রতিরোধে এবং সাধারণ স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের খাবার দীর্ঘমেয়াদে রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং স্নায়ু সমস্যার কারণ হতে পারে, যা যৌনক্ষমতাও প্রভাবিত করে। অতিরিক্ত লবণ শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হতে পারে, যা লিঙ্গের ইরেকশন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত চিনির কারণে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পায়, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত চিনি খাওয়া স্থূলতা সৃষ্টি করতে পারে, যা যৌন সমস্যার কারণ হতে পারে।
ধ্বজভঙ্গ রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা
ধ্বজভঙ্গ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই রোগ
শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যা নয়, মানসিক এবং সামাজিকও হতে পারে।
সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ধ্বজভঙ্গ রোগের
ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এটি শারীরিক ও মানসিকভাবে যন্ত্রণাদায়ক
অবস্থা, যা পুরুষদের যৌন জীবনকে প্রভাবিত করে। তবে জীবনযাপন
পরিবর্তন, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং সচেতনতার মাধ্যমে এর প্রতিরোধ
সম্ভব। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গ্রহণ করাঃ স্বাস্থ্যকর
জীবনযাপন গ্রহণ করা ধ্বজভঙ্গ রোগসহ বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা
প্রতিরোধে একটি মূল চাবিকাঠি। এটি এমন একটি দৈনন্দিন রুটিন ও অভ্যাস
যা শরীর, মন এবং আত্মার ভারসাম্য বজায় রাখে। এর মধ্যে সুষম খাদ্য,
নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক প্রশান্তি, পর্যাপ্ত ঘুম এবং খারাপ অভ্যাস
পরিহার অন্তর্ভুক্ত। এই পাঁচটি স্তম্ভেই নির্ভর করে একজন
পুরুষের যৌন সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস। একজন পুরুষের সামগ্রিক
যৌনস্বাস্থ্য, হৃদরোগ প্রতিরোধ, হরমোনের ভারসাম্য, স্নায়বিক
স্বাস্থ্য এবং আত্মবিশ্বাস সবকিছুই জীবনযাপনের ধরনের ওপর নির্ভর করে।
তাই এখন থেকেই সচেতন হন, অভ্যাস পরিবর্তন করুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবন
গড়ে তুলুন।
২. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাঃ মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে
রাখা ধ্বজভঙ্গ রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে। মানসিক চাপ (Stress), উদ্বেগ (Anxiety), হতাশা (Depression),
এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব, এসবই যৌন দুর্বলতার প্রধান মানসিক কারণগুলোর
মধ্যে অন্যতম। মানসিক চাপের কারণে শরীরের "ফাইট-অর-ফ্লাইট"
প্রতিক্রিয়া সক্রিয় হয়, যার ফলে কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিন হরমোন
বেড়ে যায়। এই হরমোনগুলো রক্তনালী সংকুচিত করে, রক্তপ্রবাহ কমায় এবং
স্নায়বিক উত্তেজনার ভারসাম্য নষ্ট করে। এর ফলে যৌন উত্তেজনার সাড়া
কমে যেতে পারে। নিজের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং সমস্যাকে
স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করাই হলো সুস্থতার প্রথম ধাপ।
৩. অতিরিক্ত হস্তমৈথুন বা পর্নগ্রাফি দেখা থেকে বিরত থাকাঃ অতিরিক্ত হস্তমৈথুন বা পর্নগ্রাফি দেখা থেকে বিরত থাকা ধ্বজভঙ্গ
রোগ প্রতিরোধ ও মানসিক-যৌন স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও স্বাভাবিক মাত্রায় হস্তমৈথুন সাধারণত
ক্ষতিকর নয়, অতিরিক্ততা বা পর্নগ্রাফির প্রতি আসক্তি দীর্ঘমেয়াদে
শারীরিক এবং মানসিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পর্নোগ্রাফি দেখলে
মস্তিষ্কে ডোপামিন (আনন্দ হরমোন) প্রবলভাবে নিঃসরণ হয়। বারবার এই
উচ্চমাত্রার উদ্দীপনা পেলে মস্তিষ্ক স্বাভাবিক যৌন উদ্দীপনায় কম সাড়া
দেয়। বাস্তব যৌনমিলনের সময় উত্তেজনা আসতে দেরি হয় বা ইরেকশন হয় না।
অতিরিক্ত হস্তমৈথুন স্নায়ু ও পেলভিক অঞ্চলে অস্থায়ী অবসাদ তৈরি করতে
পারে, যার ফলে লিঙ্গোত্থানে সমস্যা হয়। হস্তমৈথুন শরীর দুর্বল করে এবং
মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলে, যা যৌন ইচ্ছা ও কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে রাখাঃ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ শুধু হৃদরোগ বা কিডনির সমস্যা নয়,
ধ্বজভঙ্গের মতো যৌন সমস্যারও বড় কারণ। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার
মাধ্যমে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা ধ্বজভঙ্গ রোগ
প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। রক্তে শর্করার মাত্রা
বেড়ে গেলে, তা ধীরে ধীরে স্নায়ু ও রক্তনালির ক্ষতি করে। পেনাইল
অঞ্চলের স্নায়ু সংকেত প্রেরণে সমস্যা হয়, ফলে যৌন উত্তেজনার
প্রতিক্রিয়া কমে যায়।দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত
করে, যার ফলে পেনিসে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া, উচ্চ
রক্তচাপের কিছু ওষুধও যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। নিয়মিত স্বাস্থ্য
পরীক্ষা ও সচেতনতা আপনাকে এই সমস্যাগুলো থেকে আগেভাগে সুরক্ষা দিতে
পারে।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাঃ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ধ্বজভঙ্গ
রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতিরিক্ত ওজন,
বিশেষত পেটের চর্বি শরীরের হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করে, রক্তপ্রবাহে বাধা
সৃষ্টি করে এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায় যা যৌন সক্ষমতা হ্রাসের
প্রধান কারণগুলোর একটি। অতিরিক্ত চর্বি শরীরে ইস্ট্রোজেন (নারী হরমোন)
বাড়িয়ে দেয় এবং টেস্টোস্টেরন (পুরুষ হরমোন) কমিয়ে দেয়।
টেস্টোস্টেরনের অভাব পুরুষের যৌন ইচ্ছা, শক্তি ও ইরেকশন ক্ষমতা হ্রাস
করে। স্থূলতা রক্তনালিকে সংকুচিত করে এবং হৃদযন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করে, ফলে
লিঙ্গে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। অতিরিক্ত ওজন এসব রোগের ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়, যা
ধ্বজভঙ্গের প্রধান কারণ।
৬. দাম্পত্য জীবনে খোলামেলা যোগাযোগ রাখাঃ দাম্পত্য জীবনে
খোলামেলা যোগাযোগ রাখা ধ্বজভঙ্গ রোগ প্রতিরোধ ও এর মানসিক প্রভাব হ্রাস
করার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দাম্পত্য
জীবনে যৌন সমস্যা বা অক্ষমতা অনেক সময় সম্পর্কের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি,
দূরত্ব, আত্মগ্লানি এবং হতাশার জন্ম দেয়। তবে উন্মুক্ত ও আন্তরিক
আলোচনা এই সংকটগুলো সহজেই কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। দাম্পত্য
জীবনে খোলামেলা ও সৎ যোগাযোগ শুধু ধ্বজভঙ্গ নয়, বরং যেকোনো যৌন সমস্যার
প্রতিকার ও দাম্পত্য সম্পর্ককে আরও গভীর, আন্তরিক এবং দৃঢ় করে তোলে।
যৌনতা শুধুই শারীরিক বিষয় নয়, এটি মানসিক, আবেগঘন এবং সম্পর্কনির্ভর
একটি অভিজ্ঞতা। তাই একে ঘিরে সজাগ, আন্তরিক এবং সাহসী কথোপকথন গড়ে
তোলাই সুস্থ দাম্পত্য জীবনের চাবিকাঠি।
ধ্বজভঙ্গ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা
ধ্বজভঙ্গ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া শুধু ব্যক্তির যৌন
স্বাস্থ্যই নয়, বরং তার মানসিক সুস্থতা, দাম্পত্য সম্পর্ক এবং
সামাজিক জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সমাজে এখনও এই রোগ নিয়ে ব্যাপক
ভুল ধারণা, লজ্জা ও গোপনীয়তা বিদ্যমান। অথচ এটি একটি নিরাময়যোগ্য
সমস্যা, এবং সময়মতো সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এর
সমাধান সম্ভব। ধ্বজভঙ্গ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে যা করবেনঃ
১. ভুল ধারণা দূর করাঃ ধ্বজভঙ্গ রোগ নিয়ে ভুল ধারণা দূর করা
যৌন স্বাস্থ্যসচেতনতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর একটি। আমাদের
সমাজে এখনো এই রোগ সম্পর্কে অসংখ্য ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার
প্রচলিত আছে, যা রোগীকে সঠিক চিকিৎসা নিতে বাধা দেয় এবং মানসিকভাবে
আরও সংকুচিত করে তোলে। এসব ভুল ধারণা যত দ্রুত দূর করা যায়, তত
দ্রুত একজন ব্যক্তি স্বাভাবিক যৌন জীবন ফিরে পেতে পারেন।
২. সঠিক তথ্য ও শিক্ষাঃ ধ্বজভঙ্গ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া
খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষেরা সাধারণত এই রোগকে লজ্জাজনক মনে করেন,
কিন্তু এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য অবস্থান এবং এটির জন্য চিকিৎসা রয়েছে।
তাই সঠিক তথ্য এবং স্বাস্থ্যভিত্তিক যৌনশিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে
এই সমস্যার সমাধানে দীর্ঘমেয়াদে ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব। সচেতনতা
বাড়ানোর মাধ্যমে পুরুষেরা এই রোগের চিকিৎসা নিতে এগিয়ে আসবে।
৩. রেগুলার মেডিক্যাল চেক-আপঃ অনেক সময় শারীরিক কোনো সমস্যা
যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা হৃদ্রোগের
কারণে ধ্বজভঙ্গের সমস্যা দেখা দিতে পারে যা প্রাথমিকভাবে সহজে বোঝা
যায় না। কিন্তু নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে এসব কারণ
আগেভাগেই শনাক্ত করা ও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। যারা উচ্চ রক্তচাপ,
ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা স্নায়ু সমস্যার জন্য চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের
নিয়মিত চেকআপ করা উচিত।
৪. সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধিঃ যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ে সমাজে
ব্যাপক ভুল ধারণা এবং লজ্জা প্রচলিত থাকে, যা রোগীদের চিকিৎসা গ্রহণে
বাঁধা সৃষ্টি করে। এটি একটি প্রচলিত সমস্যা, তবে অনেক পুরুষ লজ্জার
কারণে চিকিৎসকের কাছে যান না। তাই পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী এবং
সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। পুরুষদের
নিজেদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে
উত্সাহিত করা উচিত।
৫. থেরাপি ও কাউন্সেলিংঃ কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি মানে
হচ্ছে একজন প্রশিক্ষিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তায় রোগীর মানসিক
সমস্যা, চিন্তা, এবং আবেগগত বাধা চিহ্নিত করে তা কাটিয়ে ওঠার উপায়
বের করা। যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ক থেরাপিতে যৌন সমস্যা নিয়ে খোলামেলা
আলোচনা, মানসিক প্রস্তুতি ও সম্পর্ক উন্নয়ন—এই তিনটি দিকের উপর
গুরুত্ব দেওয়া হয়। এজন্য মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং থেরাপি খুবই
গুরুত্বপূর্ণ।
ধ্বজভঙ্গ রোগীর দূর্বলতা কাটাতে যা খাবেন
ধ্বজভঙ্গ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দুর্বলতা কাটাতে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে শরীরের হরমোন
ভারসাম্য, রক্তসঞ্চালন এবং স্নায়বিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন সম্ভব, যা যৌনক্ষমতা
বৃদ্ধিতে কার্যকর।পুষ্টিকর, হরমোন-সক্রিয় ও রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধিকারী খাবার
নিয়মিত গ্রহণ করলে ধীরে ধীরে শারীরিক ও যৌন শক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। নিচে
ধ্বজভঙ্গ রোগীর জন্য উপযোগী খাবারের তালিকা দেওয়া হলোঃ
১. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারঃ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার ধ্বজভঙ্গ রোগে
দুর্বলতা কাটানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রোটিন শরীরের কোষ পুনর্গঠনে
সাহায্য করে, পেশি শক্তিশালী করে, যৌন হরমোন (বিশেষ করে টেস্টোস্টেরন) উৎপাদনে
সহায়তা করে এবং সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধি করে। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন-ডিম
(বিশেষ করে সেদ্ধ ডিম), দেশি মুরগির মাংস, মাছ ( স্যামন, টুনা), ডাল ও ছোলা,
দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য যেমন- দই, পনির ইত্যাদি।
২. জিঙ্ক ও সেলেনিয়ামযুক্ত খাবারঃ জিঙ্ক ও সেলেনিয়ামযুক্ত খাবার
ইরেকটাইল ডিসফাংশন রোগ প্রতিরোধ ও দুর্বলতা কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। এই দুটি খনিজ যৌন হরমোনের উৎপাদন, স্পার্মের গুণগত মান এবং রক্তসঞ্চালন
স্বাভাবিক রাখার জন্য অপরিহার্য। কুমড়োর বীজ, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট, গোটা
শস্য, ডিমের কুসুম, মাংস জিঙ্ক ও সেলেনিয়ামযুক্ত খাবার।
৩. আয়রন ও ম্যাগনেশিয়ামযুক্ত খাবারঃ আয়রন ও ম্যাগনেশিয়ামযুক্ত
খাবার ধ্বজভঙ্গ রোগের দুর্বলতা কাটাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই
দুটি খনিজ যৌন স্বাস্থ্য, রক্তসঞ্চালন, পেশি শিথিলতা এবং হরমোন ভারসাম্য বজায়
রাখতে সাহায্য করে। আয়রন ও ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবারগুলোর মধ্যে পালং শাক,
মেথি শাক বিটরুট, গাজর, কলা ও খেজুর, কালো তিল ও বাদাম, লাল চাল ও চিড়া
অন্যতম।
৪. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ফলমূলঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ
ফলমূল ধ্বজভঙ্গ রোগ প্রতিরোধ ও পুনরুদ্ধারে বিশেষভাবে উপকারী।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে
রক্তনালী, স্নায়ু এবং হরমোনের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়তা করে যা
স্বাভাবিক যৌনক্ষমতার জন্য অপরিহার্য। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ প্রধান ফলমূল
ডার্ক বেরি (যেমন ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি), তরমুজ, আঙুর ও বেদানা, কমলা, লেবু,
পেঁপে ও আমলকি ইত্যাদি।
৫. ভেষজ ও প্রাকৃতিক উপাদানঃ ভেষজ ও প্রাকৃতিক উপাদান ধ্বজভঙ্গ
রোগের প্রাকৃতিক ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রাচীন আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও লোকজ চিকিৎসায় বহু শতাব্দী ধরে এসব উপাদান
ব্যবহার করা হচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু উপাদান যৌনক্ষমতা বাড়ায়, কিছু হরমোন
নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, আবার কিছু রক্তসঞ্চালন ও স্নায়ু উত্তেজনা বাড়ায়।
অশ্বগন্ধা, শিলাজিত, গোকসুরা, মধু ও কালোজিরা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ ও
প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ।
শেষ কথাঃ ধ্বজভঙ্গ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
ধ্বজভঙ্গ রোগ, বা ইরেকটাইল ডিসফাংশন, শুধুমাত্র একটি শারীরিক সমস্যা নয় এটি
একজন পুরুষের আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস ও দাম্পত্য সম্পর্ককেও গভীরভাবে
প্রভাবিত করতে পারে। সমাজে এই রোগ নিয়ে আজও অনেক ভুল ধারণা ও গোপনীয়তা
বিদ্যমান, যার কারণে অনেকেই সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন না। এই রোগের
প্রতিকার সম্পূর্ণরূপে সম্ভব, তবে এর জন্য প্রয়োজন সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও
সচেতনতা।
ধ্বজভঙ্গ রোগের লক্ষণ হলো যৌন উত্তেজনার সময় লিঙ্গ যথাযথভাবে উত্তেজিত না
হওয়া বা উত্তেজনা ধরে রাখতে না পারা। এটি ধীরে ধীরে শুরু হলেও অনেকের
ক্ষেত্রে হঠাৎ করেও দেখা দিতে পারে। সকালবেলার স্বাভাবিক ইরেকশনের অভাব, যৌন
আকাঙ্ক্ষা হ্রাস, কিংবা যৌনমিলনের সময় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, সবই এই সমস্যার
ইঙ্গিত দেয়। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, এই রোগের লক্ষণ কেবল শারীরিক না এর পেছনে
অনেক সময় মানসিক কারণও জড়িত থাকে।
বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা, ভেষজ চিকিৎসা এবং জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তনের
মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পাশাপাশি সমাজে এই বিষয়ে খোলামেলা
আলোচনা, ভুল ধারণা দূরীকরণ এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহ প্রদান করা
দরকার। এ ধরনের সচেতনতা বাড়লে ধ্বজভঙ্গ রোগ আর কোনো "লজ্জার বিষয়" থাকবে না
বরং হবে একটি সাধারণ ও চিকিৎসাযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমনটি এটি
প্রকৃতপক্ষে।
একজন লেখক হিসেবে আমার মতে, ধ্বজভঙ্গ রোগের প্রতিকার শুধুমাত্র ওষুধে
সীমাবদ্ধ না রেখে মানসিক স্বাস্থ্য, সম্পর্কের আন্তরিকতা ও জীবনযাত্রার
সামগ্রিক উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া সবচেয়ে কার্যকর পন্থা।
আশাকরি ধ্বজভঙ্গ রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, ধ্বজভঙ্গ রোগ কি এবং কেন হয়
তা আপনি উপরিউক্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পেরেছেন। তাই মানসিক কিংবা
দৈহিক কারনে যৌনশক্তি যেনো নষ্ট না হয় সেদিক বিবেচনায় রাখুন।
বিডি টেকল্যান্ডের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url